somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সব অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ খুন করবেন না আপনার মেয়ের স্বপ্নগুলোকে, হয়তোবা ওই একদিন আপনাকে গর্বিত করবে..

১৬ ই জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার আশেপাশের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করলাম কিভাবে মেধাবী মেয়েদের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎকে নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে...

ঘটনা -১ - আরো ২ মাস আগের কথা। রাত ৮.৩০ এ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে বসে সারাদিনের হিসাব মিলাচ্ছি এমন সময় এক বৃদ্ধ এসে হাজির। উনার মেয়ের বিয়ে কিছু সাহায্য প্রয়োজন। রেফারেন্স হিসেবে আমারই এক শিক্ষকের নাম বল্লেন। জিজ্ঞেস করলাম মেয়েকে কতটুকু পড়ালেখা করিয়েছেন। উত্তর শুনে আমি হতবাক, মেয়ে এবারের এস.এস.সি পরীক্ষায় মাদ্রাসা বোর্ড থেকে এ প্লাস পেয়েছে। আমি অনেকটা থমকে গিয়ে বল্লাম এই মেয়েকে আপনি পড়ালেখা না করিয়ে বিয়ে দিচ্ছেন কেনো?? আর ওরতো বিয়ের বয়সও হয়নি। বৃদ্ধের উত্তর আমি নিরুপায়। রিক্সা চালাই মেয়ের পড়ার খরচ দিতে পারছি না। আর ছেলে ভালো। বিএ পাস এবং ব্যবসা করে। ছেলেপক্ষ কথা দিয়েছে মেয়েকে পড়ালেখা করাবে। আমি প্রায় ২ ঘন্টা বুঝিয়ে পারিনি উনাকে নিবৃত করতে। কারন পরেরদিন দুপুরেই বিয়ে এ মুহূর্তে আর কিছুই করার নেই। অনেক হতাশ হয়ে উনার মেয়ের বিয়ের জন্য ১ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। আমি অনেক জেরা করার কারনে ওই বৃদ্ধ আমাকে ঠিকানাও দিতে রাজি হননি। উনার ভয় ছিলো আমি বিয়েটা হয়তোবা বন্ধ করে দেওয়ার চেস্টা করতে পারি।

ঘটনা ২ - আমার আপুর কলিগ। সবসময় চুপচাপ থাকেন। একদিন আপু অফিসের কাগজপত্র চেক করতে গিয়ে দেখেন উনি এস.এস.সি (১৯৯৩) ও এইচ.এস.সিতে (১৯৯৫) বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেনী প্রাপ্ত কিন্তু এরপরে উনি আর পড়ালেখা করেন নি। পরে আপু উনাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন যে এইচ.এস.সির পরে উনাকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়া হয়। উনার স্বামী উনাকে পড়ালেখা করাতে রাজি থাকলেও পরিবারের অমতে বউকে আর পড়ালেখা করাননি। ৩ বছর উনি বই থেকে দূরে ছিলেন পরে কোনরকম ডিগ্রি পাস করেছেন। ১৯৯৩ সালের প্রথম শ্রেনী প্রাপ্ত মানে কিন্তু এখনকার গোল্ডেন প্লাস।

ঘটনা -৩ - চাঁদপুর রোটারির সাথে জড়িত কয়েকবছর ধরে। রোটারির এক বড় ভাই বিয়ে করেছেন ইদানিং। তো বার্ষিক বনভোজনে দেখলাম হটাৎ ভাবী ও ওই ভাইয়ের মাঝে কিছু নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। তো পরে জানা গেলো ভাবী ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে আর ওই ভাই এস.এস.সির পরে পারিবারিক ব্যবসায়ে নেমে আর পড়ালেখা করেননি এখন পরিবার উনাকে চাপ দিচ্ছে বউ এর লেখাপড়া বন্ধ করার জন্য। কারন জামাই থেকে বউ বেশি শিক্ষিত হলে নাকি পরিবারের অসম্মান। আমি অবাক কারন ওই ফ্যামিলি সব সময় নিজেদের খুব সম্ভ্রান্ত পরিচয় দিতে ভালোবাসে কিন্তু সম্ভ্রান্তের এই নমুনা!!!!!!!!!!! আর ভাবীল বাবাই বা কিভাবে পারলেন মেয়েকে এই অল্প বয়সে মেট্রিক পাস একটি ছেলের কাছে বিয়ে দিতে?? ছেলের টাকা আছে এটাই ছেলের একমাত্র যোগ্যতা।

ঘটনা -৪ - চাঁদপুরেরই আমার এক ফেবু ফ্রেন্ড। এস.এস.সিতে গোল্ডেন প্লাস, এইচ.এস.সি দিয়েছে এবার। খুব ইচ্ছে মেডিকেল পড়বে কিন্তু ওর অল্প শিক্ষিত মা পরিক্ষা শেষ হওয়ার পরেই ঢাকার এক ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করে ফেলে। মাকে অনেক রিকুয়েস্ট করেও সে বিয়ে আটকাতে না পেরে সুইসাইডের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিয়েছিলো। মেয়ের বয়স মাত্র ১৭ আর ছেলের ৩০। শেষ পর্যন্ত ও ওর আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে অনুরোধ সুইসাইডের হুমকী, সবশেষে আমার সরবরাহকৃত ৫টি ঘুমের ওষুধ খেয়ে এই বিয়েটা আটকাতে পেরেছে। :D আর একদিন বাসায় যেয়ে ওর মাকে ২ ঘন্টা বুঝাতে হয়েছে। এই ২০১২ সালে আমি মনে হয় এই একটিই ভালো কাজ করেছি।

আমি বুঝতে পারিনা কেন আমাদের দেশে বিশেষ করে মফস্বল শহর ও গ্রামগুলোতে কেন মেয়ে বয়স ১৬ পার না হতেই বিয়ের হিড়িক পড়ে যায়?? কেন বাবা-মা মেয়েদের দায়সারা ভাবে ইন্টার পাশ করিয়েই পাত্রস্থ করার চেস্টা করে। আশেপাশে এত উদাহরন দেখেও কেন অভিভাবকদের মনে হয়না আমার ছেলের মত এই মেয়েটিও বড় কিছু হতে পারবে। একদিন সবার মুখ উজ্জ্বল করতে পারবে। সরকার মেয়েদের বিয়ের বয়স নূন্যতম ১৮ করলেও এই নিয়ম মফস্বল শহরগুলোকে পালন করতে দেখছি না।

এ ব্যাপারে কড়া শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন শুধু কাজীদের শাস্তি দিলেই হবেনা, টাকাওয়ালা পাত্র দেখে যারা মেয়ের পড়ালেখা, ছেলে-মেয়ের বয়সের অসীম ব্যবধান কিছুই মান্য না করে মেয়েটির স্বপ্নকে গলাটিপে হত্যা করেন উনাদেরও কিঞ্চিত শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন। হা মনে হতে পারে কোন বাবা-মা কি মেয়ের খারাপ চান?? কিন্তু উনি যে নিজে একটি অন্যায় করে বাকীদেরও এই কাজে উৎসাহিত করছেন সে জন্য উনি অবশ্যই শাস্তি পাওয়া উচিত।






সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৮
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×