somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রান্তি বিলাসঃ কালো গোলাপ !! The Black Rose

২৭ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পৃথিবীর সবথেকে পরিচিত ও সমাদৃত ফুলগুলোর অন্যতম গোলাপ। এটা যেমন গোলাপের রুপের কারণে তেমনি এর সুগন্ধ ও গুণের কারণেও। অনেক প্রাচীন যুগ থেকেই পৃথিবীতে গোলাপের অস্তিত্ব ছিল। গোলাপের এমন একটি জীবাশ্মের সন্ধান মিলেছে যেটি ৩৫ মিলিয়ন বছর পূর্বের বলে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন। ভারতীয় উপমহাদেশে মোগলদের হাত ধরে আসা বড় আকারের লাল বসরাই থেকে শুরু করে গোলাপি বা সাদা রঙের গোলাপই বেশি চোখে পড়ে। পুরো পৃথিবীতে এ পর্যন্ত একশরও বেশি শ্রেণীর গোলাপ এবং এর হাজারো প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে আবার বর্ণ , গঠন ও আকারের ভিন্নতা রয়েছে। ভিন্নতা রয়েছে এর সৌন্দর্য ও মহোনীয়তায়। আমরা অনেকেই কালো গোলাপ এর কথা শুনেছি, আবার কেউ কেউ দেখেছিও। তবে আমাদের এই দেখা ও শোনায় রয়েছে ভ্রান্তি বা ভুল। কারণ মজার ব্যাপার হলো গোলাপ কখনও কালো হয় না। এটা আমাদের এক ধরনের ভ্রা্ন্তি বিলাস!! কালো গোলাপ বলে যে গোলাপের কথা আমরা শুনি সেটি তুরস্কের অত্যন্ত বিরল প্রজাতির ”হাফেটি রোজ” (Halfeti Rose), যেটা খালি চোখে দেখতে কুচকুচে কালো মনে হলেও আসলে কালচে গাঢ় লাল রঙের। এই গোলাপের ৩ টি জাত বাস্তবে আছে যথাঃ
১। Black Baccara, ২। Black Zed, ৩। Black Prince যা দেখতে খয়েরী অথবা কালচে খয়েরী।


ব্লাক রোজ বা কালো গোলাপ কিংবদন্তি হয়ে আছে প্রায় শত বছর ধরে। আজও সে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করছে। একটা সময় কালো গোলাপ নিয়ে মাতামাতির অন্ত ছিল না। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ফ্লাওয়ার্স ল্যাঙ্গুয়েজ সৃষ্টি হয়। এ সময় কালো গোলাপ মৃত্যু, ঘৃণা, বিদায় এবং ভয়ের প্রতীক হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, জীবনের লম্বা সময় অতিবাহিত করাকেও কালো গোলাপ দিয়ে বোঝানো হতো। তবে কালো গোলাপ যে শুধু খারাপ অর্থেই ব্যবহার হতো, তা নয়। খুব প্রিয় বন্ধুকে বা যুদ্ধে গমনরত সৈনিককেও কালো গোলাপ দেওয়া হতো আগের দিনে। যুগে যুগে কালো গোলাপ ধ্বংস-রহস্যময়তা ও মোহিনীশক্তির প্রতীক হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ননাৎসী সৈন্যরা কালো গোলাপকে কল্যাণের প্রতীক হিসেবে গণ্য করত। এছাড়া কালো গোলাপ নিয়ে রচিত হয়েছে রোমান্স ও রহস্যময় গল্প। তৈরি হয়েছে ইন দ্য ফরেস্ট অব দ্য নাইট, ডেমন ইন মাই ভিউ, কার্টারেড মিরর, মিডনাইট প্রিবেটরের মতো সায়েন্স ফিকশন। আমাদের দেশেও তৈরি হয়েছে 'কালো গোলাপ' নামে একটি বাংলা সিনেমা। ভিক্টোরিয়ান যুগে কালো গোলাপের প্রচলন ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ফ্যাশন সচেতনদের তালিকায় ঠাঁই নেয় কালো গোলাপ। বিশ শতকে শৈল্পিক নিদর্শনের দৃষ্টান্ত হিসেবেও কালো গোলাপ বিশেষ মূল্য পায়। অনেকের মতে কালো গোলাপের অভাবনীয় ও অনৈসর্গিক রং শক্তিসম্পন্ন হওয়ার প্রত্যাশায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু সত্য হলো, যে কালো গোলাপ নিয়ে এত মাতামাতি, প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতিতে তার কোনো অস্তিত্বই নেই। অনেকটা 'মোল্লার গরু খাতায় আছে, গোয়ালে নেই' অবস্থা। তাই কালো গোলাপকে রূপকথার গোলাপ বলাই বোধ হয় ভালো। বাস্তবে কালো গোলাপ নামে কোনো ফুলই নেই। যুগ যুগ ধরে মানুষ যেটাকে কালো গোলাপ বলে জানে, সেটা আসলে গাঢ় লাল রংয়ের গোলাপ।


দীর্ঘদিন ধরে কালো গোলাপের অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্ক চলছে। অনেক দেশের উদ্ভিদবিজ্ঞানীরাই কালো গোলাপ উৎপাদনের জন্য গবেষণা করেছেন; সফল হতে পারেননি। একমাত্র ব্যতিক্রম তুরস্কের হালফেতি গোলাপ। প্রাকৃতিকভাবেই ওই প্রজাতির রঙ এতটাই গাঢ়, এখন একেই সবাই কালো গোলাপ বলতে শুরু করেছেন। সাধারণত বসন্তে জেলার পুরনো আলফেতি গ্রামে 'কালো' গোলাপ ফুটতে শুরু করে। প্রথমদিকে এর রঙ থাকে গাঢ় লাল। কিন্তু গ্রীষ্ম যত এগিয়ে আসে এর রঙ ততই কালো হতে শুরু করে। একপর্যায়ে এটি গাঢ় কালো রঙ ধারণ করে। কালো গোলাপ আসলে কল্পনাতেই সম্ভব। পৃথিবীর অ্নেক গোলাপ এক্সপার্ট অনেক বছর ধরেই এ নিয়ে বহু গবেষণা করেছেন, এখনো করছেন কিন্তু কালো গোলাপ ফোটাতে কেউই সফল হতে পারেন নি। গবেষণা ও প্রচেষ্টায় তারা কুচকুচে কালো গেপলাপ উদ্ভাবন না করতে পারলেও কালচে খয়েরী (Dark red) গোলাপ উদ্ভাবন করেছেন আর এগুলোকেই কালো গোলাপ (Black rose) হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে। আসলে কালো রঙের গোলাপ আমাদের কল্পনাতেই সম্ভব। তবে কিছু প্রতারক কালো গোলাপ নিয়ে গোলাপ প্রেমীদের সাথে প্রতারণা করে আসছেন দীর্ঘ দিন যাবত।


(স্প্রে করে কালো রঙ করা গোলাপ)
বর্তমানে ফ্লাওয়ার ডাই ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে কালো গোলাপ। নিজে তৈরি করতে না চাইলে কিনে নিতে পারেন কালো গোলাপ। ঢাকার শাহবাগ এর ফুলের দোকানে খোঁজ করলেই কালো গোলাপের সন্ধান মিলবে! যে কেউ শাহবাগের ফুলের দোকানে গিয়ে কালো গোলাপ নিজ চোখে দেখে আসতে পারেন। যদি নাও পান, ২ মিনিট সময় দিলেই কালো গোলাপ আপনার সামনে হাজির হবে। একটি সাদা গোলাপের উপর কালো রঙ স্প্রে করে কালো গোলাপ বিক্রি হয় বেশী দামে। আমরা বাঙ্গালীরা সব পারি! তাই যবনিকাপাত হোক ভ্রান্তি বিলাসের।

পুনঃপ্রকাশঃ© নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম :-& ফেসবুক-১ :-& ফেসবুক-২
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১০:২১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×