এই মেয়ে,
তুমি কি জান, আমার প্রথম ভাললাগা ছিলে তুমি। সে কতদিন আগের কথা। এই জানুয়ারিতে দশ বছর হয়ে গেল। সেদিনের তারিখটি মনে আছে কি? আমি বলছি, সেদিন ছিল জানুয়ারির ১৬ তারিখ। তোমার তারিখ কি করে মনে থাকবে? তুমি হয়ত সেদিন আমাকেই দেখই নি। আমি যে কিন্তু শুধু তোমাকেই দেখেছি। যে ক্রিকেট খেলা দেখতে গিয়ে তোমার দেখা পেলাম সে খেলাই দেখা হল না। শুধু তোমারই জন্য। এসো, তোমায় একে একে সব মনে করিয়ে দেই।
সে আজ থেকে দশ বছর আগের কথা। ১৯৯৮ সালের ১৬ জানুয়ারি, আমি তখন ক্লাস টেনে পড়ি। কোন এক বন্ধুর কাছ থেকে বাবা পাকিস্তান – ইন্ডিয়ার ম্যাচের দুইটা টিকেট পেয়েছিল। টুর্নামেন্টটা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজত জয়ন্তি উপলক্ষে। আমি আর বাবা গিয়েছিলাম ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সে খেলা দেখতে। শুরু হল খেলা। সেদিনই প্রথম সামনে থেকে দেখেছিলাম ইনজামাম, সাইদ আনোয়ার, শহিদ আফ্রিদিকে। তুমি তো আমার খুব কাছেই বসেছিলে, নিশ্চয়ই তোমারও মনে থাকবার কথা। মেয়েরা তো তখন আফ্রিদি শুনলে পাগল। খেলা দেখতে দেখতে এক সময় এদিক ও দিক তাকাতে গিয়েই চোখ আটকে গেল তোমার উপর। তুমি আমার ঠিক পেছনের সারিতে আমার বামের তিন চারটা চেয়ার পরেই বসেছিলে। মনে আছে কি?
এরপর সারাটা দিন তুমিই তো দখল করে রেখেছিলে। তোমার পরনে ছিল লালচে বাদামি গেঞ্জি ও সাদা প্যান্ট। তোমার চুল আর চোখ গুলো আমায় সব থেকে বেশি মাতোয়ারা করেছিল। তোমার লালচে খোলা চুল, ছড়িয়ে ছিল তোমার পিঠে। তোমার চোখ দুটো কি আজ সেই একই ভাবে আমাকে টানবে, আমি জানি না? সারাদিন আমি তোমায় দেখে গেলাম, তুমি একটিবারও আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে বলে আমার মনে পড়ে না। তবে, তুমি খেলা দেখার থেকে খাওয়াতেই বেশি মগ্ন ছিলে। আজও তোমার কথা মনে এলেই , ভেসে ওঠে বিশাল সাইজ বার্গারে তুমি কামড় বসাচ্ছ। কিন্তু তুমি তো তখন মোটেও মোটা ছিলে না। জানি না কেন, সেদিন খুব খাচ্ছিলে। আমি তন্ময় হয়ে চেয়ে রইলাম তোমার দিকে। বাবারও চোখ এড়ায়নি ব্যাপারটা, তা আমি তখনই বুঝেছিলাম। তবুও, জানতাম, সেদিনের পর আর কখনও দেখব না। তাই, আমার চোখকে বিশ্রাম দেইনি।
তুমি আমার সব থেকে কাছে এসেছিলে কখন জান? খেলা শেষে। আমি ঠিক তোমার পিছু পিছুই বের হয়েছি মাঠ থেকে। খুব মন চাইছিল, তোমার চুল একটি বার ছুই। কিন্তু, সে সাহস আমার তখন ছিল না। তুমি এসবের কিছুই জান না। তুমি কি জান, একটা ছেলের জীবনের প্রথম ভাললাগা হিসেবে তুমি তার মনে জায়গা করে নিয়েছ। তুমি তো জানই না যে, এরপরের দু’তিন বছর তোমার তাজা স্মৃতি নিয়ে ঘুরেছে সেই ছেলেটি। যখনই কোন নতুন জায়গায় গেছি মন বলেছে “যদি তোমার দেখা পাই’’। কিন্তু, হে! পাষাণ হৃদয় তুমি যে দেখা আর দিলে না।
এরপর কেটে গেল দশটি বছর। আজ এ গভীর রাত্রীতে বলতে পার ঊষা লগ্নে, কেন জানি না একটা গান শুনতে শুনতে সতেজ হয়ে উঠল সেদিনের স্মৃতি। আমি আজ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের গন্ডি শেষ করবার পথে, শীঘ্রই ঢুকব কর্মক্ষেত্রে। সেদিন আমার চোখে চশমা ছিল না। এখন, চশমা ছাড়া ঠিক সেই একই দুরুত্বে তোমায় দেখতেও পারব না। চেহারায় তেমন পরিবর্তন হয়নি। সেই স্কুল আমলের চেহারা নিয়েই আছি বলতে পার। এর মাঝে এল গেল কত ভাললাগা, সেই সাথে প্রেম যারে কয়, সেরূপ ভালবাসাও। তবু আমার এ জীবনে তুমিই দখল করে রাখলে প্রথমের আসনটি।
সেদিন কোন ঠিকানাও তো দিলে না, যে চিঠি লিখব। তবুও আজ লিখলাম এ খোলাচিঠি। উড়িয়ে দিলাম সামহোয়্যারইনের জগতে। যদি কখনও এ চিঠি পড় এবং আমায় মনে পড়ে তবে সাড়া দিও। আমাদের এই ঢাকা শহরে সেদিনের মত আর একটা দিন না হয় কাটাব শুধু তোমার পানে চেয়ে।
~ইতি~
!!! সেই ছেলেটি !!!