somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তগদ্য: মুনিয়ার ঠোঁটে আঙুল রেখে আমিও হতে পারি নদী

৩১ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

০১.
কে যেনো ভুল সুরে গান করে। অপলা বললো, ভুলজলে শিখেছি সাঁতার।
আমি দোয়েলের চোখে দুপুর দেখি। ওগো রাত, আমাকে সেই দুপুরের কাছে নিয়ে যাও...
কে বাজায় স্বরমণ্ডল? তার আঙুলে সঁপে দেবো আমার সকল প্রাণ।

০২.
নিজের সাথেই কথা বলছি। তুমি মানে আমি। আমি মানে তুমি। তার অস্তিত্ব নেই যদি না আমরা স্বীকার করছি।
কার্তিকের হিম জাতীয় ফ্রেইজগুলি নিয়ে একটু ভাববেন। জীবনানন্দ আমাদের রক্তের ভিতর। কিন্তু তাকে অতিক্রম করা যাবে না, এটা ভুল কথা। অতিক্রম করা মানে তার চেয়ে ভালো লেখা বা খারাপ লেখা এইজাতীয় কিছু নয়, এর মানে হলো তার মতো না লেখা। আর তার চেয়ে ভালো লেখার বা খারাপ লেখার বিষয়টা মাথার মধ্যে আনাটাই ভুল। যেহেতু তিনি তার সময়ের দেদীপ‌্যমান। আর আমরা আমাদের অন্ধকারকে আলোকিত করবো।
লেখাটা রিরাইট করেন। দেখবেন পাল্টে গেছে এবং আরো সহজ সুন্দর হয়ে গেছে।
আমরা তাদের বেশি বেশি পড়ি এবং পড়বো-- তাদের মতো না লেখার জন্যে।
আমার গানের আবেগ, তাহার চরের কথা এইসব লেখা যাবে না বলি নাই তো! একই বিষয় একই শব্দ সবাই ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু আমি বলতে চেয়েছি মাঘের কুয়াশা, কার্তিকের হিম, শিশিরের শব্দের মতো, উটের গ্রীবা এইজাতীয় শব্দজোটের ব্যাপারে বিবেচনা করতে। কেননা এইসব সরাসরি জীবনানন্দীয়।
এই যে আপনি ঠিক করলেন, শরৎ শেষের হিম। পড়তেই ভালো লাগছে। এখন কেউ ঢুকেই বলতে পারবে না, জীবনানন্দের প্রভাব। এতো কষ্ট করেছেন, শুরুতেই এমন কথা শুনলে দমে যাওয়ার কথা। আমার ক্ষেত্রে এমনই হতো।

০৩.
না, কবিতার কাঠামো অবশ্যই জীবনানন্দ টাইপ হয় নি। আমি বলতে চাইলাম যোনি, স্তন ইত্যকার শব্দাবলি তিনিও বাক্যে প্রয়োগ করেছেন। কিন্তু সেগুলি আলাদা করে চোখে লাগে না। বাক্যেরই অংশ হয়ে গেছে।
কিন্তু আপনার যৌনাঙ্গদরজা, উরুরাস্তা প্রমুখ শব্দজোট কেমন যেনো খচ করে চোখে বিঁধলো, কানে বাজলো না তেমন। তাই আরোপিত মনে হলো; স্বতঃস্ফুর্ত মনে হলো না। মনে হলো ভাবনা- চিন্তা করে বানিয়েছেন শব্দগুলি; অতঃপর প্রয়োগ করেছেন।
আধুনিক কবিতার সূচনা করেছিলেন জীবনানন্দ, তাই তার কাছ
থেকেই উল্লেখটা দিলাম, আবার ঘুমোতে চেয়েছি আমি অন্ধকারের স্তনের ভিতর যোনির ভিতর...
আধুনিক কবিরা শব্দপ্রধান কবিতা লিখেন না, আমার কেবল এইরকমই মনে হয়েছে।

০৪.
আমি লিখেছি, সুন্দর হয়েছে জল; বলি নি সুন্দর হয়েছে আপনার যোনিলগ্নজল। যোনিলগ্নজল বললে জল আর প্রধান থাকে না, যোনি প্রধান হয়ে উঠে। এইশব্দবন্ধ শুনে বা পড়ে আমাদের চোখে প্রথেমেই যে দৃশ্যকল্প তৈরি হয় তা কীসের? জলের, নাকি যোনির?
সুতরাং আমরা যখন কোনো শব্দবন্ধ তৈরি করবো তখন দুটি শব্দের মধ্যে যদি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, তবে সে ফ্রেইজ টা ব্যর্থ। যৌনাঙ্গদরজার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে শব্দের সাথে শব্দের, শব্দের সাথে বাক্যের ভারসাম্যের ব্যাপারটা এটাই কবিতার মৌলিক ছন্দ।

০৫.
শিশ্নিত কাঁটায় আটকে আছে ছায়াচুর দুপুরের রূপ
আমি নিরন্তর অন্ধ হয়ে গেলাম
একটি জংলিগুল্মের কথা মনে হলো কেবল
স্তনের শিরা তার ছুঁয়ে গেছে পূর্বের সকল জনপদ...
কবিতায় যোনি, শিশ্ন, ভগাঙ্কুর, স্তন, নিতম্ব, উরু এইসব শব্দ প্রয়োগের ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। আমি নিজেও করেছি বহুবার।
কিন্তু প্রয়োগের আগে আমাদের যেটা দরকার, তা হলো অবশ্যই হাজার বার ভাবতে হবে। যাতে তাল রক্ষা করতে পারে; বাহুল্য না হয়, কিংবা ঝুলে না পড়ে।

০৬.
আর আপনাকে আমি কখনোই আধুনিক-উত্তরাধুনিক কবিতা লিখতে বলি নি। কিন্তু কবিতা যখন লিখছেন, কবিতাকে সংগ্রাম হিশেবেই নিতে হবে। অনেকে কবিতাকে ফ্যাশান হিশেবে নেয়; অলস অবসর কাটানোর জন্যে কবিতা(?) লেখে, ওই দলে আপনাকে আমি ভাবি না। তাই এতোসব কথা।

০৭.
আপনারাতো দাদা দশকবিচারকারিদের গালিগালাজ করেন। এইটা কি শুনে করেন, নাকি বুঝে বুঝে করেন আমার মতো মূর্খদের বুদ্ধির বাইরে।
আমরা কবিতার দশক বিচার করি কারণ আমাদের পূর্বের কবিরা তাদের যৌবনের মতোই কবিতা লিখেন, তারা সময়কে ধরতে জানেন না। যেমন শামসুর রাহমানকে আমার ৫০দশক বলি। তিনি মৃত্যুর আগেও তার দশকের মতো কবি লিখতে গেছেন। কিন্তু তিনি ফুরিয়ে গিয়েছিলেন। বোনের মৃত্যু, কবরের জায়গা এইসব বিষয় নিয়ে কবিতা লিখতেন। আর দেশের জাতীয় দৈনিকে ছাপা হতো। শহীদ কাদরী সম্প্রতি মূর্খ ভক্তদের পাল্লায় পড়ে নতুন কবিতা লিখে কাব্যগ্রন্থ বের করেছেন এবং নিজের সর্বনাশ করেছেন। একটাও জাতের লেখা হয় নি। কেননা, তিনিও ফুরিয়ে গেছেন।
একমাত্র ব্যতিক্রম শঙ্খ ঘোষ(মৃতদের মধ্যে বিনয় মজুমদার), যাকে কোনো দশকে ফেলা যাবে না। তিনি প্রতিনিয়ত নিজেকে নবায়ন করেন। তিনি বলতে গেলে সর্ব বিষয়ে পণ্ডিত।

০৮.
কবিতাকে ভৌগলিক সীমারেখায় নয়, ধরতে হবে বৈশ্বিক দৃষ্টিতে। আপনাকে আপনার সময়ের শ্রেষ্ঠ কবি হতে হবে। হতে পারেন বা না পারেন সেটা মুখ্য নয়। স্বপ্নটাই প্রধান। স্বপ্ন মানুষকে গতি দেয়।
ওহি লেখার কথা বলি নি। কবি যদি বুঝতে পারেন-- তিনি আর লিখতে পারছেন না-- তাহলে তার লেখা ছেড়ে দেয়া উচিত কিংবা লিখে নষ্ট করা উচিত।

০৯.
কখনো পাতার ভাঁজে কাঁপন এঁকে আসঙ্গ হও যদি
মুনিয়ার ঠোঁটে আঙুল রেখে আমিও হতে পারি নদী
আমার একজন কবি ভগাঙ্কুরের নামকরণ করেছে একটা পাখির নামে। পাখিটি বাঙলাদেশের সবচে' ছোটোপাখি, নাম মুনিয়া।
প্রকৃতপ্রস্তাবে নামকরণটা আমিই করেছি। আমি ছাড়া আমার কেউ নেই।

১০.
মানুষ শৈশব অতিক্রম করলেই আমাদের সমাজ নারী-পুরুষ বিভাগ করে ফেলে। সুতরাং ১৪বছর বয়সকে নারী বললেও ভুল বলা হবে না।
কিন্তু কথা হচ্ছে-- আমি মেয়েটিকে নারী কোথাও বলি নি। আমি যে বাক্যে নারী শব্দটি লিখেছি-- বাক্যটি পড়ার সময় হয়তো আপনার মনোসংযোগ ছিন্ন হয়েছিলো। আমি নারী বলেছি সাতকাহনের দীপাবলিকে-- যে নিজের চেষ্টায় আইসিএস পাশ করার পর সরকারের প্রশাসনিক পদে দীর্ঘদিন চাকরি করার পর নানামুখি সমস্যা এবং সংগ্রামের ভিতর দিয়ে পথ চলতে চলতে একসময় হোছট খেয়ে তার ঠাকুর মা মনোরমার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে, তখন তাকে আমি নারী বলেছি। এটা উদাহরণ। হ্যাঁ?

১১.
যার বই পড়ার অভ্যাস আছে সে কি "নারী"র মতো সহজ একটা বই পড়তে পারে না? আর যেখানে বই যে দিয়েছে তার সাথে পাঠোত্তর আলোচনার সুযোগ থাকছে। আর বইটিকে আমি খুবি গুরুত্বপূর্ণ বই মনে করি, সিমোন দ্য বোভোয়ারের "দ্য সেকেন্ড সেক্স" এর পর। এবং এই বইটিকে আমি প্রতিটি নারী ("যে নারী হয়ে জন্ম নেয় না, ক্রমশ নারী হয়ে উঠে") র জন্য গীতাবৎ মনে করি। কেননা এটি তার নিজেকে চিনতে শেখায়। তার অবস্থান সম্পর্কে জানিয়ে দেয়। নারী নয়, মানুষ হিশেবে তার ঔচিত্যবোধকে জাগ্রত করে।

১২.
আমরা এমন অনেক বই খুবি কম বয়সে পড়ে ফেলি, যা পুরোপুরি বুঝতে পারি না। কিন্তু বইটা যদি ভালো হয় তবে বইটির স্মৃতি আমাদের মাথার ভিতর রয়ে যায়, ফলে। পরে আবার অনেকবার পড়া হয়। ব্যাপর টা আসলে এমনই।

১৩.
রামগিরিতে যে-যক্ষ নির্বাসিত-- তার কাছে সারাবছরই আষাঢ় মাস। নাহলে সে মেঘকে দূত করে অলকায় পাঠাতে পারে না। সে বিরহ-স্রস্ত, তার হাতের বলয় খসে পড়েছে, সে এমনই শীর্ণকায় হয়েছে... আষাঢ় তাকে বাঁচিয়ে রাখে...

১৪.
কেউ যদি আত্মহত্যা করতে চায়, তার ভিতর স্বপ্ন বুনে দিতে হয়। এইস্বপ্ন একেবারেই স্পর্শের কাছে থেকে বুনতে হয়।
মায়াকোভস্কি আত্মহত্যা করেছিলেন, কারণ সোভিয়েত তার স্বপ্নের চারপাশে সীমারেখা টেনে দিয়েছিলো। কবি তো শৃঙ্খল মানে না।

১৫.
অন্ধ এক অর্থে ভাগ্যবান। তাকে কদর্যতা আর দেখতে হয় না। পূর্বের নন্দিত স্মৃতি ছুঁয়ে সে বাঁচে।
জন্মান্ধও ভাগ্যবান। কেননা সে ছুঁয়ে কল্পনা করে নেয় মাটি আর বৃক্ষের রঙ, পরজীবী গুল্মের রূপ।

১৬.
কে বললো আমি অভিযোজন জানি
আমি কি মানুষ নই
তখন আমি ইশ্কুলে পড়ি। হোস্টেলে থাকি। শীতকাল। রাতে লোকালবাসে বাড়ি ফিরছিলাম। জানলাবন্ধ বাসে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। বাসের জানলা খোলা রেখেছিলাম বলে অন্যান্য যাত্রীরা এবং বাসের লোকজন গভীররাতে আমাকে এমন একটা জয়গায় বাস থেকে নামিয়ে দিলো যেখানে থাকার কোনো বোর্ডিং কিংবা হোটেল ছিলো না।

কোথাও কি ভোর হচ্ছে এখন? কোথাও রাত নিভে গেলে জামবাটি হাতে কড়া নাড়বে হাওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:২৯
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×