ছোটবেলায় আমার দাদু বাড়ি যাওয়া আম্মু তেমন পছন্দ করতেন না।কারন পাশের বাড়িতে আমাদের এক পাড়াত দাদু থাকতেন যিনি ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমানো পর্যন্ত অনবরত অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতেন। ছোট ছিলাম বুঝতাম না, সব গালি শিখতাম। এর পরের কয়মাস কারণে অকারণে অর্থ না বুঝেই সবাইকে গালি দিতাম যতদিন আমার শিশু মন সেই গালি না ভুলতো। কোনো শাষন, কোনো বকাতেই কাজ হতনা। খুব ছোট ছিলাম তাই বেশি শাষনও করতে পারতেন না আম্মু।
একদিন বারান্দায় দাড়িয়ে আম্মু আমাকে কিছু কথা বল্লেন।
কথাগুলো এমন- বাবা পশুপাখি আর মানুষের মাঝে তফাৎ কি জানো? পশুপাখিরও আমাদের মত হাত, পা, চোখ, কান, নাক সবি আছে। তফাৎটা হলো মানুষের বোঝার ক্ষমতা আছে কোনটা ভালো কোনটা খারাপ, পশু পাখির তা নেই। এই কারনেই মৃত্যুর পর পশুপাখির কোনো শাস্তি হবেনা, মানুষের হবে। কারন ভালো মন্দ বিচার করার ক্ষমতা আমাদের দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা যদি খারাপ কিছু করি তাহলে আমাদের পাপ হবে। আমরা যদি চোখে খারাপ কিছু দেখি আমাদের চোখের শাস্তি হবে, হাতে খারাপ কিছু করলে হাতের শাস্তি হবে, তেমনি মুখে খারাপ কিছু বললে মুখের শাস্তি হবে। তুমি যদি মুখে খারাপ কিছু বলো তাহলে যাকে বলেছো তার কিন্তু কিছু হবেনা। তোমার পাপ হবে। আল্লাহ্ তোমাকে শাস্তি দিবেন খারাপ কিছু বলার জন্য। যার যার কাজের জন্য তার তার শাস্তি হবে।
সেদিনের পরে আজ পর্যন্ত আমি কোনো গালি দেইনি কাউকে। কোনো খারাপ কথাও বলিনি। কারো উপর রাগ হলে হয় চুপচাপ তার থেকে দুরে সরে যাই না হয় ভদ্র ভাষায় তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি তার ভুল কোন জায়গায়। বুঝলে ভালো, না বুঝলে তার মত সে চলবে আমি আমার মত। অন্য কারো জন্য আমি কেনো পাপী হবো? আমি কেনো ছোট হবো?
নিচের ছবির মত এমন আরো হাজার হাজার কমেন্ট অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এগুলো দেখি আর অবাক হয়ে ভাবি আমি দুইটা গালি দেওয়া নিয়ে এত ভয়ে থাকি, এত সতর্ক থাকি। আর এরা গর্বের সাথে এসব কি করছে আর উন্মদের মত এসব কি বলছে?
আরো আছে -
*মেয়েরা সারি পরে সেজেগুজে বাইরে যায় কেন?
*মেয়েরা আজকাল অতিরিক্ত মেকাপ লাগায় কেন?
*মেয়েরা প্যান্ট পরে কেন?
*মেয়েরা মেলায় যায় কেন???
-- গেলে এমন হবেই। এটাই হওয়া উচিৎ।
সমাধাণ ও আছে -
*মেয়েরা হিজাব, বোরকা পরে মেকাপ ছাড়া বাইরে গেলেই হয়, মেলায় না গেলেই হয়।
আপনি যেন মানুষ হয়ে চলেন তার জন্য যদি আরেকজনকে বদলাতে হয় তাহলে আপনি আর কি মানুষ হলেন? আরেকজন কে ছোট করে যদি আপনাকে বড় হতে হয় তাহলে আপনি কিভাবে বড় হলেন? শুধুমাত্র আরেকজন কে ভুল প্রমান করেই যদি আপনার নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে হয় তাহলে আপনি ঠিক কিভাবে হলেন?
If you need to belittle someone else to magnify your-own-pathetic-self then this is HIGH TIME you thought about where you stand as a HUMAN BEING or if you are a human being at all !!!
কাউকে ছোট করে নিজে কখনো বড় হওয়া যায় না, শুধু প্রমাণ করা যায় আপনি নিজে কত ছোট।
কে কোন কাপড় পরবে, কিভাবে চুল বাঁধবে, কোন মেকাপ লাগাবে তা নিয়ে আপনার/আমার তো কিছু বলার থাকতে পারেনা। আজকাল ছেলেরাও নিজেকে সুন্দর করে মানুষের সামনে উপস্থাপন করার জন্য অনেক কিছু করে। ছোট ছোট প্যান্ট পরে হাটু পর্যন্ত পা বের করে রাখে (গরমের দোহাই দিয়ে), সুন্দর করে চুলে জেল লাগিয়ে স্পাইক করে, বুকের চুল ওয়াক্স করে সার্টের বাটন খুলে বুক ফুলিয়ে বাইরে ঘুরে বেড়ায়। কই কোনো মেয়েতো ছেলেদের প্যান্ট খুলে ফেলে না পা বের করা বলে, সার্ট খুলে ফেলেনা গলা পর্যন্ত সবকটা বাটন লাগানো না বলে, চুল নিয়ে সমালোচনা করেনা চুলে জেল লাগানো বলে । আজেবাজে নাম ধরে ডাকেনা বা বাজে ইশারা করেনা কারন আপনি হ্যান্ডসাম হিরো সেজে বাইরে গেছেন।
আপনাকেতো রাস্তাঘাটে, বাজার হাটে, চিপাগলিতে অথবা কোনো বাসায় harass করে অথবা gang rape করে হাস্যকর যুক্তিও দাঁড় করানো হয়না যে আপনি কেনো ঢিলা পাঞ্জাবি পাজামা, মাথায় টুপি পরে বের হলেন না বাইরে। চোখ বন্ধ করে একটু চিন্তা করে দেখেন আপনাকে রাস্তায় হাজার মানুষের ভিড়ে কেউ এভাবে harass করছে। খুব মজা লাগছে না?
আরেকজন কি করল বা কি পরল তাতে যদি আপনার ব্যবহার, আপনার চরিত্র, আপনার নীতিবোধ বদলায় তাহলে প্রশ্ন আসে আপনার কি আসলেই কোনো চরিত্র ছিলো নাকি কোনো নীতিবোধ ছিলো?
আপনি হয়ত মনে করছেন "খুলছি একটা মেয়ের কাপড় দশজনের সামনে, আমিতো মহান হয়ে গেছি, ধর্ম পালন করছি, এলাকার নতুন হিরো আমি, দেখায়া দিছি ওই মেয়েরে ও কত ছোট আর আমি কত্তত্তত্তত্ত বড়, করছি ক্ষতি ওই মেয়ের" কিন্তু এই সহজ বিষয় টা বুঝতে পারছেন না যে ওই মেয়ের ক্ষতির চেয়ে হাজার গুন বেশি ক্ষতি আপনি নিজের করেছেন। আপনার নিজের চারিত্রিক অবনতি হয়েছে, আপনার নিজের মানবতা হারিয়ে গেছে, আপনার নিজের নৈতিক আবনতি হয়েছে, আপনি নিজেই নিজেকে পশুতে পরিনত করেছেন। এমন এক পশু যাকে কোনো মা ছেলে বলে পরিচয় দিতে লজ্জা পাবেন, যাকে কোনো বোন ভাই ডাকতে দ্বিধাবোধ করবে, যাকে কোনো মেয়ে স্বামীর সম্মান দিতে ঘৃণা করবে, যাকে তার নিজের মেয়ে বাবা বলে ডাকতে মনে প্রানে অস্বীকার করবে।
আপনার ভয়ে যদি কেউ মনের মত কাপড় পরতে না পারে, আপনার ভয়ে যদি কেউ মনের মত করে সাজতে না পারে, আপনার ভয়ে যদি কেউ বাড়ির বাইরে যেতে না পারে, আপনার ভয়ে যদি কেউ কোনো উৎসবে বেড়াতে যেতে না পারে তাহলে what does it make you? Your actions define yourself not the girl you undress forcefully.
আপনার জন্য আরেকজনকে বদলাতে হলে আপনি যেই জানোওয়ার সেই জানোওয়ারই থেকে যাবেন। বদলাতে হবে আপনাকে।
অনেক পন্ডিত ইসলামের দোহাই দেয়। মেয়েরা ধর্ম মানলে, পর্দা করলেই আর এগুলা হবেনা। ইসলামে কি সবকিছু মেয়েদের কেই করতে বলা হয়েছে? ইসলাম কি জানেন? পরে দেখেন ইসলামে ছেলেদের কি বলা হয়েছে। ইসলামে পর্দা শুধু মেয়েদের জন্য না ছেলেদেরকেও পর্দা করার কঠিন নির্দেশ দেওয়া আছে। ইসলামে যেমন কোনো বেগানা পুরুষকে বাজে নজরে দেখলে বা তার সাথে ঘনিষ্ঠ হলে মেয়েদের পাপ হয় । ঠিক তেমনি একটা ছেলের কোনো বেগানা মেয়ের দিকে একবার ভুল করে চোখ চলে গেলে আল্লাহ্ মাফ করবেন কিন্তু দ্বিতীয় বার চোখ গেলে পাপ হবে। আর কোনো মাফ নাই। তাকে বাজে নামে ডাকা, তার গায়ে হাত দেওয়া, জোর করে তার কাপড় খোলা, ধর্ষন করাতো কোনো দুস্বপ্নেও justified না ইসলামে। আর আপনারা বলেন ঠিকি আছে মেয়ে ধর্ম মানলো না কেনো। আপনি কোন ধর্ম মানলেন? ধর্মের এত ভয় থাকলে আপনি এসব করাতো দুর এগুলা সাপোর্ট করার কথা ভাবার আগেই আল্লাহ্র ভয়ে শরীর কাপতো আপনার। ধর্ম শুধু মেয়েদের জন্য আসে নাই। ধর্ম ছেলেদের জন্যও।
যে যার যার ধর্ম পালন করবে। অন্য কারো দোহাই দিয়ে আপনি ধর্ম অমান্য করলে আল্লাহ্ আপনাকে খুসি হয়ে জান্নাত থেকে প্রমোশান দিয়ে জান্নাতুল ফেরদাউসে পাঠিয়ে দিবেন না। (Judgement Day) বিচার দিবসে আল্লাহ্ আপনাকে মোটেও জিজ্ঞেস করবেন না যে হে মহান ব্যক্তি তোমার আশেপাশে কে কি খারাপ করেছে? আল্লাহ্ জিজ্ঞেস করবেন হে পাপী বান্দা তুমি অন্যের ধর্ম অবমাননার দোহাই দিয়ে নিজে কি কি পাপ করেছো? আপনার পাপের শাস্তি অন্য কেউ পাবেনা, আপনি নিজে পাবেন।
যেভাবে আপনারা চলছেন, যেভাবে চিন্তা করছেন একদিন দেখবেন ঘরে accidentally আপনার মা অথবা বোনের মাথা থেকে কাপড়টা একটু নিচে কাধের উপর পরেছে আর অমনি আপনি ঝাপিয়ে পরেছেন আপনার নিজের মা বোনের উপর। কারন এভাবে চলতে থাকলে আপনার চরিত্র, নৈতিকতা, মানবতা কিছুই বাকি থাকবে না। এমন প্রমান ও আছে চোখের সামনে। খবরের কাগজে চোখ রাখলেই দেখবেন বাবা মেয়ে কে ধর্ষন করছে, চাচা মামারাও করে। আপনিও ওই একি পথের পথিক।
যে মানুষ নিজেকে সম্মান করে সে অন্যকে অসম্মান করেনা।যার আত্বসম্মানবোধ নাই সে যেখানে সেখানে মানুষকে অসন্মান করে বেড়ায় কারন সম্মান কি জিনিশ তার তো জানা নাই।
RESPECT YOURSELF AND RESPECT OTHERS.
আগে নিজেকে সম্মান করতে শিখুন দেখবেন আপনার পাশের মানুষকে সম্মান দিতে আর একটুও কষ্ট হবেনা।
নিজের কুকর্ম অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে পার পাওয়া গেলেতো দুই-চারটা খুন আমি নিজেই করে ফেলতাম।
আপনারা যারা এসব নোংরা কাজ করেন এবং যারা এসব সাপোর্ট করেন তারা নিজেরাও খুব ভালো করেই জানেন যে আপনারা নোংরামি করছেন। তাই নিজের পক্ষে কোনো যুক্তি আপনারা দেখাতে পারেন না, অন্যকে টেনে আনতে হয়, অন্যকে দোষ দিতে হয়, অন্যকে গালি দিতে হয়। যেদিন নিজের কুকর্মের দায়ভার নিজের ঘারে নেওয়ার সাহস হবে সেদিন এই জঘন্য নোংরামি আপনি নিজেই করতে পারবেন না।
গলাবাজি করে অন্যের উপর দোষ চাপালেই নিজে নির্দোষ হওয়া যায়না। শুধু মানুষের মত হাত পা থাকলেই মানুষ হওয়া যায় না। কাজে, চিন্তায়, ব্যবহারেও মানুষ হতে হয়।
Boys and men have some moral values in life, some standards. Having strong values and standards never hurt anyone. By harassing and insulting other people you are only degrading yourself and disgracing your own family. Be a son your mother would be proud of, be a brother your sister would respect, be a husband a girl would love to love and feel safe with, and most of all, be a father your children would call their HERO.
***Bangladesh is a FREE country. In a free country one can do anything he/she may like as long as his/her actions do NOT harm anyone else.
এত বোঝানোর পরেও যদি না বোঝেন তাহলে বুঝতে হবে আপনার ব্রেইন এ্ক্সপায়ার হয়ে গেছে। আপনার কাছে ভালো কিছু আশা না করাই উওম!