somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সন্তুবীরের উপাস্য (পর্ব-১)

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল বাজার করতে গিয়ে পথিমধ্যে স্নেহার (আমার বাড়ি থেকে ৬০০ মিটার দূরে ওষুধের দোকানের সেলস গার্ল) সঙ্গে দেখা। এক গাল মিষ্টি হেসে,
-কাকু আপনাকে আর ওষুধ নিতে দেখি না কেন?
আমিও সহাস্যে উত্তর দেই,
-কারণ তোমাদের ওষুধে আর কাজ হচ্ছে না নেহা। তাই ঔষধ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।
ও অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে জানতে চাইলো,
- এমা! কাজ হচ্ছে না? ওষুধ খাচ্ছেন না দিদিকে জানিয়েছেন?(নেহা আমাকে কাকু বললেও আমার মিসেসকে দিদি বলে)
- আর বোলো না।তিনি স্টার মেকারে গান নিয়ে সর্বক্ষণ ব্যস্ত। ওনার এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কোথায়?
ও কাচুমাচু মুখে,
-স্যরি কাকু আপনার এতোটা শরীর খারাপ অথচ আমরা খোঁজ রাখি না।কী সমস্যা? ঠিক কী হয়েছে আপনার?
আমি চারপাশটা একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে,
-না তেমন নয়, সমস্যাটা হলো মনের.. মনের যন্ত্রণা। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি,
- শরীরের যন্ত্রণা মনের যন্ত্রণায় চাপা পড়ে গেছে নেহা।ট্রাম্প খেলা জানো তো, জাস্ট ওভার ট্রাম্প করেছে।
আমি নিশ্চিত আমার উত্তরের দিকে ওর মনোযোগ ছিল না। যথারীতি উদ্বিগ্নতার সঙ্গে উত্তর দিল,
-ঠিক আছে দুশ্চিন্তা করবেন না কাকু। আপনি সময় পেলে আমার ওখানে চলে আসুন। আমি যা যা ওষুধ লাগে সব দিয়ে দেব।
আমি যন্ত্রণাক্লিষ্টের ন্যায় কৃত্রিম চোখ মুখ বাঁকিয়ে বললাম,
-না না নেহা, খামোকা এই বুড়োটার জন্য তুমি মিছে মিছে এতোটা মায়া করো না। তবে ভালো লাগলো যে তুমি বিষয়টা অনুধাবন করে সহানুভূতির সঙ্গে একটা সুরাহা দিয়েছ।
ও আরেকবার মিষ্টি হাসি দিয়ে,'আসি' বলে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল। ওর শরীরের সুবাস এসে লাগলো আমার নাকে চোখে মুখে।যা বৈদ্যুতিক তরঙ্গের ন্যায় মূহুর্তে আমার হৃদয়ের কষ্টিপাথরের নিকষতা প্রতিপাদস্থানের এক ফালি দ্বিতীয়ার চাঁদের মতো আলোকজ্জ্বলতায় ভরিয়ে দিল।আমি নিম্নিলিত নেত্রে ওর চলে যাওয়া ও শরীরের সুবাস অনুধাবন করতে লাগলাম।

সেদিন সন্ধ্যাবেলা কাজ সেরে আমি একটু আগেই চলে আসি। খানিক বাদে বাইরে ঝাঁঝালো কন্ঠে,' দিদি গেট খোলো' শব্দে বুঝতে পারি শ্রীময়ী সুন্দরীর আগমন এবং মহাবিপত্তি কিছু একটা ঘটিয়াছে। বাড়ির কাজের দিদি ভয়ে পরিমড়ি করে নিচে গিয়ে গেট খুলে দিতেই,
-হালার পো লুইচ্চা(উল্লেখ্য ওনি জন্মসূত্রে পূব দেশের হবার কারণে স্বর্গীয় পিতার সুবচনটি সময়ে সময়ে আমার উপর প্রয়োগ করেন।আমার অবশ্য আনকোরা শ্বশুরবাড়ির দেশের শব্দটির প্রতি মায়া পড়ে গেছে। বেশ মধুর লাগে ওনার মুখে শুনতে। কখনো শখনো আমিও বইলা ফেলি,
-যখন কেউ আমাকে লুইচ্চা বলে তার প্রতিবাদ করি আমি।যখন তুমি আমার লুইচ্চা বলো ধন্য হয় সে লুচ্চামি...তবে এদিন অবশ্য সেরকম স্থূলকার পরিস্থিতি ছিল না। যাইহোক গুটিকয়েক ধাপে উপরে উপরে উঠে সজোরে জামার কলার ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে চললো। আমি রাস্তায় সিনক্রিয়েট হচ্ছে বলে হাজার মিনতি করলেও বাস্তবে কোনো কাজে এলো না। দোকানের সামনে নিয়ে,
-বল তোর অন্তরে কে ব্যাথা দিয়েছে?
আমি আমতা আমতা করে
- না হ্যাঁ না মানে তাই তো কে ব্যথা দিল? তবে তুমি তো দাওনি।
আমার উত্তর শেষ হতেই,
-লুইচ্চা বুড়োভাম ছ্যাঁকা খেয়েছিস? বল কে তোকে ছ্যাঁকা দিল? আজ তার একদিন আর আমার একদিন।

উল্লেখ্য লিটন ভাইকে নকল করে রম্য করার কুফল আমি তখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। কিছুটা সামলে নিয়ে,
-কৈ নাতো। বিবাহিত লোকের মনে ব্যথা তো একমাত্র তার বউই দেবে।
ওমা যেই বলেছি,
-হ্যা হ্যা আমি শুধু তোকে ব্যথা দেই? কোনো ভালোবাসা, টেস্টি খাবারদাবার কিছু করিনা? সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চোখের পাতা এক করতে পারি না কেবল খেটে খেটে মরি।আর আমি হলাম ব্যাথার কান্ডারি? হালার নেমোক হারাম কাকে বলে।
আচমকা নেহা বলে উঠলো,
- কাকু আপনি দিদিকে নিয়ে কোথায় ঘুরতে যান।
অমনি বাজখেয়ি গলায়,
-এই মেয়ে আমি আমার বরকে নিয়ে কী করবো তাতে তুই বলার কে? তাহলে লোকে যা বলাবলি করছে কাকু বলার মধ্যে কৃষ্ণলীলা চলছে তা সত্যি দেখছি।
কেন তুই নাটক করে আমাকে দিদি আর ওকে কাকু বলিস বিষয়টি এখন পরিষ্কার বলেই নিজের মোবাইলে নেহার কয়েকটি ছবি তুলে হুমকি দেয়,
- যদি এই লুইচ্চার সঙ্গে ভাগিস তাহলে দুটোকে সারাজীবন জেলে পঁচাবো বলেই হড়মড়িয়ে আমার পায়ের উপর বসে পড়ে,
- ওগো তুমি ওর সঙ্গে ভেগে যাবে নাতো? পাড়ায় ইতিমধ্যে দুজন বিবাহিত লোক দুজন আইবুড়ো মেয়ের সঙ্গে পালিয়েছে যে।তারাও কাকু বলতো বলে লোকে বলাবলি করছে।
আমি ওনাকে দুবাহু আগলে নিয়ে হান্ড্রেড পার্সেন্ট নিশ্চয়তা দিতেই ওদিকে নেহা ছলছল চোখে বলে ওঠে,
-কাকু এখন বুঝতে পারছি আপনার যন্ত্রণা কতোটা সাঙ্ঘাতিক...

বিশেষ দ্রষ্টব্য:-
১- রম্যের ভূমিষ্ঠেই আত্মহত্যা নাকি পুনর্জন্ম বিচার করার দায়িত্ব পাঠকের।
২-লেখাটি আমার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করলাম।শ্রীময়ীকে লেখক আদর করে শ্রী বলেই ডাকেন।
৩ পাঠকদের পরামর্শে এই লেখাটি বড় গল্পে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।যে কারণে পরবর্তী পর্ব থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে কাহিনীটি। শিরোনামটিও পাল্টে দিয়েছি। নুতন নামকরণ হয়েছে'সন্তুবীরের উপাস্য'
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:০৯
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্ধ ভিখারি এবং রাজার গল্প....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:২৬

অন্ধ ভিখারি এবং রাজার গল্প....

এক অন্ধ ভিখারি ভিক্ষা করতে করতে একদিন রাজপ্রাসাদে ঢুকে পড়লো। অন্ধ ভিখারিকে দেখে রাজার মনে দয়া হলো। রাজা মন্ত্রী-কে ডেকে বললেন-
"'এই ভিক্ষুক জন্মান্ধ নন, একে চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রক্তজবা ও গোলাপ

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৫ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:৩৭

ভালোবাসার রূপান্তর

তোমার শহরে তুমি বসে আছো,
রক্তজবা হাতে…
আমার শহরে আমি,
একটি গোলাপের বাগান গড়ি—
লাল রঙে রাঙা, নিঃশব্দে ফুলে ভরে।

তুমি একদিন বলেছিলে,
রক্তজবা মানেই চিরন্তন ভালোবাসা,
তোমার অভিমানে লুকোনো ছিল রাগের আগুন,
তবু তার গভীরে ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আ.লীগের মত বিএনপি কেউ নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে

লিখেছেন অপলক , ১৫ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:২৫

ক্ষমতায় না বসতেই যা শুরু করেছে বিএনপি, মনে হয় না তারা তাদের যোগ্যতা বা উপযোগিতা ধরে রাখতে পারছে। এত এত করাপশন গত আগস্ট থেকে যে, এমন কোন সেক্টর নাই যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইহাকেই বলে আগবাড়িয়ে মাড়া খাওয়া

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৯


শিক্ষিত জঙ্গি মোদী ভোটের মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই হাসিনার মতো জঙ্গি নাটক সাজায়; দুজনের পার্থক্য হলো হাসিনা নিজদেশের জনগন হত্যা করে নিজদেশের জনগনকেই দোষ দেয় অপর দিকে মোদী নিজদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাসুদ(শাহবাজ ) তোমরা কি আর ভালো হবা না ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৯


বাংলাদেশপন্থীরা ভারত ও পাকিস্তানপন্থীদের হাউকাউতে অতিষ্ঠ। ভারত ও ভাদা রা মনে করে ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়েছিলো। ভারত বাংলাদেশ কে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। গুগলে সার্চ করলেও এমন কিছুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×