ইহা একটি আজাইরা প্যাচাল মূলক পোষ্ট। যাহাদের সময় কম, তাহারা না ঢুকিলেও চলিবে। বিশেষ কিছু নাই এই পোষ্টে।
গত ২০-২২ দিনের মধ্যে আমার জীবনে একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তনটা ভালো নাকি খারাপ বুঝতে সময় লাগবে। তবে আশাকরি ভালোই হবে। ২০-২২ দিন। আমার কাছে কয়েক মাসের চাইতেও বেশী মনে হচ্ছে।
২০০৮ এ যখন ঢাকায় পা রাখি, তখন মনে হয়েছিলো যেন খাঁচার বাইরে পা রাখলাম। একলা স্বাধীন ভাবে ঘুরে বেড়ানো, ইচ্ছা মত যা খুশি করা ইত্যাদি ইত্যাদি। ভার্সিটি পেরিয়ে ব্যবসায় হাত লাগানো, গুটি গুটি পায়ে চলা, পাহাড় উৎরানো, আবার পাহাড়ের আড়ালে পড়ে যাওয়া, আবার পাহাড়ে ওঠা.... এভাবেই চলছিলো।
আব্বার ধারণা ছিলো আমি নিজে নিজে কিছু করতে পারবো না; তার ধারণা অনেকটাই ভুল প্রমানিত করতে পারবার পরও বুঝতে পেরেছিলাম তার মনের তৃপ্তি অর্জন করতে পারি নাই। তাই তার অনুরোধেই দেশ ছাড়লাম। দেশ ছাড়া মানে আপনজন ছাড়া, দেশ ছাড়া মানে শিকড় ছাড়া। তবে আমাকে সেই কষ্টটা তেমন পেতে হয়নি; কারণ আমি যেখানে পৌছেছি, সেখানে আগে থেকেই বড় ভাইয়ের পরিবার ছিলো। দ্রুতই বছর দেড়েক চলে গেলো। ইচ্ছা ছিলো ব্যবসা করবো। কিন্তু হোস্ট কান্ট্রির বেহাল দশায় সেটা না হওয়ায় ভাইয়ের পরামর্শে একটা চাকরীর জন্য দরখাস্ত করলাম। দেশের হিসাবে মাইনে প্রচুর!
যদি কেউ আমাকে প্রশ্ন করে চোখে না দেখেই কোন জায়গাটা তোমার পছন্দ, আমি বলে দিতে পারি নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের কথা। সোজা সোজা রাস্তা এটার বড় কারণ। চাকরীর ইন্টারভিউয়ের জন্য এক শহরে পৌছাতে হবে আমাকে। ম্যাপে প্রথমবারের মত এই শহর ভালো ভাবে লক্ষ্য করতেই বেশ আনন্দ লাগলো এখানেও সোজা সোজা রাস্তা; বরং ম্যানহাটনের থেকে বেশী! বিমানে চেপে বসলাম। বিমান ল্যান্ড করবার আগে সেই রাস্তা দেখা হলো। আমি জানি নিচের গাড়ি গুলি কমসেকম ৮০-১৩০ কিলো/ঘন্টা বেগে চলছে; কিন্তু বিমান থেকে মনে হলো যেন গাড়ি গুলি ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চলছে।
শহরের সোজা রাস্তা গুলিকে কেমন যেন শত্রু মনে হচ্ছিলো! এমনতো হবার কথা নয়।
পরদিন সকালেই ইন্টারভিউ; ইন্টারভিউ ১২:৪৫ এ হলেও ওখানে উপস্থিত হলাম ৯টার মধ্যেই। আরও কয়েকজন বসে আছেন ইন্টারভিউয়ের জন্য। লোক নেওয়া হবে ১জন; যদ্দুর জানি এপ্লাই করেছে ২৭০জন। খুব স্পেসিফিক কিছু স্কিলসেট এর দরকার এটার জন্য; ভাগ্যক্রমে আমার সেটা আছে।
ইন্টারভিউ, জীবনের প্রথম ইন্টারভিউ বলা চলে। ইন্টারভিউ দিয়ে বড় ভাইকে ফোন দিলাম, কেন যেন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করতেছিলো আমি এখানে কাজ করবো না। বলতে পারি নি। তবে তাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম কাজ করতে চাই না। যত জনকে এই কথা বলেছি, সবাই বলে আগে তো ইন্টারভিউয়ের রেজাল্ট দিক, তারপর দেখা যাবে। কিন্তু খুব সম্ভবত আমি জীবনে এর থেকে বেশী শিওর কোন জিনিষে আগে হই নি যে আমি চাকরীটা পাবো।
ইন্টারভিউ দেবার ২৬ দিনের মাথায় আবিস্কার করলাম বিশাল মরুভূমির মধ্যে ৯৫০ কিলোমিটারের দীর্ঘ পথে আমি একলা গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছি; আর দু'দিন পরই চাকরীতে জয়েন করতে হবে।
আসার পথটিও অনেকটা সোজা বলতে হয়, প্রায় ১৮০ কিলো মিটারের মধ্যে কোন পেট্রোলপাম্প বা মসজিদ চোখে পড়লো না; দু একটা ভাঙ্গা ঘরের মত কিছু আছে যেটায় অনেকেই নামাজ পড়ে বোঝা গেলো, তবে প্রতিষ্ঠিত কিছু না। রাস্তার দু'পাশের পাহাড় আর বালির মরুভূমি; তার মধ্যে ঢুলুঢুলু চোখে আমার অনিশ্চিত যাত্রা।
এ শহরে পা দিয়েই বুঝতে পারলাম যে ব্যাচেলর থাকা শুধু ঢাকা শহরে ঘর পাওয়ার বিরুদ্ধে বড় সমস্যা না; এদেশেও। তবে যদি একটু নিন্ম মানের থাকার ব্যবস্থা কেউ চায়, তাহলে কোন সমস্যা নাই। হারা নামে একটা এলাকায় বাংলাদেশী-ইন্ডিয়ান-পাকিস্তানী সব মিলে মিশে একাকার। এই এলাকায় ঢুকলেই মনে পড়ে মিরপুর ১০ নম্বরে মানুষের আলগোছে হেটে চলার কথা।
সোজা পথের শহর আর একলা আমি, প্রতি নিয়ত এক ঝিম ধরা মাথা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো। ২০০৮ এর একাকিত্ব আর স্বাধীনতা প্রিয় আমি ২০১৯ এ এসে ঘুমের মাঝেও হাতড়ে খুঁজি যে পাশে কেউ আছে কি না!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৬:৩৫