ব্যস্ততা মনে হচ্ছে আমাকে ঘিরে ধরেছে । এত চেষ্টা করছি বই পড়ার হচ্ছেই না । সবচেয়ে চেষ্টা করছি কিছুটা সময় বের করে পড়তে । কিন্তু কেন যেন হচ্ছে না । যান্ত্রিক জীবন যেন শুধু সব কিছু থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে । তারপরও কিছু তো পড়তেই হবে । তাই হাতের কাছে ছিল “তোপসের নোটবুক” । সেটাই পুজি করলাম ।
বইটি বেশি বড় নয় তারপর ও দুই দিন লাগল পড়তে । যদি ধরি তবে এক ঘন্টায় পড়ে শেষ করা যাবে । তবে এটা ঠিক ভাবানার জগতে হারিয়ে যেতে পারেন তবে এটা আপনাকে নিয়ে যাবে উপেন্দ্রকিশোর রায়, বিভূতিভুষন, মানিক, শার্লকহোমস, এমনকি বোমকেশ বক্সী পর্যন্ত বিস্তৃত্ব । সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে বইটিতে সবার পরিচয় খুব সুন্দর ভাবে বর্ননা করা হয়েছে ।
বলা যায় বইটি একটি ইতিহাস । ঠিক যেন ফেলুদা, তোপসে এবং লালমোহন বাবু যাকে আমরা চিনি জটায়ু নামে সবার পরিচয়ের ইতিহাস এখানেই বর্ননা করা হয়েছে । উঠে এসেছে বংশ এবং সেই ইতিহাস ।
বইটির দুই তৃতীয়াংশ জুড়েই আছে ফেলুদা, তোপসে এবং লালমোহনবাবুর বংশ পরিচয় এবং তার ইতিহাস চর্চা যেখানে লেখকের লেখনী স্বাধীনতার গুনে টা আর দশটা জীবনীভিত্তিক কল্প গল্পের থেকে হয়ে উঠেছে অনেকটাই আলাদা | এইখানে দাঁড়িয়ে পাঠকের হয়তো মনে হতেই পারে এই বইটি গতানুগতিক ফ্যান-ফিক্শন এর আওতা থেকে বেরিয়ে আস্তে পারেনি | ঠিক তখন লেখাটা গিয়ার্ চেঞ্জ করে গল্পের মোর ঘুরিয়ে দেয় একেবারে অন্যদিকে|
আমাদের ছোটবেলার গোয়েন্দা হিরো কারা যদি জিজ্ঞেস করা হয় তবে সেটা শার্লক হোমস, এয়ারকুল পেয়ারো, ফেলুদা আর বোমকেশ বক্সী এদের নাম উঠে এলেও । আমাদের মাঝে সবচেয়ে বেশি প্রভাব হয়ত ফেলুদাই ফেলেছেন । এটা বলার অপেক্ষা রাখে না ডিসি আর মার্ভেল কমিকস সুপার হিরোদের মাঝে ফেলুদা উজ্জল হয়ে উঠেছেন নিজের উজ্জলতায়
বইয়ের প্রতিটি পাতায় পাতায় ইতিহাস । প্রতিটি পাতায় মোড় নিয়েছে । মজার ব্যাপার হচ্ছে এখানে কিছু কেসের কথা বলা হয়েছে যার সম্পূর্ন কাহিনী হয়ত জানা সম্ভব নয় । কখন উপরে উঠেছে । আবার কখনও নিচে নেমেছে । এক কেসের সাথে অন্য কেস কিভাবে জড়িয়ে পরেছে সেটাও এক অন্যবদ্ধ ঘটনা ।
তবে হ্যা, আমাদের ফেলুদা যিনি হারতে পারেন না । যিনি প্রতি লক্ষ্যে ছুটে যান আপন গতিতে । যিনি অপরাধীকে নিয়ে যান তার শেষ পরিনতিতে তিনি আজ হেরে গিয়েছেন । এটা সত্যি আমাকে কষ্ট দিয়েছে আবার মুগ্ধ করেছে লেখকের দক্ষতায় । এভাবে বইটি শেষ হবে ভাবিনি । যদিও আমি এখন কোন প্রকার আশা নিয়ে বই পড়া শুরু করি না । তবে ফেলুদার হার সেটাও তো মেনে নেয়া যায় না । সেই ১৯৬৫ সাল থেকে ক্রমাগত জিতেই আসছে সে | এবং এই ৫০ বছরের জিতের শেষে যে ভয়ঙ্কর সত্যের সম্মুখীন হয়ে সে পরাজয় স্বীকার করে, সেই সত্যি যেন আমাদের সত্যি |
তবে কিভাবে কোথায় গিয়ে থেমেছেন সেটা জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে “তোপসের নোটবুক” । লেখক কৌশিক মজুমদার কে ধন্যবাদ ফেলুদাকে ফিরিয়ে আনার জন্য । তবে একটা কথা বলতেই হচ্ছে “You will never meet your heroes” ।
ধন্যবাদ কৌশিক মজুমদার ফেলুদাকে আর একবার আমাদের সামনে নিয়ে আসার জন্য ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:১১