somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনি কয়টি মন্তব্য পেয়েছেন! :D

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সকালবেলা নাস্তার টেবিলে রকিবের বাবা তাকে বললেন, তোমার কী খবর বল?
রাকিব কদিন আগেই পড়াশুনা শেষ করেছে । তারপর থেকেই সে চাকরির জন্য পড়াশোনা শুরু করেছে । একটা দুটো পরীক্ষাও দিচ্ছে । ইন্টারভিউ কলও পাওয়া শুরু করেছে । সে চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখছে না । কেবল বলে ব্যাটে মিলছে না ! প্রায় এটা নিয়ে খাবার টেবিলে বাবার সাথে তার কথা ।
এমন সময়ে তার মা রান্নাঘর থেকে ডাইনিং রুমে এল । রাকিবের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার ব্লগিংয়ের কী অবস্থা ? পোস্ট প্রতি কয়টি মন্তব্য পাও শুনি? পাশের বাসার আকিব সাহেবের ছেলে পোস্ট প্রতি ৩০ টি মন্তব্য পায় সেই হিসাব পায় । সমাজে আমরা মুখ দেখাতে পারি না । সবাই আমার কাছে জানতে চায় তুমমি পোস্ট প্রতি কয়টি মন্তব্য পাও ! আমি তাদের কী জবাব দিবো বল ? তুমি কিছু করছো না কেন?

রাকিব কী বলবে খুজে পায় না । মাথা নিচু করে খাবার খেয়ে যায় । তার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করে । সত্যিই সে কম মন্তব্য পায় । তার জীবন তার কাছে ব্যর্থ মনে হয় । তার সকল বন্ধুরা ইতিমধ্যে পোস্ট প্রতি অনেক মন্তব্য পাওয়া শুরু করেছে । রাকিবের এখনও কিছু হচ্ছে না । এটা নিয়ে তার হতাশার কোন শেষ নেই ।
রাকিবের বাবা বললেন, আহা ! ছেলেটাকে খেতে দাও । মন্তব্যে সংখ্যা নিয়ে এতো চিন্তিত হতে হবে না !
রাকিবের মা তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি চুপ কর । তোমাকে তো আর পাড়া প্রতিবেশীর সাথে মিশতে হয় না, তুমি এসব জানো না । আমি জানি !
তারপর রাকিবের দিকে তাকিয়ে বলল, যে কোন ভাবে হোক মন্তব্যের সংখ্যা বাড়াও ।


রাকিব খাবার শেষ করে উঠে গেল। আজকে বেলা বারোটায় একটা ইন্টারভিউ আছে তার । সেটার জন্য বের হতে হবে । ইন্টারভিউবোর্ডে গিয়ে হাজির হল যথা সময়ে । সালাম দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো । প্রশ্নকর্তা সময় তার পরীক্ষার রেজাল্ট কার্ড দেখলো । তারপর অন্যান্য সব সার্টিফিকেট দেখলো ।
রাকিবের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার একাডেমিক রেকর্ড দেখছি খুবই ভাল । এছাড়া এক্সট্রাকারিকুলামেও নাম আছে বেশ । আমাদের নেওয়া পরীক্ষাতেও আপনার ফলাফল ভাল খুব । আমাদের জবের জন্য একেবারে পার্ফেক্ট ক্যান্ডিডেট আপনি । তবে একটাই সমস্যা আপনার !
রাকিবের মুখটা একটু কালো হয়ে গেল । সে খুব ভাল করেই জানে এরপর নিয়োগ কর্তা ঠিক কোন কথাটা বলবে । নিয়োগ কর্তা বলল, দেখুন এই চাকরিটা আমরা আপনাকে দিতে পারছি না । আপনার ব্লগে মন্তব্যের সংখ্যা খুবই কম । আপনি কত ভাল লিখেন সেটা বড় প্রশ্ন না, আপনি মন্তব্য পান কম । আর এই মন্তব্যের সংখ্যা খুবই গুরুত্বপূর্ন । আমরা গড়ে ৩০টির কমে মন্তব্য হলে কাউকে চাকরি দেই না । আমাদের অফিসে যারা চাকরি করেন সবাই অনেক মন্তব্য পান । তবে আপনার জন্য একটা সুযোগ থাকছে । আপনি যদি আগামী এক মাসের ভেতরে গড়ে ২৫টি মন্তব্য পান তাহলে এই চাকরিটি আপনাকে দেওয়া ।

রাকিব মন খারাপ করে বের হয়ে এল । জীবন তার কাছে বড় হতাশার । মনে হচ্ছে এই জীবন আর রেখে লাভ নেই । কী হল জীবনে আর কী করলো ! মন্তব্যই পেল না তাতে আর কীবা বাকি আছে । দুপুরে তার প্রেমিকা আদিবার সাথে দেখা হওয়ার কথা ছিল । যদিও ইচ্ছে ছিল না রাকিবের দেখা করার । রাকিব জানে আদিবা তাকে কী কথা বলবে !
তারপরেও দেখা করলো রাকিব । ওরা একটা রেস্টুরেন্টে বসলো । রেস্টুরেন্ট খাবারের অর্ডার দিয়েই রাকিবের দিকে তাকিয়ে আদিবা বলল, কিছু হল?
রাকিবের চেহারায় হতাশা দেখেই আদিবা যা বুঝার বুঝে নিল। সেও খানিকটা হতাশ হল । তারপর রাকিবের দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে । ছেলে পোস্ট প্রতি ৫০টা মন্তব্য পায় । এটা দেখেই বাবা একেবারে বিগলিত হয়ে গেছে । দেখো রাকিব আমি আর বাবাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারছি না । আমি এতো মন্তব্য চাই না , কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য অন্তত ২৫টা মন্তব্য তো দরকারই। তাই না ? তুমি কিছু একটা না করলে আমি কিন্তু ঐ ৫০টা মন্তব্য পাওয়া ছেলেকে বিয়ে করে ফেলতে বাধ্য হব।

রাকিবও জানে এই ব্যাপারটা । ব্লগে যে ছেলে মন্তব্য পায় না, তার আসলে কোন দাম নেই । লেখার মান যেদিকেই যাক, লিখতে পারুক কিংবা না পারুক মন্তব্যই আসল কথা । মন্তব্যের জন্য যে কোন কিছু করা যায় । রাকিব উদাস হয়ে তাকিয়ে রইলো কাঁচের জানালা দিয়ে আকাশের দিকে ।

রাত একটা । রাকিব দাড়িয়ে রয়েছে ওদের বাসার ছাদে । একেবারে রেলিংয়ের ধারে দাড়িয়ে তাকিয়ে আছে নিচে । চারিদিকে শুনশান নিরবতা । রাকিব চারিদিকে একবার ভাল করে তাকালো । মনের ভেতরে একটা আকুলতা কাজ করছে তার । বেঁচে থাকার একটা আকুলতা কিন্তু তার জীবনের কোন মূল্য নেই । কোন আশা নেই । নেই কোন ভরশা । এই জীবন রেখে সে কী করবে ? কাকে দেখাবে এই মুখ । কদিন পরে পাড়ার মুদিদোকানদারেও হয়তো তার কাছে জিনিস পত্র বিক্রি বন্ধ করে দিবে । এই জীবন আর রেখে কী করবে !

যখনই লাফ দিতে যাবে তখনই পেছন থেকে একটা কন্ঠস্বর শুনটে পেল । পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো কালো পোশাক পরা একজন সুদর্শন যুবক তার পেছনে দাড়িয়ে রয়েছে। রাকিব একটু অবাক না হয়ে পারলো না । কারণ সে নিজে ছাদের দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে এসেছে । এই লোক ছাদে উঠলো কোন রাস্তা দিয়ে !
রাকিবের দিকে দিকে তাকিয়ে লোকটা বলল, ঝাপ দিচ্ছো ?
-হ্যা !
-আমি যদি বলি যে আমি তোমার হতাশার কারণটা দুর করতে পারবো তাহলে কি ঝাপ দেওয়া বাদ দিবে?
-আপনি কী করবেন?
-সেটা আমার ব্যাপার । তবে যদি আমি পারি এর বিনীময়ে আমি কিছু চাই ।
-যে কোন কিছুর বিনীমনে আমি চাই । বলুন কী চাই আপনার !

রাকিব তখনও জানে না ওর সাথে কী হতে চলেছে ।


একমাস পরের কথা ।
হঠাৎ করেই রাকিবের জীবন পাল্টে গেছে । এখন সে পোস্ট প্রতি ৩০টা করে মন্তব্য পাওয়া শুরু করেছে । আশা করা হচ্ছে সামনে আরও বাড়বে। চাকরিটা হয়ে গেছে তার । বাসায় মা এখন খুব খুশি । আদিবার বাবার সাথে দেখা করেছে এসে গতদিন । তিনিও খুশি রাকিবকে দেখে । মন্তব্যের সংখ্যা শুনে সে খুশি হয়েছে । সে আশা করছে সামনে এই মন্তব্যের সংখ্যা বাড়বে আরও । তখনই তাদের বিয়ের কথা সামনে এগিয়ে যাবে !

সব কিছু ঠিক চলছে তবে রাকিবের মনে শান্তি নেই । কেবল মাত্র সে জানে কিসের বিনিমনে এই সাফল্য অর্জন করেছে ।


pic source
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৩০
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×