লাল জবাফুলের পাঁপড়িগুলো তার মাটিতে পড়া বন্ধুদের দিকে চেয়ে বেনামী একটা গর্ব বোধে কেঁপে ওঠে। চিকন ফালির বাঁশ আর কঞ্চি দিয়ে বানানো ফুলের ডালির একটা দিক ভাঙা। কেউ জানেনা কেনো। না তো, ঠিক হলো না- একজনই কেবল জানে। প্রতি দিন শিশিরের ঘুম ভাঙা ভোরে জলে ডুব দিয়ে উঠে যার ডালিটার কথা মনে পড়ে সবার আগে।
আজও ভোরে ফুল তুলে তুলে ডালি ভরে গেলো জবা ফুল দিয়েই। নরম গোটাগোটা আঙুল ফেলে, ভাঁজ ভেঙে হাঁটার তালে তালে ডালির ভাঙা দেয়াল দিয়ে একটা একটা করে জবা মাটিতে গড়িয়ে পড়ছে তাই। দূরের কাশবন থেকে ছুটে আসা ভোরবেলার মাটির ঘ্রাণভরা বাতাসে মাটির উপর শুয়ে থাকা লাল ফুলগুলো তাদের অবতীর্ণ হবার জায়গা থেকে সরে সরে যায়। পাতাবাহারের লালহলুদ ফুটকি দেয়া লম্বা লম্বা পাতাগুলো সেই বাতাসের সাথে শরীর দোলায়।
জবাফুল এতো ভালো লাগে কেনো? কোনও এক বৃষ্টিভেজা বিকেলে বড় মাঠের শেষ মাথায় পদ্মদীঘির পাড়ে বসে প্রশ্নটা শুনেছিলো... (তার নামটা যে আমাকে কেউ বলে নি) হাতের আঙুলগুলো দোলাতে দোলাতে ভ্রু টেনে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলো: লাল রঙ! উত্তর শুনে প্রশ্নকারীর স্বাদ মিটলো না, রহস্য থেকে গেলো। তারপর প্রশ্নকারী উত্তরটা নিয়ে নিজেই আরো প্রশ্ন করতে থাকলো নিজেকেই! একটা একটা করে মিনিট পার হয়ে যেতে থাকলো দীঘির সবুজাভ জলের উপর দিয়ে ঢেউ খেলে। এরকম অসহ্য লম্বা নিরবতা প্রশ্নকারীর কাছে অসহ্য হলেও জবা ফুল প্রিয় নাম না জানা উত্তরদাত্রীর কাছে ভীষণ মজার।
এভাবে দশটা মিনিট নিজের পৌরুষের তাড়নায় কপালের ঘাম ছুটিয়ে মাটিতে আঁকিবুকি করে মনে মনে জানা যত সাহিত্য আছে সেটা স্মরণ করেও যখন প্রশ্নকারীর কাছে লাল রঙের মধ্যে ভালো লাগার কী আছে সেটা অধরাই থেকে গেলো। উত্তরদাত্রী চোখ ঘুরিয়ে দেখলো, বেচারার খুব দু:সময় যাচ্ছে- সে তো এইরকম সময় পার করবে বলে আজ দীঘির পাড়ে আসেনি। বেচারাকে মুক্তি না দিলে আজ ঘরে ফিরে গিয়ে ঘুমও ঠিক হবে না। কিন্তু উত্তরটা তার দিতে সামান্য ভয় ভয় করে।
তাও কীসের যেনো টানে দ্বিধা ঝেড়ে শেষবারের মতো মনে মনে মুচকি হেসে ধরাগলায় প্রশ্নকারীকে জিজ্ঞেস করলো, 'লাল রঙ দেখবে?' বলতে বলতে উঠে দাঁড়িয়ে হঠাৎ দীঘি জল কাঁপিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো সবুজ গভীর জলে! তারপর ডুব!
উঠছে না কেনো? কোথায় লাল রঙ? প্রশ্নকারীর গবেষণা এখন ওলটপালট পুরো। ডুবে গেলো না তো?
একেবারে অজানা এক উৎস থেকে কর্তব্যের দুইরকম অর্থ এসে প্রশ্নকারীর সমস্ত দ্বিধা দূর করে দিয়ে গেলো! সবুজ টলটলে জল আরেকবার কেঁপে উঠলো। এবার আগেরবারের চেয়ে জোরে!