somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবাসের পথে ... (৭) ইকেবানা...

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জাপানের ফুল... কথাটি বললেই চোখে ভেসে উঠে সেই ফুলদানীতে সাজানো ত্রিভুজ আকৃতির সজ্জা। আজ লিখবো সেই ত্রিভুজ আকৃতির ফুল সজ্জার কথা... ইকেবানা।

ইকেবানা শব্দটির দুইটি অংশ আছে। ইকে এবং বানা। জাপানীজ ভাষায় ইকে অর্থ জীবন্ত এবং বানা অর্থ ফুল। তাই ইকেবানা বলতে যেনতেন ভাবে শুধুমাত্র ফুলদানীতে ফুল রেখে দেয়াকেই বুঝায়না। বরং ফুলদানীতে প্রকৃতিকে জীবন্ত ভাবে তুলে ধরাই ইকেবানার বৈশিষ্ট্য। ইকেবানা তৈরীতে কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম মানা হয়। তৈরীতে ব্যবহার করা হয় সতেজ ফুল, পাতা, ঘাস, ডাল ইত্যাদি। পেইন্টিং বা ভাস্কর্য-র মতোই এটাও একটা শিল্প।



জাপানে ইকেবানার ইতিহাস প্রায় ৬০০ বছরেরও বেশি পুরানো। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর কৌশল থেকেই ইকেবানার উদ্ভব। পন্চাদশ শতকের মাঝামাঝি জাপানের আধুনিকায়নের সাথে সাথে ইকেবানা একটি শিল্প হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। সময়ের প্রেক্ষিতে যা আরো প্রসারিত হয়ে আজ এক স্কুল অব আর্টে পরিণত হয়েছে সঙ্গে সঙ্গে সকল প্রকার জাপানীজ সমাজেই সমাদৃত হয়েছে।

এর রয়েছে নানান প্রকারভেদ। এসব প্রকারভেদের বিস্তারিত বলতে গেলে একটি বা দুটি পোষ্টে শেষ করা যাবে না। আমারতো মনে হয় প্রায় ৫০ টি বা তারও অনেক বেশি পোষ্ট লাগবে। তাই শুধুমাত্র একটি প্রকারভেদ, মোরিবানা-এর বেসিক বিষয়টাই আজ আলোচনা করবো। আশা করি আপনারা এই সীমাবদ্ধতাটুকু ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতেই দেখবেন।

মোরিবানাঃ
ইকেবানার অনেক প্রকারভেদের মধ্যে মোরিবানা সবচেয়ে জনপ্রিয়। মোরিবানা তৈরীর জন্য ফুল, ডাল, ঘাস, পাতার পাশাপাশি যা লাগবে তা হলো সুইবান আর কেনযান। এগুলো জাপানীজ নাম। সুইবান হচ্ছে ছড়ানো পাত্র বা ট্রে-র মতো ফুলদানী। বিভিন্ন আকারের (যেমনঃ গোল, লম্বা, ছড়ানো, উচুঁ) হয় এই সুইবান।

সুইবান -



কেনযান হচ্ছে একটুকরো লোহা বা ভারী কোন পাতের গায়ে লাগানো কাটাবিশিষ্ট প্লেট। এটাও বিভিন্ন আকারের হয়।

কেনযান -



নিচের ছবিটি খুব ভালো করে দেখুন। এই ছবিটির দুটি অংশ আছে। প্রথম অংশটি পাশ থেকে দেখা এবং পরের অংশটি উপর থেকে দেখা। প্রথম অংশে শুধুমাত্র সুইবানটিই দেখা যাচ্ছে পাশ থেকে। আর পরের অংশে সুইবানের (বড় বৃত্তের) ভিতরে ছোট যে বৃত্ত সেটি কেনযান।


মোরিবানা তৈরীর জন্য উপরের চিত্রের কৌণিক মাপ বিষয়টি সবচেয়ে গুরুর্ত্বপূর্ণ। আর একটি গুরুর্ত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সুইবানের ভিতরে কেনযানের অবস্থান। নিচের ছবিটি দেখুন।


উপরের ছবিতে বড় বৃত্তটি হচ্ছে সুইবান। আর ভিতরের ছোট ছোট বৃত্তগুলো হচ্ছে কেনযান-এর বিভিন্ন অবস্থান। পজিশন ১ এবং ২ উলম্ব মোরিবানা তৈরীতে ব্যবহার করা হয়। আর পজিশন ৩ এবং ৪ তির্যক মোরিবানা তৈরীতে ব্যবহার করা হয়। উলম্ব আর তির্যক বিষয়টা নিচের উদাহরণগুলো লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন।

এবার আসি কেনযানের লোহার কাটাতে ফুল বা ডাল গাথাঁর বিষয়ে। নিচের ছবিটি দেখুন।


কেনযেনকে আপনার সামনে উপরের বৃত্তটির মতো করে ভাবুন। এবার লক্ষ্য করুন তিনটি অবস্থান- সিন, সোই এবং হিকাই। এই তিনটি পজিশনেই আপনার ফুল ও ডাল গাথঁতে হবে।

আগেই আপনারা জেনেছেন ইকেবানা হচ্ছে জীবন্ত ফুল। অর্থাৎ এমন করে ফুল সাজানো হয় যেন জীবন্ত প্রকৃতি ফুটে উঠে। ফুল সাজানোর আগে ফুলটি ভালো করে দেখুন। কোন এঙ্গেল থেকে ফুলটি ভালো দেখা যায় তা ঠিক করুন। অর্থাৎ প্রাকৃতিক রূপ দেয়ার জন্য ফুলের সামনের দিকটা নির্ধারন করুন। এবার ঠিক করুন ফুলের বোটা কতটা বড় রাখবেন। বোটা বেশী বড় থাকলে ছোট করার জন্য যে অংশ থেকে কাটবেন তা পানির মধ্যে চুবিয়ে কাচিঁ দিয়ে তির্যক করে কাটুন। পানির নিচে কাটতে হবে কারণ এতে কাটার সময় চাপে বোটায় বাতাস না ঢুকে পানি ঢুকবে। আর তির্যক করে কাটতে হবে কারণ, এতে ফুলটি পানি শোষনের জন্য বেশী জায়গা পাবে। একই নিয়ম মেনে ডাল, পাতা এগুলোও কেটে নিতে হবে।

এটুকুই সংক্ষেপে ইকেবানার টেকনিক্যাল বিষয়। আর বাকীটা শিখতে নিচের ছবির ধাপগুলো ভালোভাবে খেয়াল করুন এবং প্রাকটিস করুন। আর তারপর ইন্টারনেট তো আছেই।

১) উলম্ব মোরিবানা






২) তির্যক মোরিবানা






এবার সবশেষে খুবই সহজ একটি ইকেবানা প্রস্তুতিঃ
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ ছড়ানো টাইপের ফুলদানী বা ছোট ট্রে, কাট ফ্লাওয়ার (যেমনঃ রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস), কাচিঁ, টেপ, কিছু গজ, রঙীন পাথরের কুচি।

প্রস্তুতির ধাপঃ
১) ছবির মতো করে ছড়ানো ফুলদানীতে গজ টেপ দিয়ে আটকাতে হবে।


২) এবার কাট ফ্লাওয়ারটি ছোট করে কেটতে হবে।


৩) কাট ফ্লাওয়ারের কাটা অংশটি টেপ দিয়ে লাগানো গজের মধ্যে শক্ত করে গেথেঁ দিতে হবে। পানি দিয়ে গজটি ভিজিয়ে দিতে হবে।


৪) পাথরের কুচিগুলো ফুলদানীতে বিছিয়ে দিতে হবে।


ব্যাস হয়ে গেলো ইকেবানা। যারা আরো বেশি জানতে চান তারা এখানে ক্লিক করুন

সবাই ভালো থাকবেন।

(তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট)

(উৎসর্গঃ নতুন রাণী - নীপবন )

======================



আগের পর্বসমূহঃ
প্রবাসের পথে... (১) ওসাকার অলিগলি...
প্রবাসের পথে... (২) জাপানের ঐতিহ্য...
প্রবাসের পথে... (৩) জাপানীজ কিমোনো...
প্রবাসের পথে... (৪) জাপানীজ সুসি...
প্রবাসের পথে... (৫) ফসলের ছবি...
প্রবাসের পথে... (৬) হকুসাই চিত্রকর্ম...



সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ১০:০৬
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×