রমজান মাস এসেছে। সেহরিতে দুধ-ভাত সেই গ্যান্দাকাল থেকেই খেতে খেতে একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে তাই বহু কষ্টে একজন দুধওয়ালা জোগার করা হল দারোয়ান মামার বদান্যতায়। মাসের শুরুতে তাকে বেশ কড়াভাবেই বলে দেয়া হল যে আমরা আগে কয়েকদিন ভালো করে দেখে নিব দুধের কোয়ালিটি এবং বিন্দুমাত্র এদিক সেদিক হলেই তার নিয়োগ বাতিল ঘোষণা করা হবে। শুরুর দিকে চমৎকার গুণ-মানসম্পন্ন দুধ দিয়ে সে আমাদের ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়ে দিল।
তারপরই আসলো ফণী আর শহরজুড়ে বৃষ্টি। দুধের পাতিলে দুধের ছদ্মবেশী পানি ঢালা শেষে মামাকে বিনীতভাবে প্রশ্ন করলাম, "মামা, দুধতো দেখি পাতলা পাতলা লাগে।"
তিনি বিরস মুখে উত্তর দিলেন, "ঝড়-বাদলার দিন তো। এমুন সময় গরুর দুধটা একটু পাতলা আসে।" দরজার চৌকাঠ ধরে মাথা ঘুড়ে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচলাম। হতেই পারে, বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি। বৃষ্টি আসলে গরুদের হয়তো মুড সুইং হয়, তাই দুধের এই দৈন্যদশা।
ফণী শেষ। কাঠফাটা রোদে মাথার তালু আর পথের বালু পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে, এই অবস্থাতেও দুধের অবস্থা তরল থেকে তরলতর হচ্ছে দেখে আবারো বিনয়ের সাথে মামাকে জিজ্ঞাসা করা হল, "মামা, দুধ তো এখনো পাতলাই রয়ে গেল। বৃষ্টি-বাদলা তো শেষ।"
মামা ঘ্যাষ ঘ্যাষ করে গাল চুলকাতে চুলকাতে বললো, "দেখসেননি গরমটা। যেই অবস্থা, ঘাস-বিচুলি কিছু খায় না হুদা পানি খায় গরু। তাই দুধটা একটু পাতলা আসে।" চোখে পানি চলে আসলো গরুর দুঃখের কথা ভেবে। বেচারারা, একটু দুই চুমুক বেশি পানিই না হয় খেয়েছে। এটুকু যদি না মেনে নিতে পারি তবে ধিক, শত ধিক এই মানবজীবন। যত যাই হোক, জীবে দয়া করে যেই জন...
দিন যায়। দুধের বদলে পানি দিয়ে ভাত খেয়ে উঠে যাই, বৌ ধমক দিয়ে ভুল শুধরে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে আবার পরের দিন মামাকে সালাম ঠুকে জিজ্ঞাসা করলাম, "মামা, দুধ তো...।"
মামা উদাস গলায় বললেন, "নতুন একটা অস্ট্রেলিয়ান গাইগরু কিনলাম চৈদ্দ লক্ষ টাকা দিয়া। দিনে তিরিশ লিটার দুধ দিব। গরু নতুন তো, তাই...।"
আমি পুরোদস্তুর হতাশ হয়ে তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললাম, "তাই দুধটা একটু পাতলা আসে। খুব বুঝছি।"
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৯ রাত ৩:০৮