দেশের নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের প্রধান বাহন এখনো রিকশা। রিকশার সংখ্যা ও রিকশাচালকদের আয় নিয়ে সাধারণভাবে কিছু ধারণা থাকলেও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। দেশে প্রথমবারের মতো করা এ জরিপে দেখা গেছে, একজন রিকশাচালক দৈনিক গড়ে ৩৬৮ টাকা উপার্জন করে। আর মাসে উপার্জন করে দশ হাজার টাকার মতো। বছরে তার গড় আয় হয় এক লাখ ১৪ হাজার ৮১৬ টাকা।জরিপে আরো দেখা গেছে, সারা দেশে বর্তমানে এ পেশার সঙ্গে জড়িত আছে ২৫ লাখ মানুষ। প্রতিনিয়তই এ পেশার সঙ্গে নতুন মুখ যোগ হচ্ছে। একই সঙ্গে রিকশার সংখ্যাও বাড়ছে। ২০০৩ সালে সারা দেশে যেখানে রিকশার সংখ্যা ছিল ১০ লাখ, এখন বেড়ে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সোয়া ১১ লাখে। অবশ্য যত রিকশা রয়েছে, তার মধ্যে ৬০ শতাংশই ভাড়ায় পরিচালিত। অর্থাৎ পৌনে সাত লাখ রিকশা ভাড়ায় চলে, আর বাকি সাড়ে চার লাখ বা ৪০ শতাংশ চলে নিজস্ব মালিকানায়। তবে এসব রিকশার বৈধতা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
বিবিএসের কর্মকর্তারা বলছেন, শহর ও গ্রাম মিলে একজন রিকশাচালক দৈনিক ৪৪৬ টাকা আয় করে। কিন্তু সেখান থেকে মালিককে একটি অংশ জমা দিতে হয়। সেটি গড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। জমা বাদে একজন চালক দৈনিক নিট ৩৬৮ টাকা উপার্জন করে বলে জরিপে তথ্য উঠে এসেছে। বিবিএস বলছে, গ্রামের তুলনায় শহরের চালকরা তুলনামূলক বেশি উপার্জন করে। গ্রামের একজন দৈনিক যেখানে ৩৩১ টাকা আয় করে, সেখানে শহরের একজন উপার্জন করে ৩৮৪ টাকা। তবে টাকা যা-ই উপার্জন করুক, গ্রাম ও শহরের একজন রিকশাচালক দৈনিক প্রায় সমান সময় রিকশা চালায়।জরিপে দেখা গেছে, একজন চালক দৈনিক গড়ে ৪২ কিলোমিটার (প্রতি শিফট) রিকশা চালায়। দেখা গেছে, একদিনে সিঙ্গেল শিফটে কাজ করার হার বেশি। ডাবল শিফটে রিকশা চালায় খুবই কমসংখ্যক চালক। জরিপে দেখা গেছে, দেশে সিঙ্গেল শিফটে কাজ করে ৬৬ শতাংশ রিকশাচালক। আর বাকি ৩৪ শতাংশ ডাবল শিফটে রিকশা চালায়।বিবিএস সূত্রে জানা যায়, গত মে মাসে সারা দেশে এ জরিপের কাজ পরিচালিত হয়। এতে দেশের সাতটি বিভাগ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে দৈবচয়নের ভিত্তিতে প্রায় ৬০০ গ্যারেজ মালিক ও রিকশাচালকের ওপর জরিপটি পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে শহরের চার শতাধিক আর গ্রামের বাকি দুই শতাধিক গ্যারেজ ও শ্রমিকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন বিবিএসের কর্মকর্তারা। তবে সবচেয়ে বেশি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ঢাকা বিভাগ (১৬৮টি) থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে (১১৫)। এখন চলছে বই ছাপার কাজ। শিগগিরই জরিপের বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিবিএসের কর্মকর্তারা।
এদিকে জরিপে রিকশাচালকের সঙ্গে রিকশাভ্যান ও অটোরিকশাচালকের দৈনিক উপার্জনের একটি তুলনা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, একজন অটোরিকশাচালক অন্য দুই বাহনের চেয়ে বেশি টাকা আয় করে। একজন অটোরিকশাচালক দৈনিক ৫৫৫ টাকা আয় করে, যেখানে রিকশাভ্যান শ্রমিক করে ৪২২ টাকা। সে হিসাবে সবচেয়ে কম টাকা উপার্জন করে রিকশাচালক (৩৬৮ টাকা)। অন্যদিকে একজন অটোরিকশাচালকের গড় মাসিক আয় সাড়ে ১৪ হাজার টাকা। আর রিকশাভ্যান শ্রমিকের ১১ হাজার টাকা। অটোরিকশাচালকের গড় বার্ষিক আয় এক লাখ ৭৩ হাজার ১৬০ টাকা। সেখানে রিকশাভ্যান চালকের এক লাখ ২৬ হাজার ৬০০ টাকা। অটো ও ভ্যান এ দুটি বাহনের ক্ষেত্রেও শহর ও গ্রামের প্রভাব রয়েছে। অর্থাৎ একজন অটোরিকশাচালক শহরে দৈনিক যে টাকা আয় করে, গ্রামের একজন চালক তা পারে না। রিকশাভ্যানের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। দেশের সাতটি বিভাগের প্রায় ৪০০ অটোরিকশার ওপর জরিপ চালিয়ে এ তথ্য পেয়েছে বিবিএস।জরিপ পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিবিএসের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, দেশে প্রতিনিয়তই রিকশা, অটো ও ভ্যানের সংখ্যা বাড়ছে এবং এটার সঙ্গে নতুন নতুন মানুষ যুক্ত হচ্ছে। তারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্রভাবে অর্থনীতিতে অবদান রেখে যাচ্ছে। এ তিনটি বাহন থেকে দৈনিক, মাসিক ও বার্ষিক আয় কত, সেটি দেখার জন্য এ জরিপ করা হয়েছে বলে জানান বিবিএসের কর্মকর্তারা।
সুত্র: Prothombarta
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৫৯