সেদিন বস বলছিল মোটিভেশন এর কথা । তখন থেকে মাথায় ঘুরছে কথাটা । তবে মোটিভেশন এর কথা শুনলেই মাথায় আসে মোটিভেশনাল স্পিকারদের কথা । আমরা একটুতেই যখন হতাশ হয়ে পরি কত কত মোটিভেশন এর জন্য দৌড়াদৌড়ি করি । আমি নিজেও করি । যদি বলি এই লেখা লেখার জন্য আমি প্রায় এক সপ্তাহ সময় নিয়েছি বিশ্বাস হবে না । সত্যি বলতে আমি নিজেও ভাবছি নিজেকে নিয়ে । এখন কেন আগের মত কিবোর্ড এ আঙুল চলছে না । হতাশায় নিজেকে ডুবিয়ে ফেলেছি মনে হচ্ছে ।
তবে নিজের চিন্তা ভাবনা গুলোকে মেলে ধরতে এখন কষ্ট হয় । মনে হয় কি লিখছি বা ভাবছি । মনে হচ্ছে অন্য জগতের বাসিন্দা । মানুষ যেমন সমুদ্রে বা নদী পরে গেলে সাতার কাটে । খড়কুটো যা পায় তাই ধরে বাচতে চায় অনেকটা তেমন অবস্থা । অথচ চোখ বন্ধ করে একটু ভাবতেই মনে পরে গেলো আমার কাছে এত বড় মোটিভেশন আছে আর আমি কিনা সেদিকে খেয়াল করিনি ।
যদি বলি সবার কাছেই আছে এই মোটিভেশন তা হলে বিশ্বাস করবেন না জানি । আচ্ছা তাহলে যারা মোটিভেশন দিয়ে থাকেন তাদের নিয়ে বলি ।
আমাদের দেশে যারা এক একটা সেশন নিয়ে মোটিভেশন নিয়ে নিজেকে সফলতার চুড়ায় নিয়ে যাচ্ছেন দিন শেষে এক বার ভাবুন তো আপনি নিজে কতটা মোটিভেটেড হয়েছেন । যদি মোটিভেটেড হয়ে থাকেন তবে আমার কথা নেই । তবে না হলে ফি দিয়ে সেশন করার মানে হয় না ।
তবে আমাদের মোটিভেটররা আবার এসি রুমে বসে তাদের মোটিভেশন দিয়ে থাকেন । তারা এক একটা সেশন এর জন্য মোটা একটা তোড়া নিয়ে যান । তাহলে এটা তো বিনিময় হলো । টাকা আপনার, সময় আপনার এবং কথা শুনোর জন্য আপনি ই যান । তাহলে এই মোটিভেশন এর কি দরকার ।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মোটিভেটর হচ্ছে আপনার বাবা মা । বিষয়টি আপনি আমি কতটা ভেবেছি । কখনও কি ভেবে দেখেছেন আপনার জন্য তারা তাদের স্বপ্ন গুলো বির্সজন দিচ্ছেন । তারা কিন্তু মোটিভেশন পায় আপনাকে দেখে । তারা কি কোন মোটিভেশন সেশন নিয়েছে । না । তারা শুধু আপনাকে দেখেছে । আপনার মুখের হাসি দেখেছে ।
আমি সেদিন বাবার জুতার জোড়া পায়ে দিয়ে ছিলাম । সত্যি বলতে কেমন জানি একটা অনুভূতি হয়েছিল । মনে হয়েছিল আমি এত হতাশ কেন হই । আমার বাবা মা তো কোন দিন আমাকে নিয়ে হতাশ হননি । তারা সব সময় ই আমার পাশে ছিলেন । আমাকে সাহস দিয়েছেন । এগিয়ে যেতে বলেছেন সামনে ।
আমার মা পুরোপুরি গৃহিনী । তাকে আমি খুব বেশি ঘুরে বেড়াতে দেখিনি । তিনি সব সময় আমাদের পরিবারটাকে আগলে রেখেছেন । কোথাও বেড়াতে যেতেন না । আবার গেলেও এক দুই দিনের বেশি থাকতেন না । তার মানে কি তার কোন ইচ্ছে নেই । অথচ কত সহজে তিনি সব কিছু নিজের মধ্যে পুষে রেখেছন ।
আপনি মোটিভেশন চান, তবে আপনার বাবার জুতার জোড়া দেখুন । তার ঘামে ভেজা শার্টটা দেখুন । তার চোখের চশমাটা দেখুন । আপনার হতাশা এক নিমিষে দূর হবে ।
আত্মহত্যা করতে চাচ্ছেন, জীবন একে বারে ভাল লাগছে না । আপনার মায়ের মুখের দিকে একবার তাকান । তিনি শত কষ্টের মাঝেও আপনার জন্য চিন্তা করছে । সারাদিন বাসায় কখন আসবেন সেটা ভাবছে । কোথায় আছেন কিভাবে আছেন সেটা নিয়ে ভাবছে । কি খেয়েছেন না খেয়েছেন সেটার চিন্তা করছে । আর আপনি ভাবছেন আপনার কিছুই নেই । মায়ের মুখটা একবার দেখুন আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে হবে না ।
আমি নিজে যখন প্রচুড় দ্বিধাদ্বন্দে থাকি বা নিজেকে নিয়ে চিন্তা করি তখন আমারও ভাল লাগে না । শুধু ভাবি কি হচ্ছে আর কি হবে । এই সময়টা সত্যি কষ্টকর । তবে এটাও পার করা যায় । নিজেকে একটু একা করে নিন । ভেবে দেখুন কি হচ্ছে কেন হচ্ছে । আর কি কারনে হচ্ছে । উত্তর বের করুন । নিজেকে জানুন । সাজান নতুন ভাবে । বই পড়ুন । গান শুনুন ।
আজ বিশ্ব মা দিবস । তবে আমার কাছে প্রতিটা দিন ই মা দিবস কারন আমার মায়ের সাথে প্রতিদিন দিনটা অন্যরকম । আমার মোটিভেশন এই আমার বাবা মা । তাদের কারনেই বেচে থাকার ইচ্ছেটা প্রবল হয় । মনে হয় আর একটা দিন হয় বেশি বেচে থাকলে ভাল হয় । ভেবে দেখুন তো এই মানুষ দুটি আপনার জন্য বেচে আছে । আপনার দিকে তাকিয়ে বেচে আছে । এর চেয়ে বড় মোটিভেশন কি হতে পারে ।
আর হ্যা । প্রতিটি দিন আশার এক নতুন আলো নিয়ে উদিত হয় । তাই হতাশ না হয় লড়াই করে বাচুন ।
ভাল থাকুন । সুস্থ থাকুন । গাছ লাগান । আপনার চারপাশ পরিস্কার রাখুন ।
সবাইকে বিশ্ব মা দিবসের শুভেচ্ছা ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৯ রাত ৯:১৮