২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। এদিন জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে জড়িত ১৯ জঙ্গি চারটি বিমান ছিনতাই করে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি স্থানে। সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইনসের ফ্লাইট-১১; বোস্টন থেকে উড়ে এসে হামলে পড়ে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর ভবনটিতে। জানা যায়, হামলা চালানোর আগে সকাল ৮টা ১৯ মিনিটে একজন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট সতর্ক করেন, তাঁদের উড়োজাহাজ ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছে। তিনি জানান, ককপিট থেকে কোনো উত্তর আসছে না এবং ছিনতাইকারীদের কাছে বিস্ফোরক রয়েছে। এ ছাড়া জানানো হয়, এক যাত্রীসহ দুজন অ্যাটেনডেন্টকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। পরে জানা যায়, হামলার শিকার হওয়া ওই যাত্রীর নাম ড্যানিয়েল লেউইন। তিনি ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ধারণা করা হয়, তিনি ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে উড়োজাহাজের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এবং নাইন-ইলেভেনের হামলায় তিনিই প্রথম ভুক্তভোগী। এ হামলার বিষয়টি ঠিকমতো বুঝতে না বুঝতেই ১৭ মিনিট পর ৯টা ৩ মিনিটে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দক্ষিণ ভবনে আছড়ে পড়ে ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ফ্লাইট-১৭৫। সেটিও বোস্টন থেকে উড়ে এসে হামলা চালায়। পরে জানা যায়, উড়োজাহাজটি ছিনতাইয়ের পরই একজন অ্যাটেনডেন্ট ইউনাইটেড এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছে এবং দুজন পাইলটই নিহত হয়েছেন। তবে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়েও শেষরক্ষা হয়নি কারো।এ দুই ভয়াবহ হামলার এক ঘণ্টার মধ্যে ৯টা ৩৭ মিনিটে ওয়াশিংটনে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর পেন্টাগনে হামলে পড়ে আরো একটি উড়োজাহাজ। ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ডালাস থেকে উড়ে আসা আমেরিকান এয়ারলাইনসের ফ্লাইট-৭৭-এর যাত্রীদের জিম্মি ক রে এ হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। ওই বিমানে তখন ছয়জন ক্রুসহ ৫৮ যাত্রী ছিলেন। এ হামলায় সামরিক কর্মকর্তা ও বেসামরিক নাগরিকসহ মোট ১২৫ জন নিহত হন। এ ছাড়া উড়োজাহাজে থাকা পাঁচ জঙ্গিসহ সব যাত্রীই নিহত হন। একের পর এক হামলার মধ্যেই নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের নেওয়ার্ক থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকোর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ফ্লাইট-৯৩ ছিনতাই করে জঙ্গিরা। পরে বিমানটি বিধ্বস্ত হয় পশ্চিম পেনসিলভানিয়ার শ্যাংকসভিল এলাকার একটি মাঠে। এতে বিমানে থাকা ৪৪ জনের সবাই নিহত হন। ধারণা করা হয়, হামলাকারীরা তাঁদের উদ্দেশ্য অনুযায়ী প্লেন হামলাটি চালাতে পারেনি। প্লেন ছিনতাইয়ের পরই যখন ক্রু ও যাত্রীরা নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তখনই বিমানটি ইচ্ছাকৃতভাবে বিধ্বস্ত করা হয়। ধারণা করা হয়, নাইন-ইলেভেনের প্রধান পরিকল্পনাকারী ছিলেন পাকিস্তানে জন্মগ্রহণকারী আল-কায়েদা সংগঠনের সদস্য খালিদ শেখ মোহাম্মদ। তিনি ২০০৩ সালের মার্চে রাওয়ালপিন্ডি থেকে সিআইএ ও আইএসআইয়ের যৌথ অভিযানের সময় গ্রেপ্তার হন। ওসামা বিন লাদেনের সংগঠন আল-কায়েদা এ হামলায় আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। ২০১১ সালের ২ মে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে মার্কিন বাহিনী।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এমনই একটি জীবন্ত, ঐতিহাসিক, ভয়াল ও কলঙ্কিত কালো দিন, যা একবিংশ শতাব্দীর নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা ও হোলি খেলার রক্তাক্ত প্রারম্ভ। রহস্যজনক টুইন টাওয়ার হামলার ১৯ বছর পরও এই হামলা কে করেছে, কেন করেছে, কীভাবে করেছে তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে যুক্তরাষ্ট্রের হয়তো চরম অনীহা রয়েছে, অথবা তারা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ৯/১১ কমিশন প্রণীত রিপোর্টে নানা অসংগতি বিদ্যমান থাকায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সততা, নিরপেক্ষতা ও আন্তরিকতা প্রশ্নের মুখে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ১১ সেপ্টেম্বর নিয়ে রহস্যের জট পাকানোর কারণ কী? কেনইবা তড়িঘড়ি করে আফগাসিস্তান আক্রমণ করা হয়, এসব জানতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও বৈদেশিক নীতির কৌশলগত ইতহাসে যেতে হবে। নাইন-ইলেভেন কমিশন রিপোর্ট অনুসারে চার ফ্লাইটের ১৯ জন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী ছিল প্রায় খালি হাতে, কারও হাতেই আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। অন্যদিকে প্রত্যেক বিমানের কমপক্ষে একজন পাইলট ছিলেন সামরিক বাহিনীর উচ্চতর কমব্যাট ট্রেনিংপ্রাপ্ত। প্রশ্ন হচ্ছে চার বা পাঁচজন সন্ত্রাসী বিমানের ককপিটে গেল আর কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই বিমানের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করল, তা কতটা হাস্যকর আর অযৌক্তিক তা দু-চারজন গেঁয়ো মূর্খ মানুষকে বোঝাতে পারলেও বিবেকবান সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষকে বোঝানো প্রায় অসম্ভব। বিবিসি ও প্রথম সারির কয়েকটা আন্তর্জাতিক নিউজ মিডিয়ার সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্টে দেখা যায়, কমপক্ষে ছয়জন বিভিন্ন দেশে জীবিত এবং তারা এই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তবে তাদের পাসপোর্ট হারানো গেছে বলে অভিযোগ করেন। এফবিআই প্রধান রবার্ট মুলার ২০০১ সালের ২০ ও ২৭ সেপ্টেম্বর সিএনএন'কে সন্দেহভাজন হাইজ্যাকারদের পরিচয় ও সত্যতা নিয়ে চরম সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাই নাইন ইলেভেন নিয়ে ঘটনার কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা তা ভবিষ্যতের জন্য তোলা রইল।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫১