কবি-লেখক- শিল্পীরা একটু বেশি সংবেদনশীল। তারা তাদের আনন্দের ভাগ যেমন দিতে পারেন তেমনই ব্যক্তিগত দু:খকে সর্বজনীন করতে পারেন-এ-কারণেই তো শিল্প-সাহিত্য ব্যক্তির রচনা হয়েও সকলের হৃদয়ের জিনিস হয়ে ওঠে। তবে সুখের চাইতে দু:খের প্রকাশটাই শিল্প-সাহিত্য বেশি সফল হয়, ‘সবচেয়ে মধুর গান” হয়ে ওঠে। এর কারণ কি এই যে আনন্দের সময় মানুষ তা ভোগ-উপভোগেই বেশি মগ্ন থাকে, আর দু:খ হতে অব্যাহতি পাবার একটি উপায় হলো শিল্প মাধ্যমে তার প্রকাশ? নাকি তা বেদনার প্রতিশোধ?
কিন্তু জীবনের দু:খ-বেদনা-হতাশা কখনো এতই দুর্ভর হয়ে ওঠে যে মানুষ তা থেকে অব্যাহতি পেতে চরম উপায় গ্রহণ করে: অকস্মাৎ একলাকে পেরিয়ে যায় জীবনের দৃশ্যমান সীমান্ত। কোনো কবি কিংবা অন্য মাধ্যমের কোনো শিল্পী যখন জীবন প্রত্যাখান করেন তখন নিশ্চয়ই তার বেদনার দু:সহতা এমন স্তরে পেছে যায় যে শিল্পায়ন তখন আর কোনো উপশম দেয়না । তাই নের্ভাল কিংবা এসেনিন, হেমিংওয়ে কিংবা মায়কোভস্কি, সিলভিয়া প্লাথ কিংবা কায়েস আহমেদ-এর অভিমানী প্রস্থান আমাদের জন্য একেকটি বেদনাস্তম্ভ হয়ে থাকে। কবি শামীম কবীর নিতান্ত তরুণ বয়সে সম্ভাবনার প্রান্তর ছেড়ে অসীম স্তব্ধতায় বিমগ্ন হয়ে গেছেন। তাঁর কবিতাবলি শুধু আছে তাঁর নৈ:শব্দের ধ্বনি শোনাবার জন্যে।
বায়ুঘর্ষ
প্রতি দিবসে রাতে হতাশাবশত ক্লান্ত হই
ঘুম যাই যেতে চাই ক্লান্ত ক্লান্ত রই
সারাটা সংসার ঘেেষ প’ড়ে আছে বিচিত্র চেহারা
উন সংসারের এক প্রজ্ঞাপিত সুডৌল শরীর
এ দুয়ের মধ্যখানে পিষে যাওয়া প্রকৃত ব্যাপার
যা অনেক আগে থেকে থেকে গ্যাছে নাগালের পরে
সেই সব বাক্যালাপ অনুসারে
এক ঘরে খাই শুই আর দিন রাত থাকি
দীর্ঘ-ই কারের মতো একান্ত চিৎকার ওঠে তবু
আমার অজানা মতে বায়ুথলি দুমড়ে মুচড়ে বেঁকে
তারপরে ছেয়ে আছে দীর্ঘকায় এক তরুছায়া
যেখানে যতেক যত মার্তৃ কবরেরা আছে
তাহাদের অনুগ্রহে বারবার ক্ষমা চাই কাছে
মা আমিতো আস্তে আস্তে
বায়ুঘর্ষে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবো
মা আমিও জ’লে পুড়ে ছাই হ’য়ে যাবো
মা আমিতো জ্ব’লে পুড়ে নাই হ’য়ে যাবো
রোগ শয্যার আলোবাদ্য
আলো কে বাজায় শুনি
অথবা নিকষ হাতে অঙ্গুলীনা কার
অন্ধকার ভাজা আনো মুচমুচে দু’টাকা ছটাক
পোড়ো ও ধবল খাটে আরোগ্যকালীন
উপশম উপশম গাথা
দূর থেকে এসে দ্যাখা দিয়ে গ্যাছে তারা
এখন না কবো কথা
আগে বলি অলসতা কাটা বা না কাটা
মোটেই আলোচ্য নয় তবু
রোগের মতোন গূঢ় মৃদু লাস্য পরিহিত যুবা
তুমি কে তোমার সাথে পরিচয় হবো আর
খন্ড খন্ড কবিতার মতো কাটা নাকের লাজের মতো
মনে হয় তোমার অহংখানা সুর তুলিয়াছে
ভাঙাচোরা শাদা স্মৃতি হাতে
ঘুম
১.সহস্র সহস্র বছর ঘুমালাম
আজ দেখি তটিনীর তরঙ্গে
স্বপ্ন রেনুকায় ভ’রে যায় ঘুম
পুলকে কাটিয়া যায় কয়েক পলক
ঘুম আমার প্রিয় ঘুম জগতের
পৃথিবীর যাবতীয় প্রিয় ঘুম
এইভাবে কেটে যায় কয়েক হাজার
ঘুমায়িত প্রজন্মের কাল
সোনা রূপা দুটি আজ ধুলি হ’য়ে গ্যাছে
নতুন যন্ত্রের মন্ত্র ছাড়া ওই ঘুম প্রিয় ঘোর
ভাঙ্গে না--
পুলকে কাটিয়া যায় কয়েক প্রকাল
২. ঘুমের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই
ওগো আমার ঘুম পাড়াবার যন্ত্রটা কী কই