এই পৃথিবীতে মানুষ খুব বেশিদিন হয়নি আধুনিক জীবনে পদার্পণ করেছে। অবশ্য এখনকার সময়কেও আজ থেকে কয়েক হাজার বছর পর প্রাচীন সভ্যতা বলে মানুষ অবহিত করবে। মানুষ শুরুর দিন থেকে আজ পর্যন্ত নিজেকে সর্বোচ্চ দিন পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই পৃথিবীর মোহ মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য উৎসাহ দেয়। খুব সহজে পৃথিবীর মায়া আমরা মানুষেরা ত্যাগ করতে পারিনা।
আমরা মানুষেরা আসলে গড়ে কত বছর বাঁচি? ৬০ কিংবা ৬৫ বছর! বয়সের এই কাল কি আমাদের জন্য যথেষ্ঠ? আমার কাছে তা মনে হয় না। পৃথিবীর সব থেকে বুদ্ধিমান এই প্রাণীটির গড় আয়ু এত কম হওয়া আমার কাছে মোটেও ঠিক মনে হচ্ছে না।
মধ্যযুগেও আমাদের গড় আয়ু ছিল ৪০-৪৫ বছর। যদিও অনেকেই ধারণা করে প্রাচীন যুগে আমরা আরো বেশি বছর বেঁচে থাকতাম। তখন নাকি ১০০০ বছর পর্যন্তও মানুষ বাঁচতো! তবে এসব ধারণা নিছকই কল্পকাহিনী, বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নেই এসবের। বেশিদিন বাঁচতে অনেক মানুষ অনেক চেষ্টা করেছে এই যেমন চীনের কিন রাজবংশের পরাক্রমশালী সম্রাট শি হাং অমৃত পানীয়র খোঁজে তাঁর অ্যালকেমিস্ট জু ফুকে পাঠিয়েছিলেন পূর্ব সাগরে। তার সঙ্গে দিয়েছিলেন ৫০০ নারী আর ৫০০ পুরুষের বিশাল বহর। কথিত আছে, অমৃতের সন্ধান করতে গিয়ে তারা আর ফিরে আসেনি। তারাই জাপান দেশটি গঠন করেছিল বলে ধারণা করা হয়। বেঁচে থাকার জন্য এমন আজগুবি কাণ্ডের ঘটনা অনেক আছে।
সকল প্রাণীদের প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার সঙ্গে বয়সের একটা সম্পর্ক আছে। যে প্রাণী প্রাপ্তবয়স্ক হতে বেশি সময় নেয়, সে প্রাণীটি বাঁচেও বেশি। আমরা প্রাপ্তবয়স্ক হই ১৮-২০ বছরে, বাঁচি ৬০-৬৫ বছর। অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সময়ের ছয়-সাত গুণ বেশি সময় বাঁচে। সে হিসাবে মানুষের অন্তত দেড় শ বছর অনায়াসে বাঁচার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১২২ বছরের বেশি বয়সী কোনো মানুষের সন্ধান মেলেনি। মানুষের দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার জন্য কতশত চেষ্টা করেছে এই পর্যন্ত, তবে আসল চেষ্টা শুরু হয়েছে এখনকার সময়ে। কারন দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার জন্য এখন বৈজ্ঞানিক উপায়ে চেষ্টা করা হচ্ছে এবং এতেই সবচেয়ে বেশি সফলতা পাওয়া যাচ্ছে। টিস্যুর নবায়ন, মলিক্যুলার রিপেয়ার, জিনথেরাপি, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন এগুলো নিয়ে ব্যাপক কাজ হচ্ছে এবং এসব গবেষণার ফলাফল বেশ আশাব্যঞ্জক। লাইফ টাইম এক্সটেনশন ফাউন্ডেশন নামে এখনই অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এবং মানুষ তাদের কাছে ধর্ণাও দিচ্ছে।
মাইকেল ব্যে পরিচালিত দ্য আইল্যান্ড সায়েন্স ফিকশন সিনেমা দেখেছিলাম অনেকদিন আগে। ছবিতে দেখানো হয়েছে বিশ্বের ধনীরা তাদের একটি ক্লোনকে একটা বিচ্ছিন্ন জায়গায় লালন করে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো প্রয়োজনে তাদের ক্লোন থেকে প্রয়োজনীয় অঙ্গটি নিয়ে আরও বেশি দিন বাঁচা যায়। নীতিগতভাবে এটা চরম অনৈতিক হলেও ভবিষ্যতে এমন হবে না বা এখনো হচ্ছে না তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে উৎকর্ষ সাধিত হচ্ছে তাতে আমার কাছে মনে হচ্ছে আগামী ৫০০ বছর পর মানুষের গর আয়ু ২০০ বছর হয়ে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:২৭