somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুকরিয়া না করার পরিণাম

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুকরিয়া না করার পরিণামঃ-

বোখারী শরীফের হাদীসে আছে, হযরত রসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন, বনী ইসরায়ীল গোত্রে তিনজন লোক ছিল বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তন্মধ্যে একজন ছিল কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত, দ্বিতীয় জন মাথায় টাক পড়া, তৃতীয় জন অন্ধ। আল্লাহ তা‘য়ালা এই তিনজনকে পরীক্ষা করিতে ইচ্ছা করিলেন। তিনি একজন ফেরেশতা পাঠাইলেন। ফেরেশতা প্রথমে কুষ্ঠ রোগাগ্রস্ত লোকটির নিকট গিয়া বলিলেন, তুমি কি চাও? লোকটি উত্তর করিল: আমি আল্লাহর কাছে এই চাই যে, আমার এই কুৎসিত ব্যাধি নিরাময় হউক, আমার দেহের চর্ম নূতন রূপ ধারণ করিয়া সুন্দর হউক-যেন আমি লোক সমাজে যাইতে পারি, লোকে আমাকে ঘৃণা না করে। আমি যেন এই বালা হইতে মুক্তি পাই। ফেরেশতা তাহার শরীরে হাত বুলাইয়া দো‘আ করিলেন। মুহূর্তের মধ্যে তাহার রোগ নিরাময় হইয়া গেল। সর্বশরীর নূতন রূপ ধারণ করিল। তারপর আল্লাহর ফেরেশতা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কি পাইতে চাও? লোকটি বলিল, আমি উট পাইলে সন্তুষ্ট হই। ফেরেশতা তাহাকে একটি গর্ভবতী উট্নী আনিয়া দিলেন এবং আল্লাহর দরবারে বরকতের জন্য দো‘আ করিলেন।

অত:পর ফেরেশতা টাকপড়া লোকটির নিকট গিয়া বলিলেন, তুমি কোন জিনিস পছন্দ কর? লোকটি বলিল, আমার মাথার ব্যাধি নিরাময় হউক, যে কারণে লোক আমাকে ঘৃণা করে। আল্লাহর ফেরেশতা তাহার মাথায় হাত বুলাইয়া দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে মাথা ভাল হইয়া গেল। নূতন চুল গজাইয়া নূতন রূপ ধারণ করিল। এখন ফেরেশতা জিজ্ঞাসা করিলেন, কোন প্রকারের মাল তুমি পাইতে চাও? সে বলিল, আল্লাহ্ যদি আমাকে একটি গরু দান করেন, তবে আমি খুব সন্তুষ্ট হই। ফেরেশতা একটি গর্ভবতী গাভী আনিয়া দিলেন এবং বরকতের জন্য দোয়া করিলেন।

অনন্তর ফেরেশতা অন্ধ লোকটির নিকট গমন করিয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কি চাও? লোকটি বলিল: আল্লাহ্ তা‘আলা আমার চোখ দুইটির দৃষ্টিশক্তি ফিরাইয়া দিন যেন আমি আল্লাহর দুনিয়া দেখতে পাই। ইহাই আমার আরজু। আল্লাহ্ তা‘আলার ফেরেশতা তাহার চোখের উপর হাত বুলাইয়া দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাহার চোখ ভাল হইয়া গেল। সে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়া পাইল। অত:পর ফেরেশতা জিজ্ঞাসা করিলেন, আচ্ছা বল তো, কোন চিজ তুমি পছন্দ কর? অন্ধ বলিল, আল্লাহ্ যদি আমাকে একটি বকরী দান করেন, আমি খুব খুশী হইব। ফেরেশতা তৎক্ষণাৎ একটি গাভীন বকরী আনিয়া তাহাকে দিলেন এবং বরকতের দোআ করিয়া চলিয়া গেলেন।

অল্প দিনের মধ্যেই এই তিন জনের উট, গরু এবং বকরীতে মাঠ পরিপূর্ণ হইয়া গেল। তাহারা প্রত্যেকে এক একজন বিরাট ধনী। অনতিকাল পরে সেই ফেরেশতা প্রথম ছুরতে পুনরায় সেই উটওয়ালার (কুষ্ঠ রোগীর) নিকট আসিয়া বলিলেন, আমি বিদেশে (ছফরে) আসিয়া বড়ই অভাবগ্রস্থ হইয়া পড়িয়াছি। আমার বাহক জন্তুটিও মারা গিয়াছে। আমার পথ-খরচও ফুরাইয়া গিয়াছে। আপনি যদি মেহেরবানী করিয়া কিছু সাহায্য না করেন, তবে আমার কষ্টের সীমা থাকিবে না। এক আল্লাহ্ ছাড়া আমি সম্পূর্ণ নিরুপায়। যে আল্লাহ্ আপনাকে সুন্দর স্বাস্থ্য ও সুশ্রী চেহারা দান করিয়াছেন তাঁহার নামে আমি আপনার নিকট একটি উট প্রার্থনা করিতেছি। আমাকে একটি উট দান করুন। আমি উহাতে আরোহণ করিয়া কোন প্রকারে বাড়ি যাইতে পারিব। লোকটি বলিল, হতভাগা কোথাকার! এখান হইতে দূর হও, আমার নিজেরই কত প্রয়োজন রহিয়াছে? তোমাকে দিবার মত কিছুই নাই। ফেরেশতা বলিলেন, আমি তোমাকে চিনি বলিয়া মনে হইতেছে। তুমি কি কুষ্ঠ রোগগ্রস্ত ছিলে না? লোকে কি এই রোগের কারণে তোমাকে তুচ্ছ ও ঘৃণা করিত না? তুমি কি গরীব ও নিঃস্ব ছিলে না? তৎপর আল্লাহ্ পাক কি তোমাকে এই ধন-সম্পদ দান করেন নাই? লোকটি বলিল, বাঃ বাঃ! কি মজার কথা বলিতেছ? আমরা বাপ-দাদার কাল হইতেই বড় লোক। এই সম্পত্তি পুরুষানুক্রমে আমরা ভোগদখল করিয়া আসিতেছি। ফেরেশতা বলিলেন, যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও, তবে আল্লাহ্ তাআলা তোমাকে সেইরূপ করিয়া দিন যেরূপ তুমি পূর্বে ছিলে। কিছুকালের মধ্যে লোকটি সর্বস্বান্ত হইয়া পূর্বাবস্থা প্রাপ্ত হইল। অনন্তর ফেরেশতা দ্বিতীয় ব্যক্তি অর্থাৎ, টাকপড়া লোকটির নিকট গমন করিলেন। লোকটির এমন সুন্দর ও সুঠাম চেহারা! মাথায় কুচকুচে কাল চুল, যেন তাহার কোন রোগই ছিল না। ফেরেশতা তাহার নিকট একটি গাভী চাহিলেন। কিন্তু সেও উটওয়ালার ন্যায়ই “না“ সূচক শব্দে জবাব দিল। ফেরেশতাও তাহাকে বদদোয়া দিয়া বলিলেন, যদি তুমি মিথ্যুক হও, তবে আল্লাহ্ তায়ালা যেন তোমার সেই পূর্বাবস্থা ফিরাইয়া দেন। ফেরেশতার দোয়া ব্যর্থ হইবার নহে। তাহার মাথার টাক পড়া শুরু হইল, সমস্ত ধন-সম্পদ লয় পাইল।

তারপর ফেরেশতা পূর্বাকৃতিতে সেই অন্ধ ব্যক্তির নিকট গমন করিয়া বলিলেন, বাবা আমি মুসাফির! বড়ই বিপদগ্রস্ত হইয়া পড়িয়াছি। আমার টাকা-পয়সা কিছুই নাই। আপনি সহানূভূতি ও সাহায্য না করিলে আমার কোন উপায় দেখিতেছি না। যে আল্লাহ্ তায়ালা আপনাকে এক বিরাট সম্পত্তির মালিক করিয়া দিয়াছেন, তাঁহার নামে আমাকে একটি বকরী দান করুন-যেন কোন প্রকার অভাব পূরণ করিয়া বাড়ি যাইতে পারি। লোকটি বলিল, নিশ্বয়ই। আমি অন্ধ, দরিদ্র ও নিঃস্ব ছিলাম। আমি আমার অতীতের কথা মোটেই ভুলি নাই। আল্লাহ্ তায়ালা শুধু নিজ রহমতে আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরাইয়া দিয়াছেন। এই সব ধন-সম্পদ যাহা কিছু দেখিতেছেন সবই আল্লাহ্ তায়ালার, আমার কিছুই নহে। তিনিই অনুগ্রহ করিয়া আমাকে দান করিয়াছেন। আপনার যে কয়টির প্রয়োজন আপনার ইচ্ছামত আপনি লইয়া যান। যদি ইচ্ছা হয় আমার পরিবার পরিজন ও সন্তান-সন্তুতির জন্য কিছু রাখিয়াও যাইতে পারেন। আল্লাহর কছম, আপনি সবগুলি লইয়া গেলেও আমি বিন্দুমাত্র অস্তুষ্ট হইব না। কারণ, এসব আল্লাহর দান।

ফেরেশতা বলিলেন, বাবা, এসব তোমার থাকুক। আমার কিছুর প্রয়োজন নাই, তোমাদের তিন জনের পরীক্ষা করার উদ্দেশ্য ছিল; তাহা হইয়া গিয়াছে, তাহারা দুইজন পরীক্ষায় ফেল করিয়াছে। তাহাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট ও নারায হইয়াছেন। তুমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়াছ। আল্লাহ তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হইয়াছেন।

উপদেশ : হে মানুষ! চিন্তা কর! প্রথমোক্ত দুইজন আল্লাহর নেয়ামতের শোকর করে নাই বলিয়া দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ই তাহাদের বিনষ্ট হইয়াছে। তাহাদের অবস্থা কতই না শোচনীয় হইয়াছে! কারণ, আল্লাহ্ তাহাদের উপর অসন্তুষ্ট হইয়াছেন। তৃতীয় ব্যক্তি আল্লাহর শোকর করিয়াছে বলিয়া দুনিয়া ও আখেরাত সবই বহাল রহিয়াছে, ধন-সম্পদ কিছুই নষ্ট হয় নাই।

আল্লাহ তায়ালা ‘দিয়া ধন বুঝে মন, কেড়ে নিতে কতক্ষণ।‘ সাধারণত: মানুষ বড় হইলে অতীতের কথা ভুলিয়া যায়। এ ধরণের লোককে প্রকৃত মানুষ বলা যায় না। প্রকৃত মানুষ তাহারা-যাহারা অতীতের দুঃখ-কষ্টের কথা স্মরণ করিয়া আল্লাহর শোকর গোযারী করে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×