somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নষ্ট সমাজ ব্যবস্থা ৭ঃ পঁচা ঘূঁণে ধরা সমাজে ডাঃ সাবরিনা শারমিন হোসাইনের বাস্তব নির্লজ্জ আস্ফালন

১৬ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কেউ কি একদিনে রাতারাতি বিরাট পাপী হয়ে যেতে পারে?
না, এটা কোনদিনও সম্ভব না।
.
কিন্তু আমাদের দেশের টিভি চ্যানেল, মিডিয়া, সোশাল মিডিয়া এবং পত্র-পত্রিকাগুলির কাণ্ড কারখানা দেখলে মনে এটা সম্ভব। একদিনেই কেউ একজন দেশ উলট পালট করে দিতে পারে। এর সাথে মিডিয়াগুলির লম্ফঝম্ফ দেখলে মনে হয় দেশে আর কোন নিউজ হতে পারে না। একটা করে বড়-বিরাট-বিশাল পাপী ধরা পরেছে, ব্যাস বেশ কয়েকদিনের পত্রিকা বিক্রী এবং চ্যানেল দিনরাত চালানোর রসদ যোগাড় হয়ে গেছে………
.
জী, আপনি যেই দেশে বাস করেন আমি সেই দেশের কথাই বলছি।
সাত আসমানের উপরে কোন দেশ কিংবা ভুগর্ভের কোন দেশের কথা বলছি না।
.
এর আগেও আপনার সবাই পাপিয়া’কে নিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। পাপিয়া খারাপ, মেয়েবাজি করে বেড়ায়, পতিতাবৃত্তির সাথে জড়িত। একে এয়ারপোর্ট থেকে ধরে নিয়ে এসেছিলেন। এখন পাপিয়া জেলে ঢুকে গেছে এবং দেশও ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। একজন ঠিক এই বিষয়ে দেশ আইছ কুল নেশন!
.
আচ্ছা, পাপিয়া যাদের প্রচ্ছন্ন, প্রত্যক্ষ, সরাসরি মদদে এই কাজগুলি করে বেড়াতো তাদের এখন কি অবস্থা? যাদের নিয়মিত টাকা দিতো? যার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতো? যাদের মৌজ ফুর্তির জন্য কোটি কোটি টাকা শুধু হোটেলেরই বিল দিতো। এদের কি কোন শাস্তি হয়েছে?
জী, না হয় নি। কেন?
কেন এখন সবধরণের মিডিয়াই এই বিষয়ে নিশ্চুপ? কারণ ভাসুরের নাম মুখে নেয়াও পাপ। এই দেশে থাকতে হবে না? ডিজিটাল আইন প্রণয়ন কেন করা হয়েছে ভাবুন তো?
.
এক কেসের লোকান্তরে লক্ষ কেস ঘরে ঘরে…………………………….
.
সম্প্রতি আমাদের স্বনামধন্য মিডিয়া নতুন আরেকটা কেস বের করেছে,
শ্রীমতি ডাঃ সাবরিনা শারমিন হোসাইন।
(অল্প কয়েকদিন হলো নতুন কিছু সম্মোধন শেখা শুরু করেছি। বাংলা একাডেমি এখন তো আর চিন্তাভাবনা করে সময় নষ্ট করে না। সোজা উত্তরপাড়া কপি পেস্ট মেরে দেয়।)
সব জায়গাতেই এই মেয়ে জয়-জয়কার। মিডিয়া একদিনেই একে নিয়ে তেলেশমাতি কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছে। দেশের সব মানুষই এখন একে চেনে। কিন্তু কয়েকটা দিন আগে কি সবাই এক চিনতো?
না।
.
এই মেয়ে কি তখন মিডিয়া’তে, সোসাল মিডিয়াতে ছিল না? টিভি চ্যানেলে আসতো না?
জী ছিল। প্রায় নিয়মিতই ছিল। বসে বসে আপনারই একে টিভি প্রোগ্রামে দেখেছেন। ইউটিউবে ভিডিও দেখেছেন। তখন কেন আপনাদের এই মেয়েকে এত খারাপ মনে হয়নি?
.
কারণ মিডিয়া চোখে তখন বড় কালো রংয়ের ঠুলি পড়ে ছিল। ইচ্ছেকৃত না অনিচ্ছাকৃত সেটা জানার জন্যই এই পোস্টের অবতারনা। চলুন দেখে আসি এই মেয়েকে নিয়ে মিডিয়া এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর যত সব তেলেশমাতি কাণ্ড!
.
সাবরিনা আসলে কী করেছে ছোট করে দেখে আসি প্রথমে-
সমগ্র বিশ্বের জন্য রোল মডেলের এই দেশে এটা একটা সর্ম্পূণ নতুন অভিজ্ঞতা। এটি নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের একটি সিনেমা হতে পারে, অনন্ত জলিল সিনেমা বানাতে পারে 'দ্যা করোনা – করো না'। যেকোন থ্রিলার, হরর, পার্ভারশন যেকোন ধরণের মুভি এই অসাধারণ বিষয়টা নিয়ে বানানো যেতে পারে। সাবরিনার প্রতিষ্ঠান জেকেজি আসলে কি করেছে সেটার ছোট করে একটা উদাহরণ দেই-
.
ধরুন আপনি করোনা টেস্ট করার জন্য টাকা জমা দিয়েছেন। এরপর জেকেজি আপনার বাসা থেকে স্যাম্পল কালেক্ট করে সেটি যাওয়ার পথে কোন একটা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে অফিসে চলে গেলো। তারপর পরেরদিন আপনাকে মোবাইলে রেজাল্ট পাঠালো জনাব আপনি করোনা পজেটিভ। যথারীতি আপনি চরম আতংকে বাসার বাকিসব সদস্যাদেরও টেস্ট করার জন্য এদের ডাকবেন। এবারও সব স্যামপ্ল ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আপনাকে জানানো হবে এরা সবাই পজিটিভ। এরপর এদের সাথে যাদের যাদের দেখা সাক্ষাৎ হয়েছিল তাদের সবগুলিকে আবার টেস্ট করানোর জন্য এদের ডাকবেন......................
.
আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই ধরণের ভয়াবহ দূর্নীতির কাজ আমি, আপনি কিংবা সাধারণ কোন মানুষ বা ব্যবসা প্রতিষ্টান কি করতে সাহস পাবো? না পেলে এরা কিভাবে প্রায় এগারো হাজার লোকের সাথে করলো? ভেবে দেখুন?
.
প্রথমেই বলেছি পাপী একদিনে তৈরি হয় না। কেন হয়না তা সাবরিনা জীবন কাহিনী পড়লেই বুঝা যায়!
.
‘ডা. সাবরিনা শারমিন হোসাইন’ এর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে যা যা বের হয়ে এসেছেঃ
সৈয়দ মোশাররফ হুসাইন নামে এক সাবেক আমলার মেয়ে সাবরিনা ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১৯৯৩ সালে এসএসসি ও পরে এইচএসসি পাস করেন। এরপর এমবিবিএস পাস করেন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে।২৭তম বিসিএসে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। সাবরিনার আগেও বিয়ে হয়েছিল এবং সেই ঘরে তার দুই সন্তান রয়েছে। তবে আরিফুলকে বিয়ে করার পর তাদের কোনো সন্তান হয়নি বলে তাদের ঘনিষ্ঠ একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
জেকেজি’র চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী আসল নাম সাবরিনা শারমিন হোসেইন। ভিকাকরুনেসা স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেন। তার ছোট এক বোন রয়েছে। তার ইচ্ছা ছিল সিনেমার নায়িকা হওয়ার । এ জন্য তিনি নাচও শিখেন। প্রথমে শিবলী ও পরে নিপার কাছে নাচের তালিম নেন।তার জন্ম হল্যান্ডে। তার পুরো পরিবার আমেরিকা থাকেন। ২০১৯ সালের ৩ জুলাই কলারস এফ এম ১০১.৬ নামে একটি অনলাইন রেড়িও সাবরিনা এ তথ্য জানান। সেখানে তার বিয়ে, সন্তান, চাকুরি নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
.
সিনেমায় অভিনয় করার জন্য করার জন্য কয়েকজন উঠতি পরিচালকের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। তাদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডাও হতো। কিন্তু বিষয়টা তার বাবা জেনে যায়। বেড়ি পড়ে সাবরিনার পায়ে। ফলে তার নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন থমকে যায়। পরে অনেকটা তার মতামত না নিয়ে বিয়ে দেয়া হয় পারিবারিকভাবে।স্যার সলিমউল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার আগেই পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়ে যায়। এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পরই তার প্রথম সন্তান জন্ম নেয়। এমবিবিএস পাশ করে বিসিএস পাশ করার বছরই দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়। তার চাকুরি হয় দিনাজপুরে। ওই সময় থেকে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে ডা. সাবরিনা শারমিন হোসাইন। ফলে তার স্বামীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না। স্বামীকে তালাক দেয় সাবরিনা। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের একনেতার সঙ্গে সখ্যতা করে দুই বছর পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি হয়ে আসে। ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএস কোর্সে গবেষণা শুরু করেন। গবেষণাকালীন সময়ে বিভিন্ন শিক্ষক ও চিকিৎসকদের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন অনৈতিক সর্ম্পকে। ২০১৫ সালে এমএস ডিগ্রী পান ডা. সাবরিনা। সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করাকালীন তার এক চিকিৎসক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয় হয় ব্যবসায়ি আরিফুর রহমান চৌধুরীর। দীর্ঘদিন দুই পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে। সাবরিনা আরিফকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেয়। এক পর্যায়ে আরিফ তার তৃতীয় স্ত্রীকে তালাক দেয়। ডা. সাবরিনা হন আরিফের চর্তুথ স্ত্রী।নাম বদল করে ডা. সাবরিনা শারমিন হোসাইন হয়ে যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী। সাবরিনা আরিফের চতুর্থ স্ত্রী । তার প্রথম স্ত্রী রাশিয়ায়, দ্বিতীয় স্ত্রী লন্ডনে। তৃতীয় স্ত্রী বাংলাদেশে থাকলেও সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে।
.
ডা.সাবরিনা বিএমএ’র এক নেতার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে জুনিয়র কার্ডিয়াক সার্জন হিসাবে চাকুরি নিতে সক্ষম হন। পরে রেজিস্টার পদে প্রমোশন পান। সেখানকার ইউনিট প্রধা্ন স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের নেতা কামরুল হাসান মিলনের সঙ্গে পরকীয়া জড়িয়ে যান সুন্দরী ডা. সাবরিনা। বিষয়টি জেনে যান আরিফ এবং একদিন হাতে নাতে ধরে ফেলেন। দু’জনকে মারধর করেন আরিফ। এ ঘটনায় স্বামী আরিফের বিরুদ্ধে শেরে বাংলা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন সাবরিনা। কামরুল হাসান মিলনের ক্ষমতায় ক্ষমতায়ন হয়ে দাপিয়ে বেড়াতে ড. সাবরিনা। নিজের আসল নাম সাবরিনা শারমিনা হুসাইন বাদ দিয়ে সাবরিনা আরিফ চৌধুরী লিখেন নেম প্লেইটে। এটিও তার প্রতারণা অন্যতম।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করে আসা ডা. সাবরিনা জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী। সে কারণে সাবরিনা আরিফ চৌধুরী নামেই তিনি পরিচিত। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ওভার গ্রুপ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা এ চৌধুরী।
.
সরকারি চাকরি করেও সুন্দরী, স্মার্ট ডা.সাবরিনা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ বাগাতেন। এর বাইরে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড, বিশিষ্টজনের নাম ভাঙিয়ে ফায়দা নেয়া, হুমকি-ধমকি, সন্ত্রাসী বাহিনী লালন-পালনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। জেকেজির সিইও আরিফ চৌধুরী গ্রেপ্তারের পর থেকেই নিজের গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন স্থানে তদবির করছিলেন সাবরিনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে সরকারদলীয় নেতা, চিকিৎসক নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। কেউ কেউ তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
.
অনলাইনে বিশাল সেলিব্রিটি হবার কারণে, সকলেই দেখেছে বছরের পর বছর দেশ বিদেশে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে আরিফুল চৌধুরী ও ডাঃ সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ঘুরে বেড়িয়েছেন। স্বামী-স্ত্রী হিসেবে তাদের হৃদ্যতা অনেকের কাছেই আকাঙ্ক্ষিত ছিলো প্রচন্ড, কারণ এই বয়সেও তাদের অত্যন্ত রোমান্টিক চলাফেরা, ঘুরে বেড়ানো, অন্তরঙ্গ মধুমাখা ছবি রীতিমত ঈর্ষা জাগানিয়া ছিলো বটে।
.
কি চমৎকার জীবন বৃত্তান্ত তাইনা? এখন একবার ভাবুন তো ডাঃ সাবরিনার এইভাবে দ্রুত উপরে উঠা কি সর্ম্পূণ একক প্রচেষ্টায় হয়েছে? একা একা সে এতদুর চলে এসেছে? তাই মনে করে আপনি?
.
যারা এইলেখার বক্তব্যের সাথে একমত না তাদের জন্য নীচে সংবাদ পত্রগুলিতে আসা বিভিন্ন নিউজগুলি দেখে আসি এবং যেইসব প্রশ্ন মনে তৈরি হইয়ে সেটাও দেখে আসি-
.
ঘটনাঃ ১
কামরুল-সাবরিনার অন্তরঙ্গ সম্পর্কের বিষয় তাদের কর্মস্থল থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও চিকিৎসক মহলে এখন ওপেন সিক্রেট। সবার মুখে মুখে শুধু কামরুল-সাবরিনার অন্তরঙ্গ সম্পর্কের কাহিনী।জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র চিকিৎসক ডা. কামরুল হাসানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন ডা. সাবরিনা। কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের ইউনিট-৩ প্রধান প্রফেসর ডা. কামরুল হাসানের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর ধরে সাবরিনার অন্তরঙ্গ সম্পর্কের অভিযোগ ছিল। সাবরিনা প্রফেসর কামরুলের অধীনেই কর্মরত আছেন।একটি অনুষ্ঠানে তাদের দুজনের নাচের একটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটিতে হিন্দি গানের সঙ্গে কামরুল ও সাবরিনাকে খুব ঘনিষ্ঠভাবে নাচতে দেখা গেছে। ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পরে বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।এছাড়া কামরুল-সাবরিনার বেপরোয়া চলাফেরা, বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানো, জেকেজির মতো ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে প্রভাব খাটিয়ে কাজ পাইয়ে দেয়ার ঘটনা জানাজানির পর খোদ কামরুলের সহকর্মী ও চিকিৎসক সমাজ ধিক্কার দিচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ইতোমধ্যে জেকেজির চেয়ারম্যান সাবরিনাকে করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজ পাইয়ে দেয়ার পেছনে কামরুলের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, শিগগিরই ডা. কামরুলকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডা. কামরুল ও ডা. সাবরিনার চেনাজানা অনেক বছরের। পরিচয়ের পর থেকে দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা শুরু হয়। কৌশলে তারা একই ইউনিটে দায়িত্বও নেন। একই ইউনিটে কাজ করার সূত্রে দুজন খুব কাছাকাছি থাকতেন। অভিযোগ আছে সাবরিনা উপস্থিত না হলেও তার হাজিরা উঠে যেত। দিনের পর দিন অফিস ফাঁকি দিয়েও সরকারি বেতন নিয়েছেন। অফিস করেছেন নিজের খেয়ালখুশি মতো।সাবরিনার প্রতি দুর্বল হওয়াতে তার অনুপস্থিতির বিষয়ে কিছুই বলতেন না ডা. কামরুল। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাবরিনা যতক্ষণ অফিসে থাকতেন ততক্ষণ তিনি কামরুলের কক্ষেই থাকতেন। সাবরিনা তার কক্ষে এলে কাউকে প্রবেশ করতে দিতেন না কামরুল। শুধু অফিস নয় বাইরেও তাদেরকে একসঙ্গে দেখেছেন অনেকে। সাবরিনা গ্রেপ্তারের কিছুদিন আগেও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী একটি রেস্টুরেন্টে তাদের দুজনকে এক সঙ্গে দেখা গেছে। কামরুল ও সাবরিনাকে আপত্তিকর অবস্থায় পেয়ে সাবরিনার স্বামী কামরুলকে মারধর করেছিলেন বলেও আলোচনা আছে। এ ঘটনায় সাবরিনা শেরেবাংলা নগর থানায় একটি জিডিও করেছিলেন। পরে পুলিশ তদন্ত করতে গেলে সাবরিনা জানান তারা নিজেদের মধ্যে বিষয়টি মিটমাট করে ফেলেছেন। সূত্রমতে, তাদের দুজনের অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটানোর ঘটনা নতুন কিছু নয়। মূলত কামরুলের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড করতেন। কামরুলও তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করতেন। ২০১৫ সাল থেকে আরিফ চৌধুরী তার দাদির নামে জেকেজি হেলথ কেয়ার নামের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করেন। এটি একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। বিএমএ নেতা ডা. কামরুলের প্রভাবেই সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফের প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দিবস, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএমএ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ পেয়ে আসছিল।
সর্বশেষ তারা করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজ পেয়েছিল। ট্রেড লাইসেন্সের আগেই কোনো রকম বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই স্পর্শকাতর এই কাজটি পেতে সাবরিনা কামরুলকেই ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ আছে।শুধু তাই নয়, বুথ স্থাপনের জন্য আর্চওয়ে, ওয়াকিটকি, ল্যাপটপসহ আরো কিছু জিনিস তারা ভাড়ায় নিয়েছিল। কিন্তু এসব ভাড়ার এক টাকাও তারা পরিশোধ করেনি। সূত্র বলছে, সাবরিনা ও আরিফ দম্পতির অবৈধ সকল আয় থেকেই একটা বড় ধরনের ভাগ পেতেন ডা. কামরুল। এজন্য সাবরিনার সকল কাজেই তিনি সহযোগিতা করতেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডা. কামরুল হাসান মিলন ছাত্রলীগের ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ছাত্র জীবন থেকেই কামরুল ছিলেন বেপরোয়া। নেশার জগতে ডুবে থাকতেন। ২০০০ সালে আগারগাঁও পাকা মার্কেটে কয়েকজনের সঙ্গে থাকা অবস্থায় পাগলা তপন নামের এক সন্ত্রাসী তাদের ওপর গুলি চালিয়েছিল। ওই গুলি কামরুলের বুকে লেগেছিল। পরে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হয়েছিলেন। নেশার আসরে ওই গুলির ঘটনাটি ঘটেছিল বলে তখন আলোচনা ছিল।
হৃদরোগ ইন্সটিটিউট সূত্র জানিয়েছে, ডা. কামরুল হাসান মিলন একসময় কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। ওই সময় তিনি বিভাগীয় প্রধানের জন্য নির্ধারিত কক্ষটি ব্যবহার করতেন। পরবর্তীতে বিভাগীয় প্রধান করা হয় অধ্যাপক ডা. রামপদ সরকারকে। কিন্তু রামপদকে বিভাগীয় প্রধান করার পরেও কামরুল বিভাগীয় প্রধানের কক্ষটি ছাড়েননি। এমনকি তার নেমপ্লেটে নামের পাশে বিভাগীয় প্রধানের পদবিও সংশোধন করেননি।
ডা. রামপদ সরকার ছোট্ট একটি কক্ষে বসে তার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের বিভিন্ন পর্যায়ের স্টাফরা জানিয়েছেন, ডা. কামরুল শুধু বিভাগীয় প্রধান রামপদ সরকারকে কোণঠাসা করে রাখেননি। তিনি হাসপাতালের সর্বত্রই প্রভাব বিস্তার করতেন। কামরুল-সাবরিনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ব্যাপারে সবাই জানতো। কামরুলের নানা অনিয়মের বিষয়ে জানার পরও তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পেতো না কেউ। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রফেসর ডা. কামরুল হাসান মিলন মানবজমিনকে বলেন, এটা একটা জঘন্য ঘটনা। আরো ৪-৫ জন চিকিৎসক আমার সঙ্গে যেভাবে ছিল সাবরিনাও একইভাবে ডিউটি করতো। রেজিস্ট্রার মানে হলো- পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করা, ডিপার্টমেন্টাল হেডদের সঙ্গে বসা ও অপারেশন থিয়েটারে অংশ নেয়া। এটা একটা একাডেমিক পরিবেশ।
নাচের ভিডিও নিয়ে তিনি বলেন, এটি একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের। এসব প্রোগ্রামের শেষদিকে কালচারাল একটা পার্ট থাকে। সেখানে গান নাচ, কবিতা, নাটকের ব্যবস্থা থাকে। তখন ছাত্রছাত্রীদের দাবি থাকে শিক্ষকরা তাদের সঙ্গে পারফর্ম করবে। সেখানে অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও ছিল। তাদের বলাতেই পারফর্ম করতে হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলের অ্যালামনাইতে ৭০ বছরের চিকিৎসককেও শিক্ষার্থীরা পারফর্ম করতে বলে। বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, একটি কুচক্রী মহল এসব ছবি, ভিডিও বের করে আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষের জীবনে তো কত দুর্ঘটনাই থাকে। তাই আমরা মূল জায়গাটাতে থাকি, এটা জাতীয় ক্রাইসিস।
বিভাগীয় প্রধানের কক্ষ দখল নিয়ে তিনি বলেন, আমি ছিলাম বিভাগীয় প্রধান। কিন্তু অন্যায়ভাবে আমার অধীনস্থ চিকিৎসককে বিভাগীয় প্রধান বানানো হয়েছে। আমাকে ইউনিট-৩ প্রধান করা হয়েছে। সেগুলো আমার জন্য খুবই লজ্জাজনক। এ নিয়ে আমি একটি রিট করেছিলাম। সেই রিটটা এখনো সুরাহা হয়নি।
.
প্রশ্নঃ কি সুন্দর বয়ফ্রেন্ড ছিল সাবরিনার আর কী সুন্দর তাদের দেনা পাওনার সর্ম্পক?
এতদিন কী মিডিয়া, সোসাল মিডিয়া কিংবা আইন শৃংখলা বাহিনী নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছিল? ডা. কামরুল হাসান মিলন এর নাম কেন সব মিডিয়াতে সেইভাবে প্রকাশ্যে আসছে না? কেন তাকে দিনের পর দিন এই রকম জালিয়াতি করার পরও ধরা হয়নি? ভাসুরে নাম মুখে নেয়া যায় না তাইনা? উনি যেন কোন ছাত্র সংঘটনের সাথে জড়িত?


ঘটনাঃ ২
জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন ডা. সাবরিনা চৌধুরীর মোবাইল কললিস্ট ধরে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। সাবরিনা গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি জব্দ করেছে। পুলিশ তার কল লিস্টে ভিআইপিদের সঙ্গে কথা বলার রেকর্ড পেয়েছে। জেকেজি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর থেকে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলেছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক সাবরিনার কল লিস্টে সাবেক এক প্রভাবশালী মন্ত্রী থেকে শুরু করে বর্তমান এমপি, সরকারদলীয় রাজনীতি করেন এমন ব্যক্তি, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে তার কথা হয়েছে।
সাবরিনা চৌধুরীর ব্যবহৃত ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। জেকেজি’র তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে দীর্ঘদিন ধরে তিনি যে মোবাইল নম্বরটি ব্যবহার করছেন সেটি অন্যর নামে রেজিস্ট্রেশন করা।
পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাবরিনার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি যে জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে রেজিস্ট্র্রেশন করা হয়েছে সেটি পারভীন আক্তার নামের এক নারীর। ওই জাতীয় পরিচয়পত্রে তার ঠিকানা দেয়া আছে ঢাকার বাসাবো এলাকার। পারভীন আক্তারকে নিজের রোগী বলে দাবি করেছেন সাবরিনা। তিনি বলেছেন, মোবাইল নম্বরটি আমাকে একজন দিয়েছে। নম্বরটি সম্ভবত আমার কোনো রোগীর নামে রেজিস্ট্র্রেশন করা। শিগগির তিনি নম্বরটি পরিবর্তন করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশ মনে করছে, সাবরিনা কৌশলেই অন্যের পরিচয়পত্র দিয়ে সিম রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন। যাতে করে কোনো অপরাধ করলে সেটি ধরা না পড়ে এবং সহজেই দায় এড়াতে পারেন। এছাড়া একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে পরিবারের সদস্যদের বাইরের কারো পরিচয়পত্র দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করছেন কী উদ্দেশ্য? তাই তদন্তে তার সিম রেজিস্ট্র্রেশনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
গ্রেফতার হওয়ার আগে রোববার দুপুরে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে সাবরিনার কক্ষে তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।ওই ফোন কার নামে নিবন্ধন করা জানতে চাইতেই হতভম্ব হয়ে যান বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিভিশন আলোচনায় হাজির হওয়া এই কার্ডিয়াক সার্জান।
প্রথমে তিনি বলেন, ওই সিম কার নামে নিবন্ধিত, তা তিনি জানেন না। পরে ব্যক্তিগত গাড়ি চালককে ডেকে এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলেন সাবরিনা। গাড়ি চালক অন্য একজনকে ফোন করে খোঁজ নিয়ে বলেন, ওই সিম সাবরিনারই এক রোগীর নামে নেয়া। সাবরিনা তখন বলেন, ‘সিমটা একজন দিয়েছে, এটা আমার রোগীর নামে হয়ত। খুব শিগগিরই পরিবর্তন করে নেব।’ পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সাবরিনার ওই ফোন নাম্বারটি বাসাবো এলাকার পারভীন আক্তার নামে এক নারীর নামে নিবন্ধিত।
তিনি বলেন, এভাবে সিম ব্যবহার করা আইনসঙ্গত নয়। এই নম্বর ব্যবহার করে তিনি কোনো অপরাধ করলে দায় পড়বে আরেকজনের ওপর। সিম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কোনো জালিয়াতি হয়েছে কি না সেটাও একটি বিষয়। এটা একটা বড় অপরাধ।
সাবরিনার ওই সিম ব্যবহারের বিষয়টিও তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার রুবায়েত জামান। সাবরিনার গাড়ি চালক বলেছেন, গত প্রায় একবছর ধরে তিনি এই চাকরি করছেন। শুরু থেকেই ওই নম্বরেই তিনি ‘ম্যাডামের’ সঙ্গে যোগাযোগ করে আসছেন।
.
প্রশ্নঃ এতদিন কেন তদন্ত হয়নি? এর নামে আগে অনেকগুলি কেস হবার পরও পুলিশ কেন ঘুমিয়ে ছিল? কেন খোঁজ নেয়নি? গ্রীণ সিগন্যাল পায়নি দেখে?
.
ঘটনাঃ ৩
জেকেজি হেল্‌থ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা শারমিন হোসাইন ও তার স্বামী আরিফ চৌধুরী বিষয়ে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চমকপ্রদ তথ্য। তদন্তে এই দম্পতির প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়ে খোদ পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরাই হতভম্ব হয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ জানিয়েছে, সাবরিনা ও আরিফ দম্পতির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জেকেজি ট্রেড লাইসেন্স হওয়ার আগেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে করোনার বুথ স্থাপন করে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে আসে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের ১৬ই জুন সিটি করপোরেশন থেকে জেকেজি’র ট্রেড লাইসেন্স নেয়া হয়। অথচ চলতি বছরের ৬ই এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) স্বাক্ষরিত চিঠিতে জেকেজি তিতুমীর কলেজে বুথ স্থাপন করে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পায়। এছাড়া জেকেজি’র চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা শারমিন হোসাইন বরাবরই দাবি করে আসছিলেন জেকেজি হলো ব্যক্তি মালিকানাধীন ওভাল গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু পুলিশি তদন্তে এখনও ওভাল গ্রুপের সঙ্গে জেকেজি’র কোনো সংশ্লিষ্টতা মিলেনি। কারণ জয়েন্ট স্টক থেকে পুলিশ ওভাল গ্রুপের যে সকল কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে সেগুলোতে এই গ্রুপের সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নাম ও কাগজপত্র পাওয়া গেলেও জেকেজি হেল্‌থ কেয়ারের কোনো নাম বা কাগজপত্র পাওয়া যায়নি।
.
প্রশ্নঃ একজন ট্রেড লাইসেন্স হওয়ার আগে পারমিশন পেয়ে যায় আর আরেকজন করোনা পরীক্ষার কিট বানিয়েও দিনের পর দিন ধরে চড়কির মতো ঘুরছে কিন্তু পারমিশন মিলছে না। রোল মডেলের দেশে কী চমৎকার সব তুঘলকি কাণ্ড দেখা যায়! কেন যায় সেটা ভেবে দেখেছেন কেউ?

.
ঘটনাঃ ৪
পুলিশ জানিয়েছে, তেজগাঁও ডিসি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ থেকে শুরু করে পরের দিন আদালতে হাজিরা পর্যন্ত সাবরিনা পরিবারের কোনো সদস্য আসেননি। কেউ খোঁজও নেয়নি এবং খাবার-কাপড় আসেনি। শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক এসেছিল তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। রোববার ডিসি কার্যালয়ে তিনি যে কাপড়ে এসেছিলেন আদালতে তিনি একই কাপড়ে যান।
.
প্রশ্নঃ এটা কী নতুন নাকি? প্রয়োজন ফুরালে এভাবেই সবাই ছেড়ে যায়? কিন্তু এরপরও এইদেশে মানুষের লোভ কেন কমে না
.
ঘটনাঃ ৫
জেকেজি’র সাবরিনা ও আরিফের হেরেমখানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। গুলশান-২ এ কনফিডেন্স টাওয়ারের ১৫ তলায় জেকেজি’র কার্যালয়েই এই হেরেমখানাটি রয়েছে বলে জানা গেছে। ২৩শে জুন জেকেজি’র সাবেক কর্মী সিস্টার তানজিনা ও হুমায়ুন কবির হিমুকে গ্রেপ্তারের পর তাদের দেয়া তথ্য মতেই পুলিশ গুলশানের ওই অফিসে অভিযান চালায়। ছয় কক্ষবিশিষ্ট ওই অফিস থেকে ল্যাপটপ, করোনার জাল সনদ, পরীক্ষার কিটসহ আরো অনেক কিছু জব্দ করে।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযানের সময় অফিসের পাঁচটি কক্ষ খোলা থাকলেও একটি কক্ষ তালাবদ্ধ ছিল। কক্ষটি কেন তালাবদ্ধ এমন প্রশ্নে আরিফ পুলিশকে জানায়, এই কক্ষের চাবি আরেক কর্মচারীর কাছে। সে বাইরে আছে। পুলিশ তখন ওই কক্ষের চাবি দেয়ার জন্য আরিফকে চাপ দিতে থাকে। কিন্তু সে কিছুতেই চাবি দিতে রাজি হয়নি। একপর্যায়ে পুলিশের অভিযানিক এক কর্মকর্তা ওই কক্ষের দরজা ভাঙার নির্দেশ দেন। তখন আরিফ চৌধুরী ওই কক্ষের চাবি দেন। পুলিশ সদস্যরা ওই রুমে প্রবেশ করে দেখতে পান ফ্লোরের মধ্যে একটি বিছানা। তার পাশে বিদেশি মদের বোতল। তার পাশেই একটি ব্যাগের মধ্যে ডজনখানের কনডম রাখা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম। এছাড়া আরেকটি ব্যাগের মধ্যে করোনা টেস্টের কয়েক হাজার কিট পাওয়া যায়। পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে, এই কক্ষেই প্রতিদিনই মদ, ইয়াবা ও নারীর আসর বসানো হতো। প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে নারীরা আসতেন। তাদের নিয়ে নাচ গান বাজনার তালে তালে নেশায় ডুবে থাকতেন আরিফসহ অন্যরা। এই আসরে আারিফের অফিসের কর্মচারী থেকে শুরু করে অংশ নিতেন বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ। পুলিশ জানিয়েছে, আরিফ দাবি করেছে এখানে তার প্রতিষ্ঠানের রোমিও নামের এক কর্মী স্ত্রী নিয়ে থাকতেন। অফিসের মধ্যে একজন কর্মী কেন স্ত্রী নিয়ে থাকতেন এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি আরিফ। পরে তদন্তে নিশ্চিত হওয়া যায় রোমিও আরিফের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। আরিফের সমস্ত অপকর্মের সাক্ষী। সে এই হেরেমখানার দায়িত্বে ছিল। আরিফ চৌধুরীর গ্রেপ্তারের পর সে গা-ঢাকা দিয়েছে। এখন তাকে খোঁজা হচ্ছে। এর বাইরে পুলিশ খোঁজখবর নিচ্ছে ডা. সাবরিনার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর। রনি নামের ওই বন্ধু পেশায় ব্যবসায়ী। ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার একটি বাসায় থাকেন। সাবরিনা নিজে গাড়ি চালিয়ে ওই বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন বলে অভিযোগ আছে। রনির সঙ্গে তার কি সম্পর্ক, কেন নিয়মিত তার বাসায় যেতেন, জেকেজি’র প্রতারণার সঙ্গে রনির কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা এসব বিষয় খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
.
প্রশ্নঃ এতদিন মনে হয় এরা আসমানের কোন দেশে ছিল যেই কারণে আইন শৃংখলা বাহিনী এদের কোন খোঁজ খবর পায়নি? তা না হলে হুট করে এত তথ্য কিভাবে পেল?

.
ঘটনাঃ ৬
জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা আরিফকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে গ্রেফতারের পর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইনকে বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান স্বাক্ষরিত আদেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইন চাকরিতে থেকেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজি’র চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট প্রদান ও অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বলে আজ ১২ জুলাই পুলিশের হাতে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তা হয়ে সরকারের অনুমতি ছাড়াই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত থাকা এবং অর্থ আত্মসাৎ সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইনকে সরকারি কর্মচারী বিধিমালার বিধি ১২ (১) অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা প্রাপ্ত হবেন। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
.
প্রশ্নঃ জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট এত এত ঘটনা ঘটানো পরও এতদিন চুপ করে ছিল কেন? সরকারী একজন কর্মকর্তা যে বাইএর কোথায় চাকুরি করতে পারে না এই নিয়ম কি তারা জানতো না?
.
ঘটনাঃ ৭
রোববার ডা. সাবরিনাকে গ্রেফতারের পর ডিসি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিসি মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সন্তোষজনক কোনো তথ্য দিতে না পারায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ডা. সাবরিনা জিজ্ঞাসাবাদ ও গ্রেফতার প্রসঙ্গে ডিসি হারুন বলেন, ‘আমরা আজ তাকে যখন জিজ্ঞাসাবাদ করলাম, আপনি কি চেয়ারম্যান কিনা? উনি বলছেন, না আমি কখনই চেয়ারম্যান ছিলাম না। দ্বিতীয় কথা, আপনি তিতুমীর কলেজে (জেকেজির সঙ্গে কলেজ শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের) সময় আপনি সেখানে দাঁড়িয়ে তাদের পক্ষে কথা বললেন, জেকেজির মুখপাত্র হিসেবে, চেয়ারম্যান হিসেবে কথা বললেন। তখন তিনি (ডা. সাবরিনা) বললেন, আমার হাজব্যান্ড আমাকে এটা বলতে বলছে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে ডিসি হারুন বলেন, যেহেতু তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা সেহেতু তিনি আরেকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান থাকতে পারেন না, কিংবা ওই প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্য দিতে পারেন না। উনি যে একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে জেকেজি গ্রুপের পক্ষে ফেসবুকে প্রচারণা চালিয়েছেন তাও একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তা করতে পারেন না। আগামীকাল যদি তিনি রিমান্ডে আসেন তাহলে লক্ষ লক্ষ মানুষের নমুনা নিয়ে পরে যে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে প্রতারণা করেছেন তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। রিমান্ডে আসলে আমরা সময় পাব, তখন বাকি তথ্যগুলো জানা সহজ হবে।
ডিসি হারুন বলেন, ‘তারপর উনাকে আরও বিভিন্ন প্রশ্ন করা হলো, কিন্তু ওনি কোনো প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারে নাই। যার কারণে ওনাকে আমরা গ্রেফতার দেখিয়েছি। আমরা মনে করি, ওনি কখনই এই কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে এই কোম্পানি মানুষকে যে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যারা নেগেটিভ তাদেরকে পজিটিভ আর যারা পজিটিভ তাদেরকে নেগেটিভ বানাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষের মাঝে সংক্রমণ ঘটছে।মানুষকে প্রতারণা করছেন টাকার বিনিময়ে। বিদেশের মাটিতে আমাদের দেশের মানুষেরা গিয়ে (তাদের ভুয়া রিপোর্টের কারণে) যে ফিরে এসেছে। সবকিছু মিলেই আমাদের তদন্তে আসবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি হারুন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আগামীকাল আদালতে তার জন্য রিমান্ড চাইব। রিমান্ডের প্রেক্ষিতে আরও কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপাতত আমরা তাকে একটা মামলায় গ্রেফতার দেখাচ্ছি। ওই মামলায় রিমান্ডে আসবে, আমাদের যদি মনে হয় আরও কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত, আরও কেউ এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত আরও কেউ আছে সেক্ষেত্রে অন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।
.
প্রশ্নঃ এতদিন বছর মাস কী মার্কা তেল নাকে চোখে দিয়ে এরা ঘুমাচ্ছিল জাতি জানতে চায়?
.
ঘটনাঃ ৮
অনুসন্ধানে জানা যায়, ডা. সাবরিনা চৌধুরী নিজেকে দেশের প্রথম নারী কার্ডিয়াক সার্জন হিসেবে দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি দেশের প্রথম নারী কার্ডিয়াক সার্জন নন। বাংলাদেশের প্রথম নারী কার্ডিয়াক সার্জন হলেন ডা. শিমু পাল। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ম-২৯ ব্যাচের ছাত্রী । ১৯৯৯ সালে এমবিবিএস পাশ করেন শিমু পাল। এরপর ২০০৩ সালে কার্ডিওথোরাসিক সার্জারিতে এমএস কোর্সে পড়বার সুযোগ পান। ২০০৯ সালে এমএস কোর্স শেষ করে বাংলাদেশের প্রথম নারী কার্ডিয়াক সার্জনে ভুষিত হন তিনি।
উল্লেখ, ডা. সাবরিনা ২০১৫ সালে এমএস করেন। কিন্তু ডা. সাবরিনা এ ক্ষেত্রে প্রতারণার আশ্রয় নেন। নিজেকে পরিচয় দিতে থাকেন দেশের প্রথম নারী কার্ডিয়াক সার্জন হিসাবে।ফেসবুকে তিনি উল্লেখ করেছেন দেশের প্রথম নারী কার্ডিয়াক সার্জন হিসাবে। এছাড়া বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে নিজেকে নারী কার্ডিয়াক সার্জন বলে দাবি করেছেন।
সিএসএসবি জানায়, দেশে প্রথম নারী কার্ডিয়াক সার্জন ডা. শিপু পাল। যিনি ২০০৯ সালে কার্ডিয়াক সার্জারিতে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ডা. রোমেনা রহমান কার্ডিয়াক সার্জারিতে দেশের প্রথম নারী সহকারী অধ্যাপক। এ পর্যন্ত ১০ জন নারী কার্ডিয়াক সার্জারিতে এমএস ডিগ্রি অর্জন করে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সুনামের সাথে কাজ করছেন। এখানে কোনো ক্রমসংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তথাপিও প্রথম নারী কার্ডিয়াক সার্জন যিনি, তিনি অবশ্যই ইতিহাসের অংশ এবং তার এই যোগ্য সম্মান ও স্বিকৃতিটি প্রাপ্য। এটি নিয়ে গণমাধ্যমের বিভ্রান্তি অনাকাংখিত। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, আপনারা জানেন কার্ডিয়াক সার্জনদের একমাত্র সংগঠন কার্ডিয়াক সার্জন সোসাইটি অব বাংলাদেশ (বিএসএসবি)। নৈতিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোন থেকে এ ব্যাপারটি অত্যান্ত সংবেদনশীল হওয়ায় আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং পরবর্তীতে সংবাদ মাধ্যমগুলিকে এ বিষয়ে সঠিক তথ্য উপস্থাপনের অনুরোধ জানাচ্ছি। এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সকল বিভ্রান্তির অবসান হবে বলে কার্ডিয়াক সার্জন সোসাইটি অব বাংলাদেশ (সিএসএসবি) মনে করে।এদিকে বাংলাদেশে প্রথম নারী কার্ডিয়াক সার্জন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবর প্রকাশের প্রতিবাদ জানিয়েছে কার্ডিয়াক সার্জন সোসাইটি অব বাংলাদেশ (সিএসএসবি) গত ৩ জুলাই সংগঠনের নিজস্ব প্যাডে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবাদ জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিএসএসবি গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে (ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া) বাংলাদেশে প্রথম নারী কার্ডিয়াক সার্জন হিসেবে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন জনকে পরিচয় করিয়ে বিভ্রান্তি স্রষ্টি করছে, যা অত্যান্ত দু:খজনক ও অনভিপ্রেত।
.
প্রশ্নঃ এই দেশের ‘কার্ডিয়াক সার্জন সোসাইটি’র সুদীর্ঘ শীতকালীন ঘুম হুট করে কেটে গেল কিভাবে? আর এত দিন ধরে এত সুদীর্ঘ ঘুম এরা দিলই বা কিভাবে? কার জন্য? কিসের জন্য?

.
এবার আসুন দেখি সাবরিনা’কে নিয়ে দেশে এখন কী চলছে?
.
আমাদের সমাজে নারীদের শুধুমাত্রই ভোগ্যবস্তু মনে করা হয় সেটার আবার প্রমাণ হল সাবরিনার ঘটনায়৷ সাবরিনা আরিফ চৌধুরী পেশায় একজন হৃদরোগ সার্জন৷ টেলিভিশনের পরিচিত মুখ৷ টকশোতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷ কিন্তু করোনার নমুনা পরীক্ষার নামে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার এই পরিচয়গুলো ছাপিয়ে নারী হিসেবে তিনি কতটা আকর্ষণীয়, কতটা হট, কতটা উত্তেজনাকর তাই প্রধান হয়ে উঠেছে৷ তার আগেরদিনের তোলা বিভিন্ন ছবি বের করে সোসাল মিডিয়া তাকে ক্রমাগত ‘ভার্চুয়াল রেপ’ করছে৷ উনি উনার ইচ্ছেমতো নিজের যেকোন ছবি তুলতে পারতেন যেটা আমি বা আপনিও পারি। এটাই কি তার দোষ? তিনি যে দোষে দুষ্ট সেটাকে নিয়ে অনেক কথা হতে পারে, যে অন্যায় তিনি করেছেন সেসব বিষয়ে অভিযোগ উঠতে পারে৷ কিন্তু একজন নারী বলে তার ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি তুলে ধরে তাঁকে হেয় করার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে? এত নোংরা রূচি এই দেশের মানুষের কবে থেকে হল?
.
বিশাল একদল মানুষ তার সৌন্দর্য্যকে ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে লাগিয়ে দিয়েছে। এই নোংরা কাজে অল্পশিক্ষিত, শিক্ষিত, এমন কি পিছিয়ে নেই গণমাধ্যমগুলোও পিছিয়ে নেই? কে এই সাবরিনা? তিনি সিনেমার নায়িকা হওয়ার জন্য কত দুয়ার ঘুরেছিলেন? তার স্বামী কয়টা? কয়টা বিয়ে হয়েছে? তিনি কবে কোথায় কার সাথে ঘুরতে গিয়েছিলেন তাই নিয়ে গণমাধ্যমে রীতিমত মাতামাতি, কাটাকাটি আর হানাহানি।
.
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সাবরিনাকে নিয়ে অজস্র স্ট্যাটাস৷ সবগুলি উল্লেখ না করে একটা দিলামঃ
‘একে দেখতে তো পর্ণ স্টারের মত লাগে, একে ধর্ষণ করলে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবে’।
.
কী দারুন আমাদের রূচি? মূল্যবোধ? মানবিকতা? মানসিকতা?
.
একজন অপরাধীকে শুধুমাত্র অপরাধী হিসেবেই দেখুন। ছেলে/মেয়ে/পুরুষ/নারী এইসব ক্যাটাগরিতে ভাগ করা বন্ধ করুন। আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলান৷ সাবরিনাকে নারী হিসেবে না দেখে একজন মানুষ এবং গুরতর অপরাধী হিসেবেই দেখুন। সাবরিনার সাজগোজ বা আপলোড ছবি ছবিগুলি যদি আপনাদের সমস্যা হয়, তাহলে তার ব্যক্তিগত ছবি ফেসবুকে পোস্ট দেখতে কেন গিয়েছেন। উনি কী আপনাদের ডেকে পাঠিয়েছে। আপনারা সবাই কী তার ফ্রেন্ড লিস্টে আছেন?
.
শেষকথাঃ
.
১৯৯৫ সালে যেই মেয়ে এত ভালো রেজাল্ট নিয়ে এইচ.এস.সি পাশ করার পরে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকার একটা মেডিক্যাল কলেজে পড়ার জন্য চান্স পেয়েছে সে যেনতেন মেধাবী ছাত্রী নয়। সেই সময়ের যে স্মৃতি আমার মনে আছে, তাতে প্রায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ প্রায় কিছুই ছিলই না। নিজের যোগ্যতায় ভর্তি পরীক্ষায় টিকেই আমাদের সবাইকে বুয়েটে মেডিক্যালে ভর্তি হতে হয়েছিল। তখন কোন প্রশ্নফাঁস জেনারেশন ছিল না, নকল হতো না, এখনকার মতো টাকা দিয়ে এইসব জায়াগায় ভর্তি করানোও যেত না।
.
সাবরিনার মতো মেয়ে দেশের একজন এ্যাসেট হতে পারতো! এখন তার বয়স চল্লিশ পার হয়ে গেছে আগেই। এইবয়সে এসে স্বনামধন্য একজন ডাক্তার হিসেবেই তার প্রসার হবার কথা ছিল।
দেশের প্রথম না হোক সেরা একজন মহিলা কার্ডিয়্যাক বিশেষজ্ঞ সার্জন হতে পারতো।
যে মেয়েটা সলিমুল্লাহ মেডিক্যল কলেজে থেকে পাশ করে দেশে সেরা একজন কার্ডিয়াক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হতে পারতো কেন সে এই ভুল পথে পা বাড়ালো সেটা আমরা কেউ ভেবে দেখছিনা।
অথচ এটাই ছিল আসল দরকার। যেন আর কোন সাবরিনা এই নোংরা পথে যা যায়। কিন্তু সেটা না করে নোংরামি করেই আমাদের মিডিয়া এবং দেশের লোকজন ব্যস্ত।
.


এইজন্যই পাপিয়া আসে, পাপিয়া যায়, সাবরিনা এসেছে, সাবরিনা চলে যাবে। এভাবে এটা চক্রাকারে চলতে থাকবে……
.
এই আসল চরম সত্য না উদঘাটন করে, তার আসল সমাধান না করে দিনে পর দিন সারাদেশে মানুষ চল্লিশ বছর পার হওয়া একটা মহিলার বিভিন্ন ছবি দেখে মনে মনে যৌনসুখ পাচ্ছে। এইদেশের মানুষ পার্ভার্ট, সেক্স মানিয়্যাক। এই জন্যই এইদেশে ছোট ছোট মেয়েরাও ধর্ষিত হয়, আরো হবে, দিনের পর দিন ধরে হবে।
.
কারণ সাবরিনার আর কিছু না, একটা নষ্ট পঁচা গলা সমাজ ব্যবস্থার বাস্তব নির্লজ্জ আস্ফালন। এইরকম আস্ফালন চলতেই থাকবে যতদিন পর্দার অন্তরালের প্রকৃত অপরাধীদের উপযুক্ত বিচার না হবে।
.
লেখার সূত্রঃ বিভিন্ন প্রকাশিত সংবাদ এবং পত্রপত্রিকা
.
সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, জুলাই ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:০১
২২টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×