somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসলিম সমাজ কি এখন স্বার্থপর হয়ে পড়েছে?

১৭ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুসলিম সমাজ আজ পৃথিবীর অন্যান্য মানুষের কাছ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। মানব জাতির চলমান অগ্রগামীতা ও প্রগতিশীলতার সাথে মুসলিম সমাজের আজ কোন সম্পর্ক নেই। অনেকেই হয়তো এটুকু পড়েই দ্বিমত করবেন, তবে এটাই বাস্তব সত্য। একজন মুসলিম হিসেবে এজন্য আমি অত্যন্ত ব্যথিত।

মনে করুন কাল হঠাত করে আল্লাহ দুনিয়ার সকল মুসলিমকে আসমানে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন, এতে কিন্তু দুনিয়ার বাকি মানুষদের জীবনে খুব একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বেনা। মুসলিমরা টয়োটা, ভক্স ওয়াগন, মার্সিডিজ, বিএমডব্লু ইত্যাদি গাড়ি তৈরী করেনা তাই দুনিয়ার লোকের গাড়ির অভাব হবেনা। আমরা জনপ্রিয় কোন গান বাজনা অথবা সিনেমা তৈরি করিনা কারণ সম্ভবত ইসলামে এগুলো হারাম, তাই দুনিয়ার বাকি লোকের বিনোদনের অভাব হবেনা। আমরা এমন পরিমাণে কোন খাদ্যশস্য উৎপন্ন করিনা যে বাকি দুনিয়া আমাদের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল বা তারা নিজেরা সেটা পূরণ করতে পারবেনা। আমরা এমন কোন নামকরা ব্র্যান্ডের কাপড়, জামাজুতা বা টেকি পণ্য তৈরী করিনা যে দুনিয়ার লোক তা থেকে বঞ্চিত হবে। বিজ্ঞান ও গবেষণার ক্ষেত্রে আজ আমাদের বলার মত কোন অবদান নেই।

গুটি কতক যে মুসলিম দেশগুলো আজ উন্নত দেশ হিসেবে পরিচিত তার সবগুলোই (এমনকি মালয়েশিয়াও) প্রাকৃতিক সম্পদের তথা তেল বা গ্যাসের উপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। তেল গ্যাস কেড়ে নিলে কিছুদিনের মাঝেই এসব দেশের পতন হবে। এমনকি তেল-গ্যাস উত্তোলনের জন্যেও তাদের নিজস্ব যোগ্যতা নেই, অমুসলিমদের উপর নির্ভরশীল। শুধুমাত্র একটি মুসলিম দেশ আছে যারা নিজ যোগ্যতায় উন্নত সেটা হচ্ছে তুরস্ক। তবে তুরস্ক মুসলিম হলেও একটা সেক্যুলার দেশ এবং বর্তমান ইসলামের সাথে এদের বমাত্রিক পার্থক্য আছে।

মুসলিমদের এই দূর্দশার মূল কারণ কোরআনের আদর্শ হতে দূরে চলে যাওয়া। কোরবানীর ঈদে আমরা পশু কোরবানী দেই এবং গোস্তের একটি অংশ গরীব দুঃখীদের দান করি। তবে অমুসলিম গরীবদের আমরা সেটা দান করিনা কারণ প্রচলিত বিশ্বাস এটাই যে অমুসলিমদের এটা দান করা যাবেনা। এতে সেই অমুসলিম দুঃখিরা ধারণা করে নিতেই পারে যে তাদের দুঃখ কষ্টে মুসলিমরা পাশে নেই। সৌদী আরবে একসময় কোরবানীর শত শত টন গোস্ত পঁচে নষ্ট হত, পরে সৌদী সরকার গাঁটের পয়সা খরচ করে এগুলো সংগ্রহ করে গরীব মুসলিম দেশে বিনামূল্যে বিতিরণ শুরু করল। তবে অমুসলিম দরিদ্র দেশগুলো এগুলো থেকে এখনো বঞ্চিত। সেই দেশগুলোর সাথে সৌদীর একটি বিচ্ছিন্নতা তৈরী হয়ে যায় এমনিতেই। অথচ কোরআনে বলা আছে অনাহারীকে খাবার দাও, অনাহারীর মাঝে মুসলিম / অমুসলিম বিভেদের কথা কোরআনে বলা নেই। ভিক্ষা দেয়ার সময়েও আমরা বেশীরভাগ সময় মুসলিম বেছে ভিক্ষা দেই। মুসলিম ভিখারী হলেও আমরা জিজ্ঞেস করি সে নিয়মিত নামাজ পড়ে কিনা, নামাজ না পড়লে ভিক্ষা নাই! আমরা যারা যাকাত দেই সেটাও মুসলিম এর বাইরে কোন অমুসলিমকে দেইনা। অমুসলিমদের সাথে আমরা বেশ ভালভাবে বিচ্ছিন্ন।

অথচ অমুসলিমরা আমাদের চাইতে ঢের ঢের বেশী পরিমাণে দান খয়রাত ও চ্যারিটির সাথে জড়িত। এটা তারা মুসলিম সহ সকলের উপকারের জন্য করে। মুসলিম- অমুসলিম, বিপন্ন প্রানী, সুমদ্রের তিমি, ম্যানগ্রোভ বন কোন কিছুই এদের চ্যারিটির আওতা থেকে বাদ যায়না। এত শত শত চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানের নাম বলা এইখানে অপ্রয়োজনীয়। এদের প্রায় সবগুলোই অমুসলিমদের। খোঁজ করে যদি ধনী মুসলিম দেশ থেকে কোন চ্যারিটির সন্ধান পাওয়া যায় দেখা যায় যে এরা শুধু মুসলিমদের সাহায্যার্থে নিয়োজিত, অমুসলিমরা এর আওতাভুক্ত নয়! সিডর ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বাংলাদেশ লন্ডভন্ড হয়ে গেলে আমেরিকা বিপুল পরিমাণ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসে। ভিক্ষুকের মত আমরা তা গ্রহণও করি। কিন্তু আমেরিকার উপর স্যান্ডি ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেলে আমরা খুশি হই, বলি যে আল্লাহর গজব পড়েছে!

ইসলাম ধর্মকে আমরা সম্মান করি, ইসলামের জন্য আমরা প্রয়োজনে জীবন দিতেও প্রস্তুত, অথচ আফসোস ইসলামের আদর্শই আমরা ধারণ করিনা। এই সম্মানের মূল্য রইল কোথায়? কোরআন বা নবীর অপমানের কথা শুনে সারা দুনিয়ায় আমরা তান্ডব চালাই অথচ কোরআন বা নবীকে আমরা খুব কমই মানি! এটা আমাদের মূল্যহীণ অন্ধ বিশ্বাস। ইসলামকে বা নবীকে নিজের জীবনে প্রয়োগ নাকরে শুধু নামে নামে এইভাবে সম্মান করা যায়না, এটা হিপোক্রিসি, বস্তুত আমরা উগ্র জাতিতে পরিণত হয়েছি।

অমুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত এত এত সুবিধা, টেকনোলজি, ঔষধ ভোগ করেও আমরা তাদের প্রতি এতটুকু কৃতজ্ঞতা পোষণ করিনা, বরং তাদেরকে জাহান্নামী/কাফের/নরকের কীট মনে করি। আমাদের মত স্বার্থপর ও অকৃতজ্ঞ আর কে হতে পারে!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:২৯
১৬টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×