somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্বশুড়বাড়ি এক্সপ্রেস! :((:((

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ-ই নিজেকে জামাই জামাই মনে হচ্ছে!

নাহ্‌, বিয়ে ঠিক হয়নি। সম্মানটা দিলো ৪/এ বাসের হেল্পার। মালিবাগ যাবো বলে তাঁতিবাজার মোড়ে দাড়িয়ে আছি। আধাঘন্টা পর একটা বাস পেলাম তাতেও প্রচন্ড গ্যাঞ্জাম। একে তো সিট নাই তার উপর দাড়ানোরও জায়গা নাই। এমতাবস্থায়ও আরো জনা পাঁচেক যাত্রী বাসে উঠার জন্য ব্যস্ত! আমি উঠবো না ভাবলেও বাঁধ সাধলো হেল্পার। বাসটা প্রায় চলেই যাচ্ছিলো কিন্তু হেল্পার শুধুমাত্র আমার জন্য থামিয়ে দিলো!!
 স্যার, আসেন?
 না থাক। অনেক গ্যাঞ্জাম। পরের বাসে যাবো।
 আরে আসেন না। বহুত জায়গা আছে! খাড়াইবার পারবেন।

ইতস্তত করছি দেখে হেল্পার নিজেই এসে আমাকে হাত ধরে বাসে তুলে দিলো। (আহা! ঠিক যেন শ্বশুড়আব্বা হাত ধরে ঘরে তুলে নিলেন নতুন জামাইকে!!)সিড়ির পা দানিতে তিন জনের সাথে যুদ্ধ করে বাইন মাছের মত পিছলে ভিতরে ঢুকে গেলাম। ভ্যাবসা পরিবেশে ঠিকমত দাড়ানোর আগেই ড্রাইভার দিলো টান!

এরই সাথে যাত্রা শুরু হলো শ্বশুড়বাড়ি এক্সপ্রেসে!!

শ্বশুড়বাড়িতে নতুন জামাইয়ের অভ্যর্থনার পর পরই শালাশালিদের হাতে ঝাঁকি খেতে হয়। জামাই আদরে উঠলাম, ঝাঁকি তো খেতেই হবে। প্রথম ঝাঁকিটা দিলো এক পিচ্চি।

বাসের পিছন দিকে যাচ্ছিলাম। দাড়ানোর জন্য ওই জায়গাটাই বেষ্ট। পিচ্চি এক দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিলো। না দেখেই ওর পা মাড়িয়ে দিলাম। স্যরি বলার জন্য মুখ খোলার আগেই পিচ্চি খেঁকিয়ে উঠলো-- "কানা নাকি? আৎখা পারা দিলেন ক্যাঁ? আরেকটু হইলেই তো চেনু গালায়া ফেলায়ছিলেন!!"

কারো চেনু যে পায়ের পাতা পর্যন্ত হয় জানা ছিলো না! পুরাই হতভম্ব হয়ে গেলাম। কিন্তু কিছু বললাম না। কোনরকমে পিছনে গিয়ে দাড়াতেই শুরু হলো গোলমাল। এইবারে এক মহিলা বনাম কন্টাকটর।
 আপা ভাড়াটা দিয়েন।
(১০ টাকা দিয়ে) রামপুরা।
 কই থেকা?
 সদরঘাট।
 আরো ২ ট্যাকা দেন।
 ক্যাঁ! দুইদিন আগেও তো ১০ টাকা আছিলো। আইজকা ১২ ক্যাঁ? ডেইলি ডেইলি ভাড়া বাড়ে নি? ফাইজলামি চলবো না। ১০ টাকা দিলাম। নিলে নেও না নিলে যাওগা।
 হ যামুই তো। আপনার বাড়িত। আপনের বিয়া হইছে না?
 ক্যাঁ? আমার বিয়া হওয়া দিয়া তুমার কি?(মহিলা উত্তেজিত)
 না, আপ্নের জামাই থাকলে হের থেকাই ট্যাকাডা নিতাম। আপনার ধারে নাই তো হের কাছে নিচ্চিত থাকবো! হের থেকাই লমু।
 জামাই নাই।(মহিলা এবার কিছুটা শংকিত!)
তাইলে আরো ২ ট্যাকা দেন।
ভদ্র মহিলা ব্যাগ থেকে ২ টাকা বের করে দিয়ে দিলেন!

বাস গুলিস্তান আসতেই সিট পেয়ে গেলাম। পাশে এক ৬০-৬৫ বছরের চাচামিয়া। হাতের তসবি গোনা বন্ধ করে উনি অপলক তাকিয়ে দুই সিট সামনে বসা এক মেয়ের দিকে। তরুণী একটা ঢোলা টিশার্ট পড়েছে কিন্তু গলার কাছ দিয়ে বের হওয়া দুটো লম্বা লম্বা রশি নির্দেশ করছে যে সে কোন রঙ্গের অন্তর্বাস পড়েছে! এই কঠিন দৃশ্য সহ্য করা যুবকের পক্ষেও অসম্ভব আর ইনি তো ষাটোর্ধ চাচামিয়া!! আমার ডাকে চাচা সৎবিত ফিরে পেলেও অস্ফূট স্বরে যা বললেন তা কবিতায় কনভার্ট করলে দাঁড়ায় ---
একি পোষাক-
নাকি স্বচ্ছ্ব আয়না?
কিছুই বোঝা যায় না!!


এরকম দৃশ্য আজকাল প্রায়ই দেখা যায় বলে চোখ নামিয়ে নিলাম। বায়ে তাকাতেই আচমকা এক প্রশ্ন ধেয়ে এলো। "ভাই, গাদ্দাফি কি মারা গেছে?"

পিছনে আরো জনা দুয়েক আমার উত্তর শোনার অপেক্ষায়। বুঝলাম এখানে রাজনৈতিক আলোচনা হচ্ছিলো। কিন্তু আমার সমস্যা হলো যে আচমকা কোন প্রশ্ন পেলে আমি কেমন যেনো ভেবড়ে যাই! এইবারও ব্যতিক্রম হলো না। ভদ্রলোকের মুখের উপর না বুঝেই পালটা প্রশ্ন করে দিলাম-- কোন গাদ্দাফি!?

প্রশ্নকর্তা আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন যেন কোন এলিয়েন দেখছেন! অস্থিরতাময় অস্বস্তিকর অবস্থা! কেউই কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বাঁচিয়ে দিলো কন্টাকটর। ভাড়া দিলাম। ১ টাকা পরে দেই- বলে কন্টাকটর পিছন দিকে চলে গেলো। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। জানি এই টাকা আর পাওয়া যাবে না! ১ টাকার শোকেই নাকি মালিবাগ যাচ্ছি--ঠিক কোন কারণে জানিনা, আমার সেই মূহুর্তে অতি পুরাতন একটা কবিতা মনে পড়লো। কবিতাটা এইরকম---

সেদিন ছিলো বৃষ্টি ভীষণ মালিবাগের মোড়ে
মাথার উপর ছাতা ধরে হাটছি জোরেশোরে।
হঠাৎ দেখি আমার পাশেই সুন্দরী এক মেয়ে
ছাতা ছাড়াই হাটছিলো সে বৃষ্টি ধারায় নেয়ে।

আমার এখন তরুণ বয়স, সুন্দরীদের প্রতি
এই বয়সেই দিলটা থাকে নরম শরম অতি!

সেই মেয়েটার কাছে গিয়ে একটুখানি কেশে
দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া নায়ক সুলভ হেসে-
বলেছিলাম--বৃষ্টি ধারায় ভিজছো কেন মিছে?
সর্দি জ্বরে কষ্ট পাবে, এসো ছাতার নিচে!
বাকিটা পথ তুমি আমি এক ছাতাতেই যাই-
মনে কর আমি তোমার হই খালাতো ভাই!

আমার কথা শুনে মেয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে বলে-
ধাক্কা দিয়ে ফেলবো তোকে বুলডোজারের তলে!!

মনের দুঃখে ফেরত আসি হায়রে কলিকাল
উপকারের চেষ্টা করেও শুনতে হয় যে গাল!!!

প্রায় নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তার আগেই শ্বশুড়বাড়ি এক্সপ্রেস চলে আসলো মালিবাগ রেলগেটের কাছাকাছি। তাড়াহুড়ো করে উঠলাম। সেই পিচ্চির পা আবারো মাড়িয়ে, তিন জনের পশ্চাৎদেশের সাথে ঘর্ষণ লাগিয়ে এবং একজনের খোমায় পাঞ্চ দিয়ে আমি যখন গেটে আসলাম তখনো গাড়ি চলছে। জামাই আদরে গাড়িতে তোলা হেল্পার শক্ত মুখে জানিয়ে দিলো লাফিয়ে নামতে হবে। হালকা হেসে বললাম-- কেন ভাই? তোমার গাড়ি কি অটো নাকি?! থামে না??
হেল্পার অনেকটা ধাক্কা দিয়েই কাঁদাপানিতে নামিয়ে দিলো! ধাক্কা দেওয়ার আগে চিরাচরিত সদুপদেশটা দিতে ভুললো না- বাম পা দিয়েন আগে!

আরও একটু সামনে গিয়ে থামলো শ্বশুড়বাড়ি এক্সপ্রেস। হেল্পার রাস্তায় দাঁড়ানো নতুন জামাইদের দিকে ছুটে যাচ্ছে। রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে পানি নিয়ে প্যন্টের কাঁদা মুছতে মুছতে আমি পুরাতন জামাই ভাবি-

"জামাই যায়, জামাই আসে। শুধু শ্বশুড়বাড়ির চিত্রটা বদলায় না!"
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৫০
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×