অবশেষে একদিন সকাল সাড়ে দশটার দিকে রন্তীর সাথে কৌশিকের দেখা হয়ে গেলো; যদিও দেখা হওয়ার কথা ছিলো না! প্লানটা ছিলো এরকম: ভার্চুয়াল পরিচয় ভার্চুয়ালেই আটকে থাকবে, প্রথম কথা বলার বিশ বছর পর হবে দেখা!
কিন্তু ঢাকা শহর, বড়ই আজব জায়গা। চ্যাট-রুমের অনেক কান্ড কীর্তি বাস্তবে অনেক সুনামীর জন্মদাতা!
কৌশিক আপনভোলা মানুষ, চোখে আঙুল দিয়েও তাকে কিছু দেখানো যায় না- যদি সে নিজে না দেখতে চায়! সকাল বেলার দৌড়াদৌড়ির ক্লান্তি মেটাচ্ছিলো ডাবের পেটে স্ট্র ঢুকিয়ে আয়েশে চুমুক দিয়ে।
রন্তীকে ওর সদ্য দেশে আসা খালাতো বোন জোর করে নিয়ে গিয়েছিলো শপিং লিস্ট ধরে ধরে কোন মার্কেটে কোন জিনিসটা ভালো পাওয়া যাবে তারই একটা আগাম খোঁজ খবর নিতে। দোকানদারদের সাথে জোর করে ভাঙা ভাঙা বাংলা আর জার্মান মিশিয়ে বলতে বলতে গলাটা নিশ্চই শুকিয়ে গিয়েছিলো! এদিকে রন্তী রাস্তায় দাড়িয়ে খাওয়া খুবই অপছন্দ করে, কিন্তু হাতের কব্জিতে কষে চাপ খেয়ে ওর নরম প্রতিবাদ টিকলো না। 'ইস্ত দাব' খেতে যেতেই হলো!
ততক্ষণে কৌশিক ডাবের খোলস ফেরত দিয়ে প্যান্টে হাত মুছতে আরম্ভ করছে। হঠাৎ ইউরোপীয় চেহারার বাঙালী দেখে ওর হাত দুটো উরুর কাছে আটকে গেলো; মাথাটা আরো প্যাচ খেয়ে গেলো চেনা চেনা লাগা দূরাগত স্মৃতির মতো রন্তীকে দেখে! গলার কাছে আটকে থাকা শ্বাস গিলে, জিজ্ঞেস করলো, 'তুমি... আইমীন, আপনার নাম কি রন্তী!?'
রন্তী এমনিতেই বিরক্ত হয়ে ছিলো, 'দাব' খাওয়াটা শেষ হলেই বাঁচে। কাপড়ে দাগ লাগার কথাটা তো আর এই আধা-জার্মান মেয়ের মাথায় ঢুকবে না! তাই কাঁপা গলায় নিজের নাম শুনে ও বেশ চমকে গেলো!
মাথা তুলে ওর কাছেও দূরাগত স্মৃতির মতো কৌশিকের চেহারাটা চেনা লাগলো!
এদিকে দুইজনকে সবকিছু ভুলে সেকেন্ড দশেক একে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইচড়ে পাকা ডয়েচী যা বোঝার বুঝে নিলো! সে রন্তীর চোখের সামনে হাত নাচিয়ে বলে উঠলো, 'রহ্নতি, তুমি ইকে সিনো?' বলেই একটা ঠোঁট বাঁকানো হাসি দিলো- যেটা দেখে রন্তীর মেরুদন্ডে ঠান্ডা সিরসিরে ভয় খেলে গেলো!
বুঝতে পারলো, কৌশিকের আজ ভাগ্যটা খারাপ! বড়ই খারাপ!