লক্ষী ছেলের মত টুপাই জানালার এক কোনে বসে আছে...।ভাবছে কি কে যানে...।এ বয়শের বাচ্চারা প্রায়ই নিজেদের কল্পনার জগতে হারিয়ে যেতে ভালোবাসে...।
তেমন একটা মনে পড়েনা ছোট বেলার কথা তবে কল্পনা থেকেই অনেক ছবি আঁকতাম।এখনের সময়তা ভিন্ন আর বাচ্চাদের কল্পনার পরিধিও অনেক প্রশস্ত..
টুপাই বাবা জানালাটা বন্ধ করে দাও,মশা আসছে...
পা নাচাচ্ছিল টুপাই, মাসীর কথায় যেন তার ভাবনার ছন্দ পতন হল... পা দুটো হথাত থেমে গেল...। ছোট দুটো হাত দিয়ে দু পাটের জানালা খটাশ করে আটকে দিল । ফের উবু হয়ে বিছানায় শুয়ে আবার হারিয়ে গেল ওর কল্পনায়...
বাড়ীর মাসী দরজায় কলিংবেল এর আওয়াজে দৌড়ে যেয়ে দরজা খুলল মেডামের হাত থেকে ল্যাপটপ ব্যাগ নামিয়ে নিল।
“টুপাই কই?”
“শুয়ে আসে”
নিজের ঘরে ঢুকে দরজা আঁটকে নিল নীলা পরখনেই দরজা খুলে বল্ল “অসিমা,আমার দাওয়াত আছে আজ একটা তুমি আর টুপাই খেয়ে নিও আর ওর হোম ওয়ার্ক গুলো একটু দেখে নিও ,পারবেত?
অশিমা পারবে কি পারবেনা তা না শুনেই নীলা দরজাটা ফের আঁটকে দিলো।
টুপাই আর অসিমার ছোট্ট সংসার।
নীলার অবদান তার অফুরন্ত টাকা।
বেশ আগে পরেশের সাথে ডিভরস হয়েছে নীলার।
শহরের বাইরে নীলার মা বাবা থাকে ।
স্বনির্ভর নীলা কখনও হাত পাতেনি সাহায্যের জন্য তার মা বাবার কাছে।
আর পাতবেই বা কেন যেখানে ওর আর্থিক অস্বচ্ছলতা নেই সেখানে আর ভয় কিসের??
টুপাই এর জীবনের কোন চাহিদা অপূর্ণ থাকেনি আজ পর্যন্ত শুধু একটা চাহিদাই টুপাই এর চোখে স্পষ্ট দেখতে পায় অসিমা, আর নীলা দেখেও না দেখার ভান করে...জীবন কারো জন্য থেমে থাকেনা, টুপাইকে শক্ত হতে হবেই।
সকালে নাস্তার তেবিল সাজিয়েছে ওসিমা...নীলা খুব চেষ্টা করছে টুপাই এর মুড চিয়ার আপ করতে...লাভ হছহে না...।
চুপ করে কিছুখন টুপাই এর দিকে তাকিয়ে রইল নীলা।
অফিস এর লাঞ্চ ব্রেক এ বরুন আর নীলা বেরুলো কাছেই এক রেস্তোরাঁয় লাঞ্চ তা সেরে নেবে বলে।
মুড অফ মেদাম?
হুম,আর বলনা টুপাই দিন দিন কিরকম যেন গুঁটিয়ে নিচ্ছে নিজেকে”
একটা ছোট দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বরুন বলল “ তুমি কি নিজে থেকে একবার পরেশের খোঁজ নিতে পারনা?”
মাথা নারল নীলা। আমি চাইছিনা পরেশ টূপাই এর জীবনে আসুক...আমার ছেলে ভালো কিছু শিখতে পারবেনা জানত? পরেশ ইস নট অ্যান আইডিয়াল ফাদার।“
“পরেশ কিন্তু টুপাই এর বাবা,ভুলনা।“
পরিবেশ টা যেন আর গুমট হয়ে গেল ওই কথাটার পর।
রাত এ টুপাই ক ঘুম পাড়াতে যেয়ে Charles Dickens এর চিল্ড্রেন্স ক্লাসিক পড়ে শোনাচ্ছিল নীলা নাম David Copperfield যেখানে কপার ফিল্ড কে বলা হয় posthumous child.
টুপাই এর নিশপাপ প্রশ্ন “মা posthumous child মানে কি?”
যেসব শিশুর বাবা তার জন্মের আগেই মারা যান”
মা আমিও কি তবে ওরকম তাইনা মা??আমিও তো বাবাকে দেখতে পাইনি!
নীলা এরকম প্রশ্নটাই আসা করছিলো।
“না বাবা তোমার বাবা তো আমাদের সাথে থাকতে চায়নি, আরও ভালো থাকার আশায় সে বিদেশ গেছে
তুমি এতো কথা বললে গল্প তা কিভাবে শেষ করব বাবাই বলত?”
“আজকে শেস করলে কাল আমারা নিউ স্টোরি পরব!
“সো লেটস গেট ব্যাক টু আওার স্টোরি।“
ক্লাসিক টা ইন্টেনশনালি এনেছিল নীলা, টুপাইএর মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা এই প্রশ্নের জবাব দিতে।
মায়েরা সব সময় ই বুদ্ধিমতি।
তুপাইএর বয়শ এখন সাড়ে ৮।
নীলা ভাবছে টুপাই কে বোর্ডিং স্কুলে দিবে।
বরুন কে বলেছে ভালো করে খবর নিতে।
ওকে খুব ভালো করে মানুষ করাই চ্যালেঞ্জে।
পরেশের ছায়া পড়তে দেবেনা ওর উপর।
বরুন নীলা কে শ্রদ্ধা করে ,ভালবাসে কিন্তু নীলার কাছে তার খুব ভালো বন্ধু বরুন।
এর চাইতে বেশি কিছু ভাবছেনা এখন। তবে নীলা যানে বরুন টুপাই কে বাবার আদর স্নেহ দিয়েই বড় করতে পারার মত মানসিকতা রাখে।
মার সাথে রাত ফোনে কথা শেষ করে নিজের ঘরে রকিং চেয়ারে বসে ভাবছিল সে , মা বলছিল বোর্ডিং এ দিলে বাচ্চারা জেদি হয়ে ওঠে, পরিবার থেকে দূরে থাকার পর আর ওরকম মানসিক বিকাশ হয়না ইত্তাদি।মা এতাও বলছিল , টুপাই কে নিয়ে একবার চাইল্ড সাইকোলজিস্ট দেখাতে।
নীলার নেটওয়ার্ক তা এঁটো বড়, কখনও সে চলার পথে আটকায় নি। এক পরেশ ওর জীবনের কালো অধ্যায়, প্রেমে অন্ধ হয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছিল দুজন। নীলা ছিল ডাকসাইটে সুন্দরি আর দুর্দান্ত স্মার্ট।
যখন টুপাই এর আশার খবর পেল পরেশ আর ১০ জন স্বামীর মত ও খুশি হতে পারলনা বরং এবরসনের প্রস্তাব দিল নীলা কে এভাবেই সময় কেটে গেল আর নীলার ডেলিভারির এক মাস আগে সে নীলা কে ফেলে কাপুরুশ নায়কের মত পালিয়ে গেল...এস্কেপিস্ট একটা!
নিবেদিতা খুব ভালো করে অবসারভ করল টুপাই কে।আর নীলা কে বলল তুই কি একটু আসবি এ পাশটায় ?
“ওর মেন্টাল হেল্থ খুব একটা ভাল না, হে ইস ইন ডিপ্রেশন । তুই খেয়েয়াল রাখিশ না?
আমি বলি কি তুই বরুন কে বিয়ে করে ফেল, টুপাই নিডস আ ফাদার।
কিছু বলতে পারলনা নীলা।
গারির সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে ভাবছিল বরুন বিয়ের পর বদলাবে নাতো?
বরুন আর নীলার নিজের সন্তান যখন আসবে তখন কি বরুন আগের মতই ভালোবাশবে তুপআই কে??
টুপাই বা কতো টা ভালবাসবে তার নতুন ভাই/বোন টিকে?
টুপাই বড় হয়ে কি মেনে নিতে পারবে বরুন কে তার মায়ের স্বামী হিসেবে?
মুহূর্তেই বরুনের কল।
গিয়েছিলে?কি বলল নিবু দি?
আর বোর্ডিং স্কুলের সব ইনফর্মেশন হাতে এশে গেছে আমার কাল লাঞ্চে কথা হবে।
নীলা এতো বেশি পাযেল্ড ছিলব্লল “ আমি পড়ে ফোন দিছহি”
ঠিক ৩ দিন পর রাতে টুপাই কে নীলা বলছিল বাবাই তোমার স্কুল পাল্টাতে চাইছিলাম নতুন স্কুলতায় আনেক বড় খেলার মাঠ আছে, কো কারিকুলার আক্টীভীটিস অনেক বেশি সুযোগ,আনেক নিউ ফ্রেন্স হবে তোমার প্লাস অখানে হোস্টেল ও আছে। যাবে? ইন্টারেস্ট পাচ্ছ? ক্যাম্পাস একটু পর নেটে দেখাব, ফিনিশ ইওর মিল,হারি আপ।
হোস্টেল কেন মা? আমি যাবনা। স্কুল করে বাসায় এশে পরলেই হয়!
বোকা! স্কুল তো আরেক সিটি তে।
“কোথায়?”
“বলছি!! আগে খাবার শেষ কর”
অনেক বোঝানর পর টুপাই কিভাবে যেন রাজি হল।মনেহয় নিবেদিতার কথার রিফ্লেক্সন এটা, ও আনেক বেশি বোর্ড,চেঞ্জ খুজছিল নিজের অজান্তেই,আর নীলার প্রস্তাবটাও ভালো সময়েই এশেছে!কেটে গেলো ৩টি মাস।
প্রস্তুতির পর্ব প্রায় শেষ, নীলার মনে একটাই ভয় যদি পরেশ টুপাই কে নিয়ে ওকে ব্ল্যাক মেইল করে।
দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।
বরুন বলল ভয় পেওনা। সব খোঁজ করেছি। তুমি মনের শান্তির জন্য আরেকবার কথা বলে নিও। আর শোন, াট বছর আগে যে পালিয়ে গেছে সে আর কোনদিন আশবেনা। বুঝতে পারছ তার তোমাদের প্রতি বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্ট নেই। আর আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাইছিলাম তোমাদের জীবনের সাথে আমার জীবন টাকে জড়াতে চাইছিলাম আমরা আরও ভালো থাকি কিন্তু...।
ওভাবে বলনা আমার টুপাই আমার বেঁচে থাকার প্রেরনা, অবলম্বন...আমার বিশ্বাস ও যখন একটু হবে, জীবনের জটিলতা গুলকে বিশ্লেষণ করতে শিখবে ঠিক ও চাইবে আমরা তিন জন একসাথে থাকি, একটু সময় দাও ওকে, আমার ওকে বোর্ডিংএ দেয়ার একটাই উদ্দেশ্য ও স্বনির্ভর হতে শিখুক।আমার ওই ছোট ফ্ল্যাটে যেখানে টুপাইএর হাসির প্রতিধ্বনি খুঁজি আমি তার বদলে আমি পাই টুপাইএর চাপা কান্নার শব্দ,আমি শুনতে পাই এটা আর কেও না...।চোখের কোনায় জল গড়িয়ে পরছে নীলার...।
এই প্রথম বরুন নীলা কে কাঁদতে দেখল......
বুঝতে পারছিল না কিভাবে সান্ত্বনা দেবে...
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১৯