ব্লগিং প্ল্যাটফর্মে আনাগোনা করলে 'মুক্তচিন্তা', 'বিজ্ঞানমনস্ক' চিন্তা শব্দগুলো বেশ চোখে পড়ে। আবার এই শব্দগুলোর সাথে 'ধর্ম' শব্দটাও উঠে আসে সময়ে সময়ে। এমন একটা প্রচলন তৈরি হচ্ছে যে যারা ধার্মিক তারা মুক্তচিন্তা কিংবা বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা করতেই জানে না। ধার্মিক মানেই সেকেলে, গেঁয়ো, মূর্খ; এবার সে যদি শিক্ষিত, জ্ঞানী-গুনি-বিজ্ঞানীও হয়ে থাকে। আর ধর্মের তকমাটা সরিয়ে নিলেই সে হয়ে যাবে বিজ্ঞানমনস্ক - মুক্তচিন্তার মানুষ; সে অশিক্ষিতই হোক আর শিক্ষিতই হোক।
অনলাইন কিংবা ব্লগিং জগতে নাস্তিকদের আনাগোনা বেশী এই জন্যই যে, সরাসরি মত প্রকাশের অবকাশ তাদের কম। যার জন্য অনলাইনে তারা একটু বেশীই সক্রিয়। ইদনিংকালে দু-চারটা বইও বের হওয়া শুরু হয়েছে। লেখালেখিতে তারা অনেক পারদর্শী তা বলতেই হবে। যুক্তি তর্কেও অগ্রগামী। বিস্তর পড়াশোনাও যে নাই, তা অস্বীকার করার জো নেই। একটা চিরসত্য কিছুকে মিথ্যায় পরিনত করতে হলে কিছু উপকরণ নিয়েই তো মাঠে নামতে হয়। এইজন্য ব্লগিং প্লাটফর্ম টা তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে বলা চলে।
যাই হোক, নাস্তিকদের নিয়ে কিছু বলা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার কথা হল যারা ধর্ম মেনে চলে তারা কিভাবে মুক্তচিন্তা করতে পারে না? আমার শ্রদ্ধেয় ব্লগার ভাইয়েরা ধার্মিক বলতে উদাহরণ হিসেবে টেনে আনেন অজো পাড়াগাঁয়ের কোন এক মাদ্রাসা ছাত্রকে। উনাদের চোখে ধার্মিক নেতা, বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, খেলোয়াড়, ব্যাবসায়ীসহ অন্যান্য পেশাজীবীদের চোখে পড়ে না। এমনো দেখেছি যে, অনেক প্রখ্যাত ব্যক্তি কিংবা বিজ্ঞানীদের কে ধর্মের দালাল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যারা ধর্মের পক্ষে কিংবা সৃষ্টি কর্তার অস্তিত্ব নিয়ে কথা বলেছেন। যারা প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানীকে নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তারা কিভাবে নিজেদেরকে বিজ্ঞান্মনস্ক বলে ভাবে?
পৃথিবীতে আজো বেশীরভাগ মানুষেরই ধর্ম বিশ্বাস আছে। ধর্ম বিশ্বাস নিয়েই পৃথিবীর অগ্রসর হয়েছে এবং হচ্ছে। এমন না যে, ধর্মে বিশ্বাস করার কারণে পৃথিবী এক জায়গায়ই থমকে আছে। নতুন চিন্তাধারা, বিজ্ঞানমনস্ক ধ্যান ধারণা ছাড়াই তো আর পৃথিবী আজকের অবস্থায় আসে নাই। আর বর্তমান পৃথিবীর পেছনে যাদের অবদান তাদের কয়জনই বা নাস্তিক ছিল? কয়জনই বা নিজেদের বিজ্ঞানমনস্ক বা মুক্তচিন্তার মানুষ বলে গরিমা প্রকাশ করত? আর কয়জনই বা ধর্মকে হেয় প্রতিপন্ন করতে উঠে পড়ে লেগেছিল?
সবারই কথা বলার অধিকার থাকুক, সবাই মুক্তচিন্তা করতে শিখুক, মুক্তভাবে বাঁচার অধিকার আদায় করতে জানুক। কিন্তু আমিই মুক্তচিন্তার মানুষ বলে অহংবোধ থেকে দূরে সরে আসতে হবে। মুক্তচিন্তার দোহাই দিয়ে অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করার হীন মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। সৌহাদ্যবোধ, সৌজন্যতাবোধ, সন্মানবোধ গড়ে উঠুক একে অপরের প্রতি, এইটাই কাম্য।