somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্রেশ জিনিসের কবলে মাওলা সাহেবের দিশেহারা একদিন..

৩০ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছাপোষা মানুষ গোলাম সাহেবের সকাল শুরু হয় বউর ঝাড়ি খেয়ে। দাদা-দাদি বড় শখ করে নাম রেখেছিলো গোলাম মাওলা। তারপর থেকে উনি আর কারো গোলামী থেকে মুক্ত হতে পারেন নাই। শেষ বয়সে আপাতত বউর গোলামী করছেন। যাই হোক দাদা-দাদির দেয়া সুন্দর নাম থাকলেও বউ ঘুম থেকে উঠান এভাবে "নবাবের পো উঠেন বাজারে যেতে হবে"। বিরক্তমুখে উনি বিছানার মায়া ত্যাগ করে ওয়াশরুমে ছুটেন।

আজকে একটু ভালো মুডেই বাজারের আসলেন মাওলা সাহেব। কারন অন্যান্য দিন ১০ টাকার ভাড়া দরদাম করে ১৫ টাকায় আসতে হয় আজকে ৮টাকায় এসে পড়েছেন। মাঝে মাঝে অবাক হন উনি, নানা কাজে ১০/২০ হাজার টাকা অপচয় হলেও ২ টাকা বাচাতে পেরে আজকে উনার মন খুশি। আজকে ছোট মেয়ের জামাই আসবে তাই ভালো কিছু খাওয়াতে হবে। প্রথমে গেলেন তরকারীর বাজারে। অবাক দৃষ্টিতে খেয়াল করলেন আজকে সব তরকারী কেমন যেন তাজা মনে হচ্ছে। শাক গুলো পরিস্কার ও শুকনো, ওজন বাড়ানোর জন্য পানি দিয়ে ভিজানো নয়। টমেটু, আলু-বেগুন, সবগুলোই তাজা মনে হচ্ছে। সন্দিহান মাওলা সাহেব সিদ্ধান্ত নেন আজকে কোন তরকারী নিবেন না।

তারপর গেলেন গরুর মাংসের দোকানে যেয়ে ৩ কেজি মাংসের অর্ডার দিলেন। মিনমিনিয়ে বল্লেন ফয়েজ আজকে হাড় একটু কম দিও। উনি প্রতিবারই এই কথাটা বলেন কিন্তু ফয়েজ সবসময় হাড় বেশি দিবে উনি জানেন। তারপরেও বলার জন্য বলা। মাংস কাটা শেষ হলে উনি অবাক দৃষ্টিতে খেয়াল করলেন এক টুকরো হাড় বা চর্বি নেই। মাওলা সাহেব আবারো কনফিউশনে পড়লেন। মনের কোনে একটি সম্ভাবনা উকি দিলো মরা গরুর মাংস নাকি?? ২য় বারের মতো তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টালেন আজকে গরুর মাংষ কিনবেন না।

সবশেষ গেলেন মাছের বাজারে। উনার ব্যক্তিগত পছন্দ ইলিশ। ১ কেজির একটা ইলিশের জন্য উনার বাজেট ১২০০ টাকা। চকচকে দেখে একটি ইলিশের দাম জিজ্ঞেস করলেন। মাছওয়ালার বলা দাম শুনে আরেকটু হলে উনার হার্ট এটার্ক হতো। মাত্র ৩০০ টাকা!!! সম্ভবত ২০ বছর আগে একবার উনার এরকম অনুভূতি হয়েছিলো ইলিশের উচ্চদাম শুনে। মাছ অতিমাত্রায় পঁচা কিনা তা যাচাই করার জন্য মাছের কান উল্টালেন কিন্তু নিজের চোখকেও বিশ্বাস হচ্ছিলো না। ইলিশ মাছের কান কখনও এতো লাল দেখেননি উনি। এবার উনি একটি কঠিন সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন আজকে মাছই কিনবেন না। উনার ব্দ্ধ ধারনা এটা নিশ্চয়ই ফরমালিন বা এরকম কোন নতুন টেকনোলজি মাছকে টাটকা দেখানোর। সুতরাং খালি হাতেই বাসায় ফিরলেন। যেতে যেতে বউকে কি বলবেন সেই অযুহাত ঠিক করলেন। আজকে বাজারটা অন্য কেউ করাই ভালো।

পালের বাজারের এ হাটে উনি সদাই কিনতে আসেন প্রায় ৪৫ বছর ধরে। মানে ১০ বছর বয়স থেকেই এ বাজারে উনার আনাগোনা। কখনো এরকম হয়নি। আজকে হটাৎ সব ফ্রেশ জিনিসের আগমন উনার কাছে ভালো ঠেকছে না।

অফিসে যাওয়ার জন্য সিএনজি ঠিক করতে যেয়েও উনি অবাকিত। অন্যান্য দিনের ভাড়া ১২০ টাকা আজকে ৭০ টাকায় রাজি!!! হচ্ছেটা কি আজকে??

অফিসে বসে অন্যান্য কাজের পাশে উনার রেগুলার একটা কাজ হলো সামুতে ব্লগিং করা। আজকে লগইন করেই উনি বুঝতে পারলেন কিছু একটা উল্টোপাল্টা হয়েছে। কোন ধরনের কপি-পেস্ট দেখছেন না প্রথম পাতায়। প্রথম ১০টা পোস্টই দেখলেন ইনফরমেটিভ পোস্ট, পরে আছে কবিতা ও গল্প। কয়েকটি রম্যও দেখলেন। ৫ পাতা খুজেও কোন ১৮+ পোস্ট দেখলেন না। উনার হটাত মনে পড়ে গেলো গত কয়েকদিন পূর্বে অনেকে অঙ্গিকার করেছিলো ফ্রেশ ব্লগিংয়ের। তখন উনি তেমন পাত্তা দেননি এখন দেখা যাচ্ছে আসলেই ফ্রেশ ব্লগিং শুরু হয়েছে।

বেহুদা একজনকে খোচা দিয়ে দেখলেন ১ মিনিটের মাথায় উনার মন্তব্য মুছে মডারেটর উনাকে জেনারেল করেছে। এবার উনি সত্যিই অবাক হলেন। ২০০৭ সাল থেকে উনি সামুর সাথে। সামুতে কবে সিন্ডিকেট, ক্যাচাল, গালাগালি ও ঘুমন্ত মডারেশন এগুলো ছিলোনা উনি ঠিক মনে করতে পারেন না। আজ হটাৎ এরকম কেন??



লগ-আউট করে উনার অন্য নিকে ঢুকলেন। ইচ্ছা একটি রাজনৈতিক ক্যাচাল পোস্টে দিবেন। দিলেনও একটি জ্বালাময়ী পোস্ট। বিরোধীদলীয় নেত্রীকে ইচ্ছামতন ধুয়ে ফ্ল্যাট করে দেওয়া পোস্টটি মডারেটররা ২ মিনিটের মাথায় মুছে উনাকে কমেন্ট ও পোস্ট ব্যান করে দেয়। টাশকিত মাওলা সাহেব খেয়াল করলেন উনি অসুস্থ বোধ করছেন। সকাল থেকেই উনি সব ফ্রেশ জিনিসের উদাহরন দেখছেন। আজীবন ভেজাল খেয়ে আজকে হাটাৎ ফ্রেশ উনার ঠিক সহ্য হলোনা।

মাওলা সাহেব ঠিক করলেন ৩ দিনের ছুটি নিবেন। কিন্তু উনি ঠিক মনে করতে পারছেন না বসকে তেল মারা ছাড়া উনি কখনো ছুটি পেয়েছিলেন কিনা?? আজকে সব ব্যতিক্রম ছুটিটাও কি ব্যতিক্রম স্বাভাবিক নিয়মেই আবেদন করবেন নাকি বসকে তেল মারবেন???



সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৩:২১
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×