somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি অপমৃত্যু

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আতিক গ্রামে একটি কলেজে পড়ায়। সে একজন শিক্ষক। গ্রামে তার সম্মান আছে। গ্রামে যেখানে অধিকাংশ মুর্খ সেখানে আতিক তাদের কাছে অনেক জ্ঞানী ব্যাক্তি। গ্রামে কোনো সমস্যা হলে সবাই তার কাছে ছুটে আসে। আতিক চেষ্টা করে সমস্যা সমাধান করার। আজ স্টুডেন্ট পড়াতে একটু বেশি দেরি হয়েছে। রাত ১০টা বাজে। রাত ১০টা অনেক রাত। এতক্ষণে গ্রামে অনেকের অর্ধেক ঘুম হয়েছে। আতিক দ্রুত হাটতে লাগলো। বাসায় ইরা একা। এই সময় কোনো মেয়েকে একা রাখতে নেই। ইরা মা হচ্ছে। এই সময় ইরার স্বামী হিসেবে আতিকের উচিত তার যত্ন নেওয়া কিন্তু আতিক সে উচিত কাজটি করছে না। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছে আতিক। আজ থেকে ইরার প্রতি খেয়াল রাখবে

মেয়েদের অদ্ভুত রকমের এক প্রকার শক্তি আছে। তাদের খুব পছন্দের মানুষের বিপদের সম্ভাবনা থাকলে তাদের মনে জানা হয়ে যায়। তারা অস্থির বোধ করতে শুরু করে। মাঝে মাঝে খারাপ সপ্ন দেখে। প্রতিটি সপ্ন হয় মৃত্যু কেন্দ্রিক। ইরা বেশ কয়েক দিন যাবত সপ্ন দেখছে। খুব খারাপ সপ্ন। স্বপ্নে একটি লাশের সামনে সে বসে থাকে। লাশটি সাদা কাপড়ে ডাকা। চেহারা দেখা যায় না। তার পাশের মানুষ গুলো কাঁদে। শুধু সে কাঁদে না, লাশের হাত ধরে বসে থাকে। স্বপ্নটি যতবার দেখে ততবার তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ক্রমাগত ঘামাতে থাকে, অস্থির বোধ করে। ইরা এখনো ঘামাচ্ছে। তার ঘামে শরীর ভেজা। অস্থির বোধ করছে। সে উঠনে এসে বসলো যতক্ষণ আতিক আসবে না ততোক্ষন ঘরে যাবে না।

গ্রামে বাঁশ গাছের ঝোপের রাস্তাটি সুনসান থাকে। রাতের বেলায় এদিকটায় কেউ আসে না। খুবই নিরব জায়গা। কাউকে মেরে ফেলে রাখলে কেউ টের পাবে না। আজগর রাস্তাটির ধারে দাড়িয়ে আছে। সে একজন প্রফেশনাল কিলার। শহরের গড ফাদারদের সাথে তার উঠা বসা। অনেক নাম ডাক তার। লোকে বলে যেখানে আজরাঈল ভয় পায়, সেখানে সে পৌছে যায়। এই পর্যন্ত ৯৯টি খুন করেছে সে। কোনোবার বিফল হয়নি। এইদিকে তার আলাদা একটা সুনাম আছে। মানুষ মারা এক ধরনের আর্ট। সে আর্ট তার ভালো জানা। আজ সে জীবনের ১০০ তম খুন করবে।

আজগরের শিকার এসে গেছে। যেহেতু এটি তার ১০০ তম খুন সেহেতু খুনটি সে একটু সময় নিয়ে করবে

- মাষ্টার সাব একটু এদিকে আসেন।
- জ্বি আমাকে ডাকছেন?
- আপনি ছাড়া আর কেউ আছে এখানে?
- জ্বি না
- আসেন।

আতিক ধীর পায়ে আজগরের দিকে এগিয়ে গেলো।

- মাসিসটা দেন তো
- জ্বি আমি সিগারেট খাই না
- কি বলেন? সিগারেট খান না? সিগারেট অনেক ভালো জিনিস। এক টান দিলে সব টেনশন গায়েব।
- আমার কোনো টেনশন নেই, তাই সিগারেট খেতে হয় না।
- বাসায় পুয়াতি বউ আছে, তবুও আপনার টেনশন হয় না?

আতিক শান্ত চোখে আজগর মিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ওইদিকে আজগর মিয়ার দৃষ্টি স্থির। কোনো কিছু করার সিদ্ধান্ত পাকাপোক্ত ভাবে নেওয়ার পর যে দৃষ্টি থাকে তেমন।

- আপনি কে?
- আমি একজন খুনী।
- খুনী মানে?
- খুনী মানে হইলো অর্ডার নিয়া মানুষ খুন করি। বিনিময়ে টেকা পাই
- আমাকে খুন করার জন্য কে বলছে?
- সেটা বলা বারন আছে। এটা খুনীদের একটা ধর্ম।

আজগর না বললেও আতিক বুঝেছে তাকে কে খুন করতে পাঠিয়েছে। রহিম শেঠ। এলাকার নামি ব্যাক্তি। অনেক পাওয়ার তার। গ্রামের সড়ক পথে আতিক স্টুডেন্ট পড়িয়ে বাসায় ফিরছিল। এমন সময় রহিম শেঠ একজনকে গলা টিপে মেরে ফেলেছে। পুরো দৃশ্যটি আতিক স্পষ্ট দেখেছে। আতিকের ধারনা ছিলো রহিম শেঠ তাকে দেখেনি। কিন্তু তার ধারনা ভুল

আজগর ৯৯ টি খুন করেছে কখনো তার মায়া হয়নি। কিন্তু আজ হচ্ছে। তার সামনের লোকটি একজন ভালো মানুষ। গ্রামের মানুষকে বিনে পয়সায় পড়ায়। সে আতিককে ছেড়ে দিতে চাইলো কিন্তু চাইলে ও পারবে না। সে খুন না করলে আরেকজন করবে। মায়া নামক শব্দ তার মতো খুনী মাস্তানদের জীবনে নেই।

- মাষ্টার সাব
- বলুন
- আমি কাউকে মারার আগে শেষ ইচ্ছা পুরন করি না। কিন্তু আপনার করবো। আপনার কোনো শেষ ইচ্ছা আছে?

আতিক চুপ করে আছে। সে জানে তার কিছু করার নেই। সে চিৎকার দিলেও কেউ আসবে না এদিকটায়। আশে পাশে রহিম শেঠের লোক। একা তাদের সাথে পারা সম্ভব না।

- আপনার কোনো শেষ ইচ্ছা আছে?
- হুম্
- বলেন
- একটা সিগারেট দেন।

আতিক সিগারেট জ্বালিয়ে একটি টান দিলো। আজগর মিথ্যে বলেনি। একটু পর সে মারা যাবে তার টেনশন হওয়ার কথা সিগারেট এ টান দেওয়ার পর তার টেনশন ভাবটা নেই।

আজগর আতিকের কাধে হাত দিয়ে বাঁশ গাছের ঝোপের দিকে এগোলো। আজগরের পিছনে তার পুরনো ছুড়ি, সে ছুড়ি হাত দিয়ে শক্ত করে ধরলো। কিছুক্ষণ পর ১০০ তম খুন করবে। এতোদিন তার হাত কাঁপেনি। আশ্চার্য আজ তার হাত কাঁপছে !
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×