ঘটনা একঃ পাকিস্তানের পাঞ্জাব।রাতভর ঘুম হয়নি আগা জামিলের।সুন্দরী তাবাসসুম আমার দেয়া গোলাপ আমাকেই ছুঁড়ে মারলো। এই ফুল হারাম। একে পায়ে দলি।বিভত্স ।
ঘটনা দুইঃ ১৯৭১।আগা জামিলের বুকে সাপের ফনার মতো লিকলিক করছে মেজরের ব্যাচ। নিভৃত বাংলার কুসুমবাগ গ্রামে তার সেনা ক্যাম্প। গ্রামের রাজাকার মোল্লাকে জিজ্ঞেস করে-"ইয়ে হারামী কুত্তাকে বাচ্ছা,কুসমবগকা মতলব কেয়া হুতাহে"
ঘটনা তিনঃ সেনা ক্যাম্পের পাশেই,এতিমদের হাতে লাগানো ফুলের বাগান। লাল লাল ফুলে লাল হয়ে আছে পুরো বাগান।
মেজরের নির্দেশঃ একটা করে মুক্তি মারবি আর এই বাগানের ফুল একটা করে বোটের নীচে পেষন করবি। যতটা মুক্তি ততটা ফুল।এই নাও খাতা। হিসাবে যেন কোনো গোলমাল না হয়।
ঘটনা চারঃচার মাস পর। কলিম শেখের মা পোলার শোকে কাতর। গ্রাম উজাড়। পোলাও নেই, পোলার বেটিকে নিয়ে গেছে আল বদরেরা। ছোট শিশু কন্যা কুসুম। মা-বাবার ছবি চেয়ে সারাক্ষন আপন মনে কথা বলে।
ঘটনা পাঁচঃ ফুলের বাগানে মরুর স্পর্শ।পাখির কলতান বন্ধ হয়ে গেছে।প্রজাপতির নিশানা নেই। বাতাস নিথর। মেজরের ঢুলু ঢুল চোখে রাতভর নেশা আর নারীর পিয়াসা। আজ রাতের খেল শেষ হয়েছে।মেজর সাবের এবার ঘুমাবার পালা।
ঘটনা ছয়ঃ একি রাত ।ভোরে কুসুমের ঘুম ভেংগেছে। মাতৃস্নেহের জন্য কেঁদে কেঁদে ওঠছে তার বুক।"দাদীমা" "দাদীমা" হাজার ডাকে ও কোনো সারা নেই। কুসুম বুঝতে পারছেনা দাদীমার এ ঘুম আর লক্ষ কোটি ডাকেও ভাংগবেনা। কুসুম আকাশ বাতাস ভারী করে চিত্কার করেই যাচ্ছে। কুসুমের কান্নায় মেজরের ঘুম আসছেনা।
ঘটনা সাতঃ মেজরের নিদ্রা ভংগ হয়। ক্যাম্পের বাইরে পায়চারী করেন। দেখেন বাগানে আর কোনো ফুল নেই। জওয়ান কে ডাকেন" এদার আও সালা, ও কিতাব নিকাল।"ফুল আর মুক্তিকা হিসাব।"
মেজর ফুল পেষনের আর মুক্তি হননের প্রতিদিনের যোগফল বের করেন। মোট ফুল উপড়ে বোটের নীচে দলিত করা হয়েছে ১৮০৯ টি আর মুক্তি হনন করা হয়েছে ১৮০৮ জন। ১টি কম। মেজর এবার বেশ্যার মতো চীত্কার করে ওঠেন-কুত্তার বাচ্ছারা হিসাবের গরমিল আমি চাইনা। জলদি জলদি হিসাব মিলা।
পুরো গ্রামে একজন মানুষ ও নেই। শুধু কিছুক্ষন পর পর অবুঝ শিশু কুসুমের কান্না ভেসে আসছে। কুসুম কি জানে-হিসাবের যোগফল ওকে দিয়েই মিলানো হবে।
(হায়!স্বাধীনতা,কুসুমের ঋন আমরা ভুলে গেছি। কুসুমের সিনায় দাঁড়িয়ে রাজাকাররা কথা বলে,কুসুমবাগান হয়েছে আজ বধ্যভূমি, পাশ দিয়ে বাংলা মায়ের পতাকা খচিত রাজাকারের গাড়ী চলে যায়।আর আমরা শুধু ফেল ফেল করে চেয়ে থাকি,
আমি আর লিখতে পারছিনা। আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।)