somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্প পর্ব # ০৪ জড়তা

০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাস থেকে নেমেই দম বন্ধ হয়ে আসছিল সুমির।
অচেনা শহরের অচেনা মানুষ গুলকে বীভৎস চেহারার দানব মনে হচ্ছিল তার।
বরাবরই পেসিমিস্ট সুমি,খুব কম জিনিসের সাথেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে। আজকালকার মেয়েদের মতো স্মার্ট নয়,একটু ভীরু। কনফিডেন্স লেভেল টা খুব লো। হয়তোবা জীবনের কোন এক কালো অধ্যায় ,অথবা মা বাবার কড়া শাসন অথবা ছোটবেলার লালন পালনের কোথাও ফাঁক রয়ে গেছে।
ঢাকায় এসেছে একটা ইণ্টারভিউ দিতে, আত্মীয় বলতে কেউ নেই ,মার দুঃসম্পর্কের খালার বাড়ীতে দুইদিন থাকবে।আর চাকরী হয়ে গেলে আলাদা বাসা নেবে। এটাই প্ল্যান তার।
একটা প্রাইভেট কোম্পানি,পোস্ট তার অফিস এক্সিকিউটিভ। চাকরি টা খুব সহজে হয়ে গেল।
রুম ভাড়া আর বাকি খরচ চালিয়ে মোটামুটি চলে যাবে

সুমির বয়স্ টা একটু বেশি,ভাল কোন চাকরির আশাটাই ছেড়ে দিয়েছে সে। কোন একটা কলেজ থেকে মাস্টার্স করেছে ইতিহাসে।
স্কিল্ড, প্রফেসনাল, কর্পোরেট এসব শব্দ তার এবং তার পরিবারের কাছে আজো দুর্বোধ্য এবং অপছন্দেরও । শ্যামলা মেয়ে তাই বিয়ের প্রস্তাব এলেও কথা পাকাপাকি পর্যন্ত এগোয় না। অবশ্য এটা নিছক তার পরিবারের ভুল ধারনা। ঐ যে বলেছিলাম তাদের কনফিডেন্স লেভেল টা একটু লো, তারই রিফ্লেক্সন !

ঢাকায় আসার সময় মা বলেছিল,"নিজের সম্মান বাঁচিয়ে রেখে কাজ করবি,অচেনা শহরে নিজেকেও অনেক সময় বিশ্বাস করা যায় না। শিক্ষিত, নামাজী ছেলে পেলে হাত ছাড়া করিস না।আমারা তোর ভালো বিয়ে দিতে পারছিনা,তাই বলে তুই পারবিনা একটা ভালো বিয়ে করতে??"
অফিস টা ভালই,বন্ধু ভাবাপন্ন কলিগ, অতিরিক্ত সাহায্য পরায়ণ বস এশবের মাঝে ভালই কেটে যাচ্ছিল সময়। বাড়িওয়ালী ও বেশ কো অপারেটিভ।
সেদিন সন্ধ্যায় বাড়িওয়ালীর সাথে চা খাছিল সুমি,হঠাত তার এক ভাতিজা এলো, একটু কম বয়স হবে,সরকারি চাকরি করে, একটা মন্ত্রনালয়ে।
কথায় কথায় কখন রাত ৯ টা বেজে গেল জানা নেই।
ফেইসবুক থাকতে পৃথিবীতে বন্ধুর অভাব হয়না,যে যেরকমই হোকনা কেন ফেইসবুক একাঊন্ট থাকবেই।যথারীতি শিপন আর সুমি ফেইসবুকেই যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম বানিয়ে নিল।
শিপনের ফুপির বাড়িতে যাতায়াত বহুগুণে বেড়ে গেল।

সুমির বস আজকাল কারনে অকারনে ফোন করে, তা রাত ১ টা হোক কিংবা সকাল ১০টা।অফিসে কাজের অজুহাতে তার সামনের চেয়ারে বসিয়ে রাখেন ঘণ্টার পর ঘন্টা।
সেদিন সে বলছিল "বাহ তোমার লিপস্টিকের কালার টা তো দারুণ মানিয়েছে তোমাকে !! আসলে বয়সই সব বুঝলে??তোমাদের মতো সুন্দরী মেয়রাই তো অফিস্টা কে রাঙ্গিয়ে রেখেছ,নাহলে আমাদের মতো লোকদের কি হতো বলতো??"
সুমি কথাগুলো সহজ ভাবে নিতে পারেনি। উত্তর দিলনা।ভাবছিল তার চাকরীর জব ডেসক্রিপশনে আসলে কি কি কাজের কথা লেখা ছিল।
কফিল সাহেব সুমির দিকে বেশ কিছুটা ঝুঁকে মুচকি হেসে বললেন "রাগ করলে না তো সুন্দরী?"

এভাবেই কেটে যাচ্ছিল-সুমির ভালো -খারাপ দিন গুলো।

শিপনের সাথে প্রায়ই কথা হয়,গত রাতেও ফোন করেছিল,জানাল সে ট্রান্সফার হয়েছে ঢাকার বাইরে,জাবার আগে দেখা করে যাবে।
অপ্রিয় সহর,অপছন্দের চাকরি, জীবিকার তাগিদ,নিত্তদিনের বেঁচে থাকার লড়াই এর মাঝে একটু আশার আলো পেয়েছিল শিপনের কাছে,সেটাও মিলিয়ে যাবে শিগগিরি। দীর্ঘশ্বাস এখন তার সঙ্গী।

ফোনে অপরিচিত নাম্বারের কল এভয়এড করে সুমি,কিন্তু এই নাম্বার টি খুব জালাচ্ছে।বিরক্তির চরমসিমায় ফোনটা রিসিভ করল সে। ওপাশ থেকে পরিছিত আওয়াজ
"ইয়ে মানে সুমি আমি কফিল বলছি।হয়েছে কি জানো আমার ফোন টায় নেটওয়ার্ক পাচ্ছিনা টাই এনাম্বার থেকে কল করা ,খুব ইমারজেন্সি,কাল থেকে তোমার দুইদিন অফিস যাওয়া লাগবেনা আমি ওদের বলে দিয়েছি।কয়েকজন ক্লায়েন্ট আসছে তাদের সাথে আমি গাজিপুর যাচ্ছি রিসোর্টে , তৈরি থেকো আমার গাড়ি কাল টিক সকাল ৮ টায় তোমাকে পিক করবে তোমার বাসা থেকে কেমন? আর শোন এব্যাপারটা নিয়ে অফিসের কার সাথে বেশী কথা বলতে যেওনা যেন।
রাখছি।"
উত্তর দেয়ার আগেই লাইন টা ডিস্কানেক্ট করল কফিল সাহেব।
সুমি ভেবে পাচ্ছিলনা কি বলবে।

রাত ভর একফোঁটা ঘুম নেই চোখে। ভাবছিল শিপন কে কল দেবে পর মুহুরতে ভাবল সেও তো অচেনা পুরুষ !

পরদিন সকালে রেজিগনেশন লেটার জমা দিতে অফিস গেল সুমি।কেন যেন মনে হচ্ছিল অফিসের লোকগুল সব জানে,তারা সুমির দিকে তাকিয়ে অট্টহাসি হেসে যাচ্ছে,যে হাসির শব্দ কেবল সুমির কান শুন্তে পাচ্ছে।

ক্লান্ত শরীরে,ধীর পায়ে বাস স্ট্যান্ডের দিকে এগুচ্ছে সুমি।
বাবার একটা কথা খুব মনে পরছে "যে সহে সে রহে"
আনমনে বিড়বিড় করে বলে উঠল "আমি সইতে পারিনি বাবা।"
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৯
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×