আসছে ব্লগ ডে ....
এবার সবার মনের ভেতর একটা আলাদা খুশি দেখতে পাচ্ছি । এর কারন হয়ত সামুর বন্দি জীবন থেকে মুক্তি । সত্যি বলতে আমি নিজেও অনেক খুশি । সামুর মুক্তি একটা বাড়তি আনন্দ যোগ করেছে এই ব্লগ ডে তে । সত্যি বলতে বন্দি জীবনে অতিষ্ট হবার পর মুক্ত আকাশে যখন পাখি ডানা মেলে তখন তার যেমন আনন্দ হয় । আমার ঠিক তেমন মনে হচ্ছিল ।
আমি আমার স্মৃতি যখন হাতরে বেড়াই তখন সেই সময়ের কথা মনে পরে । বাংলা ব্লগের একটা দারুন সময় যাচ্ছিল । সালটা তখন ২০১১ । আমি সদ্য এইচএসসি পাশ করে নেটে ঘুরে বেড়াই । তখনও ফেসবুক এতটা জনপ্রিয় ছিল না । আমার কাছে সময় কাটানোর একটা মাধ্যম ছিল তখন ফেসবুক । তবে আমি আরও ভাল কিছু খুজছিলাম । তখন মনে পরে গুগল ঘাটতে গিয়ে সামুর নামটা জেনে ছিলাম । তবে সামুর সাথের পরিচয়টা ২০১০ থেকে নিজের অজান্তেই হয়েছিল, তবে মনের ভেতর থেকে তখন তেমন ভাবনা আসেনি যেটা ২০১১ সালে এসেছিল । পাশ করার পর ভর্তি হবো কোথায় সেই নিয়ে ভাবতে ভাবতে । বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি নিয়ে একটা লেখা গুগলে আসল । লেখাটা এখন মনে নেই । তবে এটা মনে আছে মেধাবীরা হারে না, এমন কোন একটা লেখা ছিল । প্রথমে ভেবে ছিলাম এটা একটা পত্রিকা সেভাবেই পড়েছি ।
ওমা পরে দেখি ফেসবুকের মত মন্তব্য করা যায় । এবার তো মন্তব্য করতে হবে । কিন্তু তার আগে খুলতে হবে একাউন্ট । এই শালা, ক্যাচাল । যেই বিষয়ে জানিই না । ব্যাংকে একাউন্ট আছে, ফেসবুকেও আছে । এখানেও একটা একাউন্ট থাকতে হবে । না হলে জাতে ওঠা হবে না । কিভাবে একাউন্ট খুলব সেটা দেখলাম ইমেইলে দিয়ে খুলতে হবে । তবে মোবাইলে হবে না । কারন তখন আমি নোকিয়া এন৭২ মডেল ব্যবহার করতাম । ধুরর, এটা কোন মোবাইল হলো । তবে আমার প্রথম মোবাইল ছিল । এক বন্ধু মেরে দিয়েছে । সে যাইহোক কিন্তু জাতে উঠতে হলে সামুতে একাউন্ট থাকতে হবে । এক সাইবার ক্যাফেতে ঢুকে একাউন্ট করে নিলাম । এবার যাতে উঠে গেলাম । আহা দুর্ভাগ্য আমার, জাত বেশি দিন থাকল না । আইডি পাস ভুলে গেলাম । শর্ট টার্ম মেমরী লস হলো গজনীর আমির খানের মত । ধুরর, সারাজীবন এভাবে ই যাবে ।
মনের মধ্যে গান বাজছে, "মামু এভাবেই কাটবে কি তবে? ওদের হয়েছে কবে আমার হবে ।"
এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়ে গেলাম । একটু দৌড়াদৌড়ি ছিল । যদিও উসাইন বোল্ট হতে পারিনি । ছোটবেলা থেকেই তো বইয়ের উপর মুখ গুজে দেয়া হয়েছে । না হলে বোল্ট আমার ধারে কাছে আসতে পারত না । তবে সামু আমার মনের কোন এক গভীরে ছিল । বার বার হয়ত তাই আমাকে টোকা দিয়ে গিয়েছে ।
এক দিনের ঘটনা মনে পরলে হাসি পায় । সামু বাধ ভাঙ্গার আওয়াজ । আমি পড়লার দাত ভাঙ্গার আওয়াজ । নিজেই হাসতে হাসতে শেষ । তবে দাত ভাঙ্গার আওয়াজ না হলেও ঠিকই দাত ভাঙ্গা জবাব দিতে পারত । এখনও দিয়ে যাচ্ছে যেটা ব্লগের মুক্তি দেখলেই বোঝা যায় । তবে একটা জিনিস খারাপ লাগে যে নতুন ব্লগার খুব কম আসছে ।
যাইহোক প্রসঙ্গে ফিরে যাই,
২০১৩ সালটা অনেক উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে । তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবে বসে সামুতে আসতাম । এটাও মজার ছিল । আমি একদম একটা কোনার টেবিলে বসতাম । সেখানে হঠাৎ করে কম্পিউটার দেখা যেতো না । বাসায় নেট নেই । তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব ই ভরসা । ব্লগ কি কাউকে বোঝাতে পারব না । তাছাড়া ব্লগারদের কেউ ভাল চোখে দেখতো না । কিন্তু আমার চোখে দেখা তারা ছিলেন পৃথিবীর অন্যতম জ্ঞানী মানুষ । কি ছিল না । রাজনীতি থেকে পাড়ার গলির খবর । পৃথিবী থেকে মঙ্গলের খবর । আকাশ থেকে মাটির নিচের খবর । সব ছিল । এ থেকে কি কেউ দূরে থাকতে পারে ।
তখন আমার কোন একাউন্ট ছিল না । চারিদিক অনেক গরম সরম । আব্বুও কিছুটা ভয় পেতো । তাই আমাকে লেখালিখি থেকে দূরে থাকতে বলত । কিন্তু চাইলেই কি সরে থাকা যায় । তখন ছোট একটা টাচ স্ক্রিন সেট ছিল সেটা দিয়ে ফেসবুকে লেখালিখি করতাম । কিন্তু সামুতে সেটা দিয়ে ঢোকা যেতো না ।
তখন আমি অনেক ব্লগারের লেখা পড়েছি । কিন্তু নাম গুলো মনে নেই । সত্যি বলছি । কারন আমি পড়ার ভক্ত ছিল । কে লিখল সেটা দেখার বিষয় নয় । আমাকে জানতে হবে এটাই মুখ্য ছিল । তাই পড়ার মধ্যে মনোনিবেশ করলাম । সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব ভরসা । তাই আমার ব্লগিং চলল সেখানেই । আমি এমন হয়েছে সারাদিন পার হয়ে গিয়েছে সাম্নুতে । ক্লাস মিস দিয়েছি । তারপরও মনে হতো আরও কিছুক্ষন থাকতে পারলে ভাল হতো ।
এরপর এলো সেই বিভিষীকাময় দিন । আমি আবার নতুন ভাবে একাউন্ট খুলে যাত্রা শুরু করলাম । একাউন্ট তো হলো এবার তার দেখভাল কে করবে । কিই জমা রাখব । আমি কি লিখতে পারব । এত এত জ্ঞানী মানূষের মাঝে আমি কে । তারপর তো পড়া চালিয়ে গেলাম । অল্প স্বপ্ল কমেন্ট করতাম । এভাবেই চলছিল ।
এর মাঝেই পেয়ে গেলাম চাঁদগাজী স্যার কে ইনি আমাকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছেন । তার লেখা এবং চিন্তা ধারার কথা বলে বোঝানো যাবে না । যখন জানতে পারি তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা তখন শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেলো । তখন নিজেকে অনেক গর্বিত মনে হতো ।
একজনের কথা না বললেই নয় রাজীব নুর । ভাইয়ের ছবি লেখার ভক্ত হয়ত সামুর সবাই । আমি তার লেখা না পড়ে কখন ই সামু থেকে বের হই না । সামুতে আসলে তার লেখা পড়ব ই । ওনার সম্ভবত একশ সিনেমা দেখা উচিত এমন একটা ব্লগ পড়েছিলাম সর্ব প্রথম । এরপর আর মিস হয়নি ।
প্রিয় ব্লগারদের মধ্যে রয়েছেন, সায়মা আপু, লিলিয়ান আপু , আমাদের কা_ভা ভাই, অগ্নি সারথি ভাই, প্রামানিক ভাই, রূপক বিধৌত সাধু, নীল আকাশ, পদাতিক চৌধুরী, ঢাকাবাসী, হামা ভাই, সাদা মনের মানুষ, গিয়াস উদ্দিন লিটন, মনিরা সুলতানা আপু, বিদ্রোহী ভৃগু, সেলিম আনোয়ার, আহমেদ জীএস, সোনাবীজ; অথবা ধুলাবালি ছাই, জাহিদ অনিক।
এনার ছাড়াও আরও অনের লেখাই পড়ি ভাল লাগে । আগে লেখার চেষ্টা করতাম এখন আর করি না । এত ভাল ভাল লেখার মাঝে নিজেরটা মনে হয় কি লিখলাম । এই সব মানুষের পড়ার মত কিছু নাকি ।
ব্লগ ডে নিয়ে কিছু বলি,
ব্লগে আসার পর দেখতাম অনেকেই ছোট ছোট আকারে আড্ডা দিতেন । প্রচন্ড মন খারাপ হতো । আমি নেই । এত ভাল ভাল দারুন দব মানুষের সান্নিধ্য পেতে কার না ভাল লাগে । তাই কমেন্ট বক্স গিয়ে জিজ্ঞেস করতাম কিভাবে সামিল হওয়া যায় । ছোট ছিলাম তো, কি বলি আমি তো এখনও সুইট সিক্সটিন । মানে অনেক ছোট । ছোটদের গুরুত্ব নেই ।
এরপর শুভ দিন চলেই এলো । দেখা হলো অসাধারন কিছু মানূষের সাথে । দিনটার কথা ভাবলে মনে হয় আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ একটা দিন । আমি সারা জীবন এই দিনটা জন্য হলেও বেচে থাকতে চাই । কত দারুন দারুন মানূষের সাথে দেখা হয় । কথা হয় । তাদের কথা জানতে পারি । তাদের মুখের কথা শুনলে নিজের কাছে ধন্য মনে হয় ।
ব্লগাররা এক একটা রত্ন ।
এই রত্ন গুলো বেচে থাকুক হাজার বছর ।
ব্লগ দিবসে অগ্রীম শুভেচ্ছা ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৫৮