somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই বছরের বুড়ো

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে প্রথম পোস্টটা লিখে ব্লগে প্রকাশের কথা মনে পড়ছে। অদ্ভুত অনুভূতি! আমি সবসময়েই দেখেছি, পেছনে ফেলে আসা সময়টার দিকে তাকালে সময়টাকে খুব সংক্ষিপ্ত বলে মনে হয়। অথচ সামনে তাকালে মনে হয় সময়টা আটকে রয়েছে গাড্ডায়। উত্তরণের যেন আর কোন পথ নেই। সে সময়টাকে আমার মনে হয় সামোয়্যার ইন ব্লগের সেরা সময়। অবশ্য কথাটা একটু বুড়ো বুড়ো ধাঁচের হয়ে গেল বলে মনে হয়! বুড়োদের কাছে শুধু নিজের সময়টাই সেরা। আসলে মানুষ শুধু তার নিজের আনন্দটাকেই এত বড় করে দেখে, যে নিজের আনন্দটা মাটি হয়ে গেলে সময়টাকে নিজের মত করে বাজে মনে করতে থাকে। নিজে একটু অসহায় বোধ করলেই মনে করে এই বুঝি সবকিছু ভেঙে পড়ল! আসলে ভেঙে পড়ে মানুষের নিজের জীবন আর ইতিহাস। সময় সবার জন্যই পথ খোলা রাখে। পথ খোলা রাখে উত্থানের, বিজয়ের আর পতনের। সময় নতুনকে জন্ম দেয়, তাকে যৌবন দেয়। মানুষ মনে করতে থাকে তার বিজয় নিঃশ্চিত। কিন্তু তার পর সময় তাকে উপহার দেয় শেষ বেলার অসহায়ত্ব! জীবনের জুয়া খেলায় শেষ বিজয়ীর নাম তো অবশ্যই সময়! তবু আমরা কি এক অদ্ভুত আকর্ষণে খেলে যাই নিঃশ্চিত পরাজয়ের খেলা! এরই নাম মানুষ, নিঃশ্চিত পরাজয় জেনেও যে কিনা লড়াইয়ে নামতে পিছ পা হয়নি কোনো দিন!

এ পর্যন্ত পড়ে যাদের মনে হয়েছে আমি আসলে দুই বছর পার করে নিজেকে বুড়ো ভাবতে শুরু করেছি, তারা ভুল ভাবছেন। এটা আসলে শুধুই আমার দুই বছর পূর্তির পোস্ট। সময় আমাকে এখনো শেষ বেলা বা শেষ বেলার অসহায়ত্ব উপহার দেয়নি। তবে সময় আমাকে এক ধরনের অসহায়ত্ব ঠিকই উপহার দিয়েছে। সময় আমাকে খুব যত্নে শুধুই অসহায় ভাবে স্বপ্ন দেখে যাওয়া শিখিয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও আর আশাহত হই না। বার বার পরাজয়ের পরও না! কখনো কখনো মনে হয় আমি বুঝি আর কিছু আশাই করি না। প্রতিবারই ভুল ভাঙে নতুন আশায় বুক বেঁধে। তবে আমার আশার বহিঃপ্রকাশ কেন যেন অসহায় আত্মসমর্পনের মত মনে হয়। আমার নিজের লেখা নিজে পড়লে নিজের কাছেই মনে হয় একজন একাকী মানুষ যেন নির্জনতার সুযোগে ঢেলে দিচ্ছে তার স্বপ্নের অধরা থেকে যাবার কান্নাকে! এর জন্য মনে মনে নিজেকে শত কোটি লাথি মারি। ভাবি এর পরের লেখাটায় মনের সব বিদ্রোহ ঢেলে দেব। ভাবি এর পরের লেখাটায় একটা ছারখার করা ভাব থাকবে, একেকটা শব্দ হবে একেকটা আগুনে গোলা! সব সময়েই চাই একটা থোড়াই কেয়ার করি ভাব আসুক আমার লেখায়। কিন্তু পরাজয় যার মজ্জায়, সে কিভাবে তার স্বপ্নের কথা আগুনের ভাষায় প্রকাশ করবে? এই আগুন আর জলের খেলার ফলাফল, আমার মাথা থেকে সুনির্দিষ্ট কোন প্লট খুব সহজে বেরোয় না। কোথাও আগুন জ্বললে পানিতে নিভে যায়, আবার কোথাও জলের ফোঁটা পড়লে আগুনে উবে যায়। সুতরাং দুই বছরে আমি ব্লগারদের খুব একটা বিরক্ত করার সুযোগ পাইনি আমার লেখা দিয়ে। মাঝে মাঝে নিজের লেখার দৌড় দেখে নিজেই ভাবি আর হাসি! আমিও একবার একটা বই বের করার স্বপ্ন দেখেছিলাম! হা! হা! তাও আবার তিন চার বছর আগে! না আমি ওয়ার্ডস ওয়ার্থের মত লিখতে পারি, না পারি এস, টি, কোলেরিজের মত! একেই বোধহয় ঘোড়া রোগ বলে! তবুও এই ঘোড়া রোগে ভুগতে আমার বেশ ভালই লাগে! আমি আসলেই খুব অসহায় ভাবে আশাবাদী! আশা করে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারি না!

মানুষকে আনন্দ দেবার মত লেখা আমি কখনোই লিখতে পারি নি। আমার হাসি-আনন্দের “আইটেম” খুবই কম! অবশ্য আইটেম কথাটায় বোধহয় অনেকেই বেশ আহত হবেন। কিন্তু এ মুহূর্তে আইটেম শব্দটার কোনো বিকল্প খুঁজে পাচ্ছি না। মানুষ হাসতে খুব পছন্দ করে। পছন্দ করে ঝগড়া করতেও। তবে আমি দেখেছি, হাসার চেয়ে ঝগড়া করার সময় মানুষ অনেক বেশি মানুষের সংস্পর্শে আসে। এটা দেখে ঝগড়া সম্পর্কে ভাল ভাবব না খারাপ ভাবব সেটাই ভেবে পাই না। আসলে মানুষ তার চেনা গন্ডীর বাইরের মানুষদের নিয়ে হাসতে কেন যেন ভয় পায়! মানুষ এমনকি মানুষকে চিনতেও ভয় পায়! ব্যাপারটা অদ্ভুত! বাংলাদেশের মানুষের সবচে প্রিয় চরিত্র বোধহয় হিমু! কিন্তু এদেশের মানুষ হিমু হতেই বেশি ভয় পায়! তবে সেটা অবশ্য আমার কোন সমস্যা নয়! আমি তো আমার লেখায় মানুষকে হাসাতেই পারি না! আর মানুষের আমাকে চেনার দরকার হতে পারে সে রকমও আমার কখনো মনে হয় নি। তার পরও কেমন করে যেন পরিচয় হল অনেক ব্লগারের সাথে! অনেক শুভানুধ্যায়ী পেয়ে গেলাম এখানে! জানা হল, কেউ কেউ কখনো কখনো বেরোয় তার চেনা গন্ডী ছেড়ে। যদিও জেনে কোন লাভ হয়নি। সময়ের আবর্তে সবই কেমন যেন পালটে যায়! এখন আর আমার চেনা ব্লগারদের দেখা পাই না ব্লগে। হয়তো তাদের কাছে ব্লগটা পুরোনো হয়ে গেছে! হয়তো কোন অভিমানে আর আসা হয় না! হয়তো কেউ নিজেকে নিঃশেষ ভেবে দূরে থেকে নিজের অপারগতা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চান! কেউ হয়ত কোন অজানা রাগে লাথি মারেন ব্লগের পাছায়! আমি শুধু আবার নতুন করে শিখে যাই, মানুষ তার ক্ষুদ্র, পুরোনো আর খুবই সংকীর্ণ চেনা গন্ডীর বাইরে বেরোতে পারে না কখনোই। আমিই কি পারি? তবে আর সবার মত আমি আমার চেনা গন্ডীটাকে নিয়ে খুশি হতে পারি না। চেনা ছোট কোনো গন্ডী তৈরী করাটাই আমার ভাল লাগে না। কিন্তু তবুও তো তৈরী হয়! তাই আমি এর কোন বিরোধীতা করি না, তবে অবাক হই এ নিয়ে মানুষের সন্তুষ্টি দেখে। দেখে মানুষ খুব অল্পেই সুখী হতে পারে বলে মনে হয়। কিন্তু মানুষ আসলে নিজের জন্য অল্পে সুখী হয় না বলেই চেনা মানুষদের নিয়ে গড়া এই গন্ডীটা এত ছোট হয়। আসলেই চূড়ান্ত হিসেবে মানুষ খুবই আত্মকেন্দ্রীক আর সন্তুষ্টির প্রশ্নে প্রহসনকারী!

শুনেছি চর্চায় নাকি মানুষের দক্ষতা বাড়ে। আমার বাংলা বানানের দক্ষতা পরিস্থিতি এতটাই নাজুক, লজ্জাই লাগে সময় সময়! আবারো ভাবি, এই বানান নিয়ে বই লেখার কথা চিন্তা করলাম কি করে? প্রকাশক তো পড়ার আগেই তাড়া করবে! আমার লেখনী এতই দূর্বল, চর্চায় বানানে দক্ষতা বাড়ানোর কোন সুযোগই তৈরী হয়নি! সুতরাং এই দুই বছরেও আমার বানানে কোন উন্নতি হয়নি। তাও ভাল, কেউ আমার শব্দের ব্যবহার নিয়ে কোন প্রশ্ন করার অধিকার রাখে না। রাখলে মনে হয় খবর ছিল। তবে আমার বানান ভুলের ছিরি দেখে আমি নিজেও একটু শঙ্কিত! আমিও কি ঔপনিবেশিক প্রভাবের জালে আটকা পড়ে যাচ্ছি? অন্তত এ লড়াইয়ে আমি হারতে চাই না! দেখা যাক সামনে কি হয়। এ নিয়ে কোন আপোষ হবে না! নিজের লেখার ভেতর আমি নিজের মত করেই সময়ের সাথে সাথে একটা পরিণত ভাব দেখতে পাই। হে! হে! নিজেই নিজের পরিণত হবার সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরে কেমন একটা প্রশান্তির অনুভূতি তৈরী হয় মনের ভেতর! মনে হয় অন্তত এই একটা কাজ আমি যথেষ্ঠ আস্থার সাথে করতে পেরেছি। আসলে সাফল্য খরার ভেতর মানুষকে সামনে এগোনোর কোনো না কোনো একটা কারণ খুঁজে বের করতে হয়, ঠিক যেমন একজন ডুবন্ত মানুষ বাঁচতে চায় খরকুটোকে হাতে করে! তবে এতটুকু লেখার পর কেন যেন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে, আমি ডুবন্ত কোন মানুষ নই! আর আপনারা বেঁচে গেলেন! ব্লগে চিৎকার পোস্ট করার কোন উপায় রাখা হয়নি! হা! হা!

প্রথম দিন রেজিস্ট্রেশনের সময় ব্লগে নিজের নাম কি হবে এ নিয়ে ব্যাপক মাথা ঘামিয়ে ছিলাম বলে মনে পড়ে। আমি অবিশ্রান্ত পথিক হব, নাকি রাস্তার ছেলে হব,তা নিয়ে অনেক চিন্তাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। শেষে রাস্তার ছেলেই হলাম। অবিশ্রান্ত পথিকের ব্যাপারে আমার মনে কোন আস্থা কাজ করে না যতটা কাজ করে রাস্তার ছেলের ব্যাপারে। হয়তো অসহায় স্বপ্নের হাত থেকে রেহাই পাবার জন্যেই বেছে নিয়েছিলাম রাস্তার ছেলের স্বপ্নহীনতাকে! কে জানে! মানুষ তো আবার নিজের সাথেই সবচে বেশি প্রহসনের পথ ধরে! স্বার্থের কাছে মানুষ কেন যেন খুবই অসহায়! এই নামটার ভেতর যে প্রহসন লুকিয়ে আছে, সেটাকেই মাঝে মাঝে আমার নিজের কাছে নিজের ট্রেডমার্ক বলে মনে হয়। হা! হা! ট্রেডমার্ক! তবে একধরণের অহম বোধও বোধহয় কাজ করে নিজের ভেতর। এই অস্থির সময়ে নিজের অস্তিত্ব সংকটের ভেতর আকন্ঠ ডুবে থেকেও নিজেকে একটা কিছু মনে হতে থাকে। নিজেকে একটা একক মনে হতে থাকে। নিজেকে নিজেরই একক মনে হতে থাকে। এক এবং অদ্বিতীয় রাস্তার ছেলে! হা! হা! এই লাইনটা কয়টা মাইনাস ধারণ করতে পারে দেখা দরকার!

আজকে প্রথম পোস্টটা লিখে ব্লগে প্রকাশের কথা মনে পড়ছে। দুই বছর পর, সত্যিই এ এক অদ্ভুত ঘোরলাগা অনুভূতি! সময় আমাদের নিয়ে কি খেলাটাই না খেলে!
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×