আ-হা-ই-ই-ই.........!
প্রতিদিনের মত সেইদিন সকালেও আড়মোড়া ভেঙ্গে ঘুম থেকে উঠেছিলেন কামাল সাহেব। উঠতে ইচ্ছা করছিলো না, কিন্তু উপায় নেই তো! প্রতিদিন কম করে হলেও খান ত্রিশেক তারকাকে তার সিস্টেম করতে হয়। তাছাড়া গোটা দশেক জরুরী মিটিং তো আছেই। এমতাবস্থায় তো আর সকালে ১০টার বেশী ঘুমানো যায় না! প্রতিদিন বাধ্য হয়েই তাকে সকালে উঠতে হয়। সকালের আলস্যে সময়টা সাধারণত তার ভালোই কাটে। কিন্তু সেইদিন সকালেই কেমন যেন সব গড়বড় হয়ে গেলো! ভেজালটা বাঁধালো তার ফেচবুকের এক ওয়াল পোষ্ট।
দিন চারেক আগে এক সুন্দরী তরুণি কামাল সাহেবকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠিয়েছিলো। প্রথমে অবাক হলেও পরে কামাল বাবু ভাবলেন- যার নির্বাচিত দলে সাকিব, মুশফিকদের মত তারকা, সেই-ই তো বড় তারকা!! অতএব, তার প্রতি সুন্দরীদের চিকন অনুভূতি থাকা স্বাভাবিক। হালকা হেসে তাই মেয়েটাকে তার ওয়ালে একসেস দিয়েছিলেন। কিন্তু তখন কি আর জানতেন যে- মেয়েটা তার মারাত্মক শত্রুদের (সাবেক কিরিকেটারগণ) ছুপা ফেচবুক আইডি! জানলেন তো সেইদিন সকালেই!!
কি সব হাবিজাবি পোষ্টে তার ওয়াল এক্কেবারে ‘ভরে’ দিয়েছে! ‘কামালের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’ অথবা ‘কামালের চামড়া- তুলে নেবো আমরা’ টাইপের খারাপ খারাপ সব কথা। এইগুলা না হয় আগে বহুবার শুনেছি, সহ্য করা যায়, কিন্তু তাই বলে লিখে দেবে ‘কামালের চামড়ায়- মশা, মাছি কামড়ায়’?! আর সহ্য করতে পারলেন না কামাল বাবু। আশরাফুলকে জাতীয় দলে দেখলে তার শরীর যেমন চুলকায়, আজকে তার থেকে কেমন যেন একটূ বেশীই চুলকাতে লাগলো।
আমি কামাল মানে আ,হ,ম মোস্তফা কামাল- ভাবলেন তিনি। নামেও কামাল, কাজেও তিনি সব সময়ই ‘ক্যায়া মাল’! বিসিবির প্রেসিডেন্ট তিনি। শুধু বিসিবি কেন? পিসিবি, টিসিবি, ইসিবি... আরো হাবিজাবি যত সিবি আছে উনি সব গুলারই প্রেসিডেন্ট হওয়ার সামর্থ্য রাখেন! বলা যায় না- ক’দিন পর দেশেরই প্রেসিডেন্ট হয়ে যান কিনা! এহেন ফাইজলামী কথবার্তা তিনি কেন সহ্য করবেন? প্রথমে ভাবলেন মেয়েটাকে কিছু বলি- পরে সেই চিন্তা বাদ দিলেন। এখানে কিছু বলে লাভ নেই। বরঞ্চ সিস্টেম করতে হবে ফেচবুকের মালিককে। হারামজাদা এইসব ফালতু কামের সুযোগ করে দিয়েছে। তার মত ‘ভদ্র’ লোকের বিরুদ্ধে এই এহেন জুলুম, অথচ ফেচবুক নিশ্চুপ! এই সব নিপীড়ন শেখ হাসিনার সরকার কখনোই বরদাস্ত করে না! অতএব, সেই দিনই বাকী সব কাজ বাতিল করে কামাল সাহেব উড়াল দিলেন জুকারবার্গের অফিসের উদ্দেশ্যে!
.........................................................................................................
-আপনার পরিচয়? আগমনের হেতু?
রাগে এক্কেবারে পিত্তি পর্যন্ত জ্বলে গেল কামাল মিয়ার! ই-হ্! সাড়ে তিন ঘন্টা ধরে একজন বৈদেশী অতিথিকে বসিয়ে রেখে, এখন আবার জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে আগমনের হেতু! কোথায় বলবে “স্যার, কেমন আছেন? খেয়ে এসেছেন কি? বাচ্চার কেমন আছে?”- তা না! জিজ্ঞাসা করছে আগমনের হেতু! দাড়াও তোমায় দেখাচ্ছি মজা- মনে মনে ভাবলেন কামাল মিয়া।
-- আমি মোস্তফা কামাল। - সদম্ভে ঘোষণা দিলেন কামাল সাহেব।
সাথে সাথে গুগলে সার্চ দিলো জুকারবার্গ। টাইপ করলো - মোস্তফা কামাল। অপশন আসলো
লোটা কামাল।ওরফে চিহ্নিত ছুপা সন্ত্রাসী। ওরফে জালিয়াতকারী। ওরফে কোটি কোটিপতি। ওরফে বিসিবি প্রেসিডেন্ট। সম্ভাব্য বাংলার প্রেসিডেন্ট। সম্ভাব্য আইসিসি প্রেসিডেন্ট। সম্ভাব্য বিশ্ব প্রেসি......... আর সহ্য করতে পারলো না জুকারবার্গ। জ্ঞান ফিরলে শুধু একটাই কথা মুখ দিয়ে বের হলো-- স্যার কোথায়?!
তা ‘স্যার’ আছেন বৈকি! দিব্যি আরামেই আছেন। জুকারবার্গের অজ্ঞান হওয়া দেখে ব্যাপক খুশি হয়েছিলেন। ব্যাটা বেয়াদপ! লোটা কামালকে জিজ্ঞাসা করে আগমণের হেতু! অজ্ঞান না হলে পিটিয়ে বানাতুম ছাতু! হু! অবশ্য সাথে ঘাবড়েও গিয়েছিলেন! ছেলেটা পুলাপান! তার হাই প্রোফাইল দেখে এতটা শকড হবে- বুঝতে পারলে হয়তো নামটাই বলতেন না! তবে মারা যায়নি দেখে স্বস্তি পেয়েছেন। সেই স্বস্তিতে এখন লেমন জুস খাচ্ছেন। টলতে টলতে কোনমতে জুকারবার্গ কামাল বাবুর কাছে এসে পৌছুল। তারপরই এক্কেবারে পায়ে লুটিত!
-স্যার আমায় মাফ করবেন স্যার। আপনাকে প্রথমে চিনতে পারি নাই। প্লিজ স্যার মাফ করবেন। প্লিজ প্লিজ।
-- আচ্ছা ঠিক আছে। ঠিক আছে। (মন কিছুটা বিগলিত হয় লোটার। আহা ছেলেটা এক্কেবারে সাকিবের মত পায়ে ধরেছে!) শোন যেই কারণে আসা। তোমার ওই ফেচবুক না উজবুক কি যেন একটা আছে- ওইটা আমার পছন্দ না। ওইটার ওয়াল একদম ফাউল। ওইটাতে সেইসব মানুষ থাকে ওরাও ফাউল- শুধু আমি বাদে। ঐটা শিগগির বাদ দিবা বুঝলা? নইলে কিন্তু সম্ভাব্য পাকিস্তান সফরে তোমারে দলের সিকিউরিটি ম্যানেজার বানায় দিমু। তখন বুঝবা ‘নিরাপত্তাহীনতা’ কাকে বলে!
- কিন্তু স্যার ঐটাই যে আমার রুটি রুজি...... (আরো জোরেশোরে পা চেপে ধরে জুকারবার্গ!)
-- ওহ আচ্ছা, তাই নাকি? (ভাবনায় পড়লেন লোটা) ঠিক আসে তাইলে ওইটার আমূল পরিবর্তন চাই। বুঝলা? আমি কাইলকা সকালে ঊইঠাই যেন দেহি পুরাতন কিছু নাই। সব ডিজিটাল বানাইবা। নইলে কিন্তু নেত্রীর কাছে বিচার দিমু। সাবধান!
২৪ ঘন্টা পর.........
দুবাইগামী প্লেনের সিটে আরাম করে বসে লোটা কামাল। হাতের ল্যাপটপটা খুলে ফেসবুকে ঢুকলেন তিনি। একনজর দেখেই হাসলেন। Experience Your New Time Line! হা হা। নতুন ‘ফেচবুক’ উপভোগ করতে করতে সিটে হেলান দিলেন আমাদের কামাল ‘সাহেব’.....