somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গ: ইফতার পার্টি

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চোখের পাতা ফেলতে না ফেলতেই বা বলা যায় আমরা যারা শ্রমজীবী মানুষ তাদের শরীরের ঘাম শুকাতে না শুকাতেই একের পর এক উৎসব , উপলক্ষ্য , আনন্দ বিনোদনের মাধ্যম এসে আমাদের সামনে দাঁড়ায়। বিষয়টি নেতিবাচকভাবে দেখার সুযোগ নাই। বরং বলা যায় ধর্মীয় এই সব উৎসব এ উদ্দীপনা ছিল বা আছে বলেই হয়তো আজও আমরা বেঁেচ আছি। আমাদের জীবন হীন দেহ যন্ত্র হয়তো সারা বছর শুধু কাজ করে যায় এই সব উৎসব আনন্দকে ঘিরে। মাঝে সাজে আবার এই সব উপলক্ষ্যে আমাদের একে অপরের সাথে দেখাও হয়। নইলে অন্তত ঢাকার যে জীবন তা কেবল জন্ম বা মৃত্যু কে কেন্দ্র করেই দেখা হওয়া সম্ভব। দেখা হবার আর একটি পথ হলো, রাজ পথের যানজট । যেমন গতকাল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রথ যাত্রা উপলক্ষে দীর্ঘ সময় যানজটে থাকতে থাকতে এক পর্যায়ে অতীষ্ট হয়ে বাহন থেকে নেমে এদিক ওদিক হাটতে হাটতে অনেক পরিচিতজনদের সাথে দেখা হল । কথা হলো। ৩০ মিনিটের পথ এলাম চার ঘন্টায় । এক পরিচিত ট্রাফিক পুলিশকে দেখে বিষয়টি নজরে আনতেই বেশ একটু নীচু স্বরে বললেন, থাক ম্যাডাম হিন্দুদের উৎসব তো একটু কষ্ট করুন। আরে বাবা , হিন্দু , মুসলিম, খৃস্টান বৌদ্ধ কারো ধর্মের প্রতি আমার বিশেষ অনুরাগ বা বিরাগ নাই। এটা কাকে বোঝাবো ? আমার বিরক্তি ট্রাফিকিং সিস্টেম নিয়ে। সুষমা স্বরাজ ঘুরে যাবার পর হঠাৎ করে ট্রাকিফ পুলিশদের এই শোভন আচরন আমাকে আশার আলো যোগালো বৈকি !
বিষয়গুলি ভালো চোখে দেখলে কোনটিই খারাপ নয়। বেশ তো, রাত ৮:০০ টায় উত্তরা থেকে আমার এক মক্কেল জরুরী কাজে আমার কাছে আসবে বলে রওনা দিয়ে যথাসময়ে (?) রাত ১২ টায় যখন পৌঁছালো বেচারার আর ফিরে যাবারও পথ নাই আবার আমার সাথে দেখা করারও সুযোগ নাই । ক্ষতি কী ? এটিও তো জীবনের একটি অভিজ্ঞতা । মানুষের জীবন পূর্ণ হোক আমৃত্যু -অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞতায় । পহেলা রমজান এই দোয়াই করি।
আজ তাই আরো অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হলো এই জীবন সায়াহ্নে এসে।
রমজান মাস উপলক্ষ্যে হলেও আমাদের দেশের গরীর ভিখারীর দল কিছু বিশেষ দান খয়রাত পায়। খারাপ কী ? বিশেষত যখন ক্ষমতাধরেরা একই টেবিলে বসে সেই সব দীন হীন দের সাথে ইফতার করে বিষয়টি নিশ্চয়ই আনন্দ দায়ক । একদিনের জন্যে হলেও তারা আমাদের মহারথীদের সান্নিধ্য পায়! কিছু ভাল খাবার চোখে দেখে – চেখেও দেখে ! কিন্তু সেই সব মহারথীদের সাথে ইফতার করতে যাবার জন্যে যে ”হ্যাপা পোহাতে হয় ” সেটির দিকেও সুনজর দেয়া যায়।
আমার কয়েকবার কয়েকটি মহারথীদের আমন্ত্রনে যোগদানের সুযোগ হয়েছে । কিন্তু আজকাল বয়েসের ভারে সেই সব অনুষ্টানে আর যাওয়া হয়ে ওঠে না। কারন যে সব প্রটোকল মেনে সেখানে হাজির হতে হয় তাতে আমার নাভিশ্বাস উঠে যায়। এটিও একটি জীবন মুখী শিক্ষা বটে।
প্রতিবারের মতই আমাদের ম্যাডাম তাঁর ইফতার শুরু করেছেন ইয়াতিমদের সাথে । লক্ষণ বরাবরের মতই শুভ। তবে সেটি নিয়ে দূর্মূখোরা (?) বলতে শুরু করেছেন , এতিমদের টাকা মেরে আবার এতিমদের নিয়ে ইফতার ! আরে বাবা টাকা তো হালাল করাও দরকার । আর টাকার গায়ে তো লেখা থাকে না যে, এগুলি এতিম দের টাকা । বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সই থাকে আর বলা থাকে চাহিবা মাত্র বাহক কে দিতে বাধ্য থাকিব । তা এই বাহক কে ধরে নেই যিনি বহন করছেন তিনিই । ক্ষতি কী ?
মানুষের বিবেক যখন নিজের মাঝেই বন্দী থাকে সেই বিবেক যখন কাজে লাগানো সম্ভব হয় না তখন তাকে ধর্মের কাহিনী শুনিয়ে কী লাভ ? বরং অর্ধ শত বেসরকারী টেলিভিশন ও প্রিন্ট মিডিয়া যখন ফলাও করে সেই বার্তা জনগনের সামনে তুলে ধরে তখন হয়তো অজানা অচেনা বহু ”ইয়াতিম” ভবিষ্যতের রমজানের আমন্ত্রেনের অপেক্ষায় বসে থাকে । থাকুক তারা অপেক্ষমানের তালিকায় । একদিন নিশ্চয়ই তারাও —–।
বিস্মিত নয় বেশ অপ্রস্তুত হলাম বর্তমান সরকারের বিরোধীদলীয় নেত্রীর স্বামী লে: জে: হো: মো: এরশাদ সাহেব এর আসলেই হাতে তেমন কোন টাকা নেই । তাই তিনি নিজের জন্য এক প্রকার , আর তাঁর আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য ভিন্ন এবং সাংবাদিক ভাই বোনদের জন্য ভিন্ন ইফতারের আয়োজন করেছিলেন। এটি নিয়েও দূজর্নেরা (?) নানা কথা বলেই চলেছেন । আশ্চর্য ব্যপার ! যিনি হোস্ট তিনি তার সার্মথ্য মোকাবেকই তো খাওয়াবেন । নাকি তিনি আমার বিস্ময় না ঘটানোর জন্য ব্যতিব্যস্ত থাকবেন ?
মোটেই নয়। এটি করা অন্যায়। তবে তিনি তিন শ্রেনীর ইফতারের আয়োজন না করে সকলেরই জন্যে এক প্রকার খাবার করতে পারতেন । হাজার হলেও তিনিই তো রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম এর প্রবর্তক। এখন না হয় গনতান্ত্রিকভাবে হালালিফাই হয়ে গিয়েছে। তবে কেন এই খামোকা আবারো কলংকের বোঝা তুলে নেয়া ? নাকি তিনি একজন প্রাক্তন সামরিক জান্তা হিসাবে জেনেই ফেলেছেন যে , সাংবাদিকদের টোপলা দিলেই চলবে কারন যতই তাদেকে তিনি তেল মাখান না কেন ৯০ এর আন্দোলন এবং তৎপরবর্তী তাঁর সকল মহান কীর্তিও পিছনে এই সাংবাদিক গোষ্টি আজীবন তাঁর গীবৎ গেয়েই যাচ্ছেন এবং যাবেন ? সুতরাং প্রয়োজন কী অপ্রয়োজনীয় জায়গায় মাখন দেবার ?
রোযা মানে সংযম । রোযা মানে না খেয়ে থাকা নয় বা গরীবের টাকায় ভুঁড়ি ভোজনও নয়। এদেশে মৌলভী বা ঠাকুর দেরকে ভুঁড়ি ভোজন করানোর অভ্যাস আমাদের আদি প্রাকৃত । আমরা ধরেই নেই যে, কোন বিদেহী আত্মার শান্তির দূত এই সম্প্রদায়। আর তাই কথায় কথায় এক শ্রেনীর মানুষ মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডায় দান খয়রাত করেই শান্তি পায়। কিন্তু কোন স্কুল, কলেজ, লাইব্রেরী কে এইসব দান এর স্বাদ আমরা পেতে দেই না । আমরা শান্তি পাই যাকাত ফেতরা, দান খয়রাত এর টাকা সবই মাজার ব্যবসায়ী বা এতিম দের নাম এ যে এতিম খানা খুলে বসে বিশাল বাণিজ্য হচ্ছে সেখানে অকাতরে ঢেলে দিয়ে।
অথচ একটি বারও ভাবে না এই দেশের এখোনো পর্যন্ত প্রায় অর্দ্ধেক মানুষ জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে , পরিবার পরিজন ছেড়ে শহরে আসে কাজের সন্ধানে। কেউ কাজ পায় কেউ বা শূণ্য হাতেই নিজেকে শহরের চোরাগলিতে নিজেকে বিসর্জিত করে। কেউ গ্রামে ফিরে যায় কেউ বা আর ফিরেই যায় না। এই সব মানুষ গুলিকে নিয়ে সরকারী বা বেসরকারী বা ব্যক্তি উদ্যোগে চিরস্থায়ী কোন সুব্যবস্থার চিন্তা ভাবনা কারো মাঝেই আছে বলে আমার জানা নাই।
দান খয়রাতে কারোরই ভাগ্যের কোনই পরিবর্তন হয় না। বরং পরিকল্পিতভাবে অর্থ ব্যয় অনেক মানুষের , অনেক পরিবারের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেয়। দিয়েছে। কেবল ইফতার পার্টির আয়োজন করে নয় দেশ ও দেশের সেই সব মানুষের স্বার্থে এই সব ইফতারের টাকা দিয়ে গ্রামেও অনেক কিছু করা যায়।
কিন্তু এই গুরুভার কে নিবে ?
দিলরুবা সরমিন
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী
প্রধান সম্পাদক, প্রথমবার্তা.কম
সুত্র: প্রথমবার্তা.কম
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৩১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দিশ হারা

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২

তোয়াত্তন আ`‌রে কেন লা‌গে?
গম লা‌গে না হম লা‌গে?
রাই‌ক্কো আ‌রে হোন ভা‌গে
ফেট ফু‌রে না রাগ জা‌গে?

তোয়া‌রে আত্তন গম লা‌গে
ছটফড়াই আর ডর জাগে
ছেত গরি হইলজা ফাড়ি
হইবানি হোন মর আগে।

হোন হতার হোন ইশারা
ন'বুঝি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

খাদ্য পন্যের মান নিয়ন্ত্রন

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১২

মশলা প্রস্তুতকারী কিছু ভারতীয় সংস্থার মশলায় ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান পাওয়া গিয়েছে।সম্প্রতি এমনই তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘সেন্টার ফর ফুড সেফটি’। সংস্থা জানিয়েছে, ভারতীয় বাজারে জনপ্রিয় বেশ কিছু সংস্থার মশলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×