বিদ'আত; ইসলামী শিক্ষামতে ইসলামের ভিতর ইবাদত হিসাবে যে কোন কিছু নতুন সৃষ্টি করা (যাতে আল্লাহর নির্দেশ নেই, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে দেখিয়ে যান নাই কিংবা বলে যান নাই) হচ্ছে বিদ'আত। বিদ'আত মূলত মানুষ সওয়াব পাওয়ার আশাতেই শুরু করে; ভালো মনে করে শুরু করে। কিন্তু ইসলামে বিদ'আত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ মর্মে এরবায বিন সারিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “(ধর্মের মাঝে) নতুন কিছু সৃষ্টি করা থেকে তোমরা সাবধান! কেননা প্রত্যেক নতুন সৃষ্টি পথভ্রষ্টতা।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, ইবনু হিব্বান হাদীছটি বর্ণনা করেছেন)
অনেকেই বলেন এটাতো বারণ নাই; ওটাতো বারণ নাই। মূল বিষয় হচ্ছে উপরের যে হাদিসটি দেওয়া হয়েছে; এবং এরূপ আরও প্রচুর হাদিস আছে যার দ্বারা প্রমানিত যে নতুন কোন ইবাদাত তৈরী হলেই সেটা বিদ'আত আর প্রত্যেক বিদ'আতই বাতিল। যদিও আমাদের সমাজে কিছু লোক বলে থাকেন যে কিছু বিদ'আত আছে ভালো (নাউজুবিল্লাহ)। তারা কি এটা বুঝেন না যে যেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল বিদ'আত কে, জ্বী হ্যাঁ সকল বিদ'আতকেই প্রথভ্রষ্টতা বলেছেন।
আমাদের সমাজে প্রচলিত বিদ'আত গুলির মধ্যে আজকে একটি বিদ'আত পালন হচ্ছে, ঈদ-ই-মিলাদুন নবী নামে। যেটি স্পষ্ট বিদ'আত; কিন্তু কিছু মানুষ এটি পালনে খুবই তৎপর। এমনকি তারা এটি পালনের স্বার্থে রাসুলুল্লাহ ও তাঁর সাহাবীদের নামে মিথ্যা কথা প্রচারেও পিছ পা হচ্ছেন না!
বিদ'আত জিনিষটার শুরু হয় ভালো মনে করে, আর একারণে অনেকেই বিদ'আত থেকে চেষ্টা করেও ফিরে আসতে পারেন না।
নিচের অংশটুকু এই ব্লগেরই একজন ব্লগারের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নেওয়া; আমি কথাগুলির সাথে একমত দেখেই সরাসরি কপিপেষ্ট করে শেয়ার করছি।
কেন শয়তান বিদ'আতে খুশি হয়
১. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "অতঃপর, সর্বোত্তম বাণী হল আল্লাহর কিতাব। সর্বোত্তম হেদায়াত হল মুহাম্মাদের হেদায়াত। সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যাপার হল এর মাঝে নতুন কিছু সৃষ্টি করা। আর প্রত্যেক বিদ'আতই ভ্রষ্টতা"। অর্থাৎ বিদআত করলে সে সরাসরি ভ্রষ্টতার মধ্যে পড়লো, শয়তান খুশি না হয়ে যায়?
২. আবার উপরের হাদিসেই ফেরৎ আসেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন যে প্রত্যেক বিদ'আতই ভ্রষ্টতা; আর সেখানে কিছু বিদ'আতী বলে, কিছু বিদ'আত আছে ভালো! সরাসরি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথার বিরোধীতা করানো যাচ্ছে; শয়তান খুশি না হয়ে পারে?
৩. আরও একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, "আল্লাহ তা’আলা বিদআতকারীর তওবায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখেন যতক্ষণ না সে তার বিদআত পরিত্যাগ না করে।" - এখন যে বিদ'আত করছে সে তো মনে করে ভালো কিছু করছে; আর সে ভালো কিছুর জন্য কেন তওবা করবে? সেহেতু বিদ'আতী বিদ'আত করতে করতেই ধ্বংসের পথে এগিয়ে যায়; আর শয়তান হয় খুশি।
৪. আরও একটি বর্ণনায় এসেছে, "যে ব্যক্তি বিদআতীকে আশ্রয় দেয় তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ"। এখন আশ্রয় মানে কি শুধু ঘরের মধ্যে ঢুকায় থাকতে দেওয়া? আরও বড় করে চিন্তা করলে দেখবেন যদি কেউ কোন বিদ'আতীর কথাবার্তাকে সাপোর্ট করে, সেটাও তাকে আশ্রয় দেওয়ারই নামান্তর হয়। আর আমি-আপনি এই কাজটি করে (বিদ'আতের পক্ষে সাফাই গেয়ে) আল্লাহর অভিশাপে পড়ছি; শয়তান খুশি না হয়ে উপায় আছে?
৫. আরও একটি বর্ণনায় এসেছে, "অচিরেই আমার পরে এমন সব লোক তোমাদের নেতা হবে যারা সুন্নাতকে বিলুপ্ত করবে, বিদ'আতের অনুসরণ করবে এবং নামায নির্দিষ্ট ওয়াক্ত থেকে বিলম্বে পড়বে।" সুন্নাত বিদায় করে বিদ'আতএর জায়গা হচ্ছে, পাকাপোক্ত হচ্ছে; আর শয়তান খুশি না হয়ে উপায় আছে?
৬. আরও একটি বর্ণনায় এসেছে, "শুনে রাখো ! আমি তোমাদের আগেই হাওযে কাওসারে উপস্থিত থাকবো। অন্যান্য উম্মাতের তুলনায় তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে আমি গৌরব করবো। তোমরা যেন আমার চেহারা কালিমালিপ্ত না করো। সাবধান! কিছু লোককে আমি মুক্ত করতে পারবো। আর কিছু লোককে আমার নিকট থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে। তখন আমি বলবো , হে আল্লাহ ! এরা তো আমার সাহাবী ! তিনি বলবেনঃ তোমার পরে এরা কী বিদআতী কাজ করেছে, তা তুমি জানো না।" কষ্ট করে ইবাদাত মনে করে কাজ করবেন; আর কেয়ামতের দিন আপনাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া হবে; এটাও কি শয়তানের জন্য খুশির খবর নয়?
৭. আরও একটি বর্ণনায় এসেছে, "কেউ বিদআত চালু করলে তার দায় তার উপর বর্তাবে। কোন ব্যক্তি বিদআত চালু করলে বা বিদআতীকে মুক্তি দিলে তার উপর আল্লাহর অভিশাপ এবং ফেরেশতা ও মানবকুলের অভিশাপ।" কেউ কারও কারণে বিদ'আত করলে এই পাপের ভাগ যার কারণে বিদ'আত শুরু হলো সে পাবে; আবার আল্লাহ, ফেরেস্তা এবং মানুষের অভিশাপ তাদের উপর পড়বে। শয়তান খুশি না হয়ে কই যায় বলেন?
যে লোক চুরি করে, ডাকাতি করে, খুন, ঘুষ খাওয়া, সুদ খাওয়া সহ বিভিন্ন পাপ কাজ করে; তার মাঝে মধ্যে হলেও মনে হয় যে সে খারাপ কাজ করছে। তার হেদায়াত পাওয়ার জন্য এই মনে হওয়াটাও কাজ করতে পারে। কিন্তু যিনি বিদ'আত করছেন, তিনি সব সময়ই মনে করছেন যে তিনি ভালো কাজ করছেন। এবং তার এই চিন্তা তাকে এমনভাবে আচ্ছন্ন করে রাখে যে তিনি "বিদ'আত" বিষয়টা যে কি তাও একটু জানতে চান না। ভালো কাজ করছেন শান্তি নিয়েই চলতে থাকেন।
উপরের সকল হাদিসের রেফরেন্স অবশ্যই আছে; এবং সকল হাদিসই সহীহ হাদিস। ইচ্ছাকরে রেফরেন্স দেই নাই। যদি কোন ভাই/বোন ঘাটতে গিয়ে বিদ'আত সম্পর্কে আরও একটু পড়েন; এই আশাতেই।
আল্লাহ আমাদেরকে বিদ'আত থেকে বাঁচার তৌফিয়ক দান করুন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:২১