somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আষাঢ়ে গল্প-১ !!! ঘটকালি

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আষাঢ়ে মানে অদ্ভুত, মিথ্যা, অলীক। আষাঢ় মাসের অলস মুহূর্তের গল্পের আসর থেকেই আমাদের দেশে ‘আষাঢ়ে গল্প’ প্রবাদটির সৃষ্টি হয়েছে এমনটা মনে করা হয়। বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষা অভিধানে ‘আজাইড়া’, ‘আজাড়া’ (আজাড়ে অর্থ অবিশ্বাস্য), অদ্ভুত, অমূলক, অহেতুক ইত্যাদি শব্দের ব্যবহার আছে। ফারসি অভিধান অনুসারে ‘আযার’ বা ‘আজার’ শব্দ থেকে ‘আজুরে’ বা আজাড়ে শব্দ এসেছে। আর এই আজাড়ে গল্প থেকেই ‘আষাঢ়ে গল্প’ কথাটির সৃষ্টি। পাঠকের জন্য আজ তেমনি একটি আষাঢ়ে গল্প।


এক ছিল ঘটক। তার এলাকায় তার ঘটকালির খুব নামডাক ছিল। অচল মেয়ে আর হদ্দবোকা ছেলেকে কথার শান দিয়ে সে এমন উপযুক্ত আর নানা গুণে গুণান্বিতা করে ছাড়ত যে বরপক্ষ ভাবতো এমন একখানা রত্ন হাতছাড়া হয়ে গেলে সে-যে সারা জীবনের জন্য আফসোসের ব্যাপার হবে। আর হাদারাম ছেলেকে কথার গয়নায়, অলঙ্কৃত করে এমনভাবে বর্ণনা করতো যে, তাতে মনে হতো পাত্র সুপুরুষ, চালাক-চতুর এবং স্মার্ট। আর এমন রূপবান, গুণবান আর বুদ্ধিমান ছেলের সঙ্গে যে কোন মেয়ের বিয়ে হওয়া এক ভাগ্যের ব্যাপার।
এই ঘটক প্রবর একবার এক বিয়ের ঘটকালি করছিল। এক কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা আগে দুজন ঘটক ধরেও তার মেয়ের বিয়ের কোন সুরাহা করতে পারেননি। অবশেষে তিনি মোটা টাকার বিনিময়ে এই বিখ্যাত ঘটককে নিয়োগ করলেন তার মেয়ের বিয়ের একটা ব্যবস্থা করে দিতে।
ঘটক কাজটা নিলেন এবং কন্যার পিতার কাছ থেকে তথ্যাদি জেনে নিয়ে বললেন, আপনি চিন্তা করবেন না। আপনার মেয়েকে পার করে দেবার দায়িত্ব আমি নিলাম। কাজের লোকের থাকে হাতযশ। আর ঘটকের চাই মুখযশ। কথায় দুনিয়া চলে। আর ঘটকের কথায় ছেলেমেয়ে বিকায় (বিক্রি হয়)। আল্লাহতালাহ্ আমার শুধু চাপার জোর দেয়নি। আমি চাপাবাজি করি না-ওসব হলো গোঁয়ার গোবিন্দের কাজ। আমি কম কথায় কাজ সারি। তবে যা বলি তা মোক্ষম এবং মানুষের মনকে বশ করে দিতে পারি। কেউ কেউ বলে : ‘আমি নাকি কূটনীতিকের মতো কথা বলে মানুষকে আকৃষ্ট করি। একথাটা আংশিক সত্য। আমি কথায় যুক্তির খেলা খেলি। মানুষ তাতেই কাত হয়ে যায়। তো, যে মেয়ের বিয়ের ঘটকালি করছিলাম তাতেও সফল হয়ে গেলাম।
বরপক্ষের তাড়া ছিল। তাই দেখাদেখির ঝামেলায় তারা যেতে চাইলেন না। আমি পাকা ঘটক। আমার কথাকেই তারা শিরোধার্য করলেন। ছেলের বাবা আমাকে মাত্র দুটো প্রশ্ন করলেন, এক, মেয়ে বিয়েতে রাজি তো? আমরা জোরজবরদস্তির বিয়েতে নেই!
আমি (ঘটক) বললাম : রাজি মানে, এক পায়ে খাড়া।।
বরের পিতা : বিয়ের ব্যাপারে এতো যে মন-উচাটন, লজ্জাশরম আছেতো?
আমি : কত্তা, কি যে কন, মেয়েকে পেটে বোমা মারলেও চোখ তুলে কোন দিকে তাকায় না।
ছেলের বাপ : বেশ, বেশ, তা হলে আমাদের অমত নেই। শুভ কাজ শেষ করে ফেল।
শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়ে গেল। কিন্তু পরদিনই ছেলের বাবা অগ্নিশর্মা হয়ে ঘটকের বাড়িতে হাজির। তাদের নিম্নোক্ত কথাবার্তা হলো : ছেলের পিতা : (ঘটকের উদ্দেশে) মিথ্যাবাদী, জোচ্চোর। আমার সঙ্গে এমন প্রতারণা!
ঘটক : ছিঃ ছিঃ কি সব বলছেন। আমিতো এক বিন্দুও মিথ্যা বলিনি।
ছেলের পিতা : মেয়ের যে একটা পা নেই তা বলনি কেন?
ঘটক : সে দোষ আপনার। আপনি কি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন? বিয়ের কথাবার্তার সময়, বরপক্ষ কনেকে হাটিয়ে দেখে, কথা বলিয়ে দেখে, চুল খুলিয়ে দেখে। আপনার ছেলে তা করেনি। এখন আমার দোষ কেন হবে? মেয়েদের খুঁত বলতে নেই। তবু সততার খাতিরে, আমি বলেছি : মেয়ে এক পায়ে খাড়া। দু পা থাকলে সে কষ্ট করে এক পায়ে খাড়াতে যাবে কেন? বিচক্ষণতার অভাবে আপনারা ঠকেছেন। এতে আমার দোষটা কোথায়?
বরের পিতা : মেয়ে যে অন্ধ তাওতো বলোনি? এটা কি প্রতারণা নয়?
ঘটক : আপনাদের একেবারেই সংসার-বুদ্ধি নেই। আমি এমন পর্যন্ত বললাম যে, পেটে বোমা মারলেও মেয়ে চোখ তুলে তাকায় না। পেটে বোমা মারতে চাইলেই তো চোখ তুলে তাকিয়ে যেদিকে বিপদ নাই মেয়ে সেইদিকে ছুটবে। এ থেকেও কি আপনারা বুঝলেন না যে মেয়ে আন্ধা। এখন নিজেদের ব্যাক্কলেপনার দায় আমার ওপর চাপাতে এসেছেন। আপনাদের মতো রামবোকাদের কপালে এর চেয়ে ভাল বউ জুটবে এটা কেমন করে আশা করেন? (সংগৃহীত)

২। আষাঢ়ে গল্প সিরিজের ২য় গল্পঃ কাঁঠাল খাওয়ার বাজি

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৪৯
১৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×