somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাপগল্প: কখনো রাত অনিন্দিতার চোখের ভেতর...

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




দুইশত সেকেন্ড সময় দেয়ালে মুখ কামড়ে থাকা পুরোনো ঘড়ির কাঁটার সাথে গুণে গুণে টিকটিকির হঠাৎ ডাকে ছন্দ হারিয়ে পাশ ফিরে শোয় যখন সে;খর্বকায় কাঁটার অবস্থান তখন অভিলম্ব থেকে একশ'পাঁচ ডিগ্রি পেরিয়ে স্থির।টিমটিমে নীল আলোর ভেতর নিকোটিনের প্যাকেটে শূন্যতা আরো গাঢ় হয়ে উঠে।অনেককাল আগে পড়া কবিতার চরণ মনে পড়ে...বাতিঘর নিভে গেলে চোখে অন্ধকার.....
বাতিঘর নিভে গেছে।জাহাজের মাস্তুলে নিষ্প্রাণ চোখ নিয়ে নাবিক অন্ধকারে হাতড়ে বেড়ায়।কাঁটা এগিয়ে যায় ক্রমাগত।নীল আলোয় বিদীর্ণ হতে হতে নাবিক ভেসে চলে আলোর দিকে;যেখানে ফুল পাতার কলরব;পদের ব্যস্থতা;ফুয়েলের ক্রমাগত দহনে বাতাসে জমে উঠে আদিমগুহার দুয়েকটা দেয়াল আর বাঁশের বেড়াবন্দী মাটির ত্রিভুজ.....
০০০০
টিকটিকি অনিন্দিতার কখনোই অপ্রিয় ছিলো না।দেয়াল জুড়ে তাদের ছুটন্ত পায়ের চিহ্ন গুণে গুণে সে নিজেও দেয়ালভ্রমণে যেতে চাইত।অনিন্দিতা প্রায়ই বলতো,দেখে নিও,একদিন টিকটিকি রা তোমার দেয়ালঘড়ি খেয়ে ফেলবে।সেদিন সময় আর এগিয়ে যাবে না।
তারপর জুড়ে দিত নিত্য আবদার,আমাকে একটা টিকটিকি এনে দাও..

অনিন্দিতা টিকটিকির আশায় শাদা আলোর বদলে নীল করে নিত সারাঘর।জাফরানের চাদরে থরথর কম্পনে হয়ে যেত শুক্লপক্ষের চাঁদ।পুরো জমিন জুড়ে ঘামের শরীর ধরে বৃষ্টি নামলে অনিন্দিতার নিঃশ্বাস প্রায় থেমে গাঢ় হয়ে যেত।অনভিজ্ঞ চাষীর ভুল চাষাবাদ প্রায়শঃ অত্যাচার হয়ে উঠলেও তার আঙুল চেপে রাখতো চাদরের খুঁট।

অনিন্দিতা অবশেষে একরাত নব্বুই ডিগ্রি কাঁটায় টিকটিকির অস্তিত্ব পেয়েছিলো।

০০০০
দূরে মসজিদের মিনারে শব্দ প্রকট হয়ে উঠলে সে কাঁটাগুলোর অবস্থান মাপে।পাশের দেয়ালে আটকে থাকা টিকটিকির ঘুম ভেঙেছে কি না সে বুঝতে পারে না।বামহাতের অভ্যাস শূন্যতা থেকে ফিরে আসলে চাদরের অর্ধেক অর্থহীন হয়ে উঠে।সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবে...এখানে একটা অস্তি্ত্ব ছিলো...উষ্ণতা ছিলো....নীলশাড়ির ভেতর মোড়ানো একটা চাঁদ ছিলো....
চোখের কার্ণিশে জমা জলের গতি রোধ না করে সে দৃষ্টি মেলে রাখে যতক্ষণ না ঝাপসা হয়!
মিনারে শব্দ বোবা হলে সে দেখে টিকটিকি টা দুই পা এগিয়ে তাকিয়ে আছে অনিন্দিতার দিকে!
টিকটিকি টা কি সব কিছু জানে?

০০০০

অনিন্দিতা স্বপ্নের ঘষামাঝা করে তুলির আঁচড় কাটে।ক্যানভাসে ভেসে উঠে চোখজোড়া..আবছা ভুরু..চুল..নাক..তবে ঠোঁট আঁকে না।কেন আঁকে না,তা নিজের ই জানা হয় না।
ঠোঁটবিহীন ক্যানভাস স্থির চেয়ে থাকে অনিন্দিতার চোখে!কেঁপে কেঁপে পাপড়িগুলো বার্তা বিনিময় করে।অনিন্দিতা কখনো হাসে;কখনো লজ্জা পায়,কেঁপে উঠে আনন্দে..
ক্যানভাস ছাড়িয়ে ঘরময় দেয়াল আর ছাদময় ঘুরে বেড়ায় চারটে হাত আর পা।প্রতিটা অঙ্গেরও নামকরণ হয়ে গেলে অনিন্দিতা আরো হাত-পা সৃষ্টি করে..নতুন নাম নিয়ে ওরা ও আগের চিহ্ন ধরে হাঁটতে থাকে....

০০০০
টিকটিকি টা এই মুহুর্তে কি ভাবছে?তার চোখেও কি জল নামছে?টিকটিকির রক্ত সাদা।তাহলে কান্নার রং কি হবে?....
দীর্ঘ কাঁটা টা ক্রমাগত এগিয়ে গেলেও তার মনোযোগ পায় না।সে জানে,সময় টা এখানেই এসে রোজ স্থির হয়ে যায়।
০০০০
অনিন্দিতা টিকটিকির আশায় শুয়ে পড়ে সাদা চাদরের তলে।সূচের ডগা রক্তের সাথে সাক্ষাত করলে নির্দ্বিধায় ঘুমিয়ে ও পড়ে।কৃত্রিম আলোর গুচ্ছচোখের ভেতর তার চাঁদের গায়ে দাগ কেটে কেটে যায় ধারালো ছুরি-কাঁচি।
বাইরে সবার কাছ হতে একটু দূরে দাঁড়ানো অনিন্দিতার আবদাররক্ষাকারীর জুলফি বেয়ে ঘামের সতেরতম ফোঁটা ঝরে পড়ার মূহুর্তে খুলে যায় অপারেশান রুমের দরোজা।ভেতরে তাকানো মাত্র অনিন্দিতার চাঁদমুখ সাদা চাদরে সেবিকার রুঢ় হাতে ঢাকা পড়ে যেতে দেখে দুলে উঠে সবকিছু।
আধা ঘন্টা পরে সে শুধু জানতে পারে,অনিন্দিতার আঁকায় ভুল ছিলো...উল্টো ক্যানভাসে এঁকেছিলো সে...অজানা কারণে না আঁকা ঠোঁট একবারও হাসে নি....ভাঙে নি অনিন্দিতার ঘুম ও....

০০০০
সে অবাক হয়ে দেখে...টিকটিকি টা আজো দেয়ালঘড়ি টা খেয়ে ফেলেছে..অনিন্দিতার কথা মিথ্যে হয় নি...রোজকার মত তার সময় থেমে গেছে।
ঘড়িভক্ষণ শেষে টিকটিকি টা স্থির চেয়ে থাকে অনিন্দিতার চোখের ভেতর।

ঘুমিয়ে যাওয়ার পর অনিন্দিতা জাফরান চাদর হতে দু'ভাগ হয়ে বাঁশের বেড়াবন্দী মাটির ত্রিভুজ আর দেয়ালছবির ভেতর ঢুকে পড়লে টিকটিকি সমেত অনিন্দিতার চোখের ভেতর ঢুকে ঘড়ির পুণর্জন্মের অপেক্ষা করা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।


০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
৪০টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×