somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাষাতাত্ত্বিক ও সাহিত্য বিশারদ সুকুমার সেনের ১১৮তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষক ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুখ্যাত সুকুমার সেন। ভাষাতত্ত্ব ও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিষয়ে ছিল তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য। বৈদিক ও ধ্রুপদি সংস্কৃত, পালি, প্রাকৃত, বাংলা, আবেস্তা ও প্রাচীন পারসিক ভাষায় তাঁর বিশেষ বুৎপত্তি ছিল। তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব ও পুরাণতত্ত্ব আলোচনাতেও তিনি তাঁর বৈদগ্ধের পরিচয় রেখেছিলেন।তিনি মিথ-আশ্রিত ভাষাতত্ত্ব বা পুরাণচর্চার পরিবর্তে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিটি অবলম্বন করতেন। জয়দেবের গীতগোবিন্দ কাব্যের প্রাচীন পুঁথিটি তাঁরই আবিষ্কার। সেকশুভোদয়া পুঁথিটিও তিনি সম্পাদনা করেছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে চার খণ্ডে বিভক্ত ‘বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস’, ‘বাঙ্গালা সাহিত্যে গদ্য’, ‘ইসলামী বাঙলা সাহিত্য’, ‘রামকথার প্রাক–ইতিহাস’, ‘ভারতীয় সাহিত্যের ইতিহাস’, ‘পরিজন পরিবেশে রবীন্দ্র–বিকাশ’, ‘চর্যাগীতি পদাবলী’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ইংরেজি ভাষাতেও তিনি রচনা করেছেন বেশ কিছু গ্রন্থ। সকল রচনাই তথ্য–সমৃদ্ধ ও সত্যনিষ্ঠ। বিশেষ করে, চার খণ্ডে রচিত ‘বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস’ গ্রন্থখানি সাহিত্যমূল্য বিচারে অনন্য। ভাষাতত্ত্ব ও ধ্বনিতত্ত্বেও তাঁর প্রতিভা ও নৈপুণ্যের ছাপ সুম্পষ্ট। ‘কালিদাস তাঁর কালে’ এবং ‘যিনি সকল কাজের কাজী’ নামে দু খানা গোয়েন্দা গল্পও লিখেছেন সুকুমার। আাত্মজীবনী ‘দিনের পর দিন যে গেল’ সুখপাঠ্য একটি রচনা। আজ সাহিত্য বিশারদ সুকুমার সেনের ১১৮তম জন্মবার্ষিকী। ১৯০০ সালের আজকের দিনে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ভাষাতাত্ত্বিক ও সাহিত্য বিশারদ সুকুমার সেনের ১১৮তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।


সুকুমার সেন ১৯০১ সালের ১৬ই জানুয়ারি ভারতের গোয়াবাগানের মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হরেন্দ্রনাথ মিত্র ছিলেন বর্ধমান কোর্টের আইনজীবী এবং মা নলিনী দেবী। বর্ধমান জেলার গোতান গ্রামে ছিল তাঁদের পৈতৃক নিবাস। এখানেই সুকুমার সেনের পড়াশোনার শুরু। ১৯১৭ সালে বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষা এবং ১৯১৯ সালে বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে বাংলা, সংস্কৃত, লজিক ও অঙ্কে লেটার সহ প্রথম বিভাগে আই.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯২১ সালে কলকাতার সংস্কৃত কলেজ থেকে সংস্কৃতে সাম্মানিক সহ প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে বি.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯২৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এম.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯২৫ সালে "সিনট্যাক্স অফ বৈদিক প্রোজ" নামে একটি থিসিস লিখে প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করেন। ১৯২৬ সালে তাঁর প্রথম গবেষণা প্রবন্ধ "নোটস অফ দি ইউজ অফ কেসেস ইন দ্য কথক সংহিতা" প্রকাশিত হয় এশিয়াটিক সোসাইটি জার্নালে। এরপর মধ্য ও আধুনিক (বাংলা) আর্যভাষার ঐতিহাসিক পদবিচারের উপর গবেষণা করে তিনি পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর পিএইচ.ডি গবেষণার বিষয় ছিল ‘হিস্ট্রিক্যাল সিনট্যাক্স অব ইন্দো–আরিয়ান’। ভাষা, সাহিত্য, ধর্ম ও ইতিহাস বিষয়ে তিনি বহু জ্ঞানগর্ভ প্রবন্ধ রচনা করেছেন, লিখেছেন বেশ কিছু গ্রন্থ। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হলঃ
১। ভাষার ইতিবৃত্ত (বাংলা ভাষাতত্ত্বের একটি পূর্ণাঙ্গ আলোচনা)
২। Women's Dialect in Bengali (বাংলা মেয়েলি ভাষা নিয়ে গবেষণামূলক রচনা)
৩। বাংলা স্থাননাম (বাংলা স্থাননাম নিয়ে ভাষাতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ)
৪। রামকথার প্রাক-ইতিহাস (রামায়ণ-সংক্রান্ত তুলনামূলক পুরাণতাত্ত্বিক আলোচনা)
৫। ভারত-কথার গ্রন্থিমোচন (মহাভারত-সংক্রান্ত তুলনামূলক পুরাণতাত্ত্বিক আলোচনা)
৬। A History of Brajabuli Literature (ব্রজবুলি সাহিত্যের ইতিহাস)
৭। বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস (৫ট খণ্ডে, সুকুমার সেনের সবচেয়ে বিখ্যাত বই, বাংলা সাহিত্যের একটি পূর্ণাঙ্গ ও সামগ্রিক ইতিহাস)
৮। বঙ্গভূমিকা (বাংলার আদি-ইতিহাস সংক্রান্ত গ্রন্থ)
৯। বাংলা ইসলামি সাহিত্য
১০। বাঙ্গালা সাহিত্যের কথা
১১। বাঙ্গালা সাহিত্যে গদ্য
১২। দিনের পরে দিন যে গেল ( আত্মজীবনীমূলক রচনা )


ভাষাতত্ত্ব ও পুরাণ ছাড়া রবীন্দ্রসাহিত্যেও সুকুমার সেনের বিশেষ প্রজ্ঞা ছিল। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ব্যাখ্যাতা ও রসজ্ঞ। ১৯৬৪ সালে ভারতীয় আর্য সাহিত্যের ইতিহাস বইটির জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার পান। এশিয়াটিক সোসাইটি তাঁকে 'যদুনাথ সরকার পদক' দিয়ে সম্মানিত করে। রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র থেকে পান 'রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য' উপাধি। তিনি আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯২ সালের ৩রা মার্চ প্রয়াত হন ভাষাতাত্ত্বিক ও সাহিত্য বিশারদ সুকুমার সেন। আজ সাহিত্য বিশারদ সুকুমার সেনের ১১৮তম জন্মবার্ষিকী। ১৯০১ সালের আজকের দিনে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ভাষাতাত্ত্বিক ও সাহিত্য বিশারদ সুকুমার সেনের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৪০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×