somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুলে দাঁড়িয়ে পানি পান করে ফেললে মনে পড়া মাত্র তা বমি করে ফেলে দিতে হবে!- সহিহ মুসলিম থেকে একটি উদ্ভট হাদীস।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৮:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি উদ্ভট হাদীসের গল্প শুনুন। ছোটবেলা থেকেই সবসময় শুনে এসেছি যে বসে পানি খাওয়া সুন্নত। মাঝে মাঝে তাড়াহুড়ায় দাঁড়িয়ে পানি খেয়ে ফেললে মা বকে দিতেন। একটু বড় হয়ে ধর্মীয় কিছু বইতে হাদীসের রেফারেন্সে দেখলাম যে দাঁড়িয়ে পানি খাওয়া শুধু সুন্নতের বরখেলাপ নয়, এটা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। মনেপ্রাণে যথেষ্ঠ ধার্মিক হওয়া সত্বেও এই কঠিন নিষেধাজ্ঞা সবসময় পালন করতে পারিনাই। ইমাম সাহবকেও অনেক দিন দেখেছি দাঁড়িয়ে পানি খেতে। এই কঠিন নিষেধাজ্ঞার হাদীসগুলোর মাঝে একটি হাদীস এক নজড় দেখা যাকঃ

আনাস (রা) কর্তৃক বর্ণিত রাসূল (সা) দাঁড়িয়ে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন। ক্বাতাদাহ (রা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন '' আমরা জিজ্ঞাসা করলাম খাবার ব্যাপারে কি নিয়ম? প্রতিত্তরে আনাস (রা) বললেন, ' এটা আরও বেশী ঘৃণিত '।'' -- সহিহ মুসলিম, বুক ২৩ হাদীস ৫০১৮

একটু বড় হয়ে আরও কিছু আলেমের কাছে খোঁজ খবর করে জানলাম যে দাঁড়িয়ে পানি খাওয়া আসলে হারাম নয় কারণ নবী নিজেও দাঁড়িয়ে পানি পান করেছেন। । বসে পান করা নবীর একটা উপদেশ মাত্র। যদিও উপরের হাদীসটি সেই কথা বলে না। উপদেশ আর নিষেধ এক জিনিস নয়।

সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা হচ্ছে নবী নাকি বলেছেন ভুল করে দাঁড়িয়ে পানি পান করে ফেললেও তা বমি করে ফেলে দিতে। (আমার বিশ্বাস এটা জাল হাদীস, এমন আজগুবী কথা নবী জীবনেও বলতে পারেন না।) আসুন হাদীসটি পড়ে দেখিঃ
_____________________________________________
আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা) বলেছেন ''কারও দাঁড়িয়ে পানি পান করা উচিৎ নয়। যদি কেউ ভুলে যায় তাকে অবশ্যই বমি করতে হবে।''
-- সহিহ মুসলিম, বুক ২৩ হাদীস ৫০২২
_____________________________________________
এই উদ্ভট হাদীসটির ব্যাখ্যায় কিছু আধুনিক চিন্তাধারার আলেম বলেন যে বমি করার হাদীসটি এখন আর প্রযোজ্য নয়। নবী নিশ্চয়ই এই নিয়ম বাতিল করে গিয়েছিলেন। এই ব্যাখ্যার সাপোর্ট হিসেবে নিচের হাদীসটি তারা উল্লেখ করেন। যদিও বেশীরভাগ আলেম এই হাদীস বাতিল এই মতবাদের পক্ষে না।

আন-নাজ্জাল বিন সাবরা কর্তৃক বর্ণিত, '' আলী (রা) যোহরের সালাত আদায় করার পর আসরের সালাতের পূর্ব পর্যন্ত কুফার (মসজিদের) বিস্তৃত উঠানে বসে লোকজনের বিষয়াদি নিয়ে আলাপ করছিলেন। তখন তার নিকট পানি আনা হলে তিনি এর কিছু অংশ পান করলেন, কিছু অংশ দিয়ে মুখ হাত-পা ও মাথা ধৌত করলেন। তারপর তিনি দাঁড়ালেন এবং পানির বাকি অংশটুকু দাঁড়ানো অবস্থাতেই পান করে বললেন, ' কিছু লোক দাঁড়িয়ে পানি পান করতে পছন্দ করেনা যদিও নবী এটা করেছিলেন ঠিক এখন আমি যা করলাম '।'' -- সহিহ বুখারী, বুক ৬৯, হাদীস ৫২০

এই হাদীস দুটির ব্যাপারে আধুনিক আলেমদের ব্যাখ্যায় কিছু সম্পূরক প্রশ্ন আসে।

১) বাতিল না বলে হাদীসটিকে জাল বলতে সমস্যা কোথায়? হাদীস বাতিল হলে সেটা হাদীসের বইতে থাকার কথা, যেমন মুতা বিবাহ। বমি করা বিষয়ক হাদীসটি বাতিল হয়েছে এমন কোন হাদীস সহিহ হাদীস গ্রন্থগুলোতে নেই কেন?
২) হাদীসটি বাতিল হয়ে থাকলে সকল সাহাবার সেটি জানা থাকার কথা কিন্তু হযরত আলী (রা) ব্যতীত আর কেউ তা জানতেন না কেন?
৩) হযরত আবু হুরায়রা (রা) নবীর সাথে শেষ দুইটি বছর প্রায় সর্বক্ষণ সঙ্গী হিসেবে ছিলেন। আবু হুরায়রা এই বমি করার হাদীসটির একমাত্র বর্ণনাকারী। এত ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে থাকার পরও কেন আবু হুরায়রা এই হাদীসটি যে বাতিল তা জানতেন না?
৪) একটি বাতিল হাদীস কেন ইমাম মুসলিম তার সহিহ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করলেন?

আর বাকি সব আলেম, বিষেষ করে আহলে হাদীস গ্রুপের অনুসারীদের কাছে প্রশ্ন

১) আপনারা বলেন যে হাদীসও আল্লহর ওহী। হাদীস না মানলে সে কাফের। এখন কেউ যদি দাঁড়িয়ে পানি খেয়ে পরে বমি করতে অস্বীকার করে তাহলে কি সে কাফের হয়ে যাবে?
২) হাদীসের এই কথাগুলোর মাঝে যে পরিষ্কার কন্ট্রাডিকশন আছে যেমন কোথাও বলা আছে দাঁড়িয়ে পানি খাওয়া নিষেধ আবার কোথাও বলা আছে তা যায়েজ, এটা কি প্রমাণ করে না যে হাদীস আল্লাহর ওহী নয়? কারণ কোরানে আল্লাহ বলেন আল্লাহর বানীতে কোন কন্ট্রাডিকশন নেই।
৩) বুখারী/মুসলিম শরীফের একটা উদ্ভট বা ভুল হাদীস অবিশ্বাস বা অমাণ্য করলে আমাদের কাফের বলার অধিকার কে আপনাদের দিয়েছে?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১:১৪
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×