সকালবেলা নাস্তার টেবিলে রকিবের বাবা তাকে বললেন, তোমার কী খবর বল?
রাকিব কদিন আগেই পড়াশুনা শেষ করেছে । তারপর থেকেই সে চাকরির জন্য পড়াশোনা শুরু করেছে । একটা দুটো পরীক্ষাও দিচ্ছে । ইন্টারভিউ কলও পাওয়া শুরু করেছে । সে চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখছে না । কেবল বলে ব্যাটে মিলছে না ! প্রায় এটা নিয়ে খাবার টেবিলে বাবার সাথে তার কথা ।
এমন সময়ে তার মা রান্নাঘর থেকে ডাইনিং রুমে এল । রাকিবের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার ব্লগিংয়ের কী অবস্থা ? পোস্ট প্রতি কয়টি মন্তব্য পাও শুনি? পাশের বাসার আকিব সাহেবের ছেলে পোস্ট প্রতি ৩০ টি মন্তব্য পায় সেই হিসাব পায় । সমাজে আমরা মুখ দেখাতে পারি না । সবাই আমার কাছে জানতে চায় তুমমি পোস্ট প্রতি কয়টি মন্তব্য পাও ! আমি তাদের কী জবাব দিবো বল ? তুমি কিছু করছো না কেন?
রাকিব কী বলবে খুজে পায় না । মাথা নিচু করে খাবার খেয়ে যায় । তার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করে । সত্যিই সে কম মন্তব্য পায় । তার জীবন তার কাছে ব্যর্থ মনে হয় । তার সকল বন্ধুরা ইতিমধ্যে পোস্ট প্রতি অনেক মন্তব্য পাওয়া শুরু করেছে । রাকিবের এখনও কিছু হচ্ছে না । এটা নিয়ে তার হতাশার কোন শেষ নেই ।
রাকিবের বাবা বললেন, আহা ! ছেলেটাকে খেতে দাও । মন্তব্যে সংখ্যা নিয়ে এতো চিন্তিত হতে হবে না !
রাকিবের মা তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি চুপ কর । তোমাকে তো আর পাড়া প্রতিবেশীর সাথে মিশতে হয় না, তুমি এসব জানো না । আমি জানি !
তারপর রাকিবের দিকে তাকিয়ে বলল, যে কোন ভাবে হোক মন্তব্যের সংখ্যা বাড়াও ।
রাকিব খাবার শেষ করে উঠে গেল। আজকে বেলা বারোটায় একটা ইন্টারভিউ আছে তার । সেটার জন্য বের হতে হবে । ইন্টারভিউবোর্ডে গিয়ে হাজির হল যথা সময়ে । সালাম দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো । প্রশ্নকর্তা সময় তার পরীক্ষার রেজাল্ট কার্ড দেখলো । তারপর অন্যান্য সব সার্টিফিকেট দেখলো ।
রাকিবের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার একাডেমিক রেকর্ড দেখছি খুবই ভাল । এছাড়া এক্সট্রাকারিকুলামেও নাম আছে বেশ । আমাদের নেওয়া পরীক্ষাতেও আপনার ফলাফল ভাল খুব । আমাদের জবের জন্য একেবারে পার্ফেক্ট ক্যান্ডিডেট আপনি । তবে একটাই সমস্যা আপনার !
রাকিবের মুখটা একটু কালো হয়ে গেল । সে খুব ভাল করেই জানে এরপর নিয়োগ কর্তা ঠিক কোন কথাটা বলবে । নিয়োগ কর্তা বলল, দেখুন এই চাকরিটা আমরা আপনাকে দিতে পারছি না । আপনার ব্লগে মন্তব্যের সংখ্যা খুবই কম । আপনি কত ভাল লিখেন সেটা বড় প্রশ্ন না, আপনি মন্তব্য পান কম । আর এই মন্তব্যের সংখ্যা খুবই গুরুত্বপূর্ন । আমরা গড়ে ৩০টির কমে মন্তব্য হলে কাউকে চাকরি দেই না । আমাদের অফিসে যারা চাকরি করেন সবাই অনেক মন্তব্য পান । তবে আপনার জন্য একটা সুযোগ থাকছে । আপনি যদি আগামী এক মাসের ভেতরে গড়ে ২৫টি মন্তব্য পান তাহলে এই চাকরিটি আপনাকে দেওয়া ।
রাকিব মন খারাপ করে বের হয়ে এল । জীবন তার কাছে বড় হতাশার । মনে হচ্ছে এই জীবন আর রেখে লাভ নেই । কী হল জীবনে আর কী করলো ! মন্তব্যই পেল না তাতে আর কীবা বাকি আছে । দুপুরে তার প্রেমিকা আদিবার সাথে দেখা হওয়ার কথা ছিল । যদিও ইচ্ছে ছিল না রাকিবের দেখা করার । রাকিব জানে আদিবা তাকে কী কথা বলবে !
তারপরেও দেখা করলো রাকিব । ওরা একটা রেস্টুরেন্টে বসলো । রেস্টুরেন্ট খাবারের অর্ডার দিয়েই রাকিবের দিকে তাকিয়ে আদিবা বলল, কিছু হল?
রাকিবের চেহারায় হতাশা দেখেই আদিবা যা বুঝার বুঝে নিল। সেও খানিকটা হতাশ হল । তারপর রাকিবের দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে । ছেলে পোস্ট প্রতি ৫০টা মন্তব্য পায় । এটা দেখেই বাবা একেবারে বিগলিত হয়ে গেছে । দেখো রাকিব আমি আর বাবাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারছি না । আমি এতো মন্তব্য চাই না , কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য অন্তত ২৫টা মন্তব্য তো দরকারই। তাই না ? তুমি কিছু একটা না করলে আমি কিন্তু ঐ ৫০টা মন্তব্য পাওয়া ছেলেকে বিয়ে করে ফেলতে বাধ্য হব।
রাকিবও জানে এই ব্যাপারটা । ব্লগে যে ছেলে মন্তব্য পায় না, তার আসলে কোন দাম নেই । লেখার মান যেদিকেই যাক, লিখতে পারুক কিংবা না পারুক মন্তব্যই আসল কথা । মন্তব্যের জন্য যে কোন কিছু করা যায় । রাকিব উদাস হয়ে তাকিয়ে রইলো কাঁচের জানালা দিয়ে আকাশের দিকে ।
রাত একটা । রাকিব দাড়িয়ে রয়েছে ওদের বাসার ছাদে । একেবারে রেলিংয়ের ধারে দাড়িয়ে তাকিয়ে আছে নিচে । চারিদিকে শুনশান নিরবতা । রাকিব চারিদিকে একবার ভাল করে তাকালো । মনের ভেতরে একটা আকুলতা কাজ করছে তার । বেঁচে থাকার একটা আকুলতা কিন্তু তার জীবনের কোন মূল্য নেই । কোন আশা নেই । নেই কোন ভরশা । এই জীবন রেখে সে কী করবে ? কাকে দেখাবে এই মুখ । কদিন পরে পাড়ার মুদিদোকানদারেও হয়তো তার কাছে জিনিস পত্র বিক্রি বন্ধ করে দিবে । এই জীবন আর রেখে কী করবে !
যখনই লাফ দিতে যাবে তখনই পেছন থেকে একটা কন্ঠস্বর শুনটে পেল । পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো কালো পোশাক পরা একজন সুদর্শন যুবক তার পেছনে দাড়িয়ে রয়েছে। রাকিব একটু অবাক না হয়ে পারলো না । কারণ সে নিজে ছাদের দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে এসেছে । এই লোক ছাদে উঠলো কোন রাস্তা দিয়ে !
রাকিবের দিকে দিকে তাকিয়ে লোকটা বলল, ঝাপ দিচ্ছো ?
-হ্যা !
-আমি যদি বলি যে আমি তোমার হতাশার কারণটা দুর করতে পারবো তাহলে কি ঝাপ দেওয়া বাদ দিবে?
-আপনি কী করবেন?
-সেটা আমার ব্যাপার । তবে যদি আমি পারি এর বিনীময়ে আমি কিছু চাই ।
-যে কোন কিছুর বিনীমনে আমি চাই । বলুন কী চাই আপনার !
রাকিব তখনও জানে না ওর সাথে কী হতে চলেছে ।
একমাস পরের কথা ।
হঠাৎ করেই রাকিবের জীবন পাল্টে গেছে । এখন সে পোস্ট প্রতি ৩০টা করে মন্তব্য পাওয়া শুরু করেছে । আশা করা হচ্ছে সামনে আরও বাড়বে। চাকরিটা হয়ে গেছে তার । বাসায় মা এখন খুব খুশি । আদিবার বাবার সাথে দেখা করেছে এসে গতদিন । তিনিও খুশি রাকিবকে দেখে । মন্তব্যের সংখ্যা শুনে সে খুশি হয়েছে । সে আশা করছে সামনে এই মন্তব্যের সংখ্যা বাড়বে আরও । তখনই তাদের বিয়ের কথা সামনে এগিয়ে যাবে !
সব কিছু ঠিক চলছে তবে রাকিবের মনে শান্তি নেই । কেবল মাত্র সে জানে কিসের বিনিমনে এই সাফল্য অর্জন করেছে ।
pic source
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৩০