somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সন্তুবীরের উপাস্য (পর্ব-৬)

১৭ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


- আরে! আপনি এতোটা আবাক কেন হচ্ছেন?এটা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। আপনি একদিন বলেছিলেন না.. আমি আপনাকে স্রেফ মনে করাতে চাইছিলাম।
আমি একদিন বলেছিলাম?ভাবতে ভাবতে মনের স্মৃতিপটে হাতড়াতে থাকি। অনেকটাই দ্রুত পাতার পর পাতা উল্টাতে থাকি। সাম্প্রতিক সময়ে এমন কী বলেছি বেশ কিছু ঘটনা জলের মতো মনে পড়তে থাকে। কিন্তু কিছুতেই মনে পড়ছে না কী এমন কথা যেটা গতকাল নেহা প্রয়োগ করেছে।নাহ! তেমনি কিছু স্মৃতির পাতায় ভাস্বর হলো না। অথচ মাথায় মধ্যে অনবরত ঘুরপাক খেতে থাকে।
কিছুক্ষণ মাথা চুলকিয়ে স্মরণ করতে না পেরে অবশেষে আত্মসমর্পণ করি। বলে ফেলি,
- স্যরি নেহা ঠিক মনে করতে পারছি না।প্লিজ মনে করিয়ে দাও কোন ফর্মুলার কথা তুমি বলছো।
নেহা চারপাশটা একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বেশ আহ্লাদিত হয়ে আরও একটু কাছে এসে বলতে থাকে,
- জানেন তো আমাদের কোম্পানির ঔষধের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্টের ব্যবসা আছে। অনেক চিন্তা ভাবনা করেই কোম্পানি প্রোডাক্টগুলো তৈরি করে। মানের দিক দিয়ে যাদেরকে উচ্চ গুণসম্পন্ন বলা যায়। শীতকালে এমনিতেই ঘরে ঘরে বাচ্চাদের সর্দিকাশি লেগেই থাকে। ঠান্ডা কখনোবা আমাদের বড় মানুষদেরও কাবু করে ফেলে। এ সব কথা মাথায় রেখে কোম্পানি এবার বাজারে খুব ভালো একটা মধু নিয়ে এসেছে। নাম দিয়েছে 'স্পেশাল সরষে ফুলের মধু'। প্রচারের জন্য বেশ কিছু স্যাম্পেল কপিও পাঠিয়েছে। আপনি যেহেতু আমাকে অসম্ভব ভালোবাসেন। তাই আপনি হলেন আমার প্রথম পছন্দের মানুষ। অস্বীকার করবো না যে আপনাকে প্রথমকপি না দেওয়া পর্যন্ত খুব অস্থির লাগছিল। কিন্তু আপনাকে দেওয়া বললেই তো আর দেওয়া সম্ভব নয়। সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে দিদি।দিদি একদম আমাকে সহ্য করতে পারেন না। এদিকে কোম্পানির কাছে কাস্টমারদের ফিডব্যাক জানানোটাও জরুরী হয়ে পড়েছে। অগত্যা কোনো উপায় না পেয়ে গতকাল সন্ধ্যায় আপনার শেখানো পদ্ধতি প্রথম ব্যবহার করেছি।দিদি ঔষধ আনতে গিয়েছিলেন।আর তখনই দুষ্টু বুদ্ধিটা মাথায় চলে আসে। জানতাম মধুর বিষয়টি দিদিকে বললে কাজ তো হবেই না উল্টে দশটা কথা শুনিয়ে দিবেন। কিন্তু শুধু একটা মধুর ফাইল নিয়ে তো আর আপনার সঙ্গে দেখা করা শোভনীয় নয়।তাই একটু বাড়তি মাত্রা যোগ করতে প্রেসক্রিপশনের শরণাপন্ন হয়েছিলাম । প্রেসক্রিপশনে ছয়টি ঔষথের মধ্যে দিদিকে পাঁচটি দিয়েছিলাম। একটা লুকিয়ে রাখি। অবশ্য বুদ্ধিটা আপনারই। শুরুতে আমি এটাকে বোঝাতে চেয়েছিলাম। যাইহোক তাড়াহুড়োর কারণে দিদি খেয়াল করেননি আমি কয়টি ওষুধ দিয়েছি।আশায় ছিলাম রাতটুকু উনি কোনক্রমে পার করলেই হয়। সকালে গিয়ে আগেভাগেই ঔষধটা দিয়ে আসবো।সেই মতো এখন যাচ্ছিলাম ঐ ঔষধের সঙ্গে আমাদের কোম্পানির স্যাম্পেল মধুর একটি ফাইল আপনাকে গিফট করতে। মনে মনে একটা খচখচানি হচ্ছিলো। যদি দিদি সামনে পড়ে যান তাহলে ওনাকে ফেস করবো কীভাবে। এখন পথিমধ্যে আপনার দেখা পাওয়ায় মুশকিল আসান হয়েছে। খুব ভালো হলো দিদির ঔষধ দেওয়াও হলো আবার আপনার দেখাও পেয়ে গেলাম।

আমি নেহার সরলতায় ও আন্তরিক ব্যবহারে খুশি হলেও মধু বা ঔষধ গ্রহণে রাজি হলাম না। বললাম,
- নেহা তোমার প্লান ঠিক আছে। কিন্তু আমি এটাকে সামান্য রদবদল করতে চাই।
- তার মানে? নেহা বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে।
আমি বলি,
- তুমি এই মধুটা আমাকে না দিয়ে দিদিকে উপহার দেবে এবং সেটা করবে আমাদের বাড়িতে গিয়ে। কিন্তু ভুল করেও আমার নাম মুখে নিয়ে এসো না।
নেহা,
-পারবো না দিদির সামনে যেতে। পারবো না,বলে সমানে মাথা নাড়াতে থাকে।
আমি শান্ত গলায় বলি,
- লক্ষী মেয়ে! মাথা গরম করো না। দেখো দিদির গঞ্জনা আমাকেও শুনতে হয়। তাইবলে কি আমি তাকে ত্যাগ করেছি? তোমাকেও একটু মানিয়ে নিতে চলতে হবে না। সংসারের সব মানুষ তো আর সমান হবে না। কাজেই একটু সাবধানে চলবে।আর হ্যাঁ আমি যদি তোমার নাম না করে কেনার কথা বলি সেখানেও সমস্যা আছে। কেন হঠাৎ মধু কিনতে গেলাম বা কে উপহার দিয়েছে, কেন দিয়েছে এসব নিয়ে হাজারো প্রশ্নের মুখে আমাকে পড়তেই হবে।যেটা ম্যানেজ করা খুব সহজ হবে না।তাই আমার পরামর্শ তুমি যদি নিজে গিয়ে সরাসরি দিদিকে ঔষধ সহ মধুটা গিফট করো তাহলে ডাবল ধামাকা সুবিধা হবে।
নেহা অনেকটা ঢোক গিলে খুব নিচু গলায়,
- আমাকে যেতে বলেছেন? তারমানে আমাকে বন্দুকের সামনে দাঁড় করাবেন?
- অ্যা অ্যা তুমি ওভাবে দেখছো কেন?দিদি সামনাসামনি হম্বিতম্বি করে ঠিকই কিন্তু মনটা খুব নরম।
সঙ্গে সঙ্গেই চোখমুখে ভেংচিয়ে নেহা জবাব দেয়,
- থাক আর নিজের বৌয়ের জন্য ঢাক পেটাতে হবে না।অত যদি প্রেমে গদগদ থাকবেন তাহলে মেয়ে দেখলে ছুঁকছুঁকানি সামান্যতম কমেনি সেটাতো টের পাই।
- আহা! নেহা তুমি না বড় সেন্টিমেন্টাল। আসলে তুমি নিজেকে অন্য মেয়েদের সাথে গুলিয়ে ফেলো না। আমার মধ্যে সামান্যতম ওমন নারীকাসক্ত বোধ নেই। কিন্তু তুমি আমার জীবনের সবকিছু ওলোটপালোট করে দিয়েছ।কেন তুমি অতো সুন্দরী হলে বলো দেখি?
নেহা লাজুক হাসিতে,
- না না আমি এমন কিছু সুন্দরী নই। আপনি একটু বাড়িয়ে বলছেন।
- বাড়িয়ে বলছি মানে ফালতু কথা? অর্থাৎ তুমি আমাকে ভরসা করোনা?
- আরে না সেকথা নয়। ছাড়ুন হাতে বেশি সময় নেই। বুঝতেই পারছি দিদির সামনে তাহলে আমাকেই যেতে বলছেন।
- এই তো লক্ষী মেয়ে। হ্যাঁ তোমার যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। একজন নারী হিসেবে তুমি নিশ্চয় মানবে যে গিফট পেতে মেয়েরা বেশি পছন্দ করে।আর সেটা যদি দামী হয় তাহলে তো কথাই নেই, আনন্দে আটখানা যাকে বলে।
আমার কথা শুনে নেহার চোখমুখ চিকচিক করে ওঠে। প্রায় মুহূর্তেই হাল্কা মাথা দুলিয়ে,
- এতোক্ষণে বুঝেছি।বেশ সেটাই হবে।
আমি ওকে আরও সাহসী হতে বলে,
- আর দেরি নয়।এখনি অপারেশন শুরু করা যাক। তুমি বরং দশ মিনিট পরে এসো আমাদের বাড়িতে।আর মনে মনে সাহস সঞ্চয় করো।নিজ হাতে দিদিকে এগুলো দিলে দেখবে তোমার সম্মন্ধে ওর ধারণা অনেকটাই বদলে গেছে।
নেহা বাধ্য মেয়ের মতো আরও একবার মাথা নাড়ালো। আমি ওকে দাঁড় করিয়ে তড়িৎবেগে বাড়ির পথে এগিয়ে গেলাম।
বাড়িতে এসে দেখি,শ্রী বাইরের গেটে দাঁড়িয়ে রাস্তার উল্টোদিকের বাড়ির বৌদির সঙ্গে মশগুল গল্প জুড়েছে। মনে মনে বললাম বাহ! দারুণ সু্যোগ ও ওইভাবে গল্প করুক।খালি হাত দেখে কিছুটা তাচ্ছিল্যের স্বরে জিজ্ঞেস করে,
- চালের গুঁড়া পাওনি?
আমি ভীষণ বাথরুম পেয়েছে ইশারা করে মুখে কিছু না বলে অনেকটা গোঙাতে গোঙাতে দ্রুত পা চালিয়ে উপরে উঠে আসি। উপরে এসে সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে স্লাইডিংয়ে চোখ রেখে পজিশন নিয়ে থাকি। কিছুক্ষণ পর দূরে চোখ রাখতেই দেখি শম্বুক গতিতে ফালুক ফুলুক করতে করতে দেখি নেহা এগিয়ে আসছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:১৪
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×