somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দক্ষিণের জানালা

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সুকৌশলী তীরন্দাজের মত নিজের লক্ষ্যকে ইচ্ছার দ্বারপ্রান্তে গেঁথে ফেলতে চেয়েছিলেন আদনান সাহেব । কতটুকু পেরেছেন তা বুঝা যায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নতুন মডেলের প্রিমো এবং নিজেদের বস্ত্রকারখানা দেখলে । রোজকার মত যখন নিজের ভারী দেহটাকে টেনে ছয়তলার এক কোণে ফেলেন তখন পরিতৃপ্তির হাঁসিতে সম্প্রসারিত হয় মুখমণ্ডল । আহ কি শান্তি ! অন্তত এই জায়গাতে আমিই বস, আপন মনে ভাবেন তিনি ।
পরিশ্রান্ত দেহ যখন ক্লান্তির প্রয়াসে আশ্রয় খুঁজতে থাকে । তখন আর জায়গা না পেয়ে নিজের বিশাল সুইভেল চেয়ারে সুখনিদ্রা যান তিনি । একটু পর নাসিকা গ্রন্থ পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করতে না পারায় শ্বাস প্রশ্বাসের গতি প্রখর হয়ে ওঠে এবং তারা সশব্দে নিজস্ব পদ্ধতিতে যাতায়াত করতে থাকে । আদনান সাহেবের ঘুম ভাঙ্গে দিবাস্বপ্নে । টেলিফোন বাজতে থাকে । টেলিফোন তোলে নিশ্চুপ শুনে যান । তারপর ওয়াশ রুমে গিয়ে নিজেকে তরতাজা করেন । কিছু ফরেন ডেলিগেট আসার কথা আজকে । বাসায় ফোন করে জানালেন লাঞ্চে দেরি হবে ।

আদনান সাহেবের ছোট শ্যালিকা পিংকি এবার ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে । কোচিং এবং এডমিশন টেস্ট বাবদ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বোনের বাসায় টেম্পোরারি গেস্ট বনে যাওয়া । আর বোনের মেয়েটাকে একটু আধটু হেল্প করা ।

ওদের দ্বিতীয় কোন সন্তান নেই । এ নিয়ে প্রায়ই বাগবিতণ্ডা, একে অন্যের অক্ষমতা জাহির করা ; এগুলো ওরা যতই ধামাচাপা দিতে চায় লাভ হয়না । পিংকি বেচারির শ্রবণসীমার চারপাশে বীরদর্পে বিচরণ করে শব্দগুলো । যৌবনের পিচ্ছিল সিঁড়িতে পা টিপে টিপে সাবধানে চলে সে । দুয়েকবার হোঁচট যে খায়নি তা নয় তারপরও নিজেকে সামলে নিয়েছে । প্রতিরাতেই সে তাদের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত হয় । দাম্পত্য জীবনের কোলাহল ওর কাছে এসে স্বেচ্ছায় কানাকানি করে । নিশিতে সে অনুধাবন করে দম্পতিদ্বয় জেগে আছে । একটু পর পর ভেসে আসা যৌনজীবনের উত্তেজিত কামুক শব্দযুগল উত্তাল যৌবনে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলে । । সিমির কোণার রুম থেকে এসব শোনাই যায় না । কারণ ওর রুমের জানালা দেয়ালের অন্যদিকে আর পিংকির রুমের জানালাটা ওদের জানালার একই সারিতে । কতবার যে জানালা বন্ধ করতে গিয়ে হাত গুটিয়ে নিয়েছে সে; থাক না চলুক সেসব অনর্থক কথোপকথন । নিঃশব্দ রাত্রির একাকীত্বতা দূরীভূত করতে সেসবকে আঁকড়ে ধরে পিংকি ।

সিমি পিংকি খেতে আয়; আদনান সাহেবের স্ত্রী সেলিনা পারভিন ডিনারে এভাবেই ওদের ডাকেন সবসময় । আহারাদির পর্ব শেষ হলে আদনান সাহেব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ওদের সাম্প্রতিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত হোন ।
আহারে! বোনটা আমার শরমে ঠিকমত খাইতে পারে না, সেলিনা বিলাপ করতে থাকে । এই তুমি ওর সামনে কখনো বসবা না, দেখনা ও কেমন লজ্জা পায় ।
-কইসে তোমারে ! আমি তো নতুন বেয়াই যে দেখলেই লজ্জা লাগে । জিজ্ঞ্যাস করে দেখো তোমার বোনেরে ।
আচ্ছা ঠিকাছে । জিজ্ঞাস করার দরকার নাই । আমরা খাওয়ার পর ওকে ডাকলেই চলবে, সেলিনা বলতে থাকে ।

যথাসময়ে সবাই খেতে বসেছে কিন্তু পিংকি আসে নি ।
পিংকি কই? আদনান সাহেব জিজ্ঞাস করেন ।
-খাবার সময় হয় নি এখনো । তোমাকে আগে দিয়ে দিচ্ছি ।
কি যে শুরু করছ তোমরা । ডাকো তোমার বোন আর মেয়েকে । এই পিংকি সিমি খেতে আয়, বলে নিজেই ডাকা শুরু করলেন । এরপর থেকে সেলিনা হয়ে যায় শুধু খাবারের আয়োজক, আর ডাকাডাকির দায়িত্বটা স্বেচ্ছায় নিয়ে নেন আদনান সাহেব ।

ব্যাতিক্রম কিছু একটা ঘটেছে কিন্তু ধরতে পারছে না পিংকি । শুধু জানে আদনান সাহেব ডাক দিয়েছেন । কিন্তু এর বাইরেও কিছু একটা আছে । ওর সিক্সথ সেন্স বলে দিচ্ছে সেটা ।

আদনান সাহেবের মেয়ে সিমি পড়ে স্কলাস্টিকায় । যাতায়াতের দায়িত্বে থাকে সেলিনা । সেক্ষেত্রে শনিবার আদনান সাহেব বাসাই থাকেন । পিংকি কোচিং এ যায় বারোটার পরে । শনিবার দিনটা একটু আরাম করেন তিনি । ঘুম থেকে ওঠেন দশটারও পরে । টেবিলে নাস্তা দেওয়াই থাকে । কাজের বুয়া এগারোটায় বিদায় হয় । তবে আজকে আধা ঘন্টা আগেই চলে গেছে ।
আদনান সাহেব টেবিলে বসে নাস্তা করেন আর পত্রিকায় চোখ বুলান । বিরক্ত হয়ে শব্দ করে চায়ের কাপ নামিয়ে রাখেন । কিসের এক গোপন অভিসন্ধিতে ইতিউতি তাকান আশেপাশে । তারপর চোখ পড়ে পিংকির রুমের দিকে ।
মেয়েটা নেই ! আবার তাকান সিমির রুমের দিকে, সেখানেও নেই !!
গেলো কোথায় তাহলে? বাথরুমের দরজাগুলোও খোলা । আদনান সাহেব ফোন করলেন সেলিনার কাছে, উত্তেজিত কন্ঠে জিজ্ঞ্যাস করলেন ওর কথা । লাভ হলো না কোনো । মেয়েটা পালিয়ে গেছে । কিন্তু কেন? ভাবেন তিনি । চোখমুখ লাল হয়ে ওঠে তাঁর; মাইয়া তো সেয়ানা হইয়া গেছে ।

যুবতী মেয়েদের সিক্সথ সেন্স খুবই প্রবল থাকে বলা যায় । পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে তারা নিজেকে মেটোমরফসিস করতে পারে । না পারলে স্থান বদল করে । পিংকির কথাই ধরা যাক তাহলে ...
আদনান সাহেব লক্ষ্য করতেন যখনই তিনি আড় চোখে দুয়েকবার মেয়েটার বাড়ন্ত সম্পদের দিকে দৃষ্টিলেহন করতেন, মেয়েটা ঠিকই নিজেকে প্রতিরোধ করে ফেলত । খাদ্যের বদলে তাঁর দৃষ্টি চলে যেত দৈহিক স্থানগুলোতে । নিজেকে সামলাতে তখন খুব হিমশিম খেতে হত তাঁকে । আবার না দেখতে পারলে নিজেরও খাওয়া হজম হতোনা । আড়ালে আবডালে দুয়েকবার চোখটিপ কিংবা ইশারা দিয়ে বুঝাতে চেয়েছেন কিন্তু মেয়েটা বুঝেও না বুঝার ভান করতো ।

পিংকির ইন্টেলেকচুয়াল ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই, সবকিছু সে লজিকের দাঁড়িপাল্লায় পরিমাপ করতে পছন্দ করত । আদনান সাহেবের অভিব্যাক্তির দরুন সে যতটুকু যা ই বুঝতে পেরেছে তার চেয়েও বেশি বুঝেছে খাবার টেবিলে সম্ভাষণের ধরন দেখে ।
মানুষের অতি সাধারণ একটি প্রবণতা হচ্ছে, প্রিয় মানুষ কিংবা পছন্দের কাউকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া । কাউকে যদি জিজ্ঞ্যাস করা হয়, মিলি লিলি দুজনের ভেতর কে বেশি সুন্দরী ; তাহলে নিশ্চয় তাকে একটু হলেও ভাবতে হবে । চিন্তাধারা হবে ব্যাক্তিক নয় বরং নামগত ।
এক্ষেত্রে পিংকি কোনো চিন্তা না করেই বলে দিতে পারবে মিলি বেশি সুন্দরী । কারণ সুন্দরীদের সবাই পছন্দ করে এবং দুজনের মধ্যে অপেক্ষাকৃত যে বেশি সুন্দরী তার নামটাই আগে জুড়ে দেয় সবাই । দেখা যায় দু জন স্টুডেন্ট রনি জনি । এখন টিচার যদি দুজন কে একসাথে এভাবে ডাকেন জনি রনি; তাহলে বুঝতে হবে যে রনির চেয়ে জনি বেশি মেধাবী কিংবা স্যার জনিকেই বেশি পছন্দ করেন ।

সেলিনা এতদিন ওদের খাবার টেবিলে ডাকতেন সিমি পিংকি বলে । এতেই পিংকি অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো । কিন্তু যেদিন আদনান সাহেব ওদের ডাকলেন পিংকি সিমি বলে সেদিনই ওর মনে ব্যাপারটি খুঁত খুঁত করতে থাকে । তৎক্ষণাৎ বুঝতে না পারলেও সে পরে বুঝতে পারে । যে কোন সময়ই একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে । পুরুষদের বিশ্বাস নেই, এ জাতীয় মনোভাব পোষণ করে সে সম্ভাব্য দিনটিও বের করে ফেলতে সক্ষম হয় ।

পিংকি বাসায় ফিরে দুপুরের পরে যখন সিমির স্কুল থেকে ফেরার সময় হয় । আসতে না আসতেই আদনান সাহেব আর সেলিনার কাছে ওকে জবাবদিহিতা করতে হয় ।

না বলে কোথায় গেছিলি? সেলিনা জিজ্ঞাস করে ।
-কোচিং এ । নির্লিপ্ত জবাব ওর ।
কোচিং না দুপুরে হয়? এবার আদনান সাহেব জিজ্ঞাস করেন ।
-শিফট করে নিয়েছি ।
হঠাৎ শিফট করার এত দরকার পড়ল কেন? ধমকে ওঠেন তিনি । সেলিনা কেমন একটা বুনো দৃষ্টিতে তাকায় স্বামীর দিকে ।
সেলিনা বলেন, তুমি ওকে ধমক দিচ্ছ কেন?
-কই ধমক দিলাম । জিজ্ঞ্যাস করলাম মাত্র ।
এই তুই রুমে যা । পিংকি চলে যায় ।

গভীর রাত্রে পিংকি কান না পাতলেও শুনতে পায় উত্তেজিত কথাবার্তা চলছে স্বামী স্ত্রীর মাঝে । ওকে জড়িয়ে তির্যক বাক্যগুলো কান দিয়ে প্রবেশ করে সীসা ঢেলে দেয় মগজে । অনেক দিন পর আজ সে সকল দ্বিধাগ্রস্থতা ঝেড়ে ফেলে জানালার দিকে হাত বাড়ায় । আস্তে করে দক্ষিণা জানালাটা বন্ধ করে দেয় এবং শব্দগুলো চাপা পড়ে যায় তাতে । তবুও মনের ভেতর খচখচ করে শব্দশলাকা নিঃশব্দে অনপনেয় কারুকাজ খুঁচিয়ে যায় ।

-------------


সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:০৯
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×