somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন্ত আগ্নেয়গিরি

০৬ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সর্বপ্রথম জীবন্ত আগ্নেয়গিরি সম্পর্কে জানা হয় ভুগোলের বই পড়ে। নামটা ছিলো মনে হয় "ভিসুভিয়াস"। এখানে আসার আগে জানা ছিলো না, জাপানেও এক জীবন্ত আগ্নেয়গিরি রয়েছে।
নাম "ওয়াকুদানি ( Owakudani)"- এটাকে গ্রেট বয়েল ভ্যালিও বলা হয়। টোকিও শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিন-পশ্চিম দিকে "কানাজাওয়া" প্রিফেকচারে অবস্থিত। স্বচক্ষে দেখার জন্য একদিন বেড়িয়ে পরলাম বয়েল ভ্যালির পথে...
"সিনজুকু" স্টেশান থেকে "odakyu's" লাইনে বেশ কয়েকটা লিমিটেড এক্সপ্রেস ট্রেন আছে। তারই একটাতে উঠে পরলে ঘন্টাদুই পরেই পৌছে যায় নির্দিস্ট গন্তব্যে। যেখানে এই আগ্নেয়গিরি রয়েছে, সেই শহরটার নাম "Hakone".

ট্রেনটার নাম " Romance car" -এটার সবচেয়ে সুবিধা বিশাল বড় বড় জানালা দিয়ে পথের দুইপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য খুব সুন্দর দেখা যায়।
"odawara" স্টেশানে পৌছে সেখান থেকে "হাকোনে তোজান" বাসে ৪০ মিনিট যাবার পরে সেই ফুটন্ত উপত্যকার পাদদেশে যেয়ে উপস্থিত হলাম।


এই সেই বয়েল ভ্যালি..সবসময় সেখান থেকে বাস্প উঠছে।
সর্বশেষ অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিলো তিন হাজার বছর পূর্বে..সেই সময়ের লাভা উদগীরনের ফলে যে লেক সৃস্টি হয়েছে, সেটার নাম "লেক আসি" (Lake Ashi)...লেকের পানি অদ্ভূত রকমের নীল...সেখানের কিছু ছবি আছে আমার আগের ছবিব্লগে...http://www.somewhereinblog.net/blog/nirjhorini/29025120
ফুটন্ত উপত্যকার পাদদেশ থেকে শীর্ষদেশে, রোপওয়ে দিয়ে ক্যাবলকারের সাহায্যে যাবার ব্যাবস্থা রয়েছে...

ক্যাবল কারের ছবি...বেশি না, মিনিট দশেকের মধ্যেই উঠে যায়।

ধীরে ধীরে উপরে উঠছে, ২০০ মিটার-৫০০ মিটার- ১০০০ মিটার...
কিছুটা ভয় ভয়ও লাগছিলো..

বেশ খানিকটা উপর থেকে ঘন পাহাড়ী বন আর পাশের আরেকটা পাহাড়...

সময়টা ছিলো পড়ন্ত বিকেল..সূর্যটাও মেঘের আড়ালে লুকিয়েছে...সমান্তরালে চলে গেছে দুটো দড়ির রাস্তা...

উঠে এলাম ১০৪৪ মিটার উপরে "Owakudani"। ষেখান থেকে বাস্প উঠছে, তার একদম কাছেই চলে যাওয়া যায় হাটতে হাটতে...আমার খুব ইচ্ছে ছিলো একদম কাছ থেকে দেখা, কিন্তু হাতে একদম সময় না থাকাতে সে আশা আর পূর্ন হলো না...বিকেল পাচঁটার সময় ক্যাবলকার বন্ধ হয়ে যায়...আর কিছুক্ষনের মধ্যেই ফিরে যাবার লাস্ট ট্রিপ, তাই ওখান থেকে জীবন্ত আগ্নেয়গিরিটাকে দেখতে হলো...কাছে যাওয়া হলো না!!!!!

ফিরতি পথে..সন্ধ্যা প্রায় আগত..চারিদিকে আলো নিভে এসেছে...কিছুটা কুয়াশাচ্ছন্ন।

আমি কোনো ফটোগ্রাফার নই...আর ছবিগুলোও "পয়েন্ট শুট" ক্যামেরা দিয়ে তোলা, তেমন ভালো তুলতে পারিনি...বেশ খানিকটা দূর থেকে ছবি তুলতে হয়েছে...

পাহাড়ের মাঝেই ছোট্ট একটা জলাধার...

মেঘ এসে ঘিরে ধরেছে পাহাড়কে...উঠবার সময়ই বোধহয় এটা দেখেছিলাম...

ফিরতি পথে ক্যাবল থেকে দেখছিলাম...আর কতকিছু যে মনে হচ্ছিল, এই ফুটন্ত উপত্যাকা দেখে..আবার যদি অগ্নু্ৎপাত হয় তখন কি ভয়াবহ অবস্থা হবে!!!! এই শহরে বসবাসকারী মানুষদের কি হবে!!!!!এমনই আরও কতশত কথা মনে আসছিলো...

এটা জাপানিজদের পৌরানিক রুপকথার সেই "ব্ল্যাক এগ"...এই কালো ডিমের কাহিনী হলো, একটা ডিম খেলে সাত বছর করে আয়ু বৃদ্ধি হয়...তিনটা করে ডিমের একটা সেট থাকে..তারমানে একুশ বছর আয়ুবৃদ্ধি!!!
ডিম কালো হবার কারন নরমাল ডিমকেই, এই জীবন্ত আগ্নেয়গিরির ফুটন্ত পানিতে সিদ্ধ করা হয়... পানিতে সালফারের আধিক্যর জন্য ডিমের খোসার সাথে সালফার বিক্রিয়া করে কালো বর্ণ ধারন করে..আর ডিমটাও নাকি অনেক টেস্টি হয়...এটাই এই কালো ডিমের রহস্য..

আমি কিছুটা ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলাম এই কালো ডিম খাবার...কিন্তু আমার "তিনি" কিছুতেই রুপকথা বিশ্বাস করলেন না... আমারও আর খাওয়া হলো না...আসলে আমিও তেমন গুরুত্ব দেইনি, পাহাড় দেখাতেই বেশি ব্যাস্ত ছিলাম...পোস্ট লিখতে লিখতে কালো ডিম না খাওয়ার জন্য এখন কিছুটা আফসোস হচ্ছে...আমার আর আয়ু বৃদ্ধি হলো না :(

বি:দ্র:- ট্রেনের ছবি আর কালো ডিমের ছবিটা গুগল থেকে নেয়া.. বাদবাকী সবগুলো আমার তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:০৭
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×