somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিরাকল @ স্কয়ার হসপিটাল

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আসলে মিরাকল মানে কি? মানে এমন কিছু একটা যা অনেকটাই অভূতপূর্ব। যেটা আগে কেউ কখনো দেখে নাই। এরকমভাবে বললেও যেন ব্যাপারটা খোলাসা হয় না, ধোঁয়াশা থেকে যায়। এভাবে বলা যায়, এমন একটা ঘটনা যেটা আগে কখনো ঘটে নাই এমন না, তবে জীবনে এরকম অসাধারণ ঘটনা মানুষ খুব বেশি হলে একবারই দেখার সুযোগ পায়। এটাই হল মিরাকল।

আসল ঘটনায় যাওয়ার আগে নকল ঘটনায় মানে বাড়তি কথাগুলা সেরে নেই। তা না হলে আসল ঘটনাটা ঠিক বুঝা যাবে না। আমার শাশুড়িরা ছয় বোন। সবচাইতে বড় বোন, আমার বৌয়ের বড় খালা অনেক আগেই গত। এখন পাঁচ খালা বর্তমান। তাদের মধ্যে এক খালা - ধরি তার নাম আলো। তো এই আলো খালা থাকেন ঢাকাতেই। স্বামী ডাকসাইটে ব্যবসায়ী, শত কোটি টাকার কারবার। বাসায় একমাত্র ছেলে, পুত্রবধূ আর একমাত্র নাতনী। সুখের সংসারই বলা চলে। তো চাঁদেরও তো কলঙ্ক আছে আর ঠিক তেমনই খালার এত সুখের মাঝে একটাই দুঃখ - কিডনির অসুখ। আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে ধরা পড়া এই রোগ খালাকে একরকম কুরে কুরে খেয়ে ফেলেছে।

যেহেতু আল্লাহর রহমতে আর্থিক সমস্যা নেই, দেশ ও বিদেশে বহু চেষ্টাই করা হয়েছে খালাকে সম্পূর্ণ সুস্থ করার কিন্তু সব চেষ্টাই দিনশেষে বিফল হয়েছে। সুবিখ্যাত মাউন্ট এলিজাবেথ কিংবা বামরুনগ্রাদের মতন হাসপাতালও খালার কিডনি সমস্যার সমাধান করতে পারে নি। এখন যাকে বলে খালাকে নিয়মিত কিডনি ডায়ালাইসিস-এর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তারও বছর দশেক হতে চলল। খালা নিজেই মাঝে মাঝে বলেন যে এতগুলো দিন কেউ ডায়ালাইসিস করে টিকে থাকতে পারে না। উনার সাথে যাদের এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তাদের কেউ এখন আর জীবিত নেই। খালা ঠিকই শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে ও আমাদের সকলের দোয়ার জোড়ে, নিজের অসামান্য মনোবল ও খালুর অদ্বিতীয় ভালোবাসায় টিকে আছেন।

খালুর বয়স প্রায় ৬০+, এখন বয়সের হাতে কাবু হয়ে পড়লেও নিজের হাতে একটা সৎ ব্যবসা শুরু করে যখন দেশের সেরা অবস্থানে যেতে পেরেছেন, বুঝাই যায় উনি একজন কর্মবীর মানুষ। সময় করে অফিস যান, নিয়ম করে কাজ করেন, খাওয়া দাওয়া ও ঘুম সবই এই হিসেবের বেড়াজালে বন্দী। অনিয়ম যেটা হয় সেটা সপ্তাহের তিনটে দিন যখন খালা কিডনি ডায়ালাইসিসে যান, খালু সঙ্গী হিসেবে পাশেই থাকেন। বেডের পাশে এক্সট্রা টুল নিয়ে বসে থাকেন। এই দশ বছরে এই সেন্টার তার পরিবারের অংশই হয়ে গিয়েছে। সব ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড বয়দের সাথে তার সুসম্পর্ক। এবং সবাই দেখেছে কি অসাধারণ মমতাময় হাত দিয়ে তিনি খালাকে আগলে রেখেছেন।

ঘটনার শুরু কয়েক দিন আগে। খালার কিডনি ডায়ালাইসিসের দিন। খালু সাথেই গিয়েছেন। ডায়ালাইসিস শুরু হয়েছে। এমন সময় খালুর অফিস থেকে ফোন আসলো খুব জরুরী একটা কাজের জন্য, অফিসে না গেলেই নয়। খালু ভাবলেন, এই যাবেন আর আসবেন। সেভাবেই খালাকে বলে বের হয়ে গেলেন। খালু বের হওয়ার ঘণ্টা খানেক পরের কথা। খালার শরীরের অবস্থার মারাত্মক অবনতি দেখা দিল। ডাক্তাররা প্রমাদ গুনলেন। প্রথম ফোন গেলো খালার ছেলের মোবাইলে। তিনি তুলনামূলক কাছেই ছিলেন, চটজলদি হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে দিলেন। সেই সাথে খালুকেও ফোন করে বললেন যে খালার শরীর খারাপ করেছে। খালুও অফিস থেকে রওয়ানা দিলেন সাথে সাথেই।

খালু যখন ডায়ালাইসিস রুমে ঢুকতে যাবেন দেখেন বাইরে দাঁড়িয়ে তার ছেলে চিৎকার করে কান্না করছে। ছেলেকে না ধরে তিনি আগে দৌড়ে ছুটে গেলেন তার স্ত্রীর পাশে। সেখানে ডাক্তাররা মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন ও হাল ছেঁড়ে দেবেন এরকম অবস্থা। হাতে পালস পাওয়া যাচ্ছে না। ডীফ্রিবিলেটর নিয়ে আসা হয়েছে। অনেকের চোখেই পানি। সবাই খালা ও খালুকে চেনেন। তাদের হাসিমুখ ও সুন্দর আচরণের জন্য ভালোও বাসেন। এই সব কোলাহল, এত ঝামেলার মাঝে খালু বেডের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন ও খালার নিস্তেজ হয়ে যাওয়া হাত মুঠো করে ধরলেন আর সবাইকে অগ্রাহ্য করে বলতে থাকলেন, "আলো, তুমি আমার জীবনের আলো। তুমি ছাড়া আমার জীবন অন্ধকার হয়ে যাবে। তুমি জানো আই লাভ ইয়ু। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আই লাভ ইয়ু, তুমি ফিরে আসো, আমার কাছে ফিরে আসো। ফিরে আসো। আই লাভ ইয়ু। ফিরে আসো আমার কাছে।" কোন ডাক্তার, কোন নার্স, কেউ বাধা না দিয়ে তাকিয়ে থাকলো। হয়তো সবাই একটা মিরাকল দেখতে চাচ্ছিল।



এবং মিরাকল হল। সবার বিস্মিত চোখের সামনে খালার পালস ফিরে এলো। ডাক্তাররা তাদের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেন ও রীতিমতো আজরাইলের সাথে যুদ্ধ করে খালাকে ফিরিয়ে আনলেন। এই ঘটনার পর একজন বর্ষীয়ান ডাক্তার শুধু একটা কথাই বললেন, "এটা আমার জীবনে দেখা একমাত্র মিরাকল।" কয়েকদিন পরে খালার বাসায় গিয়ে ঐ সময়ের কোন কিছু মনে আছে কিনা জিজ্ঞেস করাতে খালা লাজুক স্বরে বললেন, "শুধু তোমার মামা আই লাভ ইয়ু বলতেছে এটা শুনেছি।"

নিজেকে প্রেমিক বলে দাবী করি। 'ফিফটি ফার্স্ট ডেট'-এর মতন প্রতিটা চুমুতেই প্রথম চুম্বনের অসাধারণ স্বাদ পাই, 'দ্য নোটবুক'-এর মতন একই আলিঙ্গনে একই বিছানায় একই সাথে মারা যাওয়ার মতন অলীক কল্পনা করি, 'নটিং হিল'-এর মতন অপূর্ব পবিত্রতায় ভরা নিজের প্রেম নিয়ে গর্ব করি। কিন্তু 'এ ওয়াক টু রিমেম্বার'-এর মতন মিরাকল যে এভাবে বাস্তব জীবনেও ঘটতে পারে আসলে কখনো ভাবি নি। জানি না, আমার প্রেমে সেই শক্তি আছে কিনা, বা সময়ে সেই শক্তি যোগার হবে কিনা যাতে নিজের সবচাইতে প্রিয় মানুষটার জন্যে এমনকি মৃত্যুর সাথেও পাঞ্জা লড়া যায়। ও জিতে এসে বলা যায়, এন্ড দেয়ার ইজ অনলি ওয়ান থিং উই সে টু ডেথ? - নট টুডে।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩৪
১৫টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×