আজকে আমদের গন্তব্য নিকলী হাওর। ঢাকার নিকটবর্তী ভাটি অঞ্চল কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও ইটনা উপজেলার প্রায় সবটুকু এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ নিকলী হাওর।
Click here to check my documentary on নিকলী হাওর, কিশোরগঞ্জ - Nikli Haor Kishoreganj
এক বন্ধুর আমন্ত্রণে এইবারের আমাদের যাত্রা লঞ্চে করে। ঢাকা থেকে প্রথমে ট্রেনে করে ভৈরব তারপর ভৈরব ঘাট থেকে লঞ্চে করে কিশোরগঞ্জ। সকাল ৯টায় আমাদের লঞ্চ যাত্রা শুরু করা মাত্রই হারিয়ে যেতে হয় জলরাশির রাজ্যে। মেঘনা নদী থেকে ভৈরবের নান্দনিক সৌন্দর্যটা উপভোগ করে মতো।
উলুকান্দি ছিল ভৈরব এর আদিনাম পরে স্থানীয় জমিদার ভৈরব রায় এর নামানুসারে এই এলাকার নামকরন করা হয়। ব্রিটিশ আমল থেকে বিভিন্ন ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে ভৈরব সুপরিচিত তাই এই এলাকাকে ভৈরব বাজার বলা হয়। প্রথমে এটি থানা হলেও পরে ১৯৮৩ সালে ১৫ এপ্রিল ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ অধীনে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। বন্দরনগরী ভৈরবের বেশিরভাগ মানুষ কয়লা,ব্যাগ জুতা কারখানা ব্যবসার সাথে যুক্ত। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ মাছের আড়ত এবং এর সাথে যুক্ত বরফ কল অবস্থিত। ভৈরব লঞ্চ ঘাট থেকে অষ্টগ্রাম লঞ্চ ঘাট নৌপথ এ যেতে ৩ ঘন্টর মতো সময় লাগে।
মেঘনা নদী দিয়ে হাওরে প্রবেশ করা মাত্র দৃশ্যপট ধীরে ধীরে পাল্টাতে থাকে হাওর অঞ্চল খুঁজে পাওয়া যায় গ্রামীণ পরিবেশের আসল সৌন্দর্য। বিশাল জলরাশির বুকে বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট গ্রাম। যেন একেকটা ছোট ছোট দ্বীপ। জলের সীমানা শেষ হতেই যেন বিস্তৃত আকাশ। তারই মাঝখানে কিছু ঘরবাড়ি। নৌকার চালকদেরই বসবাস এখানে। মাছ ধরার সঙ্গেও জড়িত এ অঞ্চল। এ হাওরের মাছ বিক্রি হয় প্রতিদিন শহরের বাজারে। কিন্তু তাদের মূল পেশা কৃষি। মাঝির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুকনো মৌসুমে হাওর পরিণত হয় উর্বর মাঠে। নানা ধরনের সবজি চাষ হয় তখন পুরো সময়জুড়ে।
দুপুরে আমাদের লঞ্চ এসে ভিরলো অষ্টগ্রাম লঞ্চ ঘাটে। ঘাট থেকে নেমে অটোরিকশা নিয়ে রওনা দিলাম ইটনা মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম সড়কের দিয়ে। যেটা অল ওয়েদার সড়ক নামে পরিচিত। তিনটি জেলাকে এক জায়গায় মিলিত করেছে এই সড়ক।২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক প্রকল্পের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ৮৭৪.০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কটি নির্মাণ হয়েছে। প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ। অসম্ভব সুন্দর একটা রাস্তা। এই নিকলী নামের সাথে একটি আদি গল্প প্রচলিত আছে পূর্বে নিকলী নাম ছিল আগর সুন্দর পরবর্তীতে মোগল বাহিনী খাজা ওসমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এই এলাকায় শিবির গড়ে তখন স্থানীয়রা শিবিরে জড়ো হলে দলপতি সিপাহীদের বলেন উছলে নিকালো। ফার্সি শব্দ নিকালো কালের বিবর্তনে হলো নিকলী।
একটুপর আমরা গ্রামের মধ্যেদিয়ে রওয়ানা দিলাম রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের বাড়ির দিকে। ছবির মতো সুন্দর একটা গ্রাম। সারি সারি আম গাছ, কাঁঠাল গাছ। হাওয়ের পানিতে ঝাঁকে ঝাঁকে হাঁস সাঁতার কাটছে। গ্রামের বাচ্চারা পানিতে ঝাঁপ দিচ্ছে, খেলছে। জেলেরা পানিতে মাছ শিকার করছে।
এসব দেখতে দেখতে রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের বাড়ির সামনে পৌঁছে গেলাম। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে পাশে ছোট্ট একটা বাজার গেলাম। বিভিন্ন খাবারের হোটেল আছে এখানে হাওয়ের ফ্রেশ মাছ পাওয়া যায়। বিকালের দিকে আবার একই পথে অষ্টগ্রাম লঞ্চ ঘাটের দিকে রওনা দিলাম। লঞ্চে এ সরালাম দুপুরের খাবার। বিকালের পড়ন্ত গূধোলী বেলায় অপার্থিব সুন্দর দৃশ্য দেখতে দেখতে চলতে লাগলাম ভৈরব এর উদ্দেশ্যে। পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা শেষে রাত নেমে এসেছে। সেখান থেকে ঢাকার উদেশ্য যাত্রা করব।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:৫৪