অনেক দিন পর লিখতে বসলাম। বহুদিন লেখার প্রতি কোন প্রকার মনযোগ ছিল না। আজও হয়ত বসতাম না। প্রিয় কোন মানুষের নিকট থেকে কষ্ট পেয়ে হৃদয় ব্যথিত হওয়ায় তা আর আপন মনে আবদ্ধ রাখতে না পেরে লেখনী দ্বারা শ্বেতপত্রে মনের কষ্টগুলোকে লিপিবদ্ধ করার প্রয়াসে বসলাম। জানি না এখানে আবেগের কোন প্রতুলতা স্থান পাবে কি না। জীবনকে নিয়ে অনেক ভাবতে ভাবতে আজ আমি বড় ক্লান্ত। আপন জীবন যেন স্থবির হয়ে যাচ্ছে। জীবনপথের জীবনজটে এমনভাবে আটকে যাচ্ছি যেন চারপাশ থেকে সকল প্রতিকূলতা আমার উপর প্রবল আক্রোশে আক্রমণাত্মকভাবে তেড়ে আসছে। কিন্তু কী আমার অপরাধ? কী আমার দোষ? আমি কি কারো বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছি? না কি কাউকে গাছে তুলে মই কেড়ে নিয়েছি? কে দেবে আমার প্রশ্নের জবাব? কে? কে? কে দেখাবে আমায় নতুন করে জীবন পথের আলো? তোমরা কে আছো ভাল? কেই কি আছো? কেই কি শুনছো আমার আর্তনাদ? হায়রে পৃথিবী! হায়রে মনুষ্য জাতি! বন্ধু বেশে ক্ষণিকের জন্য কেন আসো? কেনই বা চলে যাও দুঃখ দিয়ে? আসোই যদি হিতাকাঙ্ক্ষী হয়ে, তবে হিতকর্ম সম্পাদন না করে অকুল পাথারে একলা ফেলে চলে যাও কেন? কী তোমার স্বার্থ? তুমি কি মানুষ নও? তুমি কি পৃথিবী সংসারের বাইরের অধিবাসী? আজ তুমি তোমার স্বার্থ সিদ্ধিতে অন্যের মনে বেদনার সঞ্চালন করছো; কাল কি তুমি সুখের সাগরে ভাসবে? কাল অন্য কেউ তো তোমার সুখ সাগরের নীল জলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে পারে! তোমার মনে কি এতটুকু ভীতি সঞ্চারিত হয় না? আমি জানি কেউ দেবে না আমার উত্তর! হায়রে পাষন্ড! স্বার্থপর মনুষ্য জাতি! ধিক! তোকে ধিক! আপন ভেবে যার কাছে যেতে চাই; স্বার্থের আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে জীবন করেছে সে ছাই! অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তির পরিণাম তো এই! জীবন চলার পথে কিছুদিন পিছিয়ে যাওয়া!
আমার বন্ধু। আমার। শুনুন সকলে, আমার বন্ধু। প্রিয়তম শৈশবের বাল্যবন্ধু। যে কি না আমার সাথে একই সাথে একই গুরুর নিকট শিক্ষা গ্রহণ করেছে। হ্যাঁ শুনুন। সে আমার বন্ধু। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতায় সুদীর্ঘ নয় বছর সাক্ষাত হয়নি। হ্যাঁ, সে আমার বন্ধু! যাকে নতুন করে আবিষ্কার করে এক অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি মনে করে আপন মন আনন্দে আন্দোলিত হয়েছিল। কিন্তু সে প্রাপ্তি বেশিদিন না, মাত্র দুই পক্ষ অতিক্রম করেই আরেক অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি প্রাপ্ত হয়েছে। যে কারণে আজ রাতের প্রথম প্রহরে গভীর নিশীথ শীত উপভোগ করে লিখতে বসেছি। কারণ এ প্রাপ্তি চির স্মরণীয়। বরণীয় নয়। সে আমার প্রিয় বন্ধু। যাকে নিয়ে মন মাঝারে বহু স্বপ্ন লালিত্য; সে কিনা আমারই সাথে এমন ব্যবহার করল! যাকে নিয়ে দেখেছিলাম নতুন ভোরে রক্তিম সূর্যের মত নতুন নতুন শুভ্র পবিত্র স্বপ্ন; সে কি না! আমি ভাবতেও পারছি না! বিশ্বাস করুন। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। সে! সে! নিয়তির কি নিষ্ঠুর পরিণতি! হঠাৎ থমকে দাঁড়ায় জীবনের গতি। তবুও তো সে আমার বন্ধু। আজও তাকে ভালবাসি চিরদিনের মত। শরতের প্রভাতে কচি ঘাসের উপর জমে থাকা শিশির বিন্দুর মত পবিত্র আমার প্রেম। আমি তাকে ভালবাসি। ভালবাসি। এবং ভালবাসি। আমি কি আবেগের প্রচ্ছন্নতায় বিমোহিত? না, সত্যি বলছি। আপনারা তো সবাই শুনছেন। কিন্তু সে কোথায়? সে কি শুনতে পাচ্ছে না আমার চিরসত্য, চিরমধুর এ কথাগুলো? আপনারা দ্বিধাগ্রস্ত হবেন না। সে আমাকে বেদনার স্রোতে ভাসিয়ে সুখের তরীতে আরোহণ করছে। তার চারপাশের সুখস্রোত হয়ত কোনদিন ঢেউয়ে আছড়ে পড়ে দুঃখস্রোতে ভাসাবে। আমি সে অপেক্ষায় থাকব। সেদিন সে হয়ত বুঝবে। আমার বুকেই মাথা গুজবে। কিন্তু আমি তখন মহাকালের স্রোতে ইহকাল ত্যাগ করে পরলোকে গমন করব।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


