somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বায়রন এর জীবনে নারী ....

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইংল্যান্ডের কবি লর্ড বায়রন এর নাম কম বেশি আমাদের সকলেরই জানা। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘ডন জুয়ানে’। এই গ্রন্থের নায়ক ছিলেন তিনি নিজেই।

মেয়েদের প্রতি কৌতুহল এবং রহস্য তাঁকে টানতো সর্বক্ষণ। সম্ভবত মেয়েদের প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা ছিল না তাঁর কখনও। অন্তত প্রথম যৌবনের পর কোনো এক দুর্দমনীয় ক্রোধ এবং হীনমন্যতা থেকেই রমনীরূপের প্রতি তস্করবৃত্তি জেগে উঠেছিল তাঁর মধ্যে।

মেয়েদের সম্বন্ধে তিনি অদ্ভুত যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘ভ্রমন হল আমার জীবন থেকে আত্মরক্ষার উপায়। একটি মেয়ে আমাকে দুঃখ দেয়, আমার উপর অত্যাচার করে- এবং সুতরাং যতক্ষণ না আর একটি মেয়ে আমার ক্ষত সারিয়ে দেয়, আমাকে (পুনরায় প্রেমে জড়াতে হয়)। সুতরাং এইভাবে বৃত্ত চলতে থাকে। একজন আঘাত দিলে আর একজনের কাছে সান্ত্বনার জন্য যেতে হয়- সে আঘাত দিলে আর একজনের কাছে। সত্যিকারের ভালোবাসা এক অর্থহীন কথা।

এত বড় রোমান্টিক কবি বায়রন কে বলতে হয়েছে, “উন্মত্ত ভালোবাসা, আমার মতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট অসুখ” । শেষ পর্যন্ত প্রেমিক হিসেবে বায়রনের সুনাম বা দুর্নাম যখন রটে গেল প্রচন্ডভাবে- তখন আর বায়রনের প্রত্যাখানের কোন উপায় রইলো না। আর্তকন্ঠে বায়রন একবার বলে উঠেছিলেন, “আমি কী করবো, মেয়েরা আমার কাছে নষ্ট হতে আসে”।

পুরো নাম জর্জ গর্ডন বায়রন ষষ্ঠ ব্যারন। জন্ম ১৭৮৮ সালের ২২ জানুয়ারী। বাবা-মায়ের কাছ থেকে পেয়েছিলেন খেতাবের বোঝা, ভাঙ্গাচোরা দুর্গের মত বিশাল প্রাসাদ আর শূন্যগর্ভ আভিজাত্য। অতবড় বিরাট পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকারী হয়েও তাঁকে অর্থকষ্টে ভুগতে হয়েছে অনেক সময়।

মেয়েদের প্রতি এক উন্মাদ নেশা ছিল তাঁর সারাজীবন। অতি শৈশবেই বায়রনের প্রেমিক প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। প্রথম প্রেমে পড়েন ৮/১০ বছর বয়সে, মেরি ডাফ নামে এক আত্মীয়ার প্রতি। মেয়েটির জন্য পাগল হয়ে উঠেছিলেন তিনি, পরে বহুদিন, তাঁর মা এই নিয়ে ঠাট্টা করেছেন বায়রন কে। ‘ জানিস আজ মেরি’র বিয়ে হয়ে গেল’ যেদিন এ কথা বলেছিলেন তাঁর মা- বায়রন সেই দিনটি সারাক্ষণ শোকার্ত ছিলেন।

১৬ বছর বয়সে প্রথম উন্মত্ত ভালোবাসায় (বায়রনের ভাষায় ‘নিকৃষ্টতম অসুখে’) পড়েছিলেন। মেয়েটির নাম সাওয়ার্থ। অসাধারণ রূপসী ও অভিজাত পরিবারের এই মেয়েটির সাথে সর্বক্ষ্ণ ছায়ার মত জুড়ে রইলেন বায়রন। কিন্তু তার অল্প কিছুদিন পরেই মেরি’র বিয়ে হয়ে যায় তার বাগদত্তার সাথে।

এরপর বায়রন এক স্প্যানিশ মেয়ের প্রেমে পড়েন। কোনো একটা কাজে তিনি এই মেয়েদের বাড়ীতে উঠেছিলেন। বিদায়ের সময় মেয়েটি তাকে গভীর কোমলতার সঙ্গে আলিঙ্গন করে। বায়রনের উপহার দেয়া একগুচ্ছ ফুলের বিনিময়ে মেয়েটি তার নিজের মাথার তিন ফুট দীর্ঘ চুল উপহার দেন।

বহু রমনীর সঙ্গে জীবনে সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল বায়রনের। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ক্যারোলিন। যিনি ছিলেন ইংল্যান্ডের একসময়কার প্রধানমন্ত্রী লর্ড মেলবোর্নের পুত্র উইলিয়াম ল্যামের স্ত্রী। হঠাৎ একদিন বায়রন ক্যারোলিনের প্রেম্পত্র পেলেন। প্রেমের আহবান পেয়ে সাড়া দিতে দেরি করেননি তিনি। বায়রন তাকে লিখলেন, ‘আমি সবসময় তোমার কথা ভেবেছি- নিপুণিকা, দুর্বোধ্য, সহৃদয়, জটিল, ভয়ংকর, আকর্ষণময় ছোট্ট প্রাণীটি……………………। আমি সম্পুর্ণভাবে তোমারই, আমি তোমার ইচ্ছার অধীন, তোমাকে মানবো, সম্মান করবো, ভালোবাসবো- এবং তুমি যখন যেখানে যেভাবে যেতে চাও আমি তোমার সঙ্গে যাবো’। ক্যারোলিন খুব ভালো নাচতে পারতেন। কিন্তু বায়রনের অনুরোধে তিনি নাচ ছেড়ে দেন। তাদের বাধহীন সম্পর্কের ইতি টা ছিল ঘটনাবহুল। শেষ যে বার দেখা হয়, ক্যারোলিন এসে দাঁড়ালেন বায়রনের সামনে, বিষন্ন ভাঙাভাঙা গলায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘আশাকরি এখন আর আমার নাচতে কোন বাধা নেই?’। লোহা মেশানো গলায় বায়রন বললেন, ‘না, নিশ্চয়ই না। একে একে প্রত্যেকের সঙ্গে নাচো। নাচ সকলের চেয়ে তুমি সবস্ময় ভালো পারতে। আমি বসে বসে দেখে আনন্দো পাবো। এই দিন নাচ শেষ করে ক্যারোলিনা আত্মহত্যা করতে উদ্যত্ত হন। বায়রন তখনও নির্মম এবং কঠিন। ক্যারোলিনের ছুরি ধরা হাতের দিকে আঙুল তুলে বললেন, ‘মারো প্রিয়তমা, মারো, কিন্তু তুমি যদি রোমান্দের মতো ব্যবহার করতে চাও- তবে ভেবে দেখো কোনদিকে তোমার ছুরিটা তুলবে। তোমার নিজের বুকের দিকে ছুরিটা তোলো, আমার দিকে নয়, কারন সেখানে তুমি ইতিমধ্যেই অনেক আঘাত করেছো!’

এরপর বায়রনের প্রেম হয় অ্যান ইসাবেলা মিলব্যাঙ্ক নামের এক মেয়ের সাথে। যিনি ছিলেন ক্যারলিনের আত্মীয়া এবং থাকতেন তাদের বাড়িতে। ক্রমশ বায়রনের হৃদয় মিলব্যাংঙ্কের প্রতি আকষ্ট হয় এবং দু’বার তার কাছে বিয়ের প্রস্তাব করেন। বিয়ে হয় বায়্রন এবং মিলব্যাঙ্কের। একটি মেয়েও হয়েছিল তাদের। অ্যান মিলব্যাঙ্ক কখনো সুখী হননি, সুখী হতে দেননি বায়রন কে। স্বামী সম্পর্কে মিলব্যাঙ্কের মন্তব্য ছিল, “উন্মাদ, বদ্ধ উন্মাদ” । দাম্পত্য কলহের জের ধরে বিবাহ বিচ্ছেদ দাবী করেন মিলব্যাঙ্ক এবং আলাদা হয়েও যান।

মিলান শহরে এক পার্টিতে বায়রন উপস্থিত থাকবেন শুনে ১০০ মাইল দূর থেকে এক রমনী দেখা করতে এসেছিলেন। কিন্তু বায়রন উদাসীন, আলাপ হবার পরও সেদিকে মনোযোগ দিলেন না। তিনি সাহিত্য, শিল্প, রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলাপ করতে লাগলেন শেষমেশ মেয়েটি চিৎকার করে উঠলো, ‘তোমরা কবিরা সকলেই নির্বোধ, তোমরা কবিরা সবাই’!

প্রবাসেও বায়রন অনেক রমনীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তাঁর সাথে দীর্ঘদিন এবং গভীর সম্পর্ক হয়েছিল ইটালির এক অভিজাত পরিবারের বিবাহিতা রমনীর সঙ্গে। কুমারীর চেয়ে বিবাহিতা রমণীদের সঙ্গেই বায়রনের প্রেম হয়েছে বেশি।

তুর্কিদের আক্রমনে যখন গ্রিসদেশ বিপর্যস্ত তখন ছুটে গিয়েছিলেন বায়রন, সেই দেশের সাহায্যের জন্য। সেই সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ১৮২৪ সালে মৃত্যুর সময় জ্ঞান হারাবার আগে বলে উঠেছিলেন, ‘আমি এই পৃথিবীতে আমার প্রিয় অনেক কিছু রেখে গেলাম’।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০২০ ভোর ৫:০৮
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×