somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নস্টালজিক লোডশেডিংয়ের গল্প

১৭ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এবার ঈদে বাড়িতে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠেছিলাম রাত দশটার সময় । প্লান ছিল যে যদি ফেরি ঘাটে জ্যাম না পড়ে তাহলে বাসায় গিয়েই সেহরি করতে পারবো । এবং হলও তাই । বাসায় পৌছালাম সাড়ে তিনটার দিকে । তখনও সেহরির বেশ কিছুটা সময় ছিল । কিন্তু বাসায় গিয়ে যে ব্যাপারটা আমাকে পুরানো দিনের কথা মনে করিয়ে দিল তা হচ্ছে পুরো বাসা ছিল একেবারে অন্ধকার । আমার একবার মনে হয়েছিলো যে রাতের বেলা সবাই এখন ঘুমিয়েই রয়েছে । কিন্তু যখন মা দরজা খুলে দিলো আমি ভেতরে ঢুকে দেখি বাসার সবাই জেগে গেছে । সেহরি খাওয়ার সময় এখন । তখনই আসলে আবিস্কার করলাম যে বাসায় ইলেক্ট্রিসিটি নেই । সত্যি বলতে কি ব্যাপারটা তখন আমার মাথাতেই আসে নি ।

আপনাদের কাছে ব্যাপারটা বিশ্বাসযোগ্য না হলেও আমার তখনও মনে হয় নি যে এই রাতের বেলা বিদ্যুৎ যেতে পারে । আওয়ামীলীগ সরকার নিয়ে আমার অনেক অভিযোগ থাকতে পারে কিন্তু একটা ব্যাপারে আমি সব সময় আওয়ামিলীগ সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ আর তা হচ্ছে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন । অন্তত আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন এই কথাটা বিশ্বাস হত না যে দিনের ভেতরে প্রায় ২৪ ঘন্টাই বিদ্যুৎ থাকবে । এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতই মনে হত এবং এটা বাস্তবিক অর্থেই আমার সামনে সত্যি এসেছে যেখানে তীব্র গরমের দিনেও আমি প্রায় ২৪ ঘন্টাই বিদ্যুৎ পেয়েছি ।

এমন কি গতবছর যখন তীব্র বিদ্যুৎ সমস্যা সৃষ্টি হল তখনও মোটামুটি ১৮/১৯ ঘন্টা বিদ্যুৎ আমি পেয়েছি নিয়মিত । আপনারা নাও পেতে পারেন । তবে আমি যে এলাকাতে বসবাস করি সেখানে খুবই কম বিদ্যুৎ গিয়েছে । শীতকালের পরে এখানে বড় সময় ধরে বিদ্যুৎ যায় নি বললেই চলে । যদিও যায়ও তবে তা চলে আসে দ্রুতই । হয়তো কালে ভাদ্রে যায়, লম্বা সময় থাকে তবে সেটা কখনই নিয়মিত নয় ।এবং সব থেকে কথা ভয়ানক অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে আমি বড় হয়েছি তার তুলনাতে এই বিদ্যুৎ যাওয়া আসলে কিছুই না । সেই হিসাব করে যখন গ্রামে গিয়ে ঐ রাতের বেলা বিদ্যুৎ পেলাম না আমি সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম । এমন ঘটনা আমার মাথাতে ছিল না ।

এবং পরদিন থেকেই টের পেলাম যে ঢাকাতে আমি যেখানে থাকি সেখানে বিদ্যুত না গেলেও এখানে ভাল পরিমানই লোডশেডিং হয় । সব থেকে বড় প্যারা হচ্ছে বিদ্যুৎ যায় রাতের বেলা । একটা দেড়টার দিকে প্রতিদিন বিদ্যুৎ যাওয়া শুরু করলো । আর তীব্র গরমের কারণে বিছানাতে শুয়ে থাকা বড় মুস্কিল হয়ে গেল । আমি তখন ঘরের দরজা খুলে দরজার ঠিক সামনে শুয়ে পড়তাম মেঝের উপরে । তখন আসলে বিদ্যুৎ আসার কোন ঠিক ঠিকানা ছিল না । এখন বিদ্যুৎ গেলেও তা ঘন্টা খানেকের ভেতরে চলে আসে কিন্তু তখন এসবের বালাই ছিল না । প্রতিদিন রাতের বেলা এই বিদ্যুৎ যাওয়াটা ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার । একদিন যদি না যেত তখন আমরা বিস্ময়বোধ করতাম ।

তখন রাতের বেলা বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরপরই বলতে গেলে সবার ঘুম ভেঙ্গে যেত । আমাদের সিড়ির ঘরে সিড়ির ঠিক নিচেই একটা চৌকি খাত পাতা থাকতো । আমার বাবা এই সময়ে ঘর থেকে বের হয়ে সেই খাটের উপরে গিয়ে শুতেন । বড় ভায়ের তখনও বিয়ে হয় নি । সে নিজের ঘর থেকে উঠে ছাদে চলে যেত পাটি নিয়ে । সেখানে শুয়ে থাকতো । অন্য দিনে আমার ঘরের পেছনে দরজা খুলে দিয়ে ঠিক তার সামনে শুয়ে পড়তাম । ঠান্ডা মেঝেতে শুয়ে শুয়ে আকাশ কুসুম ভাবতাম । কারণ একবার ঘুম ভেঙ্গে গেলে সেই ঘুম সহজে আর আসতো না । আর তখন তো মোবাইল ছিল না যে টেপাটেপি করবো !

এবার বাসাতে গিয়েও ঠিক একই অনুভূতি হল । একই ভাবে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ফলে বাবা উঠে গিয়ে বসতেন বারান্দায় । কারণ সেই সিড়ি ঘরের খাট আর এখন আর নেই । বড় ভাইকেও একই কাজ করতে দেখলাম । এখন সে বিবাহিত । ভাবীর আবার গরম বেশি । দুজন চলে যায় ছাদে । আমি সেই দরজা খুলে মেঝেতে শুয়ে পড়া শুরু করলাম । ঈদের আগের দিন পর্যন্তও এই একই ভাবে প্রতিটা দিন কেটেছে । প্রতিবার বিদ্যুৎ গেলে এই কাজ করে সময় পার করেছি । তবে এবার হাতে মোবাইল থাকায় মেঝেতে শুয়ে শুয়ে মোটাইল টিপেছি কেবল । তবে এবারও সেই পুরানো দিনের কথা গুলো থেকে বারবার মনে এসেছে । কতগুলো বছর আগের কথা । এভাবে আবার ফিরে আসবে সেটা ভাবি । মানুষের কত ভাবেই স্মৃতিপট আবারও জীবনে ফিরে আসে তার কোন ঠিক নেই ।



লোডশেডিংয়ের স্মৃতি নিয়ে লেখা আরেকটি লেখা পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন ।
ছবি উৎস

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১:৩০
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×