somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিরকুট…

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নীলি হুট করে একদিন চিরকুট পাঠায় -

“ শফিক ভাই,
আমার খুব মরে যেতে ইচ্ছে হয়।
নীলি “

চিঠি পেয়ে পলায়নপর শফিক অবাক । সেও জবাব দেয় ছোট্ট করেই ।
“ বরং রিকশায় বাঁ পাশে বসাটা একটু কষ্ট করে রপ্ত করে দেখোই না কি হয় ।
শফিক ভাই “

আবার জবাব আসে নীলির । ছোট্ট এক টুকরো নক্ষত্রের মতো ।

“ রিকশা কেন? দু'জন কি সারাজীবন হাত ধরাধরি করে হেটে গেলে হয় না! “

শফিক রুপালী পর্দার নায়ক নয় । জবাব দিতে তাই সে থমকায় খানিক ।
“ . . . দুই-ই তো পথ চলাই হলো । “

নীলিকে শফিক যেদিন প্রথম বাড়ি পৌছে দিতে গেল রিকশা করে, সেদিন তুমুল বৃষ্টি হচ্ছিল।শফিক প্রশ্ন করেছিল, একফোঁটা বৃষ্টির পানি আর একফোঁটা বৃষ্টির পানি মিলে ক'ফোটা পানি হয়?
নীলি উত্তরে বলেছিল, কেন দু'ফোটা!

কিন্তু সে তো বহু আগের রুপকথার দিনের গল্প । চুপকথার বাস্তবে থেকে সঠিক জবাবটা নীলি এখন নিশ্চয়ই জেনে গেছে । তবুও চিঠি পেয়ে শফিক অস্থির হয়ে যায়।শান্ত স্বভাবের নীলি কেন এমন চিঠি লিখলো সে উত্তর তাকে জানতেই হবে।চারদিকে তখন অশান্ত পরিবেশ। শুরু হয়েছে লাগাতার হরতাল আর ধর্মঘট.......

" কী করি ? কী উপায় ? " ভেবে ভেবে শফিক অস্থির । আশেপাশে পটকার শব্দ একটু কমে আসলে এক লাফে চার ধাপ করে সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে সে প্রায় উড়ে নিচে নামে । কিন্তু রাস্তা ঘাট ফাঁকা । অথচ নীলির বাড়ি বহু দূরে । বহুক্ষন তীর্থের কাক সেজে প্রতীক্ষা করার পর এক সিএনজিওয়ালা কে পাওয়া গেলো ।
বিধিবাম ! নীলির বাড়ি অচিনপুর , যে ঠিকানা শুনে চালক ভাগে বহুদূর ।

এই দেখে শফিক বুঝতে পারে নীলির বাসায় যেতে বের হলে, মেডিক্যালে পৌছে যাওয়ার গুরুতর সম্ভবনা । ভয়ে একটু ভীতু শফিকের হার্ট বিট পরপর কয়েকটা মিস হয়ে যায় । কিন্তু যোগাযোগ হওয়াটা যে খুবই জরুরী ! . . . . সে মুঠোফোন ঘাটে, কিচ্ছু নেই । আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখার জন্যে ধুলো ময়লার শহরে আকাশ কে খোঁজে , সেও লাপাত্তা । হঠাত্ মনে পড়ে ডিজিটাল চিঠির কথা । সৌভাগ্যক্রমে চিঠি পাঠানোর পোস্ট বক্স নম্বারটা সে জানতো ।

যেই ভাবা সেই কাজ । কিছু অনুভূতি শব্দের ছদ্মবেশে ভেসে যায় ইথারে । অতঃপর হয়তো তারা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সঙ্গোপনে থাকা থাকা প্রাপকের মনে বৃষ্টি হয়ে ঝরে . . . . .
শফিকের মন জুড়ে থাকে নীলি এবং তার চিঠি । নীলির মরে যেতে ইচ্ছে হয়, কী আশ্চর্য এই সংবাদ! যার কাছে ভালোবাসাকে মনে হয় চীনা অক্ষরের মতো চিত্রময়, সে মেয়ের কেন মরে যেতে ইচ্ছে হবে? কেন সেই সংবাদ সে জানাবে শফিক কে? উত্তেজনায় থরথর কাপে শফিকের বুক।তার কাছে জগৎ সংসারের যাবতীয় ঘটনার চেয়ে এখন গুরুত্বপূর্ণ নীলির এই চিঠি ।গভীর উদ্বিগ্নতায় পেয়ে বসে তাকে।কী করে যোগাযোগ করবে নীলির সংগে, নীলির বাড়িতে কোনো টেলিফোন নেই, তা ছাড়া টেলিফোনে এ কথা আলাপও তো সম্ভব নয়।নীলির বাড়িতে যেতে হবে । কিন্তু অদ্ভুত, একই শহরে থেকেও শফিক পৌঁছাতে পারছে না নীলির বাড়ি!

অনেক কোলাহলের মধ্যে বসে থেকে নীলি অপূর্ব এক ধরনের সৌন্দর্য রচনা করতে জানে । সেদিন থেকেই শফিকের ভালো লেগেছিল মেয়েটিকে।এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, দৃষ্টিতে, আচরণে নীলির প্রতি তার মুগ্ধতা আর গোপন থাকেনি।কিন্তু স্বল্পবাক নীলির কোনো স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া এ যাবৎ জানতে পারেনি শফিক। ঘনিষ্ঠতার ভেতরও নিজের চারপাশে এক দুর্ভেদ্য দেয়াল তৈরি করে রাখতে জানে নীলি ।সেই মেয়ের এমন অদ্ভুত চিঠি এখন তার টেবিলের উপর । এই মুহূর্তে নীলির কাছে ছুটে যেতে ইচ্ছে হয় তার ।

প্রেমে পড়ার অনুভূতি কেবল যারা প্রেমে পড়েছে তারাই জানে । শফিকের জানা ছিলো না এতোদিন । ইদানীং যখন জানতে শুরু করেছে একটু একটু করে, শুক্লপক্ষের বসন্তের গভীর রাতে বয়ে যাওয়া স্নিগ্ধ হাওয়ায় দুপাশে হাত ছড়িয়ে নিজেকে মুক্ত ভেবে দাড়ানোর মতো অদ্ভুত ভালো লাগার পাশাপাশি কি যেন এক দুর্বোধ্যতা আর অনিশ্চয়তায় মনের দুকূল উপচে উঠে ।

কারণ ?

কারণটা কাছের মানুষ , দূরের মানুষ নীলি নিজেই ।

শফিক পাশে দাড়ালে তার চোখের তারা ঝিলমিলিয়ে ওঠে অতল গভীর ময়ুরাক্ষীর জলে ভোরের প্রথম কিরণ আছড়ে পড়ার মূহুর্তের মতো । আবার এই একই মানুষ সবসময় কেমন যেন নিজের চারপাশে তুলে রাখে অদৃশ্য এক অভেদ্য দেয়াল । নীলির পাশে পায়ে পায়ে হয়তো এক ছায়াপথ হাঁটলেও শফিকের মনে হবে এত দ্রুত পথ ফুরিয়ে গেল , কিন্তু হাঁটার সময় সবসময় তাদের দুজনের মাঝে ঠিকই থাকবে এক অবধারিত মানসিক দুরুত্ব, অনেকখানি অনিশ্চয়তার শুন্যতা ।

শফিক কী করবে ভেবে পায় না । নীলি কি বোঝাতে চাইলো তার এক চিলতে বিষন্ন আলোর চিরকুটে? গোপন প্রেম, আকুলতা, বিরহ নাকি জীবনের প্রতি গতানুগতিক ছা-পোষা সুখী মানুষের উন্নাসিকতা ? ..... সে যতো ভাবে ততোই হারায় । নিজের মাঝে, নীলির মাঝে, আঁধার - আলোর সন্ধির ফিনফিনে গোধূলি মাঝে ।

শফিকের অনিশ্চয়তা আর শংকা কেবল তাকে ভাবায় না, তাকে ভীষন অস্থিরও করে তোলে।এক শহরে দু' প্রান্ত কে মনে হয় আলোকবর্ষ দূরত্ব। নীলি এমন এমন একজন মানুষ ; যার সাথে কথা বলা এবং চুপ করে থাকা দুই -ই সমান আনন্দের।

তাই উত্তাল , অনুভূতিশুন্যতার শহরের ঝিমিয়ে আসার জন্যে শফিক অপেক্ষা করে । অপেক্ষা করে এমন একজন প্রিয় মানুষের জন্যে যার খুব কাছেও যাওয়া যায় না , আবার যার থেকে খুব দূরেও যাওয়া যায় না ।

ভালোবাসার অপেক্ষায় এই অপেক্ষা করতে তার ভালোই লাগে । কারণ পৃথিবীতে ঐ ভালোবাসাটাই অন্যরকম , বাকি সব কেবল জীবনযাপন ।

সময় কেটে যায় । শফিকের দেখা না পেয়ে ওদিকে নীলি ভাবে- প্রেম টা ভুল ছিলো না।
কেবল সময়টাই ভুল ছিলো!!

আর শফিক ?
সে খবর কেউ রাখে নি ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ২:০৯
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×