বিশেষ দ্রষ্টব্য বিষয়টি কোন কিছু লিখে তারপর সংযুক্ত করাই প্রচলিত,
প্রচলিত গন্ডি থেকে বের হচ্ছি, লিখনীতে ব্যবহৃত চরিত্র অথবা চরিত্রগুলো একান্তই মনের ইচ্ছে মতো করেই দিচ্ছি।
কারো জীবিনের সাথে যদি কখনো মিলে যায়, সেজন্যে আমিই দায়ী থাকবো। অনেক শিল্পী, অনেক কবি, অনেক সাহিত্যিক, অনেক এনত্যান তাদের গান,কবিতা,উপন্যাস, এবং এনত্যানে বেশির ভাগ সময় শুনেছি, দেখেছি,এনত্যান করেছি যে একটা বিশেষ চরিত্রের ব্যবহার খুব বেশি করেছেন। আমি কিছুই না, তবুও আমার ছোট খাটো লিখাতে "মাধবী" চরিত্রটি ব্যবহার করি। আজকের মিনি কাহিনী কিংবা গল্পটি মাধবীকে নিয়েই।
সম্মোহন বিদ্যায় মনকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়, যারা এই বিষয় নিয়ে নাড়াচড়া করেছেন তারা ভালোই বোঝবেন। তবু এটি হয়তো সম্মোহনের অন্য রূপ। আত্মিক ভালোবাসা কিংবা প্রকৃত ভালোবাসায় নর নারী পরস্পরের দ্বারা প্রাকৃতিক ভাবেই সম্মোহিত হয়। আগেই বলেছি মনের দুটি ভাগ; বহিঃমন এবং অন্তঃমন। বহিঃমন নিয়ন তন্ত্র, সব মানলেও- অন্তঃমন কিছুই বোঝেনা। অন্তঃমনে প্রবেশ করা কঠিন- তবু প্রকৃত ভালোবাসাতে পরস্পর পরস্পরের দ্বারা সম্মোহিত হয়- পরস্পর চলে যায় পরস্পরের অন্তঃমনে।তখন সেখান থেকে বের করা যায় না কাউকে। তবে নিয়মতান্ত্রিক কোন বাঁধা, পারিবারিক, সামাজিক রীতিনীতির কোন প্রভাব যা বহিঃআত্মা নিয়ন্ত্রণ করে- সেই ভালোবাসায় এ ধরনের কোন ঝামেলার সম্মক্ষীন হলে- অন্তঃমন, বহিঃমনে কথা কাটাকাটি হয়- কখনো অন্তঃমনের প্রভাবে প্রেমিক প্রেমিকা তাদের স্বপ্নের পথে চলে, কখনো কেউ বহিঃমনের প্রভাবে অন্তঃআত্মাকে কষ্ট দিয়ে সব মেনে নেয়, কখনো কেউবা বরণ করে নেয় স্বেচ্ছামৃত্যু। গল্পের অংশটুক সহজ করতেই মনের বোধ আর বিরোধের ব্যাখ্যা।
প্রথম দিকেই বলেছিলাম গল্পটি মাধবীকে নিয়ে!
ভাটি অঞ্চলের স্কুল মাষ্টারের বউ মাধবী, বিয়ের সময় থেকেই মাধবী কেমন আনমনে থাকে,মাঝরাতে কি যেনো দেখে আঁতকে ওঠে- মাঝরাতে কখনো উঠোনে, কখনো বারান্দাতে, আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা দেখে আনমনে। মাধবী অনেকগুলো তারার মাঝ থেকে একটি তারাকে প্রায়ই দেখে তার দিকে কেমন করে তাকিয়ে থাকে, মাধবী দেখে সেই তারাটি তাকে কাছে ডাকছে, আনমনে মাধবী তারাটির সাথে কি যেনো আলাপচারিতাই মেতে উঠে, মাধবী ধীরে ধীরে দেখে তারাটি নীল রং ধারন করে। তারপর হঠাৎ তারাটি অন্যসব তারার ভীড়ে মিলিয়ে গেছে। মাধবী যেনো ভেবে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।
মাধবী আজ তুলসী রংয়ের শাড়ি পড়েছে, মাথায় সিঁধুর- কপালে লালটিপ। আজ সে স্থীর করেছে মাঝরাতে আর বাইরে যাবেনা। বহিঃমন আজকাল মাধবীকে বেশ শাসন করছে, ঠিক সেই সময়েরব মতো করে যখন স্বপ্নপুরুষকে রেখে ধর্ম ভিন্নতার কারনে - পারিবারিক মানসিক অনুচাপে অন্য পুরুষকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছিলো। তারাটিকেও কেমন আপন ভাবা শুরু করেছিলো, মাঝরাত হতেই কিসের মোহে যেনো সেই তারাটির সাথে আনমনে কথা বলতে নিয়ে যেতো। মনে হতো এই তারাটি যেন আপনকেউ তার, তারার সাথে তার আত্মার যেনো কিসের বন্ধন। তবু আজ রাতে মাধবী বাইরে যাবেনা,
রাত তখন ১২ টা বাজতে ১৫ মিনিট বাকি,, স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যায় মাধবীর-
চিৎকার করে বলতে থাকে, " চান্দ তোর পায়ে পড়ি, তোই এটা করিস না"
আগের বছর ঠিক একই দিনে এমন সময়ই সে একই কথা বলে চিৎকার করে ওঠেছিলো।
মাধবী জানে, এখন বাইরে দুয়ারে তালহার লাশ। প্রতি বছর ১৩ এপ্রিল রাতে আকাশ থেকে নেমে আসে তালহা, মাধবী উঠোনে যাবে কি যাবেনা ভাবতেই ১২ টা বেজে গেলো- কেননা দুয়ারে আসবে প্রিয়তম তালহার লাশ। তবু অন্তঃমন সম্মোহিত তালহার আত্মা দ্বারা, জন্মদিনের প্রথম শুভেচ্ছা যে তালহাই তাকে জানাবে-
দরজা গোছতেই, আকাশের গাঢ়ো নীল তারাটি তালহা হয়ে নেমে এসেছে ;
সেই চিরচেনা কন্ঠে, "শুভ জন্মদিন মাধবী, আই লাভ ইউ-"
এরপরের দৃশ্যটি মাধবী সহ্য করতে পারেনি- চিৎকার করে বারণ করলেও তালহা কিছুই শুনে না-
উঠোনে তালহার লাশ। সম্মোহিত মাধবী অচেতন হয়ে পড়ে আছে উঠোনে-
আজ ১৪ এপ্রিল, মাধবীর ২৫তম জন্মদিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৭