ঘটনা - ১
আমি প্রতিদিন অফিসে যাবার পথে এটা প্রায়ই হয় । আমি মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠি । আমার অফিস হচ্ছে এলিফেন্ট রোডে । তো প্রতিদিনের মতই বাস এলিফেন্ট রোড আসতেই নামব দেখি গেটের কাছে এক লোক দাঁড়িয়ে আছে । বললাম ভাই পিছনে সিট খালি আপনি পিছনে গিয়ে বসেন । বলল আমি সামনেই নামব । জিজ্ঞেস করলাম কোথায়? বলল মতিঝিল । সত্যি বলছি আমার মাথায় তখন রক্ত পারদের মত উঠে গেল । গেটে লোক ওঠা নামায় কষ্ট হচ্ছে তাও উনি গেটে দাঁড়িয়ে আছে । মনে চাইল দু একটা বসিয়ে দেই, পারলে লাথি মেরে গেটের বাইরে ফেলে দেই ।
আমার কথায় হয়ত আপনাদের খারাপ লাগছে । কিন্তু সত্যি এটা প্রায়শই ঘটে । আওর বুঝি না এদের কি মাথায় ঘিলু বলতে কিছু নাই নাকি ইচ্ছে করেই লোকজনের দূর্ভোগ বাড়ায় । মাঝে মাঝে মনে হয় এই লোক গুলা কে ধরে ধরে পাবনায় পাঠিয়ে দেই ।
ঘটনা - ২
আজ জাপান ল্যাঙ্গুয়েজ শিখতে যাইনি । অফিসের কাজ করে প্রচুর ক্লান্ত লাগছিল তাই ভাবলাম বাসায় চলে যাই । তাই বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি । বাস তো আর আসে না । অবশেষে এলো । উঠলাম । কিন্তু ভীড় বেশি আবার পিঠে ল্যাপটপের ব্যাগ । তাই কি করব দাঁড়িয়ে ফোনে গান শুনছি । নিজেকে রিল্যাক্স করার চেষ্টা ।
পারলাম না । এক আন্টি আমাকে একটু রেগেই বলেছেন, এত মোটা ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন ? পিছনে যাও । এমনিতেই সারাদিনের সব কিছুতে আমার মাথা হ্যাং হয়ে আছে তারপর ওনার কথা আগুনে ঘি ঢালার মত ই কাজ করল । আমি খুব ঠান্ডা ভাবে বললাম, আন্টি আল্লাহ আমাকে দুইটা চোখ দিয়েছে পা দিয়েছে মাথা দিয়েছে এবং অল্প সল্প বুদ্ধিও দিয়েছে । আপনার কি মনে হয় আমি খুশিতে আর ঠেলায় এখানে দাঁড়িয়ে আছি । ভীড় না থাকলে আপনাকে বলতে হতো না । আরও আগেই পিছনে চলে যেতাম । বলে চুপ করে গেলাম । কারন ওনার মেয়ে ওনাকে চুপ করতে বলছে ।
পিছনের দিকে যেতে যেতে শুনলাম আমাকে বেয়াদপ জাতীয় একটা শব্দ বলল । থেমে পিছনে থেকে আবার আসলাম । আমি বললাম আন্টি রাস্তা ঘাটে আমি মেয়েদের যথেষ্ট সম্মান দেই । আপনার মেয়ের শরীরে আমার কোন স্পর্শ লাগেনি । আমি গ্যারেন্টি দিচ্ছি । ঠিক আছে । আপনি যে আমাকে বেয়াদপ বলেছেন কিসের উপর ভিত্তি করে আমি আপনাকে পালটা উত্তর দিয়েছি তাই । আমার উত্তরটা যদি অযৌক্তিক হয় তবে আমাকে বেয়াদপ বলেন সমস্যা নেই । তারপর পিছনে চলে গেলাম । বাসের সব মানুষ আমার দিকে কেন তাকিয়ে ছিল জানি না । জনগন আজীবন তাকিয়েই গেছে ।
ঘটনা - ৩
বাসের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম সামনের দিকে একটা সিট খালি হতেই গিয়ে বসে পরলাম । তখন আবার গান শুনা শুরু করেছি । জিগাতলা পার হতেই একটা বোরখা পরা আন্টির বয়সী উঠলেন । কি আর করা সিট ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলাম । ওই আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন কি না জানি না । তার দিকে চোখ পরতেই ওনি অন্য দিকে তাকালেন ।
আমি বাসের পিছনে গিয়ে আবার দাড়ালাম । তখন বাস পনেরো নাম্বার । লোকজন উঠছে বাসে । এক লোক গেটে দাঁড়িয়ে আছে । দেখ ভাবলাম কিছু বলি । কিন্তু ক্লান্ত শরীর সায় দিল না । বাস মনে হয় হালকা টান দিয়েছে । প্রায় দশ কদম এর মত গেটের লোকটা বাস থামানোর জন্য বলছে । ড্রাইভার বিরক্ত । বাসের সবাই বিরক্ত । কিন্তু কেউ কিছু বলল না দেখে নিজেই বললাম, ভাই আপনার বাসার ঠিকানা বলেন একে বারে বাসার গেটে নামায়া দিয়ে আসি । লোকটি কিছু বলেছে শুনি নাই । বাস টান দিয়ে চলে এসেছে ।
মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড নেমে সোজা বাসায় আসলাম । এখনও ফ্রেশ হয়নি । লিখতে বসে গিয়েছি । না হলে আর লেখা হবে না । এটুকু বলল আমরা কেউ আর মানুষ নেই । আমরা হয়ে গিয়েছি স্বার্থপর । অন্যের ব্যাপারে আমাদের কোন বিবেক কাজ করে না । কাজ করে আবেগ । হয়ত এটাও এক দিন বিলিন হয়ে যাবে ।
বিঃদ্রঃ এটা আমার নতুন সিরিজ । আশা রাখি এটা চালিয়ে নিতে পারব ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৩