আতিক গ্রামে একটি কলেজে পড়ায়। সে একজন শিক্ষক। গ্রামে তার সম্মান আছে। গ্রামে যেখানে অধিকাংশ মুর্খ সেখানে আতিক তাদের কাছে অনেক জ্ঞানী ব্যাক্তি। গ্রামে কোনো সমস্যা হলে সবাই তার কাছে ছুটে আসে। আতিক চেষ্টা করে সমস্যা সমাধান করার। আজ স্টুডেন্ট পড়াতে একটু বেশি দেরি হয়েছে। রাত ১০টা বাজে। রাত ১০টা অনেক রাত। এতক্ষণে গ্রামে অনেকের অর্ধেক ঘুম হয়েছে। আতিক দ্রুত হাটতে লাগলো। বাসায় ইরা একা। এই সময় কোনো মেয়েকে একা রাখতে নেই। ইরা মা হচ্ছে। এই সময় ইরার স্বামী হিসেবে আতিকের উচিত তার যত্ন নেওয়া কিন্তু আতিক সে উচিত কাজটি করছে না। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছে আতিক। আজ থেকে ইরার প্রতি খেয়াল রাখবে
মেয়েদের অদ্ভুত রকমের এক প্রকার শক্তি আছে। তাদের খুব পছন্দের মানুষের বিপদের সম্ভাবনা থাকলে তাদের মনে জানা হয়ে যায়। তারা অস্থির বোধ করতে শুরু করে। মাঝে মাঝে খারাপ সপ্ন দেখে। প্রতিটি সপ্ন হয় মৃত্যু কেন্দ্রিক। ইরা বেশ কয়েক দিন যাবত সপ্ন দেখছে। খুব খারাপ সপ্ন। স্বপ্নে একটি লাশের সামনে সে বসে থাকে। লাশটি সাদা কাপড়ে ডাকা। চেহারা দেখা যায় না। তার পাশের মানুষ গুলো কাঁদে। শুধু সে কাঁদে না, লাশের হাত ধরে বসে থাকে। স্বপ্নটি যতবার দেখে ততবার তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ক্রমাগত ঘামাতে থাকে, অস্থির বোধ করে। ইরা এখনো ঘামাচ্ছে। তার ঘামে শরীর ভেজা। অস্থির বোধ করছে। সে উঠনে এসে বসলো যতক্ষণ আতিক আসবে না ততোক্ষন ঘরে যাবে না।
গ্রামে বাঁশ গাছের ঝোপের রাস্তাটি সুনসান থাকে। রাতের বেলায় এদিকটায় কেউ আসে না। খুবই নিরব জায়গা। কাউকে মেরে ফেলে রাখলে কেউ টের পাবে না। আজগর রাস্তাটির ধারে দাড়িয়ে আছে। সে একজন প্রফেশনাল কিলার। শহরের গড ফাদারদের সাথে তার উঠা বসা। অনেক নাম ডাক তার। লোকে বলে যেখানে আজরাঈল ভয় পায়, সেখানে সে পৌছে যায়। এই পর্যন্ত ৯৯টি খুন করেছে সে। কোনোবার বিফল হয়নি। এইদিকে তার আলাদা একটা সুনাম আছে। মানুষ মারা এক ধরনের আর্ট। সে আর্ট তার ভালো জানা। আজ সে জীবনের ১০০ তম খুন করবে।
আজগরের শিকার এসে গেছে। যেহেতু এটি তার ১০০ তম খুন সেহেতু খুনটি সে একটু সময় নিয়ে করবে
- মাষ্টার সাব একটু এদিকে আসেন।
- জ্বি আমাকে ডাকছেন?
- আপনি ছাড়া আর কেউ আছে এখানে?
- জ্বি না
- আসেন।
আতিক ধীর পায়ে আজগরের দিকে এগিয়ে গেলো।
- মাসিসটা দেন তো
- জ্বি আমি সিগারেট খাই না
- কি বলেন? সিগারেট খান না? সিগারেট অনেক ভালো জিনিস। এক টান দিলে সব টেনশন গায়েব।
- আমার কোনো টেনশন নেই, তাই সিগারেট খেতে হয় না।
- বাসায় পুয়াতি বউ আছে, তবুও আপনার টেনশন হয় না?
আতিক শান্ত চোখে আজগর মিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ওইদিকে আজগর মিয়ার দৃষ্টি স্থির। কোনো কিছু করার সিদ্ধান্ত পাকাপোক্ত ভাবে নেওয়ার পর যে দৃষ্টি থাকে তেমন।
- আপনি কে?
- আমি একজন খুনী।
- খুনী মানে?
- খুনী মানে হইলো অর্ডার নিয়া মানুষ খুন করি। বিনিময়ে টেকা পাই
- আমাকে খুন করার জন্য কে বলছে?
- সেটা বলা বারন আছে। এটা খুনীদের একটা ধর্ম।
আজগর না বললেও আতিক বুঝেছে তাকে কে খুন করতে পাঠিয়েছে। রহিম শেঠ। এলাকার নামি ব্যাক্তি। অনেক পাওয়ার তার। গ্রামের সড়ক পথে আতিক স্টুডেন্ট পড়িয়ে বাসায় ফিরছিল। এমন সময় রহিম শেঠ একজনকে গলা টিপে মেরে ফেলেছে। পুরো দৃশ্যটি আতিক স্পষ্ট দেখেছে। আতিকের ধারনা ছিলো রহিম শেঠ তাকে দেখেনি। কিন্তু তার ধারনা ভুল
আজগর ৯৯ টি খুন করেছে কখনো তার মায়া হয়নি। কিন্তু আজ হচ্ছে। তার সামনের লোকটি একজন ভালো মানুষ। গ্রামের মানুষকে বিনে পয়সায় পড়ায়। সে আতিককে ছেড়ে দিতে চাইলো কিন্তু চাইলে ও পারবে না। সে খুন না করলে আরেকজন করবে। মায়া নামক শব্দ তার মতো খুনী মাস্তানদের জীবনে নেই।
- মাষ্টার সাব
- বলুন
- আমি কাউকে মারার আগে শেষ ইচ্ছা পুরন করি না। কিন্তু আপনার করবো। আপনার কোনো শেষ ইচ্ছা আছে?
আতিক চুপ করে আছে। সে জানে তার কিছু করার নেই। সে চিৎকার দিলেও কেউ আসবে না এদিকটায়। আশে পাশে রহিম শেঠের লোক। একা তাদের সাথে পারা সম্ভব না।
- আপনার কোনো শেষ ইচ্ছা আছে?
- হুম্
- বলেন
- একটা সিগারেট দেন।
আতিক সিগারেট জ্বালিয়ে একটি টান দিলো। আজগর মিথ্যে বলেনি। একটু পর সে মারা যাবে তার টেনশন হওয়ার কথা সিগারেট এ টান দেওয়ার পর তার টেনশন ভাবটা নেই।
আজগর আতিকের কাধে হাত দিয়ে বাঁশ গাছের ঝোপের দিকে এগোলো। আজগরের পিছনে তার পুরনো ছুড়ি, সে ছুড়ি হাত দিয়ে শক্ত করে ধরলো। কিছুক্ষণ পর ১০০ তম খুন করবে। এতোদিন তার হাত কাঁপেনি। আশ্চার্য আজ তার হাত কাঁপছে !