somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নস্টালজিক সেই লোডশেডিং আবার আসছে ফিরে ...

১৮ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে যাদের জন্ম মোটামুটি সবার সাথে এই লোডশেডিংয়ের স্মৃতি জড়িয়ে আছে । ছোট বেলা থেকেই লোশেডিং ছিল আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ । আমার স্কুল জীবন যখন শুরু তখন ছিল আওয়ামীলীগের সময় । আমার প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় । থাকি যশোরে । যতদুর স্মৃতি মনে পড়ে তখন নিয়মিত লোডশেডিং ছিল আমাদের বন্ধু । এই লোডশেডিংয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের বাসায় তখন একটা ব্যাটারী কেনা হয় । তখন আসলে আইপিএসের চল ছিল না । আর থাকলেও আমাদের মত মানুষদের সেই জিনিস কেনার সমর্থ্যও ছিল না । দিনের ভেতরে কয়েকবার বিদ্যুৎ চলে যেত । তবে সব থেকে যেটা প্যারা দিত সেটা হচ্ছে সন্ধ্যা বেলার লোডশেডিং । সন্ধ্যা হয়েছে আর বিদ্যুৎ যায় নাই, এমন ঘটনা তখন ঘটতো বলে আমার মনে পড়ে না ! মাগরিবের আযান দিবে আর এই দিকে বিদ্যুৎ বাবাজি ফুরুৎ । ঘন্টা খানেক কিংবা দুয়েক বিদ্যুৎ হীনতার পরে আবার আসতো এবং রাত দশটার আগে আবারও একবার যেত ।

আমার স্কুল জীবনের সন্ধ্যার বেলা পড়াশুনা আমি কোন দিন বিদ্যুতের আলোতে পড়েছি বলে আমার মনে পড়ে না । আমাদের বাসায় ছিল হ্যারিক্যান আর মোমবাতি । সেই সাথে একটা চার্জার লাইটও ছিল । সেগুলো আমাদের পড়াশুনার কাজে লাগতো । তবে সব থেকে যেটা আমার মনে কষ্ট লাগতো সেটা হচ্ছে আলিফ লায়লা দেখার সময় বিদ্যুৎ চলে যেত । রাত আটটার সংবাদের পরে শুরু হত এই আলিফ লায়লা । আমরা তখন এই আলিফ লায়লা দেখার জন্য পুরো সম্তাহ ধরে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম । মাঝে মাঝে এমন হত যে যখন অনুষ্ঠানটা শুরু হত তখনই চলে আসতো বিদ্যুৎ, আবার কোন কোন দিন অনুষ্ঠানের একেবারে মাঝ খানে চলে যেত ।

আগেই বলেছি যখন যশোর ছিলাম তখন আমাদের একটা ব্যাটারি ছিল । বিশেষ করে টিভি দেখার জন্যই এই ব্যাটারি কেনা হয়েছিলো । বেশ কিছু দিন আমরা তাই বিদ্যুৎ চলে গেলেও আলিফ লায়লা দেখতে পারতাম । তখন আমাদের ঘরে অনেক মানুষ এসে হাজির হত কেবল এই অনুষ্ঠান দেখার জন্য । নিজেকে বড় পশ পশ মনে হত তখন ! পুরো তল্লাটে তখন বলতে গেলে আমাদের বাসাতেই এই ব্যাটারি ছিল ।
কিন্তু মাঝে বছর খানেকের জন্য আমাদের নীলডুমুর যেতে হয়েছিলো আব্বার বদলির কারণে । এক বছর পরে যখন আবারও যশোরে ফিরে আসি তখন আর সেই ব্যাটারিটা আমাদের সাথে ছিল না । তখন বিদ্যুৎ চলে গেলে আমিও হাজির হতাম অন্য কারো বাসায় । তবে এই কাজটা আমার পছন্দ ছিল না । বাসায়ও ঠিক পছন্দ করতো না । কিন্তু হয় না এমন যে আজকের পর্বটা দেখতেই এমন, তখন আসলে ছোট্ট মনটাকে স্থির রাখা যেত না । আরেকটা স্থান অবশ্য ছিল । আমার বাবা বিডিআরের ফুড সাপ্লাইয়ার ছিল তখন । এবং আমাদের বাসায় ছিল একেবারে বিডিআর ক্যাম্প ঘেষে । এই ক্যাম্পে বিডিআরদের টিভি রুম ছিল বিশাল বড় । ক্যাম্পে তখন জেনারেটর ছিল । সেই সুবাদে টিভি চলতো । আমরা তখন সেখানে যেতাম টিভি দেখতে । কন্ট্রাক্টরের ছেলে হিসাবে আমার প্রবেশাধিকার ছিল সেখানে ।

এরপর চলে এলাম চুয়াডাঙ্গাতে । আমার হাই স্কুল কেটেছে বিএনপির আমলে । এই আমলেও ঠিক একই অবস্থা । বরং অবস্থা আরও ভয়াবহ ছিল । এই সময়েও প্রতিদিন কতবার যে বিদ্যুৎ চলে যেত তার কোন ঠিক ঠিকানা ছিল না । আমার একবার মনে আছে চুয়াডাঙ্গাতে এক গরমে ২২ ঘন্টা লোডশেডিং হয়েছিলো । এটা নিয়ে পত্রিকাতে নিউজও হয়েছিলো । তখনও সন্ধ্যার পড়াশুনা করতাম হ্যারিক্যান কিংবা মোমের আলোতে । তবে এই চুয়াডাঙ্গাতে একটা মজার ব্যাপার হত বিদ্যুৎ চলে গেলে । আমাদের চুয়াডাঙ্গার বাড়িটার ঠিক পাশেই আমাদের নানার বাড়ি । সেখানে অনেক কাজিনরা থাকতো । বলতে গেলে তাদের সাথেই বড় হয়েছি । বড় মামা দুই ছেলে মেয়ে । একজন আমার থেকে বছর খানেকের বড় আরেকজন বছর খানেকের ছোট । এছাড়াও মায়ের চাচাতো এক ভাই তার ফ্যামিলি নিয়ে থাকতেন । তারও ছেলে মেয়ে ছিল । বিদ্যুৎ চলে গেলে বিশেষ করে গরম কালে লোডশেডিং হলেই আমরা পড়াশুনা বাদ দিয়ে এক সাথে হতাম নানাদের রোয়াকে । সেখানে গল্প গুজব করে মাঝে মাঝে চোর পুলিশ খেলতাম । জীবনটা তখন কতই না চমৎকার ছিল ।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ঢাকা এলাম । তখন আওয়ামীলীগ আমল শুরু হয়েছে । এখানেও মাশাল্লাহ বিদ্যুতের সেই অবস্থা । তবে এখানে একটা ভাল দিক ছিল । আমরা আগে থেকে জানতাম যে কখন বিদ্যুৎ যাবে । যেমন সকাল আট কি নয়টা থেকে বিদ্যুৎ যাওয়া শুরু হত । প্রতি এক ঘন্টা থাকতো, এক ঘন্টা থাকতো না । এবং এটা চলতো মোটামুটি রাত দশটা পর্যন্ত। এমনটা হত বেশি গরম কালে । এক ঘন্টা আছে এক ঘন্টা নাই । বন্ধু আশিক থাকতো কলাবাগানের দিকে । ওর মেসে একদি গিয়েছি । গ্রুপ স্টাডি করার প্লান । ওমা গিয়ে দেখি বিদ্যুতের ভয়ানক অবস্থা । ওদের ওখানে দিনে দুই ঘন্টা পরপর একঘন্টার জন্য বিদ্যুৎ আসে ।
তারপর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষের দিকে বিদ্যুৎ যাওয়ার পরিমানে কমে গেল অনেক। আবাসিক এলাকাতে বিদ্যুৎ একটু কম যেত । তখন দিনে সব মিলিয়ে ঘন্টা দুয়েক তারপর ঘন্টা খানেক লোড শেডিং হত ।

তারপরেই তো সেই চমৎকার সময় গুলো চলে এল । আমি ঢাকার যে এলাকাতে থাকি সেই এলাকাতে বিদ্যুৎ যাওয়া বলতে একেবারে বন্ধ হয়েই গেল । শেষ কবে বিদ্যুৎ যেত আমার মনে থাকতো না । কালে ভাদ্রে হয়তো কোন কারণে বিদ্যুৎ থাকতো না । আওয়ামীলীগ সরকারকে নিয়ে হাজারটা অভিযোগ আছে আমার তবে আমি সেই ছোট বেলা থেকে যেই অবস্থা দেখে এসেছি আমি তখন কোন দিন ভাবতেও পারি নি এই লোডশেডিং বিহীন সময় আমি কোন দিন কাটাবো !

সম্প্রতি সময়ে আবারও লোডশেডিং শুরু হয়েছে । আজকে খবরে দেখলাম খরচ বাঁচাতে ডিজেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র সব বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে । এক হাজার মেগাওয়াট সর্টেজ হবে। তার মানে লোডশেডিং । সরকার থেকে বলা হচ্ছে লোডশেডিংয়ের একটা সিডিউল করা হবে । কোন এলাকায় কখন বিদ্যুৎ যাবে সেটা জানানো হবে । আবারও সেই ছোট বেলার স্মৃতি মনে পড়ে গেল । আবারও সেই লোডশেডিংয়ের দিন ফিরে আসছে !
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে ! :D
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১১:০৭
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×