somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পূর্ণবয়ষ্ক পুরুষ কর্তৃক নারীর বুকের দুধ খাওয়া নিয়ে সহিহ মুসলিমের উদ্ভট কিছু হাদীস

১১ ই নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৫:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ এমন কিছু হাদীস নিয়ে আলোচনা করব যেগুলো বিশ্বাস করলে উম্মুল মুমীনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) সম্পর্কে অত্যন্ত খারাপ ধারণা সৃষ্টি হয়। আর এই হাদীসগুলো বিশ্বাস না করলে বলতে হয় সহিহ বুখারী/মুসলিম মোটেই সহিহ গ্রন্থ নয়, জাল হাদীস এখানেও অনেক আছে। যাই হোক, প্রথমে কিছু তথ্য দিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক।

হযরত আবু হুদায়ফা ছিলেন আল্লাহর রাসূলের (সা) সাহাবী যিনি বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি আজাদ হওয়া গোলাম সালিম কে পালক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। আবু হুদায়ফা স্ত্রী সাহালা ও পালক পুত্র সালিমকে নিয়ে এক কক্ষ বিশিষ্ট একটি ঘরে বাস করতেন। এবার নিচের আশ্চর্যজনক হাদীসটি দেখা যাকঃ


আবু সালামা তনয়া জয়নব কর্তৃক বর্ণিত, '' আমি আল্লাহর রাসূল (সা) এর বিবি উম্মে সালামাকে আয়েশার প্রতি বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর কসম, আমি এমন কোন যুবক ছেলের দৃষ্টিগোচর হতে চাইনা যে দুগ্ধপোষ্য বয়স পার করে ফেলেছে, তখন তিনি (আয়েশা) বললেনঃ তা কেন? সুহেইল এর কণ্যা সাহালা আল্লাহর রাসূলের (সা) কাছে এসে বলেছিলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সা), আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি সালিম যখন (ঘরে) প্রবেশ করে তখন আমি আবু হুদায়ফার মুখে (অসন্তোষ এর মনোভাব) দেখি, তখন রাসূল (সা) বললেনঃ তাকে স্তন চোষাও (Suckle him)। তিনি (সাহালা বিন্তে সুহেইল) বললেনঃ তার দাঁড়ি আছে। কিন্তু তিনি আবার বললেনঃ তাকে স্তন চোষাও, এটা আবু হুদায়ফার মুখ থেকে যা আছে (অসন্তোষ এর মনোভাব) তা দূর করবে। তিনি (সাহালা) বললেনঃ (আমি এটা করেছিলাম) এবং আল্লাহর কসম, আমি আবু হুদায়ফার মুখে (অসন্তোষ এর মনোভাব) দেখিনি।'' --- সহিহ মুসলিম, বুক ৮, হাদীস ৩৪২৮


এখানে suckle এর অনুবাদ স্তন চোষা না হয়ে স্তন্যদান হতে পারে। কিন্তু বুখারী ও মুসলিম শরীফ এর শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকারক ইমাম আসকালানী ও ইমাম নববীর কথা অনুযায়ী Suckle এর অনুবাদ দুধ চোষা হতেই হবে, অন্যথায় এটা বৈধ ফস্টারেজ হবেনা। ইমাম আসকালানী তার ইসাবা গ্রন্থে উপরের হাদীসটির ব্যাখ্যায় বলেন সাহালা বাটিতে দুধ দিয়েছিল যা সালিম বাটি থেকে পান করেছিল। যদিও এভাবে পান করলে ফস্টারেজ বৈধ হয়না তাই সম্ভবত এটা ছিল শুধুমাত্র সালিমের জন্য একটা ব্যতিক্রম।

তবে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে হযরত আয়েশা সালিমের ঘটনাকে ব্যতিক্রম হিসেবে মনে করতেন না। ইসলাম এডাল্ট সাকলিং এর বৈধতা না দিলেও হযরত আয়েশা এডাল্ট সাকলিং এর পক্ষে যুক্তি দিতেন। হযরত আয়েশা যখন সাকলিং এর এই নিয়মের কথা হযরত উম্মে সালামাকে বলেছিলেন তখন উম্মে সালামা সহ নবীর সকল বিবি এই নিয়ম প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। প্রমাণ হিসেবে চলুন নিচের হাদীসটি দেখা যাকঃ


আল্লাহর রাসূল (সা) এর বিবি উম্মে সালামা বলতেন যে আল্লাহর রাসূলের (সা) সকল বিবিগণ এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন যে কারো এই ধরনের দুধমা সম্পর্ক তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, আর আয়েশাকে বলেছিলেনঃ আল্লাহর কসম, আমরা এখানে আল্লাহর রাসূলের (সা) তরফ থেকে শুধুমাত্র সালিম এর জন্য বিষেষভাবে দেয়া (সুবিধা) ছাড়া অন্য কিছু পাচ্ছিনা, এবং কেউ এধরনের দুধমা সম্পর্ক দিয়ে (আমাদের) গৃহে প্রবেশের অনুমতি পাবেনা আর আমরা এই দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করিনা। --- সহিহ মুসলিম, বুক ৮, হাদীস ৩৪২৯

নবীর (সা) অন্যান্য বিবিগণ এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করলেও হযরত আয়েশা এটাকে বৈধ বলে মনে করার পাশাপাশি এটাও দাবী করতেন যে এডাল্ট সাকলিং এর বিষয়টি কুরআনের আয়াত হিসেবে নাজিল হয়েছিল। নিচের হাদীস দুটি দেখলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবেঃ


আয়েশা বর্ণনা করেন যে পবিত্র কুরআনে নাজিল হয়েছিল যে দশ বারের নিখাদ স্তনচোষণ (Suckling)) একটি বিয়েকে অবৈধ করে ফেলে, পরে এটা পাঁচ বার দ্বারা বাতিল (এবং প্রতিস্থাপিত) হয় এবং আল্লাহর রাসূল (সা) মৃত্যুবরণ করেন আর তার আগে এটা কুরআনে ছিল। ---সহিহ মুসলিম, বুক ৮, হাদীস ৩৪২১


আয়েশা কর্তৃক বর্ণিত, '' পাথর নিক্ষেপ এবং একজন পূর্ণবয়ষ্ক মানুষকে দশবার স্তনচোষন (Suckling) এর আয়াত নাজিল হয়েছিল এবং সেগুলো একটা কাগজে (লিখিত) ছিল আর আমার বালিশের নিচে রাখা হয়েছিল। যখন রাসূল (সা) ইন্তেকাল করলেন আর আমরা তাঁর মৃত্যু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম তখন একটি ছাগল ঢুকে কাগজটি খেয়ে ফেলেছিল।'' --- সুনান ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৯৪৪

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সাকলিং নিয়ে হযরত আয়েশার ধারণা যে ভুল তা নিচের হাদীসটি দিয়ে প্রতীয়মান হয়ঃ


আয়েশা বর্ননা করেনঃ একদা নবী (সা) আমার নিকট আসলেন যখন একজন লোক আমার ঘরে ছিল। তিনি বললেন, ''ও আয়েশা! এটা কে?'' আমি জবাব দিলাম, ''আমার দুধভাই'' তিনি বললেন, ''ও আয়েশা! তোমার দুধভাইদের সম্পর্কে নিশ্চিত হও, যেহেতু দুধের সম্পর্ক শুধু তখনই বৈধ হয় যদি এটা দুগ্ধপোষ্য সময়ে (দুই বছর বয়স পর্যন্ত) ঘটে থাকে।'' --- সহিহ বুখারী, বুক ৪৮, হাদীস ৮১৫


এ থেকে কি বুঝা গেল না যে হযরত আয়েশা নবীর (সা) কথা বুঝতেন না? উপরের হাদীস থেকে এটা পরিষ্কার যে প্রাপ্তবয়ষ্ক কারো জন্য স্তন স্পর্শ বা চোষন করে দুধমা বানানো ইসলাম সমর্থন করেনা। ইমাম আসকালানীর সূত্রে জানলাম সালিম নিজেও স্তন স্পর্শ বা চোষন করেনাই, সে বাটিতে দুধ নিয়ে তা পান করেছিল। কিন্তু হযরত আয়েশা কেন এই সহজ কথাটা বুঝতেন না? নবী (সা) আয়েশাকে পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেয়ার পরেও কেন তিনি এডাল্ট সাকলিং এর পক্ষে ছিলেন? তাহলে এমন অবুঝ আয়েশার বলা অন্যান্য হাদীস বিশ্বাস করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত?নবী পরিষ্কার বুঝিয়ে দেয়ার পরেও তিনি কিভাবে এডাল্ট সাকলিং এর ধারণা বৈধ বলে মনে করতেন? আমার ব্যক্তিগত ধারণা উম্মুল মুমীনিন জীবনেও এমন কথা বলতে পারেন না। এটা তাঁর নামে মিথ্যাচার, অন্য কথায় এটা একটা জাল হাদীস।

এই হাদীসটি অনেক দুষ্ট আলেম অনেক দুষ্টামীর জন্য ব্যবহার করেছেন। সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আ'লা মওদুদী। এই ভদ্রলোক এডাল্ট সাকলিং এর কড়া সমর্থক ও প্রচারক ছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৩
৪৫টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×